উর্মি করছেন এমআইটিতে ২০ হাজার ডলারের ডিগ্রি ফ্রি বৃত্তিতে
আফরোজা শারমিন উর্মি মেয়েটি সাদামাটা। তবে তার দারুণ মেধা। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজিতে অনার্সে ৩.৭৪। বৃত্তি পেয়েছেন বহু কষ্টে এমআইটিতে। তার মাস্টার্সের গল্পগুলো লিখেছেন চৌধুরী মাসাবি
মেয়েটির ভালো নাম আফরোজা শারমিন উর্মি। পড়েন বাংলাদেশের নতুন বিশ্ববিদ্যালয়, মেধাবীদের ভুবন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে। দারুণ তার বিষয়। ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজি (আইসিটি)। অসাধারণ মেধাবী ছাত্রী। অনার্সে লাভ করেছেন ৩.৭৪। সেরাদের সেরা তিনি। ১০ম ব্যাচের উজ্জ্বল ছাত্রী। এখন তার জীবনটি আরো বড় হয়ে গেল। পড়তে যাচ্ছেন অনলাইনে পুরোপুরি ফ্রি এমআইটির নামকরা মাস্টার্স। যুক্তরাষ্টের বিশ্বখ্যাত ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিতে তাকে পড়ার পুরো সুযোগটি করে দিয়েছে ‘ওয়ান লিগ ফাউন্ডেশন’ নামের একটি দাতব্য সংস্থা। তাদের টাকায় পড়বেন ‘মাস্টার্স অব বিজনেস অ্যানালিটিকস, এমআইটি’। এদিকে তার মাস্টার্সের ফল এখনো প্রকাশিত হয়নি। এমআইটির বিজনেস স্কুলে তার আরেকটি মাস্টার্স হবে বিশ্বসেরা। ফলে আনন্দে আত্মহারা অসাধারণ মেধাবী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীটি, “আমেরিকার শিক্ষা নিয়ে কাজ করা ইনস্টিটিউশন যারা বৈশ্বিকভাবে অবদান রাখেন-‘ওয়ান লিগ ফাউন্ডেশন’র বৃত্তিতে এমআইটির বিজনেস আইটির ডিগ্রি অর্জনের সুযোগ আমি পেয়েছি! ডিগ্রিটির ২০ হাজার ইউএস ডলারের পুরোটাই মেধায় সবাইকে পেছনে ফেলায় দেবে ওয়ান লিগ।’ উর্মি জানাতে ভোলেননি, ‘এমআইটির এই দারুণ স্কলারশিপ আমার জন্য ভাগ্যের। জীবনে স্বপ্ন ছিল, এমন একটি অর্জন করব। যারা আমাকে সহযোগিতা করেছেন তাদের সবার কাছে আমি কৃতজ্ঞ।” অনলাইন মাস্টার্স কবে শুরু? বলেছেন, ‘এই বছরের আগস্টে, শেষ হবে আগামী বছরের নভেম্বরে।’
এবার তার বিভাগী প্রধানের বক্তব্য। তাকে দারুণ সহযোগিতা করেছেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় প্রকৌশল অনুষদ ডিন ও ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজির বিভাগীয় প্রধান ড. এম. সাইফুর রহমান। তিনিও কৃতি। বলেছেন উর্মিকে নিয়ে, ‘আমার মতো প্রতিজন শিক্ষকের স্বপ্ন থাকে তার ছাত্র, ছাত্রীরা দেশে-বিদেশে সাফল্যের অসাধারণ স্বাক্ষর রাখবে। আমাদের উর্মি বিশ্ববিখ্যাত এমআইটিতে পড়ার সুযোগ পেয়েছে। অধ্যাপক হিসেবে আমার ও কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সকলের জন্য খুবই গর্বের।’
উর্মির জন্ম কিশোরগঞ্জে কটিয়াদি গ্রামে। বাবা আনোয়ার হোসেন, মা সেলিনা পারভীন। তিনি তাদের ছেলেমেয়েদের সবার বড়। তারা তিন ভাই-বোন। খুব মেধাবী উর্মি ভাগলপুর আফতাব উদ্দিন স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে বিজ্ঞানে এসএসসিতে ৫ ও এইচএসসিতে ৪.৬৮ সিজিপিএ নিয়ে পাশ।
বিজ্ঞানের ছাত্র, ছাত্রীদের দারুণ কদর আমাদের দেশে। আইসিটি হলে তো কথাই নেই। উর্মি তো খুব মেধাবী ও যোগ্য। পড়ালেখার পাশে অনলাইনে একটি ভারতীয় স্বর্ণগহনা তৈরি এবং বিক্রির কম্পানিতে জুনিয়র মেশিনারি ইঞ্জিনিয়ার। খুব ভালো আয় করেন, বলেছেন হেসে। সে টাকা মা-বাবা, ভাই-বোনকে দেন। নিজেও খরচ করেন।
এমন মেয়েটিকে নিয়ে গর্বের শেষ নেই উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ. এফ. এম. আব্দুল মঈনের। তিনি বলেছেন, ‘উমির মতো এমন অর্জনগুলো আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য অত্যন্ত ভালো। অন্যরা সবাই তার অর্জনে উৎসাহিত ও আনন্দিত হবে। আমি যোগদানের পরেই বলেছি, বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা, মানোন্নয়নে নিয়মিত কাজ করব। সে অনুযায়ী কাজ করে চলেছি। আশা করছি, আমাদের অর্জনের এই ধারা অব্যাহত থাকবে।’
ওএফএস।