খেজুরের রস থেকে গুড় তৈরিতে ব্যস্ত গাছিরা
ঘাসের ডঙায় শিশির বিন্দু। সকালে চারদিকে হালকা কুয়াশা। এই শিশির, কুয়াশা যেন জানান দিচ্ছে হেমন্ত এসে গেছে। হেমন্তের সকালে জয়পুরহাটে খেজুর রস থেকে সুস্বাদু গুড় তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন গাছিরা। প্রতি বছরের মতো এই বছরও রস সংগ্রহের জন্য খেজুর গাছ প্রস্তুতের কাজ চলছে। জেলার বিভিন্ন অঞ্চলের গাছিরা এখন রস সংগ্রহে ব্যস্ত।
জানা গেছে, আসন্ন শীত মৌসুমকে সামনে রেখে জেলায় খেজুরের রস থেকে গুড় তৈরি করতে রাজশাহী জেলার বাঘামারা এলাকা থেকে এসেছেন অনেকে। তারা এই জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করেন। এ ছাড়া প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে গুড় উৎপাদন ও বিপণনের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন স্থানীয় অনেকেই। গাছ তোলার পর এখন রস সংগ্রহের পরিমাণও বাড়ছে। আর গাছিদের উৎপাদিত গুড় ব্যবসায়ীদের হাত ঘুরে পরিবহনের মাধ্যমে জয়পুরহাট থেকে দেশের নানা প্রান্তে পৌঁছে যাচ্ছে।
খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করে গুড় তৈরি হয়। আবহমান গ্রামবাংলার এ ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে শীতের সকালে সূর্য যখন মিটমিট করে আলো ছড়ায় তার আগেই গাছিরা বেরিয়ে পড়েন খেজুরের রস সংগ্রহে। এরপর সংগৃহীত রস জ্বাল দিয়ে তৈরি করা হয় সুস্বাদু পাটালি ও লালি গুড়। তারপর এসব গুড় বিক্রি করা হয়। এতে চাঙ্গা হয় গ্রামীণ অর্থনীতির চাকা।
জানা গেছে, শীত মৌসুম আসলেই জয়পুরহাটের পাঁচবিবি, ক্ষেতলাল, কালাই, আক্কেলপুর সদর উপজেলার অনেক মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িয়ে পড়েন। এবারও এমনটাই দেখা গেল। ভালো দাম পেতে গাছিরাও রস থেকে ভালো মানের গুড় তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
খেজুরের রস সংগ্রহকারী হেলাল হোসেন জানান, এ জেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করে গুড় তৈরি করি। আর প্রতি গাছ থেকে ৩ থেকে ৪ কেজি খেজুরের রস সংগ্রহ করতে পারি। প্রতি কেজি ডিকা গুড়ের দাম ৩০০ টাকা দরে বাজারে বিক্রি করি।
গুড় কিনতে আসা আমজাদ মন্ডল জানান, এখানে নির্ভেজাল খেজুরের গুড় পাওয়া যায়। তাই কয়েক কেজি গুড় কিনতে এসেছি। তবে গত বছরের চেয়ে এবারের গুড়ের দাম বেশি। তবুও ভালো গুড় বিধায় কিনতেছি।
এ বিষয়ে জেলা বিপণন কর্মকর্তা কার্যালয়ের মাঠ ও বাজার পরিদর্শক মো. সাখাওয়াত হোসেন জানান, বাজারে কেউ ভেজাল গুড় কিংবা অতিরিক্ত মূল্যে গুড় বিক্রি করতে না পারে তার জন্য আমাদের পক্ষ থেকে নিয়মিত বাজার মনিটরিং করা হচ্ছে।
এ ব্যাপারে জেলা কৃষি উপপরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম জানায়, জয়পুরহাট জেলার পাঁচটি উপজেলায় ১০ হাজার খেজুর গাছ থেকে প্রতিদিন ২ হাজার ৫০০ কেজি খেজুর গুড় উৎপাদন করা হচ্ছে। খেজুর গাছের জন্য বাড়তি কোনও পরিচর্যার প্রয়োজন হয় না বলে কৃষি বিভাগ কৃষকদের বাড়ির আশপাশ, জমির আইল, পুকুরপাড় এবং সড়কের ধারে খেজুর গাছ লাগানোর পরামর্শ দিচ্ছে। পরিত্যক্ত জমিতে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে খেজুর বাগান গড়ে তোলা হলে কৃষকেরা লাভবান হবেন।
এসআইএইচ