স্ত্রীর জন্য ‘মোহিনীতাজ’ বানালেন চিকিৎসক
মুঘল সম্রাট শাহজাহানের স্ত্রী মমতাজের প্রতি ভালোবাসার নিদর্শন হিসেবে নির্মাণ করেছিলেন বিখ্যাত আগ্রার তাজমহল। তেমনি ঠাকুরগাঁওয়ের একজন চিকিৎসক তার স্ত্রীর প্রতি ভালোবাসার নিদর্শন হিসেবে তৈরি করেছেন ‘মোহিনী তাজ’। ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার আখাঁনগর ইউনিয়নের চতুরাখোর গ্রামের মাধবীকুঞ্জে দৃষ্টিনন্দন এ মোহিনী তাজ ভবন নির্মাণ করেন চিকিৎসক ফিরোজ জামান জুয়েল। স্থপতি, প্রকৌশলী ও নকশাবিদের ভূমিকা পালন করেন চিকিৎসক ফিরোজ নিজেই। নিজের স্বপ্ন, পরিবারের প্রতি দায়িত্ব, নারী জাতির প্রতি শ্রদ্ধা ও স্ত্রীর প্রতি অফুরন্ত ভালোবাসাকে উৎসাহ ও সাহস হিসেবে নিয়েই মোহিনী তাজ নির্মাণের কাজ শুরু করেন তিনি।
তাই তো চিকিৎসক ফিরোজ জামান জুয়েল তার দৃষ্টিনন্দন মোহিনী তাজকে নিয়ে ছন্দে ছন্দে লিখেছেন-
‘গগনবিদারী ভুবন রাজ,
মাধবীকুঞ্জে মোহিনী তাজ।
শিল্পশৈলী কারুকাজ,
দিগ্বিজয়ী মোহিনী তাজ।’
চিকিৎসক ফিরোজ জামান জুয়েল চিকিৎসার পাশাপাশি রচনা করেছেন ‘স্বপ্নের প্রাবন্ধিক কাব্য’ ও ‘চিঠিহীন খাম’ নামের দুটি কবিতার বই।
২০১৭ সালের নভেম্বর মাসে আনুষ্ঠানিকভাবে সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে মোহিনী তাজ। অবসর সময় কাটাতে মোহিনী তাজ দেখার জন্য প্রতিদিন হাজারো দর্শনার্থী ভিড় জমান।
মোহিনী তাজের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে চিকিৎসক ফিরোজ জামান জুয়েল ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, মোহিনী শব্দের অর্থ আকর্ষণীয়, মোহনীয়, আবেদনপূর্ণ ও মমতাময়ী। মোহিনী তাজ আমি উৎসর্গ করেছি আমার প্রিয়তম স্ত্রী চিকিৎসক জেসমিন রহিমকে। সেই সঙ্গে আমার পরিবারের নারীদের যেমন আমার মা, বোন ও অন্য নারীদের। তাই সার্বিক অর্থে সমগ্র নারীকূলের প্রতি সম্মান জানাতে নামকরণ করা হয় মোহিনী তাজ।
মোহিনী তাজ দূর থেকে দেখে মনে হবে তিনতলা বাড়ি। কিন্তু চিকিৎসক জুয়েলের কাছে এটা একটা শিল্প। মোহিনী তাজের কারুকাজ ও নকশার মাধ্যমে জুয়েল তুলে ধরেছেন তার জীবনের ইতিহাস, জীবনের গুরত্বপূর্ণ কিছু সময়, জীবন-দর্শন, পরিবার, দেশ ও মানুষের মননশীলতা। পৃথিবীর কিছু মৌলিক উপকরণ যেমন জল-স্থল, সূর্য, চাঁদ, তাঁরা, সাত আসমান ও রংধনু দিয়ে ভবনের শৈল্পিক কারুকাজ করা হয়েছে।
মোহিনী তাজ নির্মাণের কারণ জানতে চাইলে চিকিৎসক জুয়েল বলেন, আমার বিয়ের ১২ বছর পরেও বাবা হতে পারিনি। একদিন ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালের এমারজেন্সিতে নাইট ডিউটি করার সময় অল্প ঘুমের মাঝে একটি সুন্দর স্বপ্ন দেখলাম। তিন মাস পর আকস্মিকভাবে জানতে পারলাম আমি বাবা হচ্ছি। তখন সেইদিন স্বপ্নে একটি ঘর দেখেছিলাম। স্বপ্নে দেখা ঘরটি হচ্ছে এই মোহিনী তাজ।
স্ত্রী জেসমিন রহিম সম্পর্কে তিনি বলেন, জেসমিন শুধু আমার স্ত্রী এটুকু বললে ভুল হবে। আজ তারই অনুপ্রেরণা আমি। আমার প্রতিটি কাজে তার অনুপ্রেরণা রয়েছে। আমাদের স্বপ্নের মোহিনী তাজ একসময় নিদর্শন হয়ে থাকবে এই অঞ্চলের মানুষের কাছে।
মোহিনী তাজের দৃষ্টিনন্দন কারুকাজ সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে চিকিৎসক জুয়েল এখানে ব্যবস্থা করেছেন কমিউনিটি সেন্টার, শিশুদের বিনোদন পার্ক ও পিকনিক স্পটের। প্রতিদিন হাজার হাজার দর্শনার্থীর ভিড়ে মুখরিত হয়ে থাকে মোহিনী তাজ।
স্ত্রী জেসমিন রহিম বলেন, আমার স্বামী একজন স্বপ্নবাজ মানুষ। বিয়ের পর থেকেই তার পরিকল্পনাগুলো আমার খুবই ভালো লেগেছে। প্রতিনিয়ত স্বপ্ন দেখত জুয়েল সন্তানের বাবা হবে। দীর্ঘ ১২ বছর পর আমাদের ঘরে প্রথম সন্তান জন্ম নেয়। সেই থেকে জুয়েলের প্রতিটি স্বপ্ন পূরণের জন্য নিজের সাধ্যমতো উৎসাহ দিই। তার স্বপ্নের মোহিনী তাজ তৈরির ক্ষেত্রে সবসময় পাশে থেকে অনুপ্রেরণা দিয়েছি। আসলে মানুষ স্বপ্ন নিয়েই বাঁচে। আমার স্বামীর প্রতিটি স্বপ্ন পূরণে শেষ পর্যন্ত তার সঙ্গে থাকতে চাই আমি।
এসএন