তবারক হোসেইন ও শামসুন্নাহার গ্রন্থাগার’ প্রতিষ্ঠার নেপথ্য কথা
[সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী, এক সময়ের সাংবাদিক তবারক হোসেইন নিজ এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গড়ে তুলেছেন বিশাল এক গ্রন্থাগার। দেশের খ্যাতনামা প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ বইয়ে সমৃদ্ধ এ গ্রন্থাগারের আনুষ্ঠানিক দ্বার উন্মোচন হয়েছে শনিবার (৮ জানুয়ারি)। অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্যে তিনি প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তোলার পেছনের কথা, স্বপ্ন ও পরিকল্পনা কথা জানিয়েছেন।]
কিছু ঋণ কখনই শোধ হয় না। মা বাবার এবং শিক্ষকের ঋণ সারাজীবন বয়ে বেড়াতে হয়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কাছেও ছাত্রের ঋণ অপরিসীম।
আমার শিক্ষা জীবন শুরু আমার গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয় নান্দুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। সে স্কুল থেকে পঞ্চম শ্রেণি পাশ করার পর ভর্তি হয়েছিলাম তৎকালীন শাহবাজপুর জুনিয়র হাইস্কুলে। তখন আজকের স্কুল চত্বরের উত্তরাংশে ছিলো স্কুল গৃহটি। গৃহের সামনে ছিল একটুখানি মাঠ। সামনের মাঠের পূর্ব দিকে ছিলো টিলা জঙ্গল। দক্ষিণে ছিলো জঙ্গলাকীর্ণ একটি বাড়ি, ওখানে কাউকে বসত করতে দেখিনি, তবে ঘর একটি ছিলো। পরে ওই অংশ স্কুলের সঙ্গে যুক্ত হয় ক্রয় সূত্রে। সায়পুর প্রাথমিক স্কুলের পশ্চিমাংশে ছিলো ঐ স্কুলের অবস্থান। পরে স্থান বদল হয়ে এ টিলায় এসেছে স্কুলটি। স্কুলটি শুরুতেই ছিল মিডল ইংলিশ স্কুল। ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত।
ভর্তি হবার পর তখন ক্লাস নিচ্ছিলেন আতাউর রহমান স্যার, [বর্তমানে প্রয়াত] উজানীপাড়া গ্রামের অধিবাসী আতাউর রহমান ছিলেন দীর্ঘদেহী অত্যন্ত সুপুরুষ। তিনি আমাকে ক্লাসের সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন। চারিদিকে চেয়ে দেখলাম আমার সহপাঠীরা আমার চেয়ে আরও বড়ো, আর কাউকে চিনি না।
সে সময় প্রধান শিক্ষক ছিলেন ভুগা গ্রামের আব্দুস শুকুর চৌধুরী (শিহাব মিয়া, প্রয়াত), সহকারী প্রধান শিক্ষক ছিলেন কালনী গ্রামের জনাব ছবেদ আলী (প্রয়াত), তৃতীয় শিক্ষক ছিলেন সদ্য প্রয়াত ভট্টশ্রী গ্রামের বীরেন্দ্র চন্দ্র দেব (পণ্ডিত বাবু, প্রয়াত), চতুর্থ শিক্ষক ছিলেন ভট্টশ্রী গ্রামের প্রয়াত মৌলভি ইরশাদ আলী, পঞ্চম শিক্ষক ছিলেন আতাউর রহমান আর সর্বকনিষ্ঠ শিক্ষক ছিলেন কুয়ারপারের শ্রী রমেন্দ্র চন্দ্র দাস। স্কুলের দপ্তরি সায়পুরের রসব আলী।
১৯৬২ সাল পর্যন্ত এ স্কুলে আমি অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করি। পরে আমি জলঢুপ হাইস্কুলে চলে যাই। তবে আমি মনে করি শাহবাজপুর হাইস্কুলে লেখাপড়া করার সময় আমার মন ও মনন অনেকাংশে তৈরি হয়। সে সময় স্কুলে নিয়মিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হতো, এখানে থাকতেই আমি পাঠ্য বইয়ের বাইরে অন্য বই পাঠ করতে শুরু করি। পরে বড়লেখার উজালা গ্রন্থাগারের সদস্য হয়ে বই পড়ার অভ্যাস চালিয়ে যাই। এখানে থেকেই সংস্কৃতি চর্চা করে আমার সংস্কৃতির প্রতি আকর্ষণ তৈরি হয় যা পরবর্তী জীবনে চলমান ছিল। এজন্যই এ স্কুলের কাছে আমার অনেক ঋণ। তাই স্কুলের পাশে থাকার চেষ্টা ছিল আমার।
১৯৭১ মুক্তিযুদ্ধে চলে গেলাম, ১৯৭১ এর ৬ ডিসেম্বর মুক্ত এলাকায় এসে দেখি স্কুল ঘরটি ধংসস্তুপ। মুক্তিযুদ্ধের সময়ে স্কুল ঘরটির নীচে হানাদার বাহিনী অস্ত্রাগার তৈরি করে আর বিজয়ের প্রাক্কালে এ অস্ত্রাগার ধ্বংস করে পালিয়ে যায়। এজন্য স্কুল ঘরটি বিধ্বস্ত হয়ে পড়ে। পরে এর উপর নতুন করে তৈরি করতে তৎকালীন প্রধান শিক্ষক আছদ্দর আলীর নেতৃত্বে এলাকাবাসী অনেক পরিশ্রম করে। তহবিল গঠনের ১৯৭৩ সালের দিকে স্কুল কমিটি দর্শনীর বিনিময়ে যাত্রা অনুষ্ঠানের উদ্যোগ নেয়। তখন দর্শনীর জন্য ‘আপ্যায়ন কর’ প্রযোজ্য ছিলো, এ থেকে অব্যাহতি লাভের জন্য প্রধান শিক্ষক আমাকে জানালে করমুক্ত যাত্রা অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করে দিই, যার ফলে একটা ভালো তহবিল যোগাড় হয়েছিল।
১৯৭৪ সালে আমি জেলা পরিষদের মাসিক মুখপাত্র ‘শ্যামল’ এর সম্পাদক থাকাকালে নিজে তৎকালীন জেলা প্রশাসক ইরশাদুল হক ও তৎকালীন জেলা পরিষদ সচিব আব্দুল লতিফকে সম্মত করে স্কুলের জন্য জেলা পরিষদ থেকে একটি বার্ষিক অনুদানের ব্যবস্থা করে দেই। এ অনুদান বেশ কয়েক বছর অব্যাহত ছিলো।
স্কুলের খেলার মাঠটি ভুলে সরকারের নামে রেকর্ড হয়ে যায়। এর বিরুদ্ধে মামলার করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিলে জনাব আছদ্দর আলী আমার সিলেটের বাসায় এসেছিলেন সম্ভবত ১৯৮৮ সালে। তখন আমি একটি মামলার আর্জি লিখে দিই। সেইসময় বড়লেখায় মুনসেফ আদালত চালু ছিলো। মামলাটি এখানে যারা ওকালতি করেন, এ রকম একজন আইনজীবী পরিচালনা করেন। কিন্তু মামলাটির রায় স্কুলের বিপক্ষে চলে যায়। ফলে মৌলভীবাজার জেলা জজ আদালতে এ রায়ের বিরুদ্ধে আপীল করা হয়। আপীল শুনানিকালে আমি ঢাকা থেকে এসে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করি। কিন্তু এর রায় বেরুলে দেখা গেলো রায় স্কুলের বিপক্ষেই গেছে। তখন জনাব আছদ্দর আলী প্রধান শিক্ষকের পদ থেকে অবসরে গেছেন। মকদ্দছ আলী সাহেব ছিলেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক। তিনি মামলার কাগজপত্র আমাকে দিলে আমি সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে রিভিশন দায়ের করি। অবশেষে শুনানি হলে ১৬.০৬.২০১৪ তারিখের রায়ে বর্তমান অধ্যক্ষের কার্যকালে স্কুল মামলাটিতে জয়লাভ করে এবং খেলার মাঠটিতে স্কুলের স্বত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়। বলা বাহুল্য জজ কোর্টে শুনানি বা হাইকোর্ট মামলা চালানোর স্কুল তহবিল থেকে কোন অর্থ ব্যয় করতে হয়নি। আমি ১৯১৪ সালের ৪ ডিসেম্বর প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক জনাব আছদ্দর আলী, প্রয়াত প্রধান শিক্ষক খলিলুর রহমান, স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি রফিকুল ইসলাম সুন্দর, তৎকালীন ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আকবর আলী, বর্তমান নির্বাচিত ইউনিয়ন চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলামসহ অন্যান্য স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ও শিক্ষকদের উপস্থিতিতে মামলার সমস্ত কাগজপত্র আনুষ্ঠানিকভাবে স্কুল পরিচালনা কমিটির কাছে হস্তান্তর করি।
জনাব খলিলুর রহমান প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিযুক্ত হয়ে দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রতিষ্ঠানটির আর্থিক সংকট সৃষ্টি হলে, তিনি এক সভার আয়োজন করেন। এতে উপস্থিত হয়ে সব জেনে আমি কিছু অর্থ সাহায্য করি এবং দু’জন শিক্ষকের বেতন কয়েক বছর চালিয়ে নিয়ে যাই। এভাবে আমার সীমিত সাধ্য দিয়ে এ প্রতিষ্ঠানটির পাশে থাকার চেষ্টা করেছি।
২০১৪ সালে প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ ও কয়েকজন শিক্ষক আমার বাড়িতে এসে একটি পাঠাগার তৈরি করে দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানান। তারা প্রস্তাব করেন লাইব্রেরিটির নামকরণ হবে আমার নামে। আমি তখন তাদের বলি, আমি পাঠাগার তৈরি করে দেবো, তবে তার জন্য স্কুল পরিচালনা কমিটির আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব লাগবে। এরও একটি কারণ আছে। বর্তমান অধ্যক্ষের পূর্বতন অধ্যক্ষ খলিলুর রহমানও আমাকে অনুরূপ অনুরোধ জানিয়েছিলেন। আমি রাজী হলে, তিনি তৎকালীন পরিচালনা কমিটিতে তাঁর প্রস্তাব পাশ করাতে পারেননি বলে দুঃখ প্রকাশ করেছিলেন। তাই পরে বর্তমান অধ্যক্ষ আমাকে আনুষ্ঠানিকভাবে ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় আমার নামে লাইব্রেরি ভবনের নামকরণ করার প্রস্তাব পাঠালে আমি তাতে সম্মতি দান করি।
প্রথমে আমি চিন্তা করেছিলাম একটি ভবন তৈরি করে দেবো। তবে ভবনটি যাতে দৃষ্টিনন্দন হয় তার জন্য আমার গ্রামের বাড়ির স্থাপত্য নকশার স্থপতি রাজন দাসকে লাইব্রেরিটির স্থাপত্য নকশা তৈরির অনুরোধ জানাই। রাজন দাস আমার জ্যেষ্ঠ পুত্রের সহপাঠী। তিনি সানন্দে সম্মত হয়ে একটি চমৎকার ডিজাইন তৈরি করে দিয়েছেন।
রাজন দাসের কাছ থেকে নকশা পাওয়ার পর আমি অর্থ ও নির্মাণ সামগ্রী জোগাড় করার কাজে আত্মনিয়োগ করি। সিদ্ধান্ত হয় নির্মাণ কাজ শুরু করার আগে আনুষ্ঠানিকভাবে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হবে। তখন প্রশ্ন ওঠে লাইব্রেরিটির নাম কি হবে। স্কুল ব্যবস্থাপনা কমিটি তাদের প্রস্তাবে লাইব্রেরিটি আমার নামে নির্মাণের প্রস্তাব করেছিলেন। কিন্তু আমার জীবনের অর্জনের সঙ্গে আমার সহধর্মিণীর অপরিসীম অবদান রয়েছে, রয়েছে ত্যাগ। তাই আমি কর্তৃপক্ষকে লাইব্রেরির ‘তবারক হোসেইন-শামসুন্নাহার গ্রন্থাগার’ নামকরণের প্রস্তাব দিলে কর্তৃপক্ষ তাতে সম্মত হয়েছেন।
আনুষ্ঠানিক ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের জন্য ২০১৪ সালের ২৬ ডিসেম্বর ২০১৫ তারিখ নির্ধারণ করা হয়। এর জন্য একটি সংক্ষিপ্ত অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন শাহবাজপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক জনাব আছদ্দর আলী। এতে আরও উপস্থিত ছিলেন স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি রফিকুল ইসলাম সুন্দর, জালালাবাদ এসোসিয়েশন ঢাকার সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ জগলুল পাশা। বর্ষীয়ান শিক্ষাবিদ আছদ্দর আলী অসুস্থ শরীর নিয়ে অনুষ্ঠানে এসে আমাদের কৃতজ্ঞতা পাশে আবদ্ধ করেন। স্থপতি রাজন দাসের তত্ত্বাবধানে প্রন্থাগার ভবনের নির্মাণ কাজ শুরু হয় ১৮ মার্চ ২০১৬ তারিখে। নির্মাণ কাজের উদ্বোধন হয় প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা কমিটির সভাপতি রফিকুল ইসলাম সুন্দর, অধ্যক্ষ মোহাম্মদ আব্দুল বাসিত, আমার ও শিক্ষকদের উপস্থিতিতে। রাজমিস্ত্রিরা প্রতিষ্ঠানটির একটি কক্ষে অবস্থান করে দিনরাত কাজ করেন। নির্মাণ সামগ্রীর জোগান দেয়া হয় নিয়মিত। আর এ সবের হিসাবপত্র রাখেন স্কুলের জ্যেষ্ঠ শিক্ষক নূরুল ইসলাম। রাজমিস্ত্রি ও অন্যান্য কর্মীদের সর্বাত্মক সহায়তা করেন প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ। আর সর্বক্ষণ তাদের ভালো মন্দের খোঁজ রাখেন বিদ্যালয়ের দপ্তরী দিলীপ ঘোষ।
এভাবে নির বিচ্ছিন্নভাবে নির্মাণ কাজ শেষ হয় ২০১৯ সালের শেষে। স্থপতি রাজন দাসের সৃজনশীলতার কল্যাণে লাইব্রেরি ভবনটি একটি শৈল্পিক রূপ ধারণ করে। যদিও শুধু ভবন নির্মাণ করে দেওয়ার কথা ছিলো, কিন্তু পরবর্তীতে আমি নিজ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গ্রন্থ রাখার জন্য আসবাব নির্মাণ ও নিজ অর্থে গ্রন্থ সংগ্রহ করার কাজে হাত দিই। বাংলা একাডেমি, এশিয়াটিক সোসাইটির গ্রন্থ সহ বিভিন্ন প্রকাশনীর বই সংগ্রহ করি। আমার অত্যন্ত প্রিয়জন স্থপতি-নাট্যকার শাকুর মজিদ বইমেলা থেকে বই সংগ্রহ করার ক্ষেত্রে বিশেষ সহযোগিতা প্রদান করেন। সিলেটের প্রকাশক রাজীব চৌধুরী, ড. হামিদা হোসেন, অধ্যাপক আব্দুল আজিজ, মৌলভীবাজারের মায়া ওয়াহেদ প্রমুখ কিছু গ্রন্থ উপহার দিয়ে গ্রন্থ ভাণ্ডারকে সমৃদ্ধ করেছেন। ২০২০ সালের গোড়ার দিকে গ্রন্থাগারটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করার কথা ছিলো, কিন্তু করোনা মহামারীর কারণে তা পিছিয়ে যায়। যার ফলে গ্রন্থাগারটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন ও তা শাহবাজপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ কর্তৃপক্ষকে হস্তান্তর করতে বিলম্ব হয়ে গেলো।
গ্রন্থের তালিকা ডিজিটাল করার জন্য একটি কম্পিউটার ক্রয় করে এর জন্য একটি বিশেষ সফটওয়ার তৈরির ব্যবস্থা করি। এখন গ্রন্থাগারে যে গ্রন্থাবলী আছে তা তালিকাভুক্ত। কার কাছে বই দেয়া হলো, কার কাছে বই পাওনা রয়েছে, এর সব তথ্য কম্পিউটারে সংরক্ষিত থাকবে।
আমার স্বপ্ন হচ্ছে, এ গ্রন্থাগারটি দেশের এক প্রান্তে অবস্থিত হলেও এটি একদিন সিলেট বিভাগের মধ্যে একটি সমৃদ্ধ গ্রন্থাগার হিসেবে গড়ে উঠবে, এমনকি এমন একদিন আসবে যখন এটি সারা দেশের একটি সেরা গ্রন্থাগারে রূপ নেবে। এলাকাবাসী, স্থানীয় প্রশাসন ও শিক্ষক-ছাত্রদের সহযোগিতায় এ গ্রন্থাগারটি অচিরেই একটি গবেষণাগারে রূপ নেবে। এটিকে কেন্দ্র করে এলাকায় গ্রন্থ প্রেমী লোকের জন্ম হবে, গবেষণা কর্মী গড়ে উঠবে-এ আমার প্রত্যাশা। আমার এ প্রত্যাশা বাস্তবায়নের জন্য এ প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ, শিক্ষক-শিক্ষিকাগণকে অত্যন্ত যত্নের সঙ্গে ছাত্র-ছাত্রীদের গ্রন্থাগার ব্যবহারের ব্যাপারে সচেতন করে তুলতে সক্রিয় থাকতে হবে।
এজন্য আমার প্রস্তাব হচ্ছে :
১। স্কুল ও কলেজ চলাকালে ছাত্র-শিক্ষকরা যেমনি এ গ্রন্থাগারের গ্রন্থ ব্যবহার করবেন, এলাকাবাসীও যাতে এটি ব্যবহার করতে পারেন, তার জন্য স্কুলের সময় শেষে সন্ধ্যা পর্যন্ত এটি খোলা রাখার ব্যবস্থা থাকতে হবে। এ জন্য একজন খণ্ডকালীন গ্রন্থগারিকের ব্যবস্থা রাখা উচিত। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ এ গ্রন্থাগারিকের বেতন নির্বাহ করতে পারেন।
২। এ গ্রন্থাগার পরিচালনার জন্য প্রতিষ্ঠানের একজন দায়িত্ববান ব্যক্তির নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা উচিত, যে কমিটি গ্রন্থাগারের রক্ষণাবেক্ষণ ও উন্নতির প্রতি দৃষ্টি দেবে।
৩। গ্রন্থাগারকে কেন্দ্র করে একটি পাঠচক্র, মাসিক ভিত্তিতে একেকটি গ্রন্থ পাঠ ও আলোচনার ও বিভিন্ন ধরণের প্রতিযোগিতার আয়োজন করার রুটিনের ব্যবস্থা রাখা উচিত।
৪। প্রতি বছর এ গ্রন্থাগারে নতুন গ্রন্থের সংগ্রহ বাড়ানো উচিত।
আশা করি, এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত প্রধান অতিথি, মন্ত্রী মহোদয় এ প্রতিষ্ঠানের প্রতি বিশেষ দৃষ্টি দেবেন ও সর্ব সময় এ গ্রন্থাগার তাঁর আনুকূল্য লাভ করবে। আমি যে সব প্রস্তাব করেছি, প্রতিষ্ঠান পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান, প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ, স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এ প্রস্তাব সমর্থন ও বাস্তবায়ন করবেন। তাহলে আমার স্বপ্ন সফল হবে। আজকের অনুষ্ঠান আয়োজনে যারা অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন, যারা মূল্যবান সময় ব্যয় করে এতে উপস্থিত হয়েছেন, বিশেষত; ঢাকা, সিলেট, মৌলভীবাজার ও বড়লেখা থেকে যেসব অতিথি এ অনুষ্ঠানে অনেক কষ্ট সহ্য করে উপস্থিত হয়েছেন, তাদের প্রতি রইল কৃতজ্ঞতা। এ প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ, শিক্ষক-শিক্ষিকা, কর্মচারী ও ছাত্র-ছাত্রীদের প্রতিও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।