স্মার্ট প্রযুক্তিতে মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুকে জানছে শিশু-কিশোররা
স্টেশনের প্ল্যাট ফরমে ট্রেনের সময়সূচির সঙ্গে ঘোষণা করা হচ্ছে ‘ভ্রাম্যমাণ রেল জাদুঘরের’। ট্রেনের মধ্যে জাদুঘর! অনেকেই প্রথমবারের মতো শুনছেন। আবার কেউ কেউ শুনেছেন কিন্তু সরাসরি দেখার সুযোগ পাননি। ব্যতিক্রমী এই জাদুঘর দেখতে ভিড় করছেন স্টেশনে অবস্থানরত যাত্রীরা। এই জাদুঘরে এসে আনন্দিত শিশু-কিশোররা। তাদের কৌতুহলী মনে স্মার্ট বাংলাদেশের স্মার্ট জাদুঘরের ইতিবাচক বার্তাও পৌঁছে দিচ্ছে রেল জাদুঘর। মহান মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুকে জানতে পারছে স্মার্ট ডিভাইসের মাধ্যমে।
গত ১৬ ডিসেম্বর থেকে রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনে ‘ভ্রাম্যমাণ রেল জাদুঘর’র কার্যক্রম চালু হয়েছে। রাজশাহীতে এই ব্যতিক্রমী জাদুঘর থাকবে আর মাত্র কয়েক দিন। ২৪ ডিসেম্বর সমাপনী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে রাজশাহী থেকে নতুন গন্তব্যে পাড়ি দেবে এই জাদুঘর।
সরজমিনে দেখা যায়, শিশু-কিশোররা জাদুঘরের ভেতরে কানে হেডফোন লাগিয়ে চেয়ে আছে মনিটরের দিকে। যেখানে মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন তথ্য চিত্র ভেসে আসছে। আর শুনতে হলে কানে হেডফোন লাগাতে হচ্ছে।
কানে হেডফোন লাগিয়ে মনিটরে মুক্তিযুদ্ধের তথ্য চিত্র দেখছিল আশফীর আহম্মেদ (৬)। সে নগরীর একটি কিন্ডার গার্ডেন স্কুলের ছাত্র। বাবাকে স্টেশনে এগিয়ে দিতে এসে মায়ের সঙ্গে রেল জাদুঘরে ঠুকেছে সে।
আশফীর জানায়, সে রাজশাহীর বরেন্দ্র জাদুঘরে গেছে। জাদুঘর বলতে সে দৃশ্যমান সংগ্রহশালাই বুঝত। তবে রেল জাদুঘর তার ধারণা বদলে দিয়েছে। ভার্চুায়ালি দেখার পাশাপাশি এত সুন্দর উপস্থাপনা এর আগে কখনো দেখেনি সে। নতুন অভিজ্ঞতাই সে বিস্মিত হয়েছে।
স্মার্ট প্রযুক্তির এই জাদুঘরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সংগ্রামী জীবন, মহান ভাষা আন্দোলন, ৬ দফা, ৬৯-এর গণ আন্দোলন, ৭০ এর নির্বাচন, স্বাধীনতা সংগ্রাম, মহান মুক্তিযুদ্ধ ও মহান বিজয় দিবসের নানা ইতিহাসের তথ্য দিয়ে সাজানো হয়েছে রেল জাদুঘর।
মুজিব জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ, অধিকার আদায়ে আন্দোলন, সংগ্রাম এবং তার অসামান্য কর্মজীবন প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে এই ব্যতিক্রমধর্মী ভ্রাম্যমাণ জাদুঘর নির্মাণ করে বাংলাদেশ রেলওয়ে। যার নাম দেওয়া হয়েছে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ভ্রাম্যমাণ রেল জাদুঘর’। যেটা অনেকের কাছে ‘স্মার্ট জাদুঘর’ হিসেবেও পরিচিতি পাচ্ছে।
রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনের ১ নম্বর প্ল্যাটফর্মে এই জাদুঘরটি রাখা হয়েছে। সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সবার জন্য উন্মুক্ত এই জাদুঘর। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত জাদুঘরটিতে এক প্রান্তে রয়েছে জয়বাংলা স্লোগানের আদলে তৈরি করা সৃজনশীল একটি বুক শেলফ। সেখানে শোভা পাচ্ছে বঙ্গবন্ধুর উপর রচিত ৬২টি বই। বুকশেলফের পাশেই রয়েছে বঙ্গবন্ধুর হাতে লেখা ছয়টি চিঠি। যেটা সামনে রাখা চেয়ারে বসে পড়ার সুযোগ পাচ্ছে দর্শনার্থীরা।
জাদুঘরটিতে মোট ৩৬টি ফ্রেম আছে। তবে ১২টি গ্যালারিতে এসব ইতিহাস ভিডিও ও অডিও সিস্টেমে উপভোগ করতে পারছেন দর্শনার্থীরা। অন্য ফ্রেমে শোভা পাচ্ছে বঙ্গবন্ধুর পৈত্রিক বাড়ির ছবি, ব্যবহৃত চশমা, দলের প্রতীক নৌকা, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, বঙ্গবন্ধুর প্রিয় তামাক পাইপ, মুজিব কোট, মুজিব শতবর্ষের লোগো, বঙ্গবন্ধুর লেখা বই, মুজিবনগর স্মৃতিস্তম্ভ, পাকিস্তানিদের আত্মসমর্পণ, জাতীয় স্মৃতিসৌধ ও বঙ্গবন্ধুর সমাধি সৌধের প্রতিচ্ছবি।
রাজশাহী কলেজের শিক্ষার্থী শাহাদাত হোসেন জানান, তিনি বড় এক ভাইয়ের মাধ্যমে এই জাদুঘর সর্ম্পকে জানতে পেরেছেন। তাই দুই বন্ধু মিলে ঘুরতে এসেছেন। ডেকোরেশনটা তার অনেক ভালো লেগেছে। তিনি বলেন, ‘ভিডিও দেখে ও এমন উপস্থাপনায় মুহূর্তের জন্য মনে হচ্ছিল সেগুলো স্বচক্ষে দেখছি।’
এই জাদুঘরের তত্ত্বাবধায়ক কর্মকর্তা পলাশ হোসেন জানান, ভ্রাম্যমাণ জাদুঘরটি গত ১ আগস্ট গোপালগঞ্জ শহর রেলওয়ে স্টেশনে পরিদর্শনের মধ্য দিয়ে যাত্রা শুরু করে। এরপর থেকেই নির্ধারিত শিডিউল অনুযায়ী দেশের বিভিন্ন স্টেশনে ঘুরে বেড়াচ্ছে এই জাদুঘর। রাজশাহীতে ১৬ ডিসেম্বর থেকে অবস্থান করছে। আগামী শনিবার (২৪ ডিসেম্বর) পর্যন্ত অবস্থান করবে। এখন পর্যন্ত রাজশাহীতে খুবই ভালো সাড়া পাওয়া গেছে। বিশেষ করে শিশু-কিশোরদের কৌতুহল দেখার মতো।
এসএন