বড়শিতে গাঁথা ৪ বোনের জীবন
‘বাবার ছিল শ্বাসকষ্ট। আয় রোজগার করতে পারতেন না। পেটের দায়ে তাই ছোট থেকেই মাছ ধরাকেই বেছে নিয়েছি জীবনের আশা ভরসা হিসেবে। অনেক কষ্টে জীবন কাটছে।’
কথাগুলো বলেছিলেন জরিনা বেগম। তিনি বরগুনার তালতলীর নিওপাড়ার হাচেন মোল্লার মেয়ে। ছোটবেলা থেকেই বড়শি দিয়ে মাছ ধরে চলে তার জীবন সংগ্রাম।
জরিনার ৫ বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে ৪ বোন (জরিনা, ফাতেমা, হালিমা, রাহিমা) ছোট থেকেই স্থানীয় আন্ধারমানিক নদীতে মাছ শিকার করেন। কখনো বড়শি, কখনো আবার জাল টেনেই চলে যায় তাদের সংসার।
নিওপাড়া এলাকায় গেলে দেখা যায় এই ৪ বোনের মাছ ধরার চিত্র। প্রচণ্ড রোদে স্লুইসগেট সংলগ্ন নদীতে সারিবদ্ধ নৌকায় বসে বড়শির ছিপ ফেলেন তারা। চিংড়ি, পুঁটি, টেংরা, রুই ও পাঙাশসহ নানা প্রজাতির মাছ ধরা পড়ে তাদের ছিপে। এসব মাছ বাজারে নিয়ে ৩০০-৪০০ টাকা পর্যন্ত কেজি দরে বিক্রি করে বাজার সদায় কিনে বাড়ি ফেরেন তারা। তবে কখনো কখনো খালি হাতেও ফিরতে হয় তাদের।
৪ বোনের ভাষ্যমতে, নদীতে মাছ থাকলে সংসারের সব সদস্যের পেটে ভাত জুটে। আর না থাকলে তাদেরও না খেয়েই থাকতে হয়। তবু সংসার চালাতে ৩০-৪০ বছর ধরে বড়শির ছিপ হাতে ধরে আছেন তারা।
শুধুমাত্র স্থানীয় সরকারি আবাসন প্রকল্পের ঘরে বসবাসের সুযোগ ছাড়া জীবনে তেমন কোনো পরিবর্তনই আসেনি তাদের। বিয়ের পরও একই রকম রয়ে গেছে ৪ বোনের জীবন।
কারণ হিসেবে জরিনা বেগম বলেন, ‘বাবার ভিটেমাটি, অর্থ-সম্পদ ছিল না। বিয়ে দিয়েছে তাও গরিব বাড়িতে, বয়স্ক রোগাক্রান্ত স্বামী কাজ করতে পারেন না। বড়শি দিয়ে মাছ ধরে যা আয় রোজগার করি তা দিয়েই সংসার চালাই।’
আরেক বোন রাহিমা বেগম বলেন, ‘ছোট থেকেই বড়শি দিয়ে মাছ ধরি। প্রথম দিকে রাতে ধরতাম। পরে পেটের টানে দিনেও ধরা শুরু করছি। মানুষে লজ্জা দিত, মহিলা মাছ ধরে। কোনো উপায় ছিল না, মাছ ধরতে পারলে খেতে পারি, আর না পেলে না খেয়েই থেকেছি। এভাবেই কাটছে আমাদের জীবন।’
আক্ষেপ করে তিনি আরও বলেন, ‘যারা কোনোদিনও নদীতে মাছ ধরেনি তারাও জেলে কার্ডের চাল পায়। আর রাতদিন মাছ ধরেও আমরা চাল পাচ্ছি না।’
তালতলী উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা (ইউএনও) সিফাত আনোয়ার তুমপা বলেন, ‘নারী বলে তাদেরকে জেলেদের তালিকাভুক্ত করতে পারছি না। তবে গরু, ছাগল ও অন্যান্য প্রণোদনার মাধ্যমে যেন জীবিকা নির্বাহ করতে পারে এবং এর মাধ্যমে তাদের সামাজিক সুরক্ষা বেষ্টনীর মধ্যে আনার পরিকল্পনা নিয়েছি।’
এসজি