রিকশার চাকা ঘুরলেও চলছে না দুলালের সংসার
দুপুর ১২টা তবুও যেন জয়পুরহাট শহরে হালকা কুয়াশায় জানান দিচ্ছে শীতের আগমন। তবে এর আগেই আর্থিক সংকটের মুখে পড়েছে দিন আনা দিন খাওয়া দুলাল হোসেনের সংসার জীবন। তিনি পেশায় একজন রিকশাচালক। তার রিকশার চাকা ঘুরলেও অর্থের অভাবে চলে না সংসার। তাই চিন্তায় কপালে ভাঁজ দিয়ে বসে আছেন শহরের পাঁচুরমোড়ে। তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে আছেন কখন যাত্রী পাবেন। আশায় বুক পেতে আছেন আজকের ইনকামের টাকা দিয়ে বাজার করে নিয়ে বাড়িতে যাবেন।
দুলাল হোসেনের বাড়ি জয়পুরহাট সদরের রাঘবপুর গ্রামে। তার পরিবারের সদস্য সংখ্যা ছয়জন। দুই সন্তানকে মাদ্রাসায় ভর্তি করিয়েছেন তিনি। বয়স্ক বাবা-মাকেও নিজের পরিশ্রমের টাকা দিয়ে সেবা-যত্ম করেন।
দুলাল হোসেন জানান, দেশে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের পূর্বে তিনি গাছ ও বাঁশের ব্যবসা করার জন্য গ্রামীণ ও আশা ব্যাংক থেকে ৫০ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছিলেন। কিন্তু করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধির কারণে লকডাউনে তার ব্যবসায় লোকসান হয়। এতে তিনি চরম সংকটের মধ্যে পড়েন। পরে আত্মীয়-স্বজনের কাছে ধার-দেনা করে ব্যাটারিচালিত রিকশা নিয়ে জয়পুরহাট শহরের মধ্যে রিকশা চালান। প্রতিদিন রিকশা চালিয়ে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা ইনকাম করতে পারেন। সেই টাকাবাড়ির বিদ্যুৎ বিল, স্ত্রীর চিকিৎসার খরচ এবং প্রতি সপ্তাহে ব্যাংকের কিস্তির টাকা পরিশোধ করার জন্য তাকে পাহাড় সমান চিন্তা করতে হয়।
তিনি আরও জানান, মনে পড়ে না কতদিন আগে মাংস খেয়েছি। শাক-আলু ভর্তা প্রায়ই খেতে হচ্ছে। বাজারে যা কিনতে যাব সবকিছুর দাম বাড়তি। এক কেজি চাল কিনতে গেলে পকেটে টাকা থাকে না। তেলের দাম অনেক। তেল খরচ হবে বলে ভর্তা খাওয়া হয় বেশি। মাছও খুব একটা চোখে দেখি না। বাজারে কিনতে গেলে ভাবতে হয় কি বাদ দিয়ে কি কিনব। প্রতি মাসে সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ এবং বয়স্ক বাবা-মায়ের জন্য মাসে মাসে তার অনেক ওষুধের প্রয়োজন হয়। ফলে রিকশা চালিয়ে যা ইনকাম হয় তা খরচ করি এবং কিস্তির জন্য রেখে দিতে হয়। কিন্তু বর্তমানে বাজারে গেলে সবকিছুর দাম আগুন। এখন সংসারের খরচ চালাতে অনেক কষ্ট হচ্ছে।
শুধু দুলাল হোসেন নয়, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে জয়পুরহাটে এ রকম হাজারো রিকশাচালক রয়েছেন, যারা জীবন নিয়ে অস্বস্তিতে আছেন। বড় মাঝি পাড়া গ্রামের ৬০ বছর বয়সী রিকশাচালক খাইরুল ইসলাম বলেন, আমরা কষ্টের সাগরে ডুবে আছি। আমার কষ্টের কথা লিখে কি করবেন? আমার ভাগ্যের কোনও পরিবর্তন হবে না। আমাদের কষ্ট দেখার কেউ নেই। প্রতিদিন ৩০০ টাকা ইনকাম করি। এই টাকা দিয়ে সংসার চলবে?
কুটিবাড়ি ব্রিজের রেজাউল ইসলাম বলেন, আজ সকাল থেকে শহরের অলি-গলিতে রিকশা চালিয়ে ২০০ টাকা ইনকাম করেছি। আমার ৭ জন সদস্যের সংসার। এই অল্প টাকা দিয়ে সংসার চালানো বড় কঠিন সংগ্রাম।
এসআইএইচ