এলো এক জ্যোতি
অধ্যাপক ড. নাসরিন আহমাদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম নারী উপ-উপাচার্য। তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে অনবদ্য অবদান রেখেছেন। এসেছেন আজ পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেই স্মৃতি লিখেছেন ফারুক হোসেন চৌধুরী।
১৯৬২ সাল থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও নাসরিন আহমাদের পরিবার ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে পাশাপাশি বাড়িতে থাকতেন। দুই পরিবারের এভাবেই ঘনিষ্ঠতা ও ফলে তার বঙ্গবন্ধুকে খুব কাছ থেকে দেখা হলো।
তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র। বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রয়োজনে রাজনীতিতে নাম লিখিয়েছেন এই উজ্জ্বল কীতিমান। নাসরিন আহমাদ ১৯৭০ সালে ডাকসু নির্বাচনে ‘কমনরুম’ সম্পাদিকা ছিলেন। তিনি বলেছেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের প্রথমদিকেই আমি গিয়েছি স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে। আমাদের রেডিওতে আমিনুল হক বাদশা, সৈয়দ হাসান ইমাম, কামাল লোহানী, আবেদ খান, ইন্দ্রমোহন রাজবংশী আলমগীর কুমকুম, পারভীন হোসেনসহ অনেকে জড়িত ছিলেন। কিছুদিনের মধ্যেই আমাদের প্রচার কার্যক্রম সুসংগঠিত হয়ে গিয়েছে। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের গান, নাটক, খবর, চরমপত্রসহ সকল অনুষ্ঠান মুক্তিযোদ্ধাদের অনুপ্রাণিত করতো। ফলে মুক্তিযুদ্ধ ত্বরান্বিত হয়। অনেক বিখ্যাত গায়ক, সুরকার, অভিনেতা স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সঙ্গে জড়িয়ে ছিলেন। আমাদের বেতার কেন্দ্রের কলাকুশলী ও মুক্তিকামী বাঙালি এবং মুক্তিযোদ্ধারা একাকার হয়ে গিয়েছেন। মুক্তিকামী বাংলার মানুষ মন্ত্রমুগ্ধের মতো স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের অনুষ্ঠানগুলো শুনতেন। বিভিন্ন দিক নির্দেশনা ও মুক্তিযুদ্ধে আত্মদানের সংগ্রামে রত বাংলার মুক্তিযোদ্ধারা সবসময় রেডিও কাছে রাখতেন। প্রবাসী সরকারের সকল প্রজ্ঞাপন আমরা প্রচার করতাম। মুক্তিযোদ্ধাদের গৌরব, ত্যাগ, দেশপ্রেম তুলে ধরা হতো বালিগঞ্জের ছোট্ট দোতলা সেই ভবনে। সেখানেই অনেকে লিখতেন, খবর পড়তেন, সেখানেই ঘুমিয়ে পড়তেন। চরমপত্র লিখে প্রচারের পর সেখানেই ঘুমাতেন এম. আর আখতার মুকুল। রথীন্দ্রনাথ রায়ের অবিশ্বাস্য অবদান আছে মুক্তিযুদ্ধের সেই দিনগুলোতে। আছে সমর দাসের গৌরবময় ভূমিকা। আরও অনেক বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব জড়িত হয়েছেন একে, একে। নিরাপত্তার কারণে আমাদের সবার ছদ্মনাম ব্যবহার করা হত। মুক্তিযুদ্ধের সময় জেরিনা আহমেদ ছদ্মনামে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে খবর পড়তাম। ৬ ডিসেম্বর প্রথম আমি নিজের নাম নাসরিন আহমাদ (শিলু) নামে খবর পড়তে পারলাম। আমাদের কারণে বাংলাদেশ স্বাধীন হলো’-বলেছেন তিনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম নারী উপ-উপাচার্য, অধ্যাপক ড. নাসরিন আহমাদ। ১৯৭১ সালের মে মাসের প্রথম দিকে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার সাথে বাড়ি থেকে পালিয়ে কলকাতায় গিয়ে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে জড়িয়ে যান। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের কার্যক্রম, তার কাজ, মুক্তিযুদ্ধে নিজের ভূমিকার এভাবেই স্মৃতিচারণ করেছেন। আজ শনিবার, ৪ নভেম্বর, ২০২২। বাংলাদেশের প্রখ্যাত এই নারী শিক্ষাবিদ পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছেন। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠানে তাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। জীবনের এই গল্পে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র কীভাবে পরিচালিত হত, অনুষ্ঠান নির্মাণ করতেন কীভাবে, প্রচার, কর্মকান্ড বলেছেন অধ্যাপক ড. নাসরিন আহমাদ। পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় সব শিক্ষক, ছাত্র, ছাত্রী, কর্মকর্তা ও কমচারীরা অংশগ্রহণ করেছেন তার স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠানে ১৯৭১ সালের পূর্বাপর ঘটনাপ্রবাহ, আমাদের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের গৌরবগাঁথা বলেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্যালারি-২ তে উপস্থিতিরা গিয়েছেন ১৯৭১’র গৌরবোজ্জ্বল দিনগুলোতে।
নারী শব্দসৈনিক অধ্যাপক ড. নাসরিন আহমাদ আরো জানিয়েছেন, ‘পূর্ব পাকিস্তানের মুক্তিকামী মানুষের স্বাধীনতার জন্য আমাদের সবাই ত্যাগ স্বীকার করেছেন। তাতে আমরা স্বাধীন দেশ পেয়েছি। যে স্বাধীন দেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।’
প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. নাসরিন আহমাদ ‘বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব পদক’ লাভ করেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক নারী উপ-উপাচার্য ‘স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র পাঠক ফোরাম’র সভাপতি। তিনি এদেশের নামকরা শিক্ষাবিদ ও পরিবেশবিজ্ঞানী।