জেলের ছেলে ইমরানের পড়ার খরচ দেবেন খায়রুজ্জামান লিটন
ইংরেজি বিভাগে ভর্তি হয়েছেন ইমরান হোসেন। পড়বেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। তার বাবা জেলে, সাগরে মাছ ধরেন। বাবার সহকারী আর রাজমিস্ত্রি এই কাজ করে এতদূর এসেছেন তিনি। এখন থেকে পাঁচ বছর এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের খরচে পড়ালেখা করবেন ইমরান। লিখেছেন ও ছবি তুলেছেন আসাদুল্লাহ গালিব।
ছেলেটির নাম মো. ইমরান হোসেন। বাড়ি পটুয়াখালী জেলার কুয়াকাটা পৌরসভায়। তারা নয় নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা। বাবা জেলে, আবদুর রশীদ মাঝি। এই সাগরের জেলের ছেলেটি অসাধারণ মেধাবী। বিদ্যালয় এবং উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রথম হয়েছেন। ভর্তি হয়েছেন বাংলাদেশের অনতম সেরা বিশ্ববিদ্যালয় ‘রাজশাহী’র অন্যতম সেরা বিভাগ ইংরেজিতে মেধার লড়াইয়ে তুমুলভাবে জিতে। বিদ্যা তার হাতিয়ার, শিক্ষা তার অর্জন। ফলে পড়তে পারছেন এই বিভাগে। তবে ইমরানের জীবনটি ব্যাথায় ভরা। আজীবন বাবার সঙ্গে সহকারী, রাজ মিস্ত্রির কাজ শিখে, ইট টেনে লেখা পড়া করেছেন তিনি। অন্যের বাড়ি বানিয়ে যে ছেলে পড়ার খরচ আর সংসারে সাহায্য করে এত দূর এসেছে, তিনি এখন জীবনকে বদলানো শুরু করেছেন।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সামান্য ভর্তি ও সেমিস্টার ফি দেবার সামর্থ্য নেই ইমরান হোসেন এবং তার পরিবারের। ফলে কুয়াকাটায় ফিরে আবারও রাজমিস্ত্রি এবং বাবার সঙ্গে জেলের জীবন শুরু করলেন তিনি। এভাবেই ভর্তি হলেন প্রাচ্যের কেম্ব্রিজে তার রক্তে মাখা পয়সায়। তার জীবনের গল্প ছাপালেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিকরা। নজরে এলো রাসিক (রাজশাহী সিটি করপোরেশন) মেয়র, আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর অন্যতম সদস্য এবং মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশ সরকারের অন্যতম মন্ত্রী, শহীদ চার নেতার একজন-এএইচএম কামরুজ্জামানের ছেলে এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের। তিনি তাকে ভর্তির পর হলে তুলে দিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. গোলাম সাব্বির সাত্তারকে অনুরোধ করলেন। ফলে ২৩ অক্টোবর রাতে শহীদ সোহরোয়ার্দী হলের ৪শ ৮০ নম্বর রুমে সিট দেওয়া হলো আবাসিক ছাত্র হিসেবে ইংরেজির ইমরান হোসেনকে। লিটন তার আগামী পাঁচ বছরের পড়ালেখার পুরো খরচ চালিয়ে যাবেন। ১ নভেম্বর থেকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরু হবে। ফলে আর কোনো ভাবনা নেই ইমরানের।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের পাবলিক রিলেশন অফিসার এবং সাংবাদিকতা বিভাগের অন্যতম সাবেক ছাত্র মোস্তাফিজ মিশু ও তার ব্যক্তিগত সহকারী আবদুল ওয়াহেদ টিটু বলেছেন, “পড়ালেখার খরচ চালাতে ‘রাজমিস্ত্রির কাজে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ইমরান’ খবরটি মেয়র মহোদয় দেখেছেন। এ এইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের নির্দেশে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছ থেকে তার মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করেছি আমরা।”
এরপর রাসিক মেয়র তাকে ফোন করেছেন। ফলে বৃহস্পতিবার দুপুরে অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র ইমরান হোসেন, তার পরিবার ও শিক্ষকদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে মেয়র কার্যালয়ে। খায়রুজ্জামান লিটন তার ব্যক্তিগত তহবিল থেকে অদম্য মেধাবী ইমরান হোসেনের পড়ালেখা, থাকা-খাওয়াসহ সকল খরচ ব্যয় করবেন-জানিয়েছেন তার ব্যক্তিগত সহকারী ও মেয়র কার্যালয়।
বাংলাদেশের কিংবদন্তী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের সুসন্তান ও রাজশাহীর বরেণ্য রাজনীতিবিদ মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের প্রতি কৃতজ্ঞতার কোনো শেষ নেই ইংরেজি প্রথম বর্ষের ছাত্র ইমরান হোসেন, ‘আমার দু:শ্চিন্তার অবসান করলেন তিনি। তার নির্দেশে ক্যাম্পাসে এসেছি। এরপর সিট পেয়েছি অধ্যাপকদের সাহায্যে। আমরা তার প্রতি গভীরভাবে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।’ তাকে ভালোভাবে পড়ালেখার জন্য বলেছেন খায়রুজ্জামান লিটন।
ওএফএস।