রাঙামাটিতে দেশের সবচেয়ে বড় বুদ্ধমূর্তি
রাঙামাটির প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মাঝে নির্মিত হলো সিংহশয্যার গৌতম বুদ্ধের মূর্তি। বুদ্ধমূর্তিটি নির্মাণ হয়েছে রাঙামাটি থেকে ৭১ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত জুরাছড়ি উপজেলার বালুখালীমূখ এলাকার সুবলং শাখা বনবিহারে।
ইতোমধ্যে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বুদ্ধমূর্তি হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। বুদ্ধমূর্তিটির দৈর্ঘ্য ১২৬ ফুট, প্রস্ত ৪০ ফুট এবং উচ্চতা ৬০ ফুট। বিহার কমিটির দাবি এটিই দেশের সবচেয়ে বড় বৃদ্ধমূর্তি। আগামী ১৬, ১৭ ও ১৮ নভেম্বর তিন দিনব্যাপী কর্মসূচির মধ্যে দিয়ে বুদ্ধমূর্তিটির উদ্বোধন করা হবে। এ উপলক্ষে গ্রহণ করা হয়েছে ব্যাপক কর্মসূচি। এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন বিহার পরিচালনা কমিটির সভাপতি ধল কুমার চাকমা।
স্থানীয় ও ভিক্ষু সংঘের সূত্রে জানা গেছে, পুণ্যার্থীদের দেওয়া অর্থ দিয়ে এ বুদ্ধমূর্তির যাবতীয় নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়েছে। ২০১৩ সালের ৯ এপ্রিল তারিখে ভগবান বুদ্ধের মূর্তিটির নির্মাণকাজ শুরু করা হয়। মহাপরিনির্বাণপ্রাপ্ত সাধনানন্দ মহাস্থবির বনভান্তে জীবিত থাকাকালীন জুরাছড়ি উপজেলায় ধর্মপ্রচারে সফল হন। তার প্রচেষ্টায় উপজেলায় বসবাসরত মানুষ বৌদ্ধধর্মকে বিশ্বাসী করে তোলেন। যার কারণে বনভান্তের স্মৃতি রক্ষার্থে ভগবান বুদ্ধের সিংহশয্যার বুদ্ধমূর্তিটি জুরাছড়ি উপজেলা থেকে ভদন্ত শ্রীমৎ সাধানানন্দ মহাস্থবির বনভান্তে কর্তৃক শিষ্যলাভ ও বুদ্ধশ্রী মহাস্থবির কর্তৃক শিষ্যলাভ সব শিষ্যমণ্ডলী ও জুরাছড়ি উপজেলাবাসীর উদ্যোগে বুদ্ধমূর্তিটি নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। সম্পূর্ণ পুণ্যার্থীদের দেওয়া অর্থ দিয়ে নির্মিত হয় বুদ্ধমূর্তিটি। নির্মাণকাজ শেষ হতে পৌনে ৪ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। বুদ্ধমূর্তিটি নির্মাণে সর্বদা দায়িত্বে থাকেন সুবলং শাখা বনবিহারের বিহার অধ্যক্ষ ভদন্ত শ্রীমৎ বুদ্ধশ্রী মহাস্থবির ও রাজবন বিহারের জ্যেষ্ঠ ভিক্ষু ভদন্ত শ্রীমৎ জ্ঞানপ্রিয় মহাস্থবির।
বুদ্ধমূর্তিটির তথ্য জানাজানি হলে ভগবান বুদ্ধের অনুসারী পুণ্যার্থীরা বিহারে যাওয়া শুরু করেছেন পার্বত্য চট্টগ্রামের বুকে এত বড় বুদ্ধমূর্তি নির্মাণকে সাধুবাদ জানিয়েছেন পুণ্যার্থীরা। বুদ্ধমূর্তির দর্শনে যাওয়া এক পুণ্যার্থী পুষ্প চাকমা বলেন, 'বুদ্ধমূর্তির নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে শুনে সোমবার কয়েকজন মিলে বিহারে গিয়েছিলাম।এতবড় বুদ্ধমূর্তি জীবনে কখনো দেখিনি। জুরাছড়ি এখন সবচেয়ে আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে বুদ্ধমূর্তির কারণে।'
ওই এলাকার স্থানীয় বিকাশ চাকমা বলেন, ‘এই বুদ্ধমূর্তি নির্মাণে মানুষের যে আগ্রহ, মানুষের মনে যে শ্রদ্ধা ও বিশ্বাস নিয়ে কায়িক শ্রম ও অর্থ দান করেছে আমার মনে হয় বুদ্ধ মূর্তিটি ত্যাজী হয়েছে। তাই কেউ যদি মনে বিশ্বাস ও অগাধ শ্রদ্ধার সহিত কোনো কিছু মানত করে বুদ্ধ মূর্তিতে পূজা করে তার ফলপ্রসু সফল হবে।’
শুধু উপসনাই নয়, মানুষ বিহারে যায় মনের সব গ্লানি মুছে দিয়ে পবিত্রতাকে গ্রহণ করতে। আর নিজের মনকে পরিশুদ্ধ করতে। এসব বাদেও সারা পৃথিবীর মানুষের মাঝে বৌদ্ধ ধর্ম প্রচার ও প্রসারের জন্য এ বুদ্ধমূর্তি গুরুত্ব পাবে বলে মন্তব্য করেন, সুবলং শাখা বনবিহার পরিচালনা কমিটির সভাপতি ধল কুমার চাকমা বলেন, ‘বুদ্ধমূর্তির নির্মাণের প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে মহাপরিনির্বাণপ্রাপ্ত সাধনানন্দ মহাস্থবির বনভান্তের স্মৃতি রক্ষার্থে। তিনি জুরাছড়িতে বৌদ্ধধর্ম প্রচারে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখেন। যার কারণে জুরাছড়ি উপজেলাবাসীর শ্রদ্ধাদানে (দেওয়া অর্থ) প্রায় পৌনে ৪ কোটি টাকা উত্তোলন করে বুদ্ধমূর্তিটি নির্মাণকাজ শেষ হচ্ছে।
দীর্ঘ ১০ বছর ধরে সিংহশয্যার ভগবান বুদ্ধের মূর্তিটি নির্মাণে ভূমিকা রাখেন সুবলং শাখা বনবিহারের বিহার অধ্যক্ষ ভদন্ত শ্রীমৎ বুদ্ধশ্রী মহাস্থবির ও রাজবন বিহারের জ্যেষ্ঠ ভিক্ষু ভদন্ত শ্রীমৎ জ্ঞানপ্রিয় মহাস্থবির এ দুইজন ভিক্ষু। এবিষয়ে জানতে চাইলে জ্ঞানপ্রিয় মহাস্থবির বলেন, ‘২০১৩ সালের ৯ এপ্রিল তারিখে ভগবান বুদ্ধের বুদ্ধমূর্তিটির নির্মাণকাজ শুরু করা হয়। দীর্ঘ ১০ বছর ধরে নির্মাণকাজ শেষে চলতি মাসে উদ্বোধনের আয়োজন করা হয়েছে। বুদ্ধমূর্তিটির দৈর্ঘ্য ১২৬ ফুট, প্রস্ত ৪০ ফুট ও উচ্চতা ৬০ ফুট। এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ভগবান বুদ্ধের সিংহশয্যার বুদ্ধমূর্তি।’
তিনি আরও বলেন, ‘এ বুদ্ধমূর্তি নির্মাণে উপজেলাবাসী অনেক শ্রম দিয়েছেন। তাদের ভক্তি, শ্রদ্ধা আর পরিশ্রমের কারণে বুদ্ধমূর্তিটির নির্মাণ সফল হয়েছে। এ বুদ্ধমর্তি নির্মাণের ফলে বৌদ্ধধর্ম অনুসারীরা ভগবান বুদ্ধকে ও সাধনানন্দ মহাস্থবির বনভান্তেকে পূজা করতে পারবে।’
সুবলং শাখা বনবিহারের বিহার অধ্যক্ষ ভদন্ত শ্রীমৎ বুদ্ধশ্রী মহাস্থবির ভিক্ষু বলেন,‘ভগবান বুদ্ধের বুদ্ধমূর্তিটি একটি স্থাপনার উপর নির্মিত হয়েছে। যার দৈর্ঘ্য ১২৬ ফুট। বাংলাদেশের মধ্যে এটিই সবচেয়ে বড় বুদ্ধমূর্তি। বুদ্ধমূর্তিটির নিচের অংশে বনভান্তের স্মরণে লাইব্রেরি, বনভান্তের স্মৃতিসমূহ ও ভগবান বুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত যাদুঘর তৈরি করা হয়েছে।’
এসএন