শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪ | ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
Dhaka Prokash
Header Ad

‘রাণী কিন্তু রাণী নয়’

তার জন্ম সালটি নেই উইকিপিডিয়াতে। ভারত বিভাগের বছরে-দেশভাগের সময়ে একমাত্র মেয়ের জন্ম হলো বলে বাবা ভারতীয় নাট্য আন্দোলনের প্রবাদ পুরুষ শম্ভু মিত্র ও মা বিখ্যাত নাট্য ব্যক্তিত্ব তৃপ্তি মেয়ের জন্মের তারিখটি লিখতে ভুলে গিয়েছিলেন কী না কে জানে! তবে তারা তাদের ঔরসজাত সন্তানের ভেতরে অভিনয়ের তুমুল নেশা ঠিকই ঢুকিয়ে দিতে পেরেছিলেন। এই শাঁওলি মিত্র ছোট থেকেই উইংসের আড়ালে ও সামনে চলাফেরা করেছেন। মঞ্চের আলো অঁধারের জীবন তাকে এতোটাই বুঁদ করেছে, ভালোবাসার হাতছানিতে টেনেছে যে, একেবারে ছেলেবেলা থেকে অভিনয়ে হয়েছেন দারুণ সাবলীল।

ফলে সিনেমার রূপালি পর্দাকে নয়, দূরদর্শনের বোকাবাক্সকে নয়, মঞ্চে অভিনয়কেই নিয়েছেন প্যাশন হিসেবে। ছোটকালে কাজ করেছেন রবীন্দ্রনাথের বিখ্যাত ‘ডাকঘর’ নাটকে, তাও আবার অমলের ভূমিকায়। একটি মেয়ে হয়ে ছেলে হওয়া কী যে কষ্ট ওই বয়সের কোনো অভিনেত্রীর জন্য, যিনি করেছেন তিনিই জানেন। তবে অনেক প্রশংসা ও মানুষের ভালোবাসা পেয়ে থিয়েটারের বীজ পাকাপোক্ত হয়েছে তার ভেতরে। নিজের জীবনের স্মৃতি ‘দিদৃক্ষা’ বইতে শাঁওলি মিত্র বলেছেন-“ছেলেবেলা থেকে অসুখ, বিসুখ লেগেই থাকত। রেডিয়োতে যখন ‘অমল’ করতে হল, তখন আমি খুব অসুস্থ থাকতাম। প্রায়ই বিছানায় শুয়ে, বসে কাটত। মা এক দিন রেডিয়োতে অমল করতে হবে বলে আবার পড়বার জন্য ‘ডাকঘর’ বইটা বিছানায় দিয়ে গেল। সেদিন পড়ে কাঁদতে লাগলাম।”

পারিবারিক উত্তরাধিকার নয়, রীতিমতো অভিনয়ের কলা তিনি শিখেছেন রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখান থেকেই নাটকে স্নাতকোত্তর। তবে দারুণ স্মার্ট, অসম্ভব এই প্রতিভা যে সিনেমাতে অচল তা নয়। দারুণ সচল হিসেবে রূপালি ভুবনে যাত্রা শুরু করেছিলেন। বিখ্যাত ঋত্বিক ঘটকের ‘যুক্তি, তক্কো আর গপ্পো’ ছবিতে। অভিনয় জীবনের একেবারে শুরুতে তিনি তাতে ‘বঙ্গবালা’ চরিত্রে অভিনয় করেছেন। একেবারে তরুণ বয়সের চরিত্রটি কেমন হয়েছে-সেটি দর্শকদের জন্য তোলা থাকলো। ম্যাজিক্যাল শাঁওলি মিত্রকে পাওয়া যাবে এক ঝলকে তাতে।

তবে সেখানে নয়, মঞ্চাভিনয়ের প্রতি ভালোবাসা ও বাবা শম্ভু মিত্র এবং মায়ের নাট্যধারা বয়ে বেড়ানোর যে অপূর্ব উত্তরাধিকার বর্তেছিল কাঁধে, সেটিকেই জীবনের আরাধনা হিসেবে মেনে নিয়েছেন তিনি। ফলে আর একটি ছবিতেও অভিনয় করেননি। আজকে সবাই একমুখে স্বীকার করেন-শাঁওলি মিত্র এই দায়িত্ব অত্যন্ত সাফল্যের সঙ্গে পালন করেছেন।

বাংলা রঙ্গমঞ্চের এই একনিষ্ঠ কমী পরম ভালোবাসা ও মা-বাবার নিষ্ঠায় বছরের পর বছর ধরে মঞ্চকে আলো করে রেখেছেন। প্রথমে কাজ করেছেন বাবার ও বাংলা নাট্য আন্দোলনের প্রধান প্রতিষ্ঠান ভারতীয় গণ নাট্য সংঘে। এরপর পেশাদার ক্যারিয়ার গড়ার দিকে ঝুঁকে পড়তে হয়েছে। গড়েছেন নিজের দল ‘পঞ্চম বৈদিক’। কোনোটিতেই পিছিয়ে থাকেননি। পঞ্চম বৈদিকেও একের পর এক ঝড় তোলা মঞ্চ নাটক উপহার দিয়েছেন দর্শকদের। তার বিখ্যাত নাটকগুলোর মধ্যে আছে-‘ডাকঘর’, ‘নাথবতী অনাথবৎ’, ‘একটি রাজনৈতিক হত্যা’, ‘পাগলা ঘোড়া’, ‘কথা অমৃত সমান’, ‘পুতুল খেলা’, ‘হ-য-ব-র-ল’, ‘লঙ্কাদহন’, ‘চন্ডালি’, ‘পাখি’, ‘গ্যালিলিওর জীবন’, ‘যদি আর এক বার’ ইত্যাদি। নাটকগুলোর প্রতিটিই দারুণ, দর্শক নন্দিত।

শাঁওলী মিত্র নামের থিয়েটার অন্ত:প্রাণটি আজীবন নিজেকে উজাড় করে দিয়েছেন বাংলা থিয়েটারে। উদাহরণ হিসেবে ‘নাথবতী অনাথবৎ’র কথা বলি। এরও অনেক দৃশ্য ভুলতে পারেন না দশকরা। একটির বিবরণ-‘তবলা তরঙ্গ বেজে উঠছে। বাজছে মন্দিরা, মৃদঙ্গ। মঞ্চে সার বেঁধে বসা জুড়ির দলের দিকে মুখটি ফিরে একটা কালো কাঠের জলচৌকির ওপরে দুলছে একটা লম্বা বেণী। একটা আলতা রাঙা পায়ের নূপুর তাল রাখছে ছন্দে। জুড়ির দল গান ধরেছে, ‘কিছু কথা বলতে চায় ও রে মন...।’ গানের শেষে কথক ঠাকরুণ পেন্নাম করে বলে উঠলেন ‘এক অভাগিনী মেয়ের কথা...রাণী কিন্তু রাণী নয়!’’ সেই রাণীর কথা কে বা ভুলতে পারে! অভিনয়ের জন্য তাতে কত যে ব্যথা সইতে হয়েছে।

ছোটবেলা থেকে তৃপ্তি মিত্রের ছাত্র, ভারতের বিখ্যাত ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামার অধ্যাপক শান্তনু বসুর মনে করেছেন-‘শাঁওলিদির এই নাটকে একদিন কলকাতার বাইরে শো ছিল। জেঠিমা (তৃপ্তি মিত্র) তখন খুব অসুস্থ। মেকআপ না তুলে ওই টানা কাজল চোখে চুলে জরির ফিতে বাঁধা অবস্থায় শাঁওলিদি চলে এসেছেন মায়ের সেবায়! সন্ধ্যাতে আবার শো। তাতে মেকআপ তোলার সময়টুকু যে বাঁচে!’

থিয়েটারের প্রতি এই ভালোবাসার জন্যই শাঁওলিকে আর কোনোকিছু টানেনি। তবে লিখতে হয়েছে তাকে অনেক। লেখক হিসাবে যথেষ্ট নামডাকও ছিল। বাবা অন্ত:প্রাণ মেয়ে ‘গণনাট্য, নবনাট্য, সৎনাট্য ও শম্ভু মিত্র’তে বাবার অভিনয় জীবন লিখেছেন। বঙ্গীয় আকাদেমির অভিধানের প্রসারেও তিনি কাজ করেছেন। মহান লেখক বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায়কে নিয়ে একের বেশি মূল্যবান কাজ আছে তার।

এই লেখার ভুবনে সাফল্যও আছে ১৯৯১ সালে ‘নাথবতী অনাথবৎ'র কল্যাণে। এটি তাঁকে এনে দিয়েছে মর্যাদাপূণ ‘আনন্দ পুরস্কা’র। তারও অনেক বছর পর বিখ্যাত লেখক মহাশ্বেতা দেবীর প্রয়াণের পর তার আসনে পশ্চিম বাংলা ‘বাংলা আকাদেমি’র সভাপতির দায়িত্বভার গ্রহণ করেছেন তৃণমূল কংগ্রেস ক্ষমতায় আসার পর। ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়কে পত্র লিখে পদটি থেকে অব্যাহতি চেয়েছেন। তবে শাঁওলি মিত্রকে খুব ভালোবাসেন মমতা। ফলে সে পদে ধরে রাখতে সরকারী তৎপরতা শুরু করতে হলো। নাচার হয়ে ২০১৮ সালের শুরুতে বাংলা আকাদেমি থেকে ইস্তফা দিয়ে দিলেন তিনি। আবার মুখ্যমন্ত্রীর অনুরোধে মাস কয়েকে ফিরে এলেন। মৃত্যুর পূর্বক্ষণ পর্যন্ত অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে কাজটি করে গিয়েছেন শাঁওলি মিত্র।

এর বাদেও ৭৪ বছরের দীঘ জীবনে অজস্র স্বীকৃতিতে সম্মানিত হয়েছেন তিনি। বাংলা ভাষার থিয়েটারের এই অসামান্য অভিনেত্রীকে তুমুল অভিনয় প্রতিভার জন্য ২০০৩ সালে ‘সঙ্গীত নাটক অ্যাকাডেমি পুরস্কার’ দেওয়া হয়েছে। তারও সাত বছর পর-২০০৯ সালে ভারতের সবচেয়ে বড় বেসামরিক পদক ‘পদ্মশ্রী’ লাভ করেছেন। তিনটি বছর পর, ২০১২ সালে এই অভিনয় প্রতিভা ও অবদানের জন্য লাভ করেছেন পশ্চিমবঙ্গের সবচেয়ে বড় বেসামরিক পদক ‘বঙ্গবিভূষণ’। ২০১১ সালে তিনি ছিলেন ‘রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সার্ধ্বশত জন্মবর্ষ উদ্যাপন কমিটি’র চেয়ারপারসন।

শাঁওলি মিত্র অভিনয়, লেখালেখি ও সমাজকর্মের বাইরে ভয়েজ আর্টিস্ট হিসেবেও কাজ করেছেন। তাঁর কন্ঠের জাদুতে বুঁদ হয়েছিলেন ওপারের বাঙালিরা। আকাশবাণী কলকাতাসহ বিভিন্ন রেডিওতে বহু শ্রুতি নাটকে অভিনয় করেছেন। নাটকে নানাভাবে নিজেকে নিবেদন করেছেন। একেবারে শেষ জীবনে শাঁওলি মিত্রের লেখা ও অভিনীত একাঙ্ক ‘সীতা' মুুগ্ধ করেছে নাট্যমোদীদের।

অনেক গুণের মানুষটির রাজনৈতিক বোধ ছিল অসাধারণ। বাবা ও মায়ের কাছ থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে যে অধিকার ও সাধারণের জন্য লড়াই করার অঙ্গীকার লাভ করেছেন, শাঁওলি মিত্র সেসব আজীবন বহমান রেখেছেন ভেতরে। দেশের ও রাজ্যের শোষিত, বঞ্চিত ও অবহেলিত মানুষের পাশে বারবার থেকেছেন । নামকরা মঞ্চাভিনেত্রী ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ভারত কাঁপানো সিঙ্গুর, নন্দীগ্রাম আন্দোলনের অন্যতম মুখ ছিলেন। আন্দোলনগুলোতে পরিবর্তনপন্থীদের অন্যতম ছিলেন তিনি। সিঙ্গুরের আন্দোলনে অনিচ্ছুক কৃষকদের প্রকাশ্যে সমর্থন করেছিলেন। বামপন্থীদের সরকারের বিরোধিতা করেছেন তিনি। এভাবে রাজনৈতিক মঞ্চে এলেও সরাসরি কোনো রাজনৈতিক দলে যুক্ত হননি কখনো। কাজ করেছেন তার দল ও নিজের ভুবন নিয়ে। পঞ্চম বৈদিকদের প্রধান ২০১৯ সালের মাঝামাঝি থেকে অসুস্থ। তবে কেন যে চিকিৎসা নিতে বরাবর অনীহা ছিল। গুরুতর অসুখেও হাসপাতালে ভর্তি হতে চাননি। শাঁওলি মিত্র নিউমোনিয়ায় ভুগছিলেন। এই রোববার বেলা ৩টা ৪০ মিনিটে রোগে ভুগে তার দেহঘড়ি চিরকালের মতো থেমে গিয়েছে। ৭৪ বছর বয়সে জীবন রঙ্গমঞ্চের লড়াই থেকে সরে গেলেন শম্ভু ও তৃপ্তি মিত্রের কিংবদন্তী মেয়ে মেয়ে শাঁওলি মিত্র।

জীবনের শেষ ইচ্ছাতেও বাবাকে অনুসরণ করেছেন তিনি। এই দুপুরে বাবার মতো সিরিটি মহাশ্মশানে তার শেষকৃত্যাবলী হয়েছে। তার আগেই দিনে, দিনে শরীর খারাপ হতে থাকায় একটি শেষ ইচ্ছাপত্র লিখে রেখেছিলেন। সেটি ২০২০ সালের বলে জানা গিয়েছে। শাঁওলি মিত্র তাতে তাঁর অসম্পূণ কাজগুলো শেষ করার গুরুভার প্রদান করেছেন মেয়ে, বিশিষ্ট নাট্যকর্মী ও তৃণমূলের রাজনীতিবিদ অর্পিতা ঘোষের ওপর। নিজের দাহের বিষয়ে তিনি বলেছিলেন, মারা যাবার পর তার মৃতদেহ যেন কেউ দেখতে না পারেন। শবযাত্রায় কোনো ফুলেরও প্রয়োজন নেই। এমন কোনো অহেতুক বাড়াবাড়িও যেন না হয়। বাবার মতো সাধারণ মানুষের ন্যায়, সবার অগোচরে তিনি শেষযাত্রা করবেন। এমনকী মুখাগ্নি শেষের আগে যেন কেউ জানতেও না পারেন। ফলে পরিবারের কয়েকজন, অর্পিতা ও সহযোদ্ধা, মানসপুত্র সায়ক চক্রবতী ছিলেন তার শেষ যাত্রায়। তারা তাকে শেষ তিনটি বছর পুরোপুরি দেখাশোনা করেছেন। আরো ছিলেন নাট্যব্যক্তিত্ব দেবেশ চট্টোপাধ্যায়। ২৫ বছর আগে-১৯৯৭ সালে বাবার মতো সবার আড়ালে, অনাড়ম্বর হয়ে চলে গেলেন মেয়ে।

জীবনের সব দায়িত্ব থেকে ছুটি নেওয়া শাঁওলি মিত্র জীবনের মঞ্চের মতো চুপিসারে বিদায় নিয়েছেন। তবে রেখে গিয়েছেন অনেক স্মৃতি কাছের ও দূরের মানুষদের জন্য। তাঁকে বাংলা নাট্যজগতের মহীরুহ জানিয়ে শোকবার্তায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন “শাঁওলিদির ইচ্ছা অনুসারে তাঁর প্রয়াণের খবর শেষকৃত্যের পর আমাকে দেওয়া হয়। আমি কাছের মানুষ হিসাবে তাঁকে মনে ধরে রাখলাম। বহুদিনের সহকর্মী ও সুহৃদ হিসেবে তিনি আমাদের মনের মণিকোঠায় থেকে যাবেন। তার অভিনীত ‘নাথবতী অনাথবৎ’, ‘কথা অমৃত সমান’র মতো সৃষ্টিকর্মগুলো বাংলার লোক মানসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।” আরো জানিয়েছেন, তিনি তাঁর বহুদিনের সহযোগী ছিলেন। সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম আন্দোলনে একসঙ্গে ছিলেন। কেন্দ্রের রেলমন্ত্রী থাকার সময়ও বিখ্যাত এই সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব তার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেছেন। তিনি বাংলা আকাদেমির সভাপতির দায়িত্বও খুব ভালোভাবে পালন করেছেন-স্মরণ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী।

জাতীয় কংগ্রেস সাংসদ অধীর চৌধুরী টুইটারে শোকবার্তায় লিখেছেন, ‘মহান নাট্যকার শাঁওলি মিত্র জীবনযুদ্ধ শেষ করে পরলোক গমন করলেন। বাংলা নাট্যজগত এক উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক হারাল। আমরা প্রতিবাদের এক উজ্জ্বল ব্যক্তিত্ব হারালাম। আমি খুব মর্মাহত।’

শাঁওলি মিত্রের প্রয়াণে গভীর শোকে আকুল পর্দা ও মঞ্চের জাতীয় পুরস্কার লাভ করা সুদীপ্তা চক্রবর্তী-‘তার কাছ থেকে অনেক আদর ও ভালবাসা পেয়েছি। কত কী আদর করে খাইয়েছেন। আমি যে তাঁর বন্ধু বিপ্লবকেতন চক্রবর্তীর মেয়ে। অনেককিছু শিখেছি-মঞ্চাভিনয়ের খুঁটিনাটিও। তারপরও ছোট্টবেলা থেকে সারাজীবন আমি অবাক চোখে তাকিয়ে দেখেছি তাঁর অভিনয়। তিনিই আমার নাটক দেখে ফোন করে খুব প্রশংসা করেছেন। আনন্দে কেঁদেছি। বড় হয়ে সিনেমায় একসঙ্গে একটি কাজ করার আর্জি নিয়ে গিয়েছিলাম, করেননি। তাই একসঙ্গে কাজ করার বা একেবারে সামনে থেকে তার অভিনয় দেখার সৌভাগ্য হলো না।’

নাট্যকার, অভিনেতা মণীশ মিত্র স্মৃতি শেয়ার করেছেন-‘ তাকে জীবনের প্রথম একটি নাটক পড়ে শোনাতে গিয়েছি। বাসায় গিয়ে দেখি, ঠিক আমার পড়ার উপযোগী করে সাজিয়ে রাখা একটি টেবিল। তাতে টেবিল ল্যাম্পও। জলের গেলাসে জল আছে। এরপর যেন পাথরের একটি প্রতিমা, স্থির হয়ে শুনছেন একটি নতুন লেখা নাটক।” তার আরেক স্মৃতিতে অছে-‘নন্দীগ্রামে গাড়ি যাওয়ার পথে বাধা। এক মুহূর্ত ভেবেই শাঁওলিদি একজনের বাইকের পেছনে উঠে বসলেন।’

এই শাঁওলি মিত্রের প্রয়াণে বাংলা নাট্যজগতের প্রধান তারকা শম্ভু মিত্র ও তার স্ত্রী তৃপ্তি মিত্রের রক্ত প্রবাহ থেমে গেল। তাদের হাত ধরে চলা রঙ্গমঞ্চের যুগটি শেষ হলো। তিনি নিজেকে শুধু বাংলা নয়, সারা দেশের শিল্পমহলে একটি বিশিষ্ট নাম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। একটি ভিন্ন প্রতিভা-যার নিখুঁত অভিনয়ের সঙ্গে জড়িয়ে আছে অবিস্মরণীয় শিক্ষা, নাট্যকলার প্রতি অপরিসীম শ্রম, নিজের গভীর সংযম , তীব্র শৃঙ্খলা। তাতেই শাঁওলি মিত্র ছিলেন একক ও একা।

(ভারতের বিভিন্ন বাংলা সংবাদমাধ্যমের ওয়েবসাইট অবলম্বনে)

Header Ad

কবে বিয়ে করবেন জানালেন তামান্না ভাটিয়া

ছবি: সংগৃহীত

মিল্ক বিউটিখ্যাত দক্ষিনি অভিনেত্রী তামান্না ভাটিয়া নতুন বছরে তার জীবনের একটি বিশেষ অধ্যায়ে পা রাখতে যাচ্ছেন। খলচরিত্র করে আলোড়ন তোলা অভিনেতা বিজয় ভার্মার সঙ্গে তার প্রেমের গুঞ্জন চলছিল অনেক দিন ধরেই। তবে এ নিয়ে কেউই মুখ খোলেননি। এবার তাদের সম্পর্ক নিয়ে খোলামেলা কথা বলেছেন তামান্না। এমনকি ২০২৫ সালে সাতপাকে বাঁধা পড়ার সম্ভাবনা আছে বলেও ইঙ্গিত দিয়েছেন।

সম্প্রতি ভারতীয় গণমাধ্যমের এক প্রোমোশনাল ইন্টারভিউতে তামান্না তার ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে জানান, প্রেমের সম্পর্কের জন্য জীবনে দুবার হৃদয় ভেঙেছে তার। সেই সময়টা তামান্নার জন্য খুবই ভয়াবহ ছিল।

তিনি আরও জানান, তিনি খুব কম বয়সে একজন ছেলের সঙ্গে প্রথম ভালোবাসায় জড়িয়েছিলেন এবং তার দ্বিতীয় সম্পর্কটি ছিল তার অভিনয় ক্যারিয়ারের শিখরে থাকা অবস্থায়। তবে সে সময় তিনি অনুভব করেন যে, সেই ছেলে তার সঙ্গে দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্কের জন্য সঠিক ব্যক্তি নয়।

তবে এত কিছুর পরও বাহুবলিখ্যাত তামান্না প্রেমিকের নাম প্রকাশ করেননি। এর আগে গুঞ্জন ছিল যে, তিনি ভারতীয় অভিনেতা বিজয় ভার্মার সঙ্গে ডেট করছেন। পাপারাজ্জিদের ক্যামেরায় বহুবার ফ্রেমবন্দি হয়েছেন তারা। যদিও নিজেদের এ সম্পর্ক আড়ালে রাখতে বদ্ধপরিকর দুজনই। এখন দেখার অপেক্ষা তামান্না জীবনসঙ্গী হিসেবে কাকে বেছে নেন।

সবশেষ তামান্না ভাটিয়াকে আইটেম গার্ল হিসেবে দেখা যায় অমর কৌশিক পরিচালিত ‘স্ত্রী ২’ সিনেমায়। এ সিনেমায় আরও অভিনয় করেন রাজকুমার রাও, শ্রদ্ধা কাপুর, পঙ্ক ত্রিপাঠিসহ আরও অনেকে।

Header Ad

পঞ্চগড়ে ৫০০ টাকায় সন্তান বিক্রি, অতঃপর যা ঘটল...

ছবি: সংগৃহীত

পঞ্চগড়ে ৫০০ টাকার বিনিময়ে নয় মাসের শিশু সন্তানকে দত্তক দেন শরীফা খাতুন নামে মানসিক ভারস্যমহীন এক মা। বিষয়টি জানতে পেরে গতকাল শুক্রবার (২২ নভেম্বর) সন্ধ্যায় ওই নবজাতককে উদ্ধার করে তার মায়ের কোলে ফিরিয়ে দিয়েছেন সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা।

সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাকির হোসেন বিষয়টি জানতে পেরে পুলিশের সহায়তায় ওই শিশুটিকে তার মায়ের কোলে ফেরত দেন।
মানসিক ভারসাম্যহীন নারী শরীফা খাতুন বোদা উপজেলার ময়দানদিঘী ইউনিয়নের জেমজুট মুসলিমবাগ এলাকায় তিন সন্তানকে নিয়ে ভাড়া বাড়িতে থাকেন। তিনি ভিক্ষাবৃত্তি করে সংসার চালান।

প্রতিবেশী ও পরিবারের সদস্যরা জানান, গত এক বছর আগে স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদ হয় শরীফা খাতুনের। এর পর সন্তানদের নিয়ে ভিক্ষাবৃত্তি করে চলত তার পরিবার।

গত মঙ্গলবার নিজের ৯ মাসের কন্যা সন্তানকে পঞ্চগড় পৌরসভার দক্ষিণ তেলিপাড়া এলাকায় একটি হলুদ খেতে রেখে ভিক্ষা করতে যান শরীফা খাতুন। এ সময় শিশুটিকে দেখতে পেয়ে উদ্ধার করে স্থানীয় রুনা আক্তার নামে এক নারী; একইসঙ্গে শরীফাকেও নিজ বাড়িতে নেন তিনি। রুনা নামে ওই নারীর নিজ সন্তান না থাকায় শিশুটিকে দত্তক নিতে চাইলে, ৫০০ টাকার বিনিময়ে রেখে চলে যান শরীফা।

এরপর চার দিন পর অবশেষে পুলিশ প্রশাসনের সহায়তায় নিজ পরিবারের কাছে ফিরেছে শিশুটি। বর্তমানে শিশুটিকে দেখভাল করছেন মানসিক ভারসামহীন শরীফার ১৬ বছরের বড় ছেলে নয়ন।

এ বিষয়ে শরীফার ছেলে নয়ন ইসলাম বলেন, গত চার দিন আগে মা বোনকে নিয়ে হঠাৎ পঞ্চগড়ে যান। পরে একসময় বাড়িতে একাই এসে ঘরে তালা লাগিয়ে বন্দি অবস্থায় থাকতে শুরু করেন। বোন কোথায় তা জানতে চাইলে কোনো কিছুই জানাচ্ছিলেন না।

পরে অনেক কৈশলে বোনের অবস্থান জানতে পারি। এরপর সেই বাড়িতে গিয়ে বোনকে ফেরত চাইলে তারা দিতে অস্বীকার করেন। আরও জানতে পারি মা বোনকে নেবেন না বললে তারা ৫০০ টাকা মাকে খেতে দিয়ে একটা কাগজে স্বাক্ষর করে নেন। শুক্রবার সাংবাদিক ও পুলিশ এসে তদন্ত করে আমার বোনকে আনতে নির্দেশ দিলে মাকে সঙ্গে নিয়ে বোনকে বাড়িতে নিয়ে আসি।

স্থানীয় মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, অনেক আগে থেকে ওই নারীকে দেখছি। তিনি ভিক্ষাবৃত্তি করে পরিবার চালান। তবে কয়েকদিন আগে নিজের সন্তানকে মানুষের কাছে দিয়ে প্রায় পাগল হয়ে বেড়াচ্ছিলেন।

কাজলা নামে স্থানীয় এক নারী বলেন, সকালে শরিফা আমার কাছে এসে আমার পা জড়িয়ে ধরেছেন আর বলেছেন আপু যেভাবেই পারো আমার মেয়েকে এনে দাও।

প্রতিবেশীরা বলেন, স্বামী না থাকায় পরিবারটা চালাতে শরীফা খাতুন ভিক্ষা করতেন। এর মাঝে এমন কাণ্ড ঘটে তিনি পাগল হয়ে গেছেন। তার তিনটা সন্তান। একটা ছেলে ও দুটি মেয়ে। এদের কি হবে আমরা জানি না। তবে সরকারি সহায়তা পেলে তাদের গতি হতো।

এ বিষয়ে পঞ্চগড় সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাকির হোসেন বলেন, আগের বিষয়টি আমাদের কেউ জানায়নি। খবর পাওয়ার পর পঞ্চগড় সদর থানার ওসিকে জানানো হয়। বিষয়টি পুলিশের হস্তক্ষেপে সুষ্ঠু সমাধান করে ভারসাম্যহীন নারীর কাছে তার বাচ্চা ফেরত দেওয়া হয়েছে।

তিনি আরও জানান, যেহেতু ওই নারীর বাড়ি বোদা উপজেলায়, সেখানকার ইউএনওকে জানিয়ে সরকারি সহায়তার ব্যবস্থা করা হবে।

Header Ad

অ্যান্টিগায় প্রথম দিন শেষে স্বস্তিতে টাইগাররা

ছবি: সংগৃহীত

অ্যন্টিগার পেস সহায়ক উইকেটে নতুন বলের বাড়তি সুবিধা বেশ ভালোভাবেই কাজে লাগিয়েছিল বাংলাদেশ। দিনের প্রথম সেশনে দ্রুত দুই উইকেট নিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে চাপে ফেলেছিল বাংলাদেশ। কিন্তু সময় গড়াতেই বাংলাদেশের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়ায় দুই ক্যারিবিয়ান ব্যাটার মিকাইল লুইস ও আলিক অ্যাথানেজকে। জুটি গড়ে দুজনের ছুটতে থাকেন শতকের পথে। কিন্তু দুজনের কারও প্রত্যাশা পূরণ হতে দেয়নি বাংলাদেশ। দিনের শেষভাগে নার্ভাস নাইন্টিতে দুজনকে মাঠ ছাড়া করে প্রথম দিনের ইতি টানে বাংলাদেশ।

টস হেরে শুরুতে ব্যাট করতে নেমে প্রথম দিন শেষে নিজেদের প্রথম ইনিংসে ৫ উইকেট হারিয়ে ২৫০ রান করেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। শেষ দিকে বৃষ্টি হানা দেয় ম্যাচে। বৃষ্টি থামার পর আলোক স্বল্পতায় ৮৪ ওভার হওয়ার পরই দিনের খেলা শেষ করেন আম্পায়াররা।

টস জিতে বোলিংয়ে নেমে মেডেন ওভারে শুরুটা ভালো করেন হাসান মাহমুদ। অন্যপ্রান্তে আরেক পেসার শরিফুল ইসলামও মেডেন ওভার নেন। উইকেটের দেখা না পেলেও ওয়েস্ট ইন্ডিজের দুই ওপেনার কার্লোস ব্রাথওয়েট ও লুইসকে বেশ কয়েকবার পরাস্ত করেন বাংলাদেশের দুই পেসার।

ইনিংসের অষ্টম ওভারে প্রথমবারের মতো বোলিংয়ে আনা হয় তাসকিন আহমেদকে। এই পেসারই প্রথম ব্রেকথ্রু দেন দলকে। ১৪তম ওভারে তাসকিনের অফ স্টাম্পে পড়ে একটু ভেতরে ঢোকা ডেলিভারিতে ডিফেন্স করেছিলেন ব্রাথওয়েট। তবে ওয়েস্ট ইন্ডিজের অধিনায়কের ব্যাটকে ফাঁকি দিয়ে বল আঘাত হানে পায়ে। বাংলাদেশের ফিল্ডারদের আবেদনে আম্পায়ার সাড়া দেন। যদিও তৎক্ষণাৎ রিভিউ নেন ব্রাথওয়েট। তবে সিদ্ধান্তের পরিবর্তন হয়নি।

তিনে নেমে টিকতে পারেননি কেসি কার্টি। ডানহাতি ব্যাটারকেও ফিরিয়েছেন তাসকিন। উইকেটে আসার পর থেকেই তাড়াহুড়ো করছিলেন তিনি। তাসকিনের মিডল এবং লেগ স্টাম্পের লেংথ ডেলিভারিতে ফ্লিক করার চেষ্টায় লিডিং এজ হয়ে মিড অনে থাকা তাইজুল ইসলামকে ক্যাচ দিয়েছেন কার্টি।

২৫ রানে দুই উইকেট হারানোর পর তৃতীয় উইকেট জুটিতে দলকে পথ দেখান লুইস ও কেভম হজ। তবে হজ ২৫ রান করে রান আউট হয়ে সাজঘরে ফিরলে ভাঙে ৫৯ রানের তৃতীয় উইকেট জুটি।

এরপর বাংলাদেশকে বেশ ভুগিয়েছে লুইস ও আথানজে জুটি। দুজনেই সেঞ্চুরির পথে ছিলেন। তবে সম্ভাবনা জাগিয়েও কেউই মাইলফলক ছুঁতে পারেননি।

ইনিংসের ৭৫তম ওভারে মিরাজের বলে বেরিয়ে এসে ছক্কা মারতে গিয়ে টাইমিংয়ে ভুল করেন লুইস। ব্যাটের কানায় লেগে বল যায় স্লিপে। ক্যাচ নিতে ভুল করেননি শাহাদাত হোসেন দিপু। নব্বইয়ের ঘরে ২৬ বল আটকে থেকে আউট হন লুইস। ফলে ভেঙে যায় ২২১ বলে ১৪০ রানের জুটি। ২১৮ বলে এক ছক্কা ও নয় চারে ৯৭ রান করেন এই ওপেনার।

এর কিছুক্ষণ পরই ফিরেছেন আথানজেও। তাইজুলের অফ স্টাম্পের বাইরের ডেলিভারি স্কুপের মতো খেলেছিলেন আথানজে। যদিও তেমন গতি না থাকায় তার ব্যাটে লেগে বল উপরে উঠে যায়। সহজ ক্যাচ নেন উইকেটরক্ষক লিটন। দশটি চার ও একটি ছক্কায় ১৩০ বলে ৯০ রান আসে বাঁহাতি এই ব্যাটারের ব্যাটে। তিন রানের মধ্যে দুই সেট ব্যাটারকে ফিরিয়ে লড়াইয়ে ফেরার সম্ভাবনা জাগায় বাংলাদেশ।

Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

কবে বিয়ে করবেন জানালেন তামান্না ভাটিয়া
পঞ্চগড়ে ৫০০ টাকায় সন্তান বিক্রি, অতঃপর যা ঘটল...
অ্যান্টিগায় প্রথম দিন শেষে স্বস্তিতে টাইগাররা
সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারালেন পরীমণির প্রথম স্বামী
বিচারের আগে আ.লীগের মাঠে থাকার সুযোগ নেই: উপদেষ্টা নাহিদ
মাকে হত্যার পর থানায় হাজির ছেলে
৮ ক্রিকেটারসহ ৯ জনকে নিষিদ্ধ করলো বিসিবি
উপদেষ্টাদের যাচ্ছেতাই কর্মকাণ্ড মেনে নেওয়া হবে না: রিজভী
ভিসা কবে উন্মুক্ত করবে সেটা ভারতের নিজস্ব ব্যাপার: হাসান আরিফ
জুরাইন রেলক্রসিং ছাড়লেন রিকশাচালকরা, ৪ ঘণ্টা পর ট্রেন চলাচল শুরু
পাঁচ দেশে যাওয়ার ব্যাপারে বাংলাদেশিদের জন্য সতর্কতা
সাফজয়ী নারী ফুটবলার আইরিনকে নওগাঁয় সংবর্ধনা
বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের স্কলারশিপ দেবে পাকিস্তান
বেনাপোলে সীমান্ত থেকে বিপুল পরিমাণ ফেনসিডিল উদ্ধার
পুলিশ-অটোরিকশা চালক সংঘর্ষ, ঢাকা-পদ্মা সেতু ট্রেন চলাচল বন্ধ
ভারতীয় সাবমেরিনের সঙ্গে মাছ ধরা নৌকার সংঘর্ষ, নিখোঁজ ২
সংসার ভাঙার দুদিন পরই সুখবর দিলেন এ আর রহমান
ঢাকায় পৌঁছেছেন বাইডেনের বিশেষ প্রতিনিধি
আ.লীগকে নির্বাচনের সুযোগ দেওয়ার বিষয়ে যা বললেন হাসনাত আব্দুল্লাহ
যুদ্ধবিধ্বস্ত লেবানন থেকে ফিরলেন আরও ৮২ বাংলাদেশি