‘রাণী কিন্তু রাণী নয়’
তার জন্ম সালটি নেই উইকিপিডিয়াতে। ভারত বিভাগের বছরে-দেশভাগের সময়ে একমাত্র মেয়ের জন্ম হলো বলে বাবা ভারতীয় নাট্য আন্দোলনের প্রবাদ পুরুষ শম্ভু মিত্র ও মা বিখ্যাত নাট্য ব্যক্তিত্ব তৃপ্তি মেয়ের জন্মের তারিখটি লিখতে ভুলে গিয়েছিলেন কী না কে জানে! তবে তারা তাদের ঔরসজাত সন্তানের ভেতরে অভিনয়ের তুমুল নেশা ঠিকই ঢুকিয়ে দিতে পেরেছিলেন। এই শাঁওলি মিত্র ছোট থেকেই উইংসের আড়ালে ও সামনে চলাফেরা করেছেন। মঞ্চের আলো অঁধারের জীবন তাকে এতোটাই বুঁদ করেছে, ভালোবাসার হাতছানিতে টেনেছে যে, একেবারে ছেলেবেলা থেকে অভিনয়ে হয়েছেন দারুণ সাবলীল।
ফলে সিনেমার রূপালি পর্দাকে নয়, দূরদর্শনের বোকাবাক্সকে নয়, মঞ্চে অভিনয়কেই নিয়েছেন প্যাশন হিসেবে। ছোটকালে কাজ করেছেন রবীন্দ্রনাথের বিখ্যাত ‘ডাকঘর’ নাটকে, তাও আবার অমলের ভূমিকায়। একটি মেয়ে হয়ে ছেলে হওয়া কী যে কষ্ট ওই বয়সের কোনো অভিনেত্রীর জন্য, যিনি করেছেন তিনিই জানেন। তবে অনেক প্রশংসা ও মানুষের ভালোবাসা পেয়ে থিয়েটারের বীজ পাকাপোক্ত হয়েছে তার ভেতরে। নিজের জীবনের স্মৃতি ‘দিদৃক্ষা’ বইতে শাঁওলি মিত্র বলেছেন-“ছেলেবেলা থেকে অসুখ, বিসুখ লেগেই থাকত। রেডিয়োতে যখন ‘অমল’ করতে হল, তখন আমি খুব অসুস্থ থাকতাম। প্রায়ই বিছানায় শুয়ে, বসে কাটত। মা এক দিন রেডিয়োতে অমল করতে হবে বলে আবার পড়বার জন্য ‘ডাকঘর’ বইটা বিছানায় দিয়ে গেল। সেদিন পড়ে কাঁদতে লাগলাম।”
পারিবারিক উত্তরাধিকার নয়, রীতিমতো অভিনয়ের কলা তিনি শিখেছেন রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখান থেকেই নাটকে স্নাতকোত্তর। তবে দারুণ স্মার্ট, অসম্ভব এই প্রতিভা যে সিনেমাতে অচল তা নয়। দারুণ সচল হিসেবে রূপালি ভুবনে যাত্রা শুরু করেছিলেন। বিখ্যাত ঋত্বিক ঘটকের ‘যুক্তি, তক্কো আর গপ্পো’ ছবিতে। অভিনয় জীবনের একেবারে শুরুতে তিনি তাতে ‘বঙ্গবালা’ চরিত্রে অভিনয় করেছেন। একেবারে তরুণ বয়সের চরিত্রটি কেমন হয়েছে-সেটি দর্শকদের জন্য তোলা থাকলো। ম্যাজিক্যাল শাঁওলি মিত্রকে পাওয়া যাবে এক ঝলকে তাতে।
তবে সেখানে নয়, মঞ্চাভিনয়ের প্রতি ভালোবাসা ও বাবা শম্ভু মিত্র এবং মায়ের নাট্যধারা বয়ে বেড়ানোর যে অপূর্ব উত্তরাধিকার বর্তেছিল কাঁধে, সেটিকেই জীবনের আরাধনা হিসেবে মেনে নিয়েছেন তিনি। ফলে আর একটি ছবিতেও অভিনয় করেননি। আজকে সবাই একমুখে স্বীকার করেন-শাঁওলি মিত্র এই দায়িত্ব অত্যন্ত সাফল্যের সঙ্গে পালন করেছেন।
বাংলা রঙ্গমঞ্চের এই একনিষ্ঠ কমী পরম ভালোবাসা ও মা-বাবার নিষ্ঠায় বছরের পর বছর ধরে মঞ্চকে আলো করে রেখেছেন। প্রথমে কাজ করেছেন বাবার ও বাংলা নাট্য আন্দোলনের প্রধান প্রতিষ্ঠান ভারতীয় গণ নাট্য সংঘে। এরপর পেশাদার ক্যারিয়ার গড়ার দিকে ঝুঁকে পড়তে হয়েছে। গড়েছেন নিজের দল ‘পঞ্চম বৈদিক’। কোনোটিতেই পিছিয়ে থাকেননি। পঞ্চম বৈদিকেও একের পর এক ঝড় তোলা মঞ্চ নাটক উপহার দিয়েছেন দর্শকদের। তার বিখ্যাত নাটকগুলোর মধ্যে আছে-‘ডাকঘর’, ‘নাথবতী অনাথবৎ’, ‘একটি রাজনৈতিক হত্যা’, ‘পাগলা ঘোড়া’, ‘কথা অমৃত সমান’, ‘পুতুল খেলা’, ‘হ-য-ব-র-ল’, ‘লঙ্কাদহন’, ‘চন্ডালি’, ‘পাখি’, ‘গ্যালিলিওর জীবন’, ‘যদি আর এক বার’ ইত্যাদি। নাটকগুলোর প্রতিটিই দারুণ, দর্শক নন্দিত।
শাঁওলী মিত্র নামের থিয়েটার অন্ত:প্রাণটি আজীবন নিজেকে উজাড় করে দিয়েছেন বাংলা থিয়েটারে। উদাহরণ হিসেবে ‘নাথবতী অনাথবৎ’র কথা বলি। এরও অনেক দৃশ্য ভুলতে পারেন না দশকরা। একটির বিবরণ-‘তবলা তরঙ্গ বেজে উঠছে। বাজছে মন্দিরা, মৃদঙ্গ। মঞ্চে সার বেঁধে বসা জুড়ির দলের দিকে মুখটি ফিরে একটা কালো কাঠের জলচৌকির ওপরে দুলছে একটা লম্বা বেণী। একটা আলতা রাঙা পায়ের নূপুর তাল রাখছে ছন্দে। জুড়ির দল গান ধরেছে, ‘কিছু কথা বলতে চায় ও রে মন...।’ গানের শেষে কথক ঠাকরুণ পেন্নাম করে বলে উঠলেন ‘এক অভাগিনী মেয়ের কথা...রাণী কিন্তু রাণী নয়!’’ সেই রাণীর কথা কে বা ভুলতে পারে! অভিনয়ের জন্য তাতে কত যে ব্যথা সইতে হয়েছে।
ছোটবেলা থেকে তৃপ্তি মিত্রের ছাত্র, ভারতের বিখ্যাত ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামার অধ্যাপক শান্তনু বসুর মনে করেছেন-‘শাঁওলিদির এই নাটকে একদিন কলকাতার বাইরে শো ছিল। জেঠিমা (তৃপ্তি মিত্র) তখন খুব অসুস্থ। মেকআপ না তুলে ওই টানা কাজল চোখে চুলে জরির ফিতে বাঁধা অবস্থায় শাঁওলিদি চলে এসেছেন মায়ের সেবায়! সন্ধ্যাতে আবার শো। তাতে মেকআপ তোলার সময়টুকু যে বাঁচে!’
থিয়েটারের প্রতি এই ভালোবাসার জন্যই শাঁওলিকে আর কোনোকিছু টানেনি। তবে লিখতে হয়েছে তাকে অনেক। লেখক হিসাবে যথেষ্ট নামডাকও ছিল। বাবা অন্ত:প্রাণ মেয়ে ‘গণনাট্য, নবনাট্য, সৎনাট্য ও শম্ভু মিত্র’তে বাবার অভিনয় জীবন লিখেছেন। বঙ্গীয় আকাদেমির অভিধানের প্রসারেও তিনি কাজ করেছেন। মহান লেখক বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায়কে নিয়ে একের বেশি মূল্যবান কাজ আছে তার।
এই লেখার ভুবনে সাফল্যও আছে ১৯৯১ সালে ‘নাথবতী অনাথবৎ'র কল্যাণে। এটি তাঁকে এনে দিয়েছে মর্যাদাপূণ ‘আনন্দ পুরস্কা’র। তারও অনেক বছর পর বিখ্যাত লেখক মহাশ্বেতা দেবীর প্রয়াণের পর তার আসনে পশ্চিম বাংলা ‘বাংলা আকাদেমি’র সভাপতির দায়িত্বভার গ্রহণ করেছেন তৃণমূল কংগ্রেস ক্ষমতায় আসার পর। ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়কে পত্র লিখে পদটি থেকে অব্যাহতি চেয়েছেন। তবে শাঁওলি মিত্রকে খুব ভালোবাসেন মমতা। ফলে সে পদে ধরে রাখতে সরকারী তৎপরতা শুরু করতে হলো। নাচার হয়ে ২০১৮ সালের শুরুতে বাংলা আকাদেমি থেকে ইস্তফা দিয়ে দিলেন তিনি। আবার মুখ্যমন্ত্রীর অনুরোধে মাস কয়েকে ফিরে এলেন। মৃত্যুর পূর্বক্ষণ পর্যন্ত অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে কাজটি করে গিয়েছেন শাঁওলি মিত্র।
এর বাদেও ৭৪ বছরের দীঘ জীবনে অজস্র স্বীকৃতিতে সম্মানিত হয়েছেন তিনি। বাংলা ভাষার থিয়েটারের এই অসামান্য অভিনেত্রীকে তুমুল অভিনয় প্রতিভার জন্য ২০০৩ সালে ‘সঙ্গীত নাটক অ্যাকাডেমি পুরস্কার’ দেওয়া হয়েছে। তারও সাত বছর পর-২০০৯ সালে ভারতের সবচেয়ে বড় বেসামরিক পদক ‘পদ্মশ্রী’ লাভ করেছেন। তিনটি বছর পর, ২০১২ সালে এই অভিনয় প্রতিভা ও অবদানের জন্য লাভ করেছেন পশ্চিমবঙ্গের সবচেয়ে বড় বেসামরিক পদক ‘বঙ্গবিভূষণ’। ২০১১ সালে তিনি ছিলেন ‘রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সার্ধ্বশত জন্মবর্ষ উদ্যাপন কমিটি’র চেয়ারপারসন।
শাঁওলি মিত্র অভিনয়, লেখালেখি ও সমাজকর্মের বাইরে ভয়েজ আর্টিস্ট হিসেবেও কাজ করেছেন। তাঁর কন্ঠের জাদুতে বুঁদ হয়েছিলেন ওপারের বাঙালিরা। আকাশবাণী কলকাতাসহ বিভিন্ন রেডিওতে বহু শ্রুতি নাটকে অভিনয় করেছেন। নাটকে নানাভাবে নিজেকে নিবেদন করেছেন। একেবারে শেষ জীবনে শাঁওলি মিত্রের লেখা ও অভিনীত একাঙ্ক ‘সীতা' মুুগ্ধ করেছে নাট্যমোদীদের।
অনেক গুণের মানুষটির রাজনৈতিক বোধ ছিল অসাধারণ। বাবা ও মায়ের কাছ থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে যে অধিকার ও সাধারণের জন্য লড়াই করার অঙ্গীকার লাভ করেছেন, শাঁওলি মিত্র সেসব আজীবন বহমান রেখেছেন ভেতরে। দেশের ও রাজ্যের শোষিত, বঞ্চিত ও অবহেলিত মানুষের পাশে বারবার থেকেছেন । নামকরা মঞ্চাভিনেত্রী ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ভারত কাঁপানো সিঙ্গুর, নন্দীগ্রাম আন্দোলনের অন্যতম মুখ ছিলেন। আন্দোলনগুলোতে পরিবর্তনপন্থীদের অন্যতম ছিলেন তিনি। সিঙ্গুরের আন্দোলনে অনিচ্ছুক কৃষকদের প্রকাশ্যে সমর্থন করেছিলেন। বামপন্থীদের সরকারের বিরোধিতা করেছেন তিনি। এভাবে রাজনৈতিক মঞ্চে এলেও সরাসরি কোনো রাজনৈতিক দলে যুক্ত হননি কখনো। কাজ করেছেন তার দল ও নিজের ভুবন নিয়ে। পঞ্চম বৈদিকদের প্রধান ২০১৯ সালের মাঝামাঝি থেকে অসুস্থ। তবে কেন যে চিকিৎসা নিতে বরাবর অনীহা ছিল। গুরুতর অসুখেও হাসপাতালে ভর্তি হতে চাননি। শাঁওলি মিত্র নিউমোনিয়ায় ভুগছিলেন। এই রোববার বেলা ৩টা ৪০ মিনিটে রোগে ভুগে তার দেহঘড়ি চিরকালের মতো থেমে গিয়েছে। ৭৪ বছর বয়সে জীবন রঙ্গমঞ্চের লড়াই থেকে সরে গেলেন শম্ভু ও তৃপ্তি মিত্রের কিংবদন্তী মেয়ে মেয়ে শাঁওলি মিত্র।
জীবনের শেষ ইচ্ছাতেও বাবাকে অনুসরণ করেছেন তিনি। এই দুপুরে বাবার মতো সিরিটি মহাশ্মশানে তার শেষকৃত্যাবলী হয়েছে। তার আগেই দিনে, দিনে শরীর খারাপ হতে থাকায় একটি শেষ ইচ্ছাপত্র লিখে রেখেছিলেন। সেটি ২০২০ সালের বলে জানা গিয়েছে। শাঁওলি মিত্র তাতে তাঁর অসম্পূণ কাজগুলো শেষ করার গুরুভার প্রদান করেছেন মেয়ে, বিশিষ্ট নাট্যকর্মী ও তৃণমূলের রাজনীতিবিদ অর্পিতা ঘোষের ওপর। নিজের দাহের বিষয়ে তিনি বলেছিলেন, মারা যাবার পর তার মৃতদেহ যেন কেউ দেখতে না পারেন। শবযাত্রায় কোনো ফুলেরও প্রয়োজন নেই। এমন কোনো অহেতুক বাড়াবাড়িও যেন না হয়। বাবার মতো সাধারণ মানুষের ন্যায়, সবার অগোচরে তিনি শেষযাত্রা করবেন। এমনকী মুখাগ্নি শেষের আগে যেন কেউ জানতেও না পারেন। ফলে পরিবারের কয়েকজন, অর্পিতা ও সহযোদ্ধা, মানসপুত্র সায়ক চক্রবতী ছিলেন তার শেষ যাত্রায়। তারা তাকে শেষ তিনটি বছর পুরোপুরি দেখাশোনা করেছেন। আরো ছিলেন নাট্যব্যক্তিত্ব দেবেশ চট্টোপাধ্যায়। ২৫ বছর আগে-১৯৯৭ সালে বাবার মতো সবার আড়ালে, অনাড়ম্বর হয়ে চলে গেলেন মেয়ে।
জীবনের সব দায়িত্ব থেকে ছুটি নেওয়া শাঁওলি মিত্র জীবনের মঞ্চের মতো চুপিসারে বিদায় নিয়েছেন। তবে রেখে গিয়েছেন অনেক স্মৃতি কাছের ও দূরের মানুষদের জন্য। তাঁকে বাংলা নাট্যজগতের মহীরুহ জানিয়ে শোকবার্তায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন “শাঁওলিদির ইচ্ছা অনুসারে তাঁর প্রয়াণের খবর শেষকৃত্যের পর আমাকে দেওয়া হয়। আমি কাছের মানুষ হিসাবে তাঁকে মনে ধরে রাখলাম। বহুদিনের সহকর্মী ও সুহৃদ হিসেবে তিনি আমাদের মনের মণিকোঠায় থেকে যাবেন। তার অভিনীত ‘নাথবতী অনাথবৎ’, ‘কথা অমৃত সমান’র মতো সৃষ্টিকর্মগুলো বাংলার লোক মানসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।” আরো জানিয়েছেন, তিনি তাঁর বহুদিনের সহযোগী ছিলেন। সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম আন্দোলনে একসঙ্গে ছিলেন। কেন্দ্রের রেলমন্ত্রী থাকার সময়ও বিখ্যাত এই সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব তার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেছেন। তিনি বাংলা আকাদেমির সভাপতির দায়িত্বও খুব ভালোভাবে পালন করেছেন-স্মরণ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী।
জাতীয় কংগ্রেস সাংসদ অধীর চৌধুরী টুইটারে শোকবার্তায় লিখেছেন, ‘মহান নাট্যকার শাঁওলি মিত্র জীবনযুদ্ধ শেষ করে পরলোক গমন করলেন। বাংলা নাট্যজগত এক উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক হারাল। আমরা প্রতিবাদের এক উজ্জ্বল ব্যক্তিত্ব হারালাম। আমি খুব মর্মাহত।’
শাঁওলি মিত্রের প্রয়াণে গভীর শোকে আকুল পর্দা ও মঞ্চের জাতীয় পুরস্কার লাভ করা সুদীপ্তা চক্রবর্তী-‘তার কাছ থেকে অনেক আদর ও ভালবাসা পেয়েছি। কত কী আদর করে খাইয়েছেন। আমি যে তাঁর বন্ধু বিপ্লবকেতন চক্রবর্তীর মেয়ে। অনেককিছু শিখেছি-মঞ্চাভিনয়ের খুঁটিনাটিও। তারপরও ছোট্টবেলা থেকে সারাজীবন আমি অবাক চোখে তাকিয়ে দেখেছি তাঁর অভিনয়। তিনিই আমার নাটক দেখে ফোন করে খুব প্রশংসা করেছেন। আনন্দে কেঁদেছি। বড় হয়ে সিনেমায় একসঙ্গে একটি কাজ করার আর্জি নিয়ে গিয়েছিলাম, করেননি। তাই একসঙ্গে কাজ করার বা একেবারে সামনে থেকে তার অভিনয় দেখার সৌভাগ্য হলো না।’
নাট্যকার, অভিনেতা মণীশ মিত্র স্মৃতি শেয়ার করেছেন-‘ তাকে জীবনের প্রথম একটি নাটক পড়ে শোনাতে গিয়েছি। বাসায় গিয়ে দেখি, ঠিক আমার পড়ার উপযোগী করে সাজিয়ে রাখা একটি টেবিল। তাতে টেবিল ল্যাম্পও। জলের গেলাসে জল আছে। এরপর যেন পাথরের একটি প্রতিমা, স্থির হয়ে শুনছেন একটি নতুন লেখা নাটক।” তার আরেক স্মৃতিতে অছে-‘নন্দীগ্রামে গাড়ি যাওয়ার পথে বাধা। এক মুহূর্ত ভেবেই শাঁওলিদি একজনের বাইকের পেছনে উঠে বসলেন।’
এই শাঁওলি মিত্রের প্রয়াণে বাংলা নাট্যজগতের প্রধান তারকা শম্ভু মিত্র ও তার স্ত্রী তৃপ্তি মিত্রের রক্ত প্রবাহ থেমে গেল। তাদের হাত ধরে চলা রঙ্গমঞ্চের যুগটি শেষ হলো। তিনি নিজেকে শুধু বাংলা নয়, সারা দেশের শিল্পমহলে একটি বিশিষ্ট নাম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। একটি ভিন্ন প্রতিভা-যার নিখুঁত অভিনয়ের সঙ্গে জড়িয়ে আছে অবিস্মরণীয় শিক্ষা, নাট্যকলার প্রতি অপরিসীম শ্রম, নিজের গভীর সংযম , তীব্র শৃঙ্খলা। তাতেই শাঁওলি মিত্র ছিলেন একক ও একা।
(ভারতের বিভিন্ন বাংলা সংবাদমাধ্যমের ওয়েবসাইট অবলম্বনে)