বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৫ | ১০ বৈশাখ ১৪৩২
Dhaka Prokash

একটি অসাধারণ গল্প-‘বেরোবি’

আজ বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের নামে গড়া তার জন্মভূতিতে প্রতিষ্ঠিত বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৫ বছর। তাদের কৃতি ছাত্র ও সাংবাদিক ইভান চৌধুরী লিখেছেন আপন কাহিনী

বাংলাদেশের উত্তর জনপদের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি)। নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের স্মরণে গড়া শেখ হাসিনার বিশ্ববিদ্যালয়। রংপুর বিভাগের একমাত্র পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়টি ৪শ জাতের প্রায় ৩৬ হাজার তরু-পল্লবে আচ্ছাদিত একটি ছায়া সুনিবিড় ক্যাম্পাস। প্রাকৃতিক পরিবেশ ও সৌন্দর্য্যে মনোরম। আছে পড়ালেখার প্রচন্ড চাপ। তারপরও কমতি নেই শিক্ষার্থীদের আড্ডা, গান ও গল্পের। গাবাজনার সঙ্গে পাখ-পাখালির কিচির, মিচির। মাঝে-মধ্যে ক্যাম্পাসে আওয়াজ ভাসে মিছিল-শ্লোগানের। সবকিছু মিলিয়ে সারাক্ষণ প্রাণোচ্ছল ‘উত্তরের অক্সফোর্ড’ খ্যাত বেরোবি।

আজ জন্মদিন তোমার
নানা ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে আজ ১২ অক্টোবর ১৫ বছরে পা রাখলো রংপুরবাসীর দীর্ঘদিনের আন্দোলন-সংগ্রামের ফসল বিশ্ববিদ্যালয়টি। জ্ঞান আহরণ ও বিতরণের পাশাপাশি সুস্থ, সংস্কৃতি চর্চায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, ছাত্রীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে এই অঞ্চলের তারুণ্যের প্রধান প্রতিনিধি। বেরোবির ছেলে, মেয়েরা নিয়মিত অংশগ্রহণ করছেন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতার অঙ্গণে। পাশাপাশি স্থানীয়ভাবে অংশ নিচ্ছেন বিভিন্ন ধরণের স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজে। অঞ্চলকে এগিয়ে নিতে শিক্ষকদের তত্বাবধানে চলছে নানামুখী গবেষণা।

বেরোবি যে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত
‘মানসম্পন্ন শিক্ষা ও গবেষণার মাধ্যমে মানবতার বিভিন্ন ক্ষেত্রে বর্তমান ও ভবিষ্যতে, নেতৃত্ব প্রদানে সক্ষম মানবসম্পদ সৃষ্টির লক্ষ্যে, বিষয়ভিত্তিক জ্ঞানার্জন, সংশ্লিষ্ট জ্ঞান আহরণ, লিখিত, মৌখিক ও ইলেকট্রনিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে উৎকর্ষ অর্জন এবং সর্বাধুনিক প্রায়োগিক কলাকৌশল প্রয়োগের মাধ্যমে যুগোপযোগী জ্ঞান বিতরণ’-বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের লক্ষ্য।
উদ্দেশ্য হলো- ‘উচ্চশিক্ষার বিভিন্ন ক্ষেত্রে অগ্রসরমান বিশ্বের সঙ্গে সঙ্গতি রক্ষা ও সমতা অর্জন এবং জাতীয় পর্যায়ে উচ্চশিক্ষা, গবেষণা, আধুনিক জ্ঞানচর্চা ও পঠন-পাঠনের সুযোগ সৃষ্টি ও সম্প্রসারণের উদ্দেশ্যে এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এ বিশ্ববিদ্যালয় হবে জ্ঞান আহরণ ও বিতরণের উৎকৃষ্ট কেন্দ্র। সমাজের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘনিষ্ঠ সংযোগের মাধ্যমে ও সর্বাধুনিক কলাকৌশল ব্যবহার করে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে এই বিশ্ববিদ্যালয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।’

রংপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়
একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য দীর্ঘদিন আন্দোলন করে আসছিলেন বাংলাদেশের উত্তর জনপদের মানুষ। অবশেষে ২০০৮ সালে তত্বাধায়ক সরকারের আমলে রংপুরের মানুষ এ অঞ্চলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবিতে গণআন্দোলন শুরু করেন। সে সময় সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ফখরুদ্দীন আহমেদ রংপুরে আসেন। সাংবাদিকরাও তার কাছে দাবিটি জোরালোভাবে উপস্থাপন করেন। বছরের ১২ অক্টোবর ‘রংপুর বিশ্ববিদ্যালয়’ নামে প্রতিষ্ঠা করা হয়। এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য নতুন করে জমি অধিগ্রহণ না করে ২০০১ সালে ‘রংপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে’র নামে অধিগ্রহণকৃত জমিতেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়। ২০০৯ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মহাজোট সরকার বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করে নারী জাগরণের অগ্রদূত মহীয়সী বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের নামানুসারে ‘বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়’ নামকরণ করেন।

অস্থায়ী ক্যাম্পাসে শুরু
বিশ্ববিদ্যালয় তো প্রতিষ্ঠা হলো। এবার কার্যক্রম পরিচালনার জন্য কাঠামো প্রয়োজন। এজন্য অস্থায়ী ক্যাম্পাস হিসেবে নগরীর টিচার্স ট্রেনিং কলেজে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরু করা হয়েছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগের নামকরা অধ্যাপক ড. এম. লুৎফর রহমান, কয়েকজন কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়ে চালু হলো বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়। এরপর আয়তন বাড়লো। স্বল্প সময়ের মধ্যে ১২ জন শিক্ষক নিয়োগ করা হয়েছে। ২০০৮-’০৯ শিক্ষাবর্ষে তিনটি অনুষদের অধীনে ছয়টি বিভাগে ৩০০ ছাত্র, ছাত্রী ভর্তি করা হয়েছে। এভাবেই ২০০৯ সালের ৪ এপ্রিল অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম উদ্বোধন হলো। ২০০৮ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত টিচার্স ট্রেনিং কলেজের অস্থায়ী ক্যাম্পাসে চলেছে অ্যাকাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম।

আধুনিক একটি বিশ্ববিদ্যালয়
রংপুর শহরের প্রবেশদ্বার মর্ডান মোড়। নিকটবর্তী ৭৫ একরে ‘বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়’ স্থায়ী ক্যাম্পাস। ২০১১ সালের ৮ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্থায়ী ক্যাম্পাসের উদ্বোধন করেছেন। ২০১২ সালের মধ্যে ছয়টি অনুষদের অধীনে ২১টি বিভাগ চালু করা হয়েছে। ২০২১ সালেও আরেকটি নতুন বিভাগ চালু করা হয়। বর্তমানে বেরোবিতে ছয়টি অনুষদ, ২২টি বিভাগ, একটি ইনস্টিটিউট, তিনটি আবাসিক ছাত্র ও ছাত্রী হল, চারটি টিচার্স ডরমিটরি, মসজিদ, কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি, প্রশাসনিক ভবন, মেডিকেল সেন্টার আছে। নির্মাণাধীন শেখ হাসিনা ছাত্রী হল ও ড. এম. ওয়াজেদ আলী মিয়া রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং ইনস্টিটিউট ভবন। প্রায় ১০ হাজার শিক্ষার্থীর বিপরীতে এখন অধ্যাপক শিক্ষক ১শ ৮৬ জন।

সবুজের সমারোহ
স্থায়ী ক্যাম্পাস হলো কিন্তু পুরো ক্যাম্পাসে প্রয়োজন অনেক গাছ, প্রচুর ছায়া। ২০১৩ সাল পর্যন্ত বেরোবিতে দেবদারু, কৃষ্ণচূড়া, বকুল গাছ ছিল। ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠান-সংস্থার কাছ থেকে চেয়ে, চিন্তে ৪শ প্রজাতির প্রায় ৩৬ হাজার গাছের চারা নিয়ে বৃক্ষপ্রেমী শিক্ষার্থী, কর্মচারী ও শিক্ষকদের সহায়তায় নদীপ্রেমী অধ্যাপক ড. তুহিন ওয়াদুদ রোপণ করেছেন। এখন কিশোর বৃক্ষেও শোভিত বেরোবি। বিশাল ক্যাম্পাসজুড়ে অজস্র গাছপালায় সুশোভিত সবুজ প্রাঙ্গণগুলো। একটি প্রাকৃতিক নিসর্গ। চারিদিকে সবুজের সমারোহের মধ্যে গর্বিত ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছে অনিন্দ্য সুন্দর বিশ্ববিদ্যালয়টি। ছুটির দিন, একটু অবসর পেলেই অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে কালক্ষেপণ করেন না আশেপাশের দর্শনার্থীরাও।

আছে শহীদ মিনার, স্বাধীনতা স্মারক ও বঙ্গবন্ধুর মুর‌্যাল
বেরোবির স্থাপনাগুলোর মধ্যে রয়েছে-বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল, স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার আন্দোলন-সংগ্রামে শহীদের স্মরণে স্বাধীনতা স্মারক (নির্মণাধীন) ও শহীদ মিনার। একটু বেলা গড়াতে, গড়াতে দর্শনার্থীদের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধীনতা স্মারক আর শহীদ মিনারের পাদদেশে জমে ওঠে বিভিন্ন গানের আসর। আবার কেউ গ্রুপ স্টাডি, কেউ বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা, কেউ গিটার হাতে আবার কেউ একতারা হাতে মাতিয়ে রেখেছেন নিজ, নিজ ভুবন-এই নিত্যচিত্র।

অগ্নিস্নান থেকে ইংলিশ ল্যাঙ্গুয়েজ সোসাইটি
বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া ও আড্ডা সমান তালে চলে। সাংস্কৃতিক অঙ্গন মাতে। মাতাতে রয়েছে সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘অগ্নিস্নান’, ‘ভবতরী’, ‘টঙের গান’, ‘গুনগুন’, ‘রনন’, ‘উদিচী’, ‘চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র’, ‘বেগম রোকেয়া ইউনিভার্সিটি ফিল্ম সোসাইটি’ ও ‘ইংলিশ ল্যাঙ্গুয়েজ সোসাইটি’। তারা সবাই নামকরা সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী। রয়েছে বিতার্কিকদের প্রিয় সংগঠন ‘বেগম রোকেয়া ইউনিভার্সিটি ডিবেট ফোরাম’ এবং ‘বেগম রোকেয়া ইউনিভাসিটি ডিবেট অ্যাসোসিয়েশন’। দেশ ও দেশের বাইরে ক্যাম্পাসের খবর তুলে ধরতে রয়েছে সাংবাদিক সংগঠন ‘বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি (বেরোবিসাস)’।

আধুনিক পরীক্ষাকেন্দ্র
ছাত্র, ছাত্রী ও গবেষকদের কথা বিবেচনায় নতুন একটি আধুনিক পরীক্ষা কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে বেরোবিতে। তৎকালীন ট্রেজারার বর্তমান বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় উপাচায অধ্যাপক ড. হাসিবুর রশীদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় নির্মাণ সম্ভব হয়েছে। চলতি বছরের ৬ মার্চ নবনির্মিত পরীক্ষা হলটির উদ্বোধন করেছেন তাকে নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব এম. আবু বকর ছিদ্দিক। অত্যন্ত সুশৃঙ্খলভাবে, আলাদাভাবে মনোরম পরিবেশে পরীক্ষা গ্রহণ সম্পন্ন করছে প্রয়োজনীয় বিভাগগুলো। হলটি আরো অত্যাধুনিক করার প্রক্রিয়া চলমান।

এসেছেন গুণীরা

এ পর্যন্ত বেরোবিতে পাঁচজন উপাচার্য এসেছেন। প্রতিষ্ঠাতা উপাচার্য ছিলেন অধ্যাপক ড. এম লুৎফর রহমান। তবে তিনি চাকরির মেয়াদে এক বছরও পূর্ণ করতে পারেননি। দ্বিতীয় উপাচার্য হিসেবে এসেছিলেন ড. এম. আবদুল জলিল মিয়া। তৃতীয় উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ. কে. এম. নূরন্নবী। চতুর্থ উপাচার্য অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ। পঞ্চম ভিসিও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমসের অধ্যাপক ড. হাসিবুর রশীদ। তিনি কোনরকম বিতর্কে না জড়িয়ে বিশ্ববিদ্যালয়কে এগিয়ে নেবেন, এই সবার প্রত্যাশা।

আছে ১০টি বাস
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষার্থী কর্মকর্তা কর্মচারীসহ অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের জন্য রয়েছে নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থা। বর্তমানে পরিবহন সেবায় মোট ১০টি বাস, দুটি কোস্টার বাস (শিক্ষকদের ১টি ও কর্মকর্তাদের ১টি) এবং ৫টি রয়েছে মাইক্রোবাস। বাসগুলো সাপ্তাহিক ছুটি ব্যতিত শিক্ষার্থীদের সেবায় প্রতিদিন নির্দিষ্ট রুটে এক থেকে দেড় ঘন্টা পর, পর যাতায়াত করে। সাতটি রুটে দৈনিক প্রায় ৫শ শিক্ষার্থী নিয়মিত যাতায়াত করছেন। শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য রয়েছে আলাদা রুট ও পরিবহন ব্যবস্থা।

সরব ক্রীড়াঙ্গন
খেলাধুলা মানুষের মেধা, মননকে নেতিবাচক কাজ থেকে বিরত রাখতে সহযোগিতা করে। বেরোবিতে নিয়মানুসারে সারা বছর শিক্ষার্থীদের খেলার আয়োজন করা হয়। যাতে মাদক, সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ ইত্যাদি খারাপ কাজে জড়িয়ে না পড়ে। ছেলে ও মেয়েদের জন্য আলাদা টুর্নামেন্টের আয়োজনসহ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতাগুলোতে অংশগ্রহণ করতে সহযোগিতা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রীড়া ও শারীরিক শিক্ষা দপ্তর। উপাচার্যের দিকনির্দেশনায় বিভিন্ন টুর্নামেন্ট আয়োজন ও প্রতিযোগিতামূলক খেলায় নিয়মিত অংশগ্রহণ করছেন শিক্ষক ও ছাত্র, ছাত্রীরা।

আমাদের মেডিক্যাল সেন্টার
১৬ আগস্ট ২০০৯ সালেই বেরোবির শুরুর ক্যাম্পাস টিচার্স ট্রেনিং কলেজ, রংপুরের একটি কক্ষে খন্ডকালীন একজন চিকিৎসকের যোগদানের মাধ্যমে মেডিকেল সেন্টারের কার্যক্রম শুরু হয়েছিল। এখন স্থায়ী ক্যাম্পাসে ৪ জন ডাক্তার (একজন ডেন্টাল সার্জন), দুইজন নার্সসহ মোট ১২ জনের একটি মেডিক্যাল টিম সেবা প্রদান করছে। শিক্ষার্থীদের মেডিকেল কাডের্র মাধ্যমে চিকিৎসা সেবা ও এন্টিবায়োটিক সহ প্রায় ৫০ ধরণের ঔষধ নামমাত্র খরচে প্রদান করা হয়। একটি অ্যাম্বুলেন্স রয়েছে। ২৪ ঘন্টা সার্ভিস প্রদানে নিয়োজিত থাকে। করোনা ভাইরাসের (কোভিড-১৯) কারণে সৃষ্ট সংকটের সময়ে সারাদেশে লকডাউন হয়ে গেলেও অন্যান্য স্বাস্থ্য সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের মতো মেডিকেল সেন্টারের চিকিৎসকরাসহ সকল স্টাফ স্বশরীরে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তায় নিয়োজিত নিরাপত্তা কর্মী ও আনসার অবস্থানরত শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীগণ ও তাদের পরিবারের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় নিরলসভাবে সেবা প্রদান করেছে। ফ্রি ব্লাড গ্রুপিং, ডায়াবেটিকস নির্ণয় পরীক্ষা ও ই.সি.জি করা এবং ডেন্টাল আউটডোর সেবাসহ স্কেলিং ও টেমপোরারি রেস্টোরেশন সেবাপ্রদান করা হয় মেডিকেল সেন্টারে। নানা ধকল কাটিয়ে প্রযুক্তির সাথে তাল মিলিয়ে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মাঝে উন্নত চিকিৎসা সেবা প্রদান করছেন তারা।

কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার
গ্রন্থাগার হলো নানাবিধ জ্ঞানচর্চার কেন্দ্র। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রচেষ্টায় নানাবিধ সমস্যা উত্তরণ করে নতুন রূপে আবর্তন শুরু করেছে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার। শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে বিভাগীয় বই ছাড়াও গবেষণা ও চাকুরী সহায়কধর্মী বই। গ্রন্থাগারে রয়েছে ই-বুক কর্ণার, জব কর্ণার, বাংলাদেশের সঠিক ইতিহাস ও মুক্তিযুদ্ধের উপর অধিকতর জ্ঞান আরোহণের সুযোগ। রয়েছে আলাদা মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু কর্ণার। শিক্ষকদের আলাদা রিডিং রুম। কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার আধুনিক সাজে সজ্জ্বিত। সম্পূর্ণ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত গ্রন্থাগার। মনোরম পরিবেশে হওয়ায় বইয়ের লোভে শিক্ষার্থীদের সংখ্যা দিনদিন বাড়ছে। আছে কত গল্প, উপন্যাস। গ্রন্থাগারের দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নিরলস পরিশ্রমে উন্নত সেবা পাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। প্রত্যেক বিভাগের রয়েছে আলাদা ২১টি সেমিনার কর্ণার। মূল গ্রন্থাগারটি শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মাঝে জ্ঞান বিতরণে অতুলনীয় ভূমিকা রেখে চলেছে।

ভালো আছেন তারা
চার বছরের স্নাতক শেষ করতে একসময় বাংলাদেশে সময় লাগতো পাঁচ থেকে ছয় বছর। এক বছরের স্নাতকোত্তর শেষ করতে শিক্ষার্থীদের অপেক্ষা করতে হয়েছে প্রায় দুই বছর। চাকরির বাজারে হোঁচট খেতে হয়েছে শিক্ষার্থীদের। এরপর এলো সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছয় মাসের সেমিস্টার। ২০২১ সালের ১৪ জুন পঞ্চম উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হাসিবুর রশীদ যোগদানের পর প্রথম অগ্রাধিকার দিয়েছেন শিক্ষার্থীদের। সেশনজট নিরসনসহ বিশ্ববিদ্যালয়কে ইতিবাচকভাবে এগিয়ে নিতে নিরলসভাবে কাজ করে চলেছেন ড. হাসিবুর রশীদ। বৈশ্বিক করোনা মহামারিতেও শিক্ষার্থীদের সেশনজট নিরসনে অনলাইনভিত্তিক শিক্ষাকার্যক্রম অব্যাহত রাখেন। উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হাসিবুর রশীদের দূরদর্শী দিক-নির্দেশনায় ও শিক্ষকদের আন্তরিকতায় ইতোমধ্যে অনলাইনে পরীক্ষা গ্রহণ ও দ্রুততম সময়ে ফলাফল প্রকাশে নজির সৃষ্টি করেছে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়। সেশনজট নিরসনে চার মাসে সেমিস্টার ফাইনাল নেয়ারও দুঃসাহসিক পরিকল্পনা গ্রহণ করেন ড. হাসিব। উপাচার্যের দুর্দান্ত নেতৃত্বে এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে শিক্ষকদের আন্তরিক প্রচেষ্টায় সেশনজট নামক যে অভিশাপ শিক্ষার্থীদের হতাশায় ফেলছিল, তাও নিরসন সম্ভব হয়েছে। দীর্ঘদিনের অভিশাপ দুর হয়েছে এই উচ্চতর প্রতিষ্ঠানের। অ্যাকাডেমিক উন্নয়নেও বিভিন্ন পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং বাস্তবায়ন চলমান।

ঘর নেই, ঘর আছে
বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট শিক্ষার্থী সাড়ে প্রায় ১০ হাজার। পক্ষান্তরে আবাসিক হল রয়েছে তিনটি। এই তিন আবাসিক হলে আসন সংখ্যা রয়েছে মাত্র ৯শ ৩৭টি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে সর্বাধিক আসন ৩শ ৫৫টি ও শহীদ মুখতার ইলাহী হলে ২শ ৪০টি আসন আছে। মেয়েদের জন্য একমাত্র শেখ ফজিলাতুন্নেছা হলে মাত্র ৩শ ৪২টি আসন রয়েছে। মোট শিক্ষার্থীর তুলনায় অতি নগণ্য। ফলে শিক্ষার্থীদের একাংশকে গাদাগাদি করে হলরুমে এবং সিংহভাগদের বিশ্ববিদ্যালয় পার্শ্ববর্তী এলাকার মেসগুলোতে থাকতে হয়। এ সংকট নিরসনে দ্রুত আবাসিক হল নির্মাণে গুরুত্ব না দিলে সমস্যা আরো প্রকট হবে মনে করছেন শিক্ষার্থীরা। প্রশাসন বলছেন, শিক্ষার্থীদের সমস্যা প্রাধান্য দিয়েই কার্যক্রম পরিচালনা হচ্ছে।

শ্রেণিকক্ষও লাগবে
বিশ্ববিদ্যালয়টিতে বর্তমানে ৬টি অনুষদ, ১টি ইনস্টটিউিট, ২২টি বিভাগ থাকলেও সেই তুলনায় নেই পর্যাপ্ত শ্রেণিকক্ষ। প্রয়োজনের তুলনায় শ্রেণিকক্ষের সংখ্যা অপ্রতুল। বর্তমানে প্রতিটি বিভাগের প্রায় ৫টি করে ব্যাচ রয়েছে। এর বিপরীতে ক্লাসরুম রয়েছে কোনো বিভাগের একটি আবার কোন বিভাগের দুইটি। ফলে এক ব্যাচের ক্লাস শেষ হতে না হতেই অন্য ব্যাচের শিক্ষার্থীরা ওই ক্লাসরুমের দরজায় দাঁড়িয়ে থাকে। এতে ক্লাস রুমে অবস্থানরত শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মনযোগে বিঘ্ন ঘটার পাশাপাশি অস্বস্তিতে পড়তে হয় দাঁড়িয়ে থাকাদেরও। তবে এ সংকট সমাধানে অ্যাকাডেমিক ভবন সম্প্রসারণের উদ্যোগ নিয়েছেন বর্তমান প্রশাসন। খুব শীঘ্রই সম্প্রসারণ কাজ শুরু হবে বলে একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে।

ব্যাহত শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রম
বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে স্নাতক-স্নাতকোত্তর পর্যায়ে প্রায় ১০ হাজার শিক্ষার্থীর কিন্তু পাঠদানের জন্য শিক্ষক রয়েছেন মাত্র ১শ ৮৬ জন। ১০ জন রয়েছেন বিভিন্ন মেয়াদের শিক্ষা ছুটিতে। বাকি ১৭৬ জনের মধ্যে আছেন। বিভাগীয় প্রধান, হলের প্রভোস্টসহ বিভিন্ন প্রশাসনিক কাজে জড়িত আছেন অনেকে। তারা জানিয়েছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে সেমিস্টার পদ্ধতিতে বিভাগের একজন শিক্ষককে নিতে হচ্ছে ১০-১২টি কোর্স। ফলে ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রম। বিশ্বব্যাপী উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর গড় অনুপাতের ন্যূনতম মানদন্ড ধরা হয় ১:২০। অর্থাৎ প্রতি ২০ জন শিক্ষার্থীর জন্য একজন করে শিক্ষক থাকতে হবে। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাতের আন্তর্জাতিক মানদন্ডে সবচেয়ে পিছিয়ে রয়েছে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাত ১:৫৪। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) কর্তৃক প্রকাশিত ৪৭তম বার্ষিক প্রতিবেদন থেকে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

উপেক্ষিত নন আর বেগম রোকেয়া
নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের নামে নির্মিত বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়। তবে রোকেয়াকে জানতে ও তার দর্শন চর্চায় অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল ও সিন্ডিকেটে অনুমোদন পেলেও দীর্ঘদিনেও চালু হয়নি রোকেয়া স্টাডিজ সেন্টার। রংপুরের পায়রাবন্দে রোকেয়া স্মৃতি কেন্দ্র গবেষণার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে নেয়ার দাবি থাকলেও বাস্তবায়ন হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছেন, পায়রাবন্দের ব্যাপারে আমরা সংশ্লিষ্ট মহলে আলোচনা করেছি। গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে।

আছে চারটি ফটক
বেরোবি প্রতিষ্ঠার পর থেকেই দৃষ্টিনন্দন প্রধান ফটক নির্মাণের জন্য দাবি জানিয়ে আসছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও রংপুরের স্থানীয়রা। বিশ্ববিদ্যালয়ে চারটি প্রবেশপথ রয়েছে। তবে আজও নির্দিষ্ট করা হয়নি প্রধান ফটক। প্রতিষ্ঠার ১৫তম বছরে এসেও নির্মাণ করা হয়নি দৃষ্টিনন্দন প্রধান ফটক। শিক্ষার্থীদের দাবিতে বর্তমান ভিসি দৃষ্টিনন্দন চুড়ান্ত নকশা প্রণয়ন এবং চলতি বছরের ৪ জুলাই প্রধান ফটক নির্মাণ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেছেন। নির্মাণ প্রক্রিয়া চলমান।

উন্নয়নে স্থবিরতা
২০১২ সালের পর আর কোন অবকাঠামো নির্মাণ হয়নি এ বিশ্ববিদ্যালয়ে। বর্তমানে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উন্নয়ন প্রকল্পের দুটি ভবন শেখ হাসিনা ছাত্রী হল এবং ড. এম. ওয়াজেদ আলী মিয়া রিসার্চ ইন্সটিটিউট নির্মাণাধীন। ২০১৭ সালের ৫ জানুয়ারি কাজের উদ্বোধন হলেও এখন পর্যন্ত অসম্পন্ন। এমনকি স্বাধীনতা স্মারক নির্মাণাধীন অবস্থায় পড়ে আছে। অস্থায়ীভাবে নির্মিত হয়নি শহীদ মিনার। বর্তমান প্রশাসন ভালোভাবে নির্মাণের জন্য চেষ্টা চালাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র।

ভালোবাসার ভুবন
দিনশেষে বেরোবির শিক্ষার্থীরা স্বপ্ন দেখেন, তারা উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ শেষে দেশের বিভিন্ন সেক্টরে কাজ করার মাধ্যমে দেশের ও দশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখবেন। সবুজের এই বিশাল সমারোহ আর বড়, বড় ভবন; সবমিলিয়ে পাখির চোখে ক্যাম্পাসটি যেন দাঁড়িয়ে থাকা একটি জ্ঞানবৃক্ষ। প্রতিষ্ঠার ১৫তম বছরে এসে উচ্চশিক্ষা ও গবেষণায় বিশ্ববিদ্যালয়ের আলো ছড়িয়ে পড়ুক দিক দিগন্তে- এই প্রত্যাশা।

ছবি : বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ফটোগ্রাফিক সোসাইটি।

ওএফএস

Header Ad
Header Ad

পাকিস্তানিদের বিশেষ ভিসা সুবিধা বাতিল, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ভারত ছাড়ার নির্দেশ

ছবি: সংগৃহীত

ভারত-নিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মীরের পেহেলগামে প্রাণঘাতী সন্ত্রাসী হামলার পর পাকিস্তানিদের জন্য ‘সার্ক ভিসা ছাড়’ সুবিধা বাতিল করেছে ভারত। সেই সঙ্গে ভারতে অবস্থানরত পাকিস্তানি নাগরিকদের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে দেশ ছাড়ার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। বুধবার (২৩ এপ্রিল) ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত দেশটির মন্ত্রিসভার নিরাপত্তা বিষয়ক কমিটির জরুরি বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে ভারত:

সিদ্ধান্তগুলো হলো:

১. সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি স্থগিত ঘোষণা। ভারত বলছে, পাকিস্তান যতদিন সীমান্তে সন্ত্রাস বন্ধ না করবে এবং সন্ত্রাসবাদকে সমর্থন ত্যাগ না করবে ততদিন এটি স্থগিত থাকবে। ১৯৬০ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর করাচিতে তৎকালীন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু ও পাকিস্তানি প্রেসিডেন্ট ফিল্ড মার্শাল আইয়ূব খান সিন্ধু পানি বণ্টন চুক্তি স্বাক্ষর করেছিলেন। বিশ্বব্যাংকের মধ্যস্থতায় বহুল আলোচিত এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল।

২. অবিলম্বে আটারি-ওয়াঘা সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়া হবে। যাদের বৈধ নথি রয়েছে তারা ১ মে এর আগে সীমান্ত অতিক্রম করতে পারবেন।

৩. সার্ক ভিসা এক্সেম্পশন স্কিম (এসভিইএস) এর আওতায় পাকিস্তানি নাগরিকদের ভারতে ভ্রমণের অনুমতি দেওয়া হবে না। পাকিস্তানি নাগরিকদের অতীতে জারি করা যেকোনো এসভিইএস ভিসা বাতিল বলে গণ্য হবে। এসভিইএস ভিসায় বর্তমানে ভারতে থাকা পাকিস্তানি নাগরিকদেরও ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ভারত ছাড়তে বলা হয়েছে।

৪. নয়াদিল্লিতে পাকিস্তানি হাইকমিশনের সামরিক, নৌ ও বিমান উপদেষ্টাদের ‘পার্সোনা নন গ্রাটা’ ঘোষণা করা হয়েছে। ভারত ছাড়ার জন্য এক সপ্তাহ সময় পাবেন তারা। ইসলামাবাদের ভারতীয় হাইকমিশন থেকে প্রতিরক্ষা, নৌ ও বিমান উপদেষ্টাদের প্রত্যাহার করে নিচ্ছে ভারত। সংশ্লিষ্ট হাইকমিশনের এই পদগুলো বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে। উভয় হাইকমিশন থেকে সার্ভিস অ্যাডভাইজারের পাঁচজন সাপোর্ট স্টাফকেও প্রত্যাহার করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

৫. হাইকমিশনের সামগ্রিক জনশক্তি ৫৫ থেকে কমিয়ে ৩০ জনে নামিয়ে আনার সিদ্ধান্ত হয়েছে। যা ১ মে এর মধ্যে কার্যকর হবে।

মঙ্গলবার বিকালে কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলা হয়। অস্ত্রধারীরা জঙ্গল থেকে বের হয়ে পর্যটকদের ওপর গুলি চালাতে থাকেন। হামলায় ঠিক কতজন নিহত হয়েছেন, তা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হয়নি। তবে নিরাপত্তা বাহিনীর সূত্র বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেছে, নিহত ব্যক্তির সংখ্যা অন্তত ২৬।

পাকিস্তানভিত্তিক নিষিদ্ধ সংগঠন লস্কর–ই–তৈয়েবার সহযোগী সংগঠন দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট (টিআরএফ) মঙ্গলবার বিকালের হামলার দায় স্বীকার করেছে।

এদিকে এ ঘটনায় পাকিস্তানের পক্ষ থেকেও নিন্দা প্রকাশ করা হয়েছে। দেশটির গণমাধ্যম জিও নিউজের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘অবৈধভাবে দখলকৃত জম্মু-কাশ্মীর’র পেহেলগামে হামলার ঘটনায় পাকিস্তান উদ্বিগ্ন। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জানিয়েছেন, পেহেলগামে হামলায় ২৬ জন নিহতের ঘটনায় পাকিস্তান নিন্দা প্রকাশ করছে। নিহতের পরিবারের প্রতিও সমবেদনা প্রকাশ করছে পাকিস্তান।

এ হামলাকে ‘সন্ত্রাসী হামলা’ আখ্যা দিয়ে এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উদ্দেশে বার্তা দিয়েছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বার্তায় তিনি বলেন, কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলায় প্রাণহানির ঘটনায় আমার গভীর সমবেদনা গ্রহণ করুন। আমরা এ জঘন্য হামলার তীব্র নিন্দা জানাই। আমরা আবারও নিশ্চিত করছি যে, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের অবস্থান সবসময় দৃঢ়।

Header Ad
Header Ad

বিএনপি সরকার গঠন করলে শিক্ষিত বেকারদের জন্য চালু হবে ভাতা: তারেক রহমান

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ছবি: সংগৃহীত

দেশে সরকার পরিবর্তন হলে শিক্ষিত বেকারদের জন্য বিশেষ ভাতা চালু করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি জানিয়েছেন, সরকার গঠনের পর যারা চাকরি খুঁজেও পাচ্ছেন না, তাদের জন্য এক বছরের ‘শিক্ষিত বেকার ভাতা’ চালু করার বিষয়টি বিবেচনায় রয়েছে। এ সময়ের মধ্যেই তাদের কর্মসংস্থানে সহায়তা করবে সরকার।

বুধবার (২৩ এপ্রিল) বিকেলে রংপুর, নীলফামারী ও সৈয়দপুর জেলা বিএনপির নেতাদের অংশগ্রহণে আয়োজিত এক প্রশিক্ষণ কর্মশালায় ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে এসব কথা বলেন তিনি। বিএনপির ৩১ দফা রাষ্ট্রকাঠামো মেরামত পরিকল্পনা নিয়ে কর্মশালাটি অনুষ্ঠিত হয়।

তারেক রহমান বলেন, “আমরা একটি পরিকল্পনা করছি—যাতে যারা এখনো চাকরি পাননি, তারা যেন সরকারের সহযোগিতায় একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য সহায়তা পান। এই সময়টিতে সরকার ও ব্যক্তিগত পর্যায়ে উভয়ের উদ্যোগেই কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করা হবে।”

তিনি আরও অভিযোগ করেন, বিগত সময়ে সরকারি ও আধা-সরকারি চাকরিতে ব্যাপক দলীয়করণ হয়েছে। বিএনপিসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলের অনেক তরুণ নেতাকর্মী, যাঁরা আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন, তারা বয়স পার করে ফেললেও কোনো চাকরি পাননি। “শুধু ছাত্রদল নয়, আরও অনেক সাধারণ মানুষ আছেন যারা সরকারের অনুগত না হওয়ায় চাকরির সুযোগ হারিয়েছেন। এ বাস্তবতা বিবেচনায় নিতে হবে,” বলেন তারেক।

বাংলাদেশে সর্বজনীন স্বাস্থ্যবিমা চালু করার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তারেক রহমান বলেন, “২০ কোটির বেশি মানুষের জন্য স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা বিশাল বাজেট ও কাঠামোগত পরিকল্পনা দাবি করে। এটা অব্যবস্থাপনার জায়গা নয়, এটা করতে হলে বাস্তবতা মাথায় রেখে ধাপে ধাপে এগোতে হবে।”

তিস্তা নদী ঘিরে রংপুর অঞ্চলের মানুষদের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা পূরণে বিএনপির পরিকল্পনার কথা জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, “তিস্তা শুধু নদী নয়, রংপুর বিভাগের অর্থনীতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। অতীতে তিস্তাকে কেন্দ্র করে রাজনীতি হয়েছে, কিন্তু মানুষের জীবনে কোনো পরিবর্তন আসেনি। বিএনপি সরকারে গেলে তিস্তা সমস্যা সমাধানে বাস্তব ভিত্তিক ও জনগণকেন্দ্রিক প্রকল্প গ্রহণ করবে।”

বিএনপির কেন্দ্রীয় প্রশিক্ষণবিষয়ক কমিটির উদ্যোগে আয়োজিত এ প্রশিক্ষণ কর্মশালায় উপস্থিত ছিলেন রংপুর জেলা ও মহানগর বিএনপির নেতারা। কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক শামসুজ্জামান সামু এবং উদ্বোধনী বক্তব্য দেন বিএনপির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু। সঞ্চালনায় ছিলেন নির্বাহী কমিটির সদস্য আবদুস সাত্তার পাটোয়ারী।

Header Ad
Header Ad

এস আলমের ৪০৭ কোটি টাকার ১৫৯ একর জমি ক্রোকের নির্দেশ

ছবি: সংগৃহীত

এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলমের স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে থাকা ১৫৯ একর জমি ক্রোকের নির্দেশ দিয়েছে আদালত। জমিগুলোর আনুমানিক বাজারমূল্য ৪০৭ কোটি টাকা বলে জানিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এসব জমি ঢাকা ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থানে অবস্থিত।

বুধবার (২৩ এপ্রিল) ঢাকার মহানগর দায়রা জজ ও সিনিয়র বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মো. জাকির হোসেন এই আদেশ দেন। আদালতে দুদকের পক্ষে আবেদন করেন উপপরিচালক তাহাসিন মুনাবীল হক। শুনানি শেষে আদালত আবেদন মঞ্জুর করেন। বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা আকতারুল ইসলাম।

দুদকের আবেদনে বলা হয়, এস আলম ও তার ঘনিষ্ঠদের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে চলমান তদন্তে দেখা যায়, তার স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে বিপুল পরিমাণ জমি ও স্থাবর সম্পদ রয়েছে। এসব সম্পদ তারা অন্যত্র বিক্রি বা হস্তান্তরের চেষ্টা করছে বলে গোপন সূত্রে জানা যায়। ফলে তদন্ত সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার স্বার্থে এবং রাষ্ট্রীয় সম্পদ সুরক্ষায় এসব জমি ক্রোকের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়।

জমিগুলো যেসব প্রতিষ্ঠানের নামে রয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে ক্রিস্টাল ক্লিয়ার ট্রেড লিংক, ইভেন্ট টাইটান ইন্টারন্যাশনাল, পাইথন ট্রেডিং কর্নার, ইসলাম ট্রেডার্স, ডায়মন্ড বিজনেস হাউস, এএইচ সেন্টারসহ আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। দুদকের ভাষ্য অনুযায়ী, এসব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে মোহাম্মদ সাইফুল আলমের সরাসরি আর্থিক ও ব্যবসায়িক সম্পর্ক রয়েছে।

এর আগেও এস আলম ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে একাধিক দফায় আদালত সম্পদ ও শেয়ার অবরুদ্ধ এবং দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। গত বছরের অক্টোবর থেকে শুরু করে চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত সময়ে তার ও তার ঘনিষ্ঠজনদের নামে থাকা শেয়ার, জমি ও ব্যাংক হিসাব পর্যায়ক্রমে অবরুদ্ধ ও ক্রোক করে আদালত।

এস আলমের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তে এখন পর্যন্ত ১৩০০-এর বেশি ব্যাংক হিসাব, হাজার একরের বেশি জমি এবং কয়েক হাজার কোটি টাকার শেয়ার নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। দুদক জানিয়েছে, তদন্তে আরও নতুন সম্পদের তথ্য পাওয়া যেতে পারে।

দুদক বলছে, মানি লন্ডারিং ও জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে এই তদন্ত চলমান রয়েছে এবং প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

পাকিস্তানিদের বিশেষ ভিসা সুবিধা বাতিল, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ভারত ছাড়ার নির্দেশ
বিএনপি সরকার গঠন করলে শিক্ষিত বেকারদের জন্য চালু হবে ভাতা: তারেক রহমান
এস আলমের ৪০৭ কোটি টাকার ১৫৯ একর জমি ক্রোকের নির্দেশ
সীমান্তের সব ভিডিও সত্য নয়, আবার সবটা যে মিথ্যা তাও নয়: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
আন্দোলনের নামে রাস্তা অবরোধ না করার অনুরোধ ডিএমপির
টাঙ্গাইলে বেড়েছে গরমের তীব্রতা, বিপাকে নিম্ন আয়ের মানুষ
সরকার সরিয়ে না দিলে পদত্যাগ করব না: কুয়েট ভিসি
বিরামপুরে ছিনতাইকালে পুলিশের হাতে 'ভুয়া সেনাসদস্য' আটক
হাসিনাকে যারা খুনি হতে সাহায্য করেছে, তাদেরও বিচার করতে হবে: সারজিস আলম
কুয়েটের ৩৭ শিক্ষার্থীর বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার, খুললো আবাসিক হল
কাশ্মীরে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’, মসজিদে ঘোষণার পর বিক্ষোভ শুরু
ইতিহাস গড়ল জিম্বাবুয়ে, ঘরের মাঠে লজ্জার হার বাংলাদেশের
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের 'এ' ইউনিটে প্রথম আব্দুল্লাহ
বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র পারভেজ হত্যা: প্রধান আসামি মেহরাজ গ্রেপ্তার
তুরস্কের ইস্তানবুলে একের পর এক ভূমিকম্প
এবার সেই গৃহকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করলেন পরীমণি
দ্রুত রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন না হলে পুরো অঞ্চল অস্থিতিশীল হয়ে উঠবে: প্রধান উপদেষ্টা
আমরা সংস্কারও চাই, নির্বাচনও চাই: মির্জা আব্বাস
কাশ্মীরের হামলা ‘সাজানো’ দাবি পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যমের
ভাইরাল ভিডিও সমন্বয়ক রুবাইয়ার নয়, দাবি এনসিপি নেতার