নড়াইলের পথে পথে চোখজুড়ানো ভাঁট ফুল
অযত্ন আর অবহেলায় বেড়ে ওঠা গ্রামবাংলার অতি পরিচিত গুল্মজাতীয় একটি বুনো উদ্ভিদ ভাঁট। নড়াইলের বিভিন্ন গ্রামীণ পথে প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে ওঠে এই ভাঁট ফুল তার সৌন্দর্য দিয়ে মানুষের নজর কাড়ছে। শুভ্র সাদা ভাঁট ফুল দেখলে চোখ জুড়িয়ে যায় যেকোনো ফুলপ্রেমীর। এ ফুলের দিকে তাকালে অনেকের মন ভালো হয়ে যায় নিমিষেই। মনের ভেতর একটা অন্যরকম অনুভূতি জাগে। অঞ্চলভেদে এই গাছের ফুলকে ভাইটা ফুল, ভাটির ফুল, ঘেটু ফুল, ভাত ফুল, বনজুঁই, ঘণ্টাকর্ণ বলা হলেও নড়াইলের মানুষের কাছে এটি ভাঁট ফুল বা ভাটির ফুল নামেই সর্বাধিক পরিচিত। চৈত্র মাসে এই ফুল ফোটে বলে একে চৈতের ফুলও বলেন কেউ কেউ।
নড়াইলে বিভিন্ন সড়কের দুই পাশে ভাঁট ফুলের সমারোহ দেখলে মনে হবে প্রকৃতি যেন অপরূপ সাজে সেজেছে। তা ছাড়াও এ জেলার সর্বত্র ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা আশপাশের বাগানগুলোতে ভাঁট ফুলের নয়নাভিরাম দৃশ্য মন কাড়ে।
বসন্তের আগমনে পলাশ-শিমুলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে প্রকৃতিকে সাজাতে সাদা ভাঁট ফুলের শুভ্রতার জুড়ি নেই। বিশেষ করে পরিত্যক্ত মাঠ, বন, রাস্তা কিংবা জলাশয়ের পাশে মিষ্টি ঘ্রানের, অজস্র ভাঁট ফুল ফোটা অবস্থায় চোখে পড়ে। প্রতিটি গাছে এক সঙ্গে অনেক ফুল ফুটে। এর বৈজ্ঞানিক নাম, “ক্লেরোডেনড্রাম ভিসকোসাম” ও ইংরেজি নাম “হিল গেন্টারি বোয়ার ফ্লাওয়ার”। ভাঁট ফুলের আদি নিবাস ভারতবর্ষ, বাংলাদেশ ও মিয়ানমার অঞ্চলে।
তবে কালের বিবর্তনে হারিয়ে যেতে বসেছে এই ফুল। আগে গ্রামের রাস্তার দুপাশে সচারাচর দেখা গেলেও এখন তা কমেছে। শহরে এ ফুল তেমন একটা চোখে পড়ে না। ফাল্গুন-চৈত্রে চোখ খোলা রাখলে, মন থেকে খুঁজলে সন্ধান মিলবে ভাঁটের। ভাঁট গাছের প্রধান কাণ্ড সোজাভাবে দণ্ডায়মান, সাধারণত ২ থেকে ৪ মিটার লম্বা হয়। পাতা ৪ থেকে ৭ ইঞ্চি লম্বা হয়। দেখতে কিছুটা পানপাতার আকৃতির ও খসখসে। ডালের শীর্ষে পুষ্পদণ্ডে ফুল ফোঁটে। পাঁপড়ির রং সাদা এবং এতে বেগুনি রঙের মিশ্রণ আছে। বসন্ত থেকে গ্রীষ্ম অবধি এ ফুল ফুটে। এই ফুলের রয়েছে মিষ্টি সৌরভ। রাতে বেশ সুঘ্রাণ ছড়ায় এই ফুল। মৌমাছিরা ভাঁট ফুলের মধু সংগ্রহ করে থাকে।
নড়াইল সদর উপজেলার বাসিন্দা তামান্না সুলতানা ও তাবাসসুম জানান, একসময় গ্রাম-গঞ্জে এ ফুল দেখতে পেতেন। এখন আগের মতো সচারচার দেখা যায় না। অযত্নে প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে উঠলেও সৌন্দর্যে কোনো কমতি নেই। এই ফুল দিয়ে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা পূজা ও করেন।
কালিয়া উপজেলার খায়রুল চৌধুরী বলেন, ছোট বেলায় আমাদের অঞ্চলে এই মৌসুমে প্রচুর ভাঁট ফুল দেখা যেত। এখনো দেখা যায় তবে কম। দেখতে যেমন সুন্দর তেমন এর ঘ্রাণটাও খুবই ভালো লাগে।
লোহাগড়া উপজেলার বাসিন্দা মাহিন শেখ ও আবিদ শেখ জানান, ভাঁট ফুল দেখতে খুবই সুন্দর। গ্রামের মেঠো পথের দু'পাশে এখনো এ ফুল দেখা যায়। তবে আগের চেয়ে এখন কমই চোখে পড়ে।
এ ফুল নিয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক দীপক কুমার রায় জানান, ভাঁটফুল একটি গুল্মজাতীয় দেশি বুনো পুষ্পক উদ্ভিদ। এটি বুনো ফুল। গাঁয়ের মাঠে কিংবা রাস্তার ধারে অযত্নে ফোটে এই ফুল। ফুল গাছটি ভাঁট বলে পরিচিত হলেও স্থানভেদে এবং ভিন্ন ভিন্ন জনগোষ্ঠীতে এর ভিন্ন ভিন্ন নামও রয়েছে। অনেকে একে বনজুঁইও বলেন। এ গাছের ভেষজ গুণাগুণ রয়েছে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।
এসএন