৪০ বছর ধরে বাঁশি বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ
৪০ বছর ধরে বাঁশি বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন তিনি। বাঁশি তার প্রাণ। বাঁশি বাজিয়ে ও বিক্রি করে যা পান তাই দিয়ে চলে তার সংসার। গ্ৰামের লোকজন তাকে 'বাঁশি আমির' বলে ডাকেন। গায়ের মেঠোপথ থেকে শুরু করে বিভিন্ন বাজার ও মেলায় তার বাঁশির কদর অনেক বেশি।
বাঁশি আমিরের বাড়ি নেত্রকোনার বারহাট্টা উপজেলার আসমা ইউনিয়নের প্রত্যন্ত কৈলাটি গ্রামে। ছোটবেলায় শখের বশে বাঁশি হাতে নিয়েছিলেন তিনি। আজকাল সেই বাঁশিই হয়ে ওঠে তার পরিবার চালানোর আয়ের উৎস।
বিভিন্ন হাটবাজারে বাঁশি হাতে ঘুরে বেড়ান আমির হোসেন। কখনো রেলস্টেশনে, কখনো ফুটপাতে ফেরি করে বাঁশি বিক্রি করেন তিনি। চার দশক ধরে এসব বাঁশিতে মনোমুগ্ধকর সুর তোলেন। সেই সুর শুনতে তাকে ঘিরে ভিড় করে সাধারণ মানুষ। বাঁশি বাজিয়ে ও বেচে দৈনিক ৪০০-৫০০ টাকা আয় হয় তার। এ টাকা দিয়েই স্ত্রী, তিন সন্তানসহ পাঁচ সদস্যের পরিবার চলে।
শৈশব থেকেই আমির হোসেনকে বাঁশির প্রতি অনুরক্ত দেখে আসছেন বারহাট্টা উপজেলার কৈলাটি গ্রামের ষাটোর্ধ্ব আবুল হাশিম। তিনি বলেন, বাঁশির প্রতি ঝোঁক ছিল আমির হোসেনের। পরে একসময় বাঁশি তৈরি ও বিক্রি করাকেই পেশা হিসেবে নিয়েছেন। নিজেই হরেক রকমের বাঁশি তৈরি করেন আমির।
উপজেলা বারহাট্টার কৈলাটি গ্রামে দেখা মেলে বাঁশিওয়ালা আমির হোসেনের সঙ্গে। কথায় কথায় তিনি বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই আমার বাঁশির প্রতি টান ছিল। তারপর এক ওস্তাদের কাছে বাঁশি বাজানো ও বাঁশি তৈরির কাজ শিখি। বাবা মারা যাওয়ার পর নিজেই বাঁশি তৈরি করে বিক্রি শুরু করি। এ দিয়েই সংসার চালাই। বলা যায়, শখ থেকে পেশায় আসা।’ এই বাঁশি দেশের একজন খ্যাতিমান বাঁশিশিল্পী হওয়ার ইচ্ছা আমির হোসেনের।
বাঁশি তৈরির কাজে স্বামীকে সহযোগিতা করেন আমিরের স্ত্রী শামসুন্নাহার। বাড়িতে গিয়ে কথা হয় তার সঙ্গেও। শামসুন্নাহার বলেন, ‘বাঁশিতে রং বার্নিশ, তা পোড়ানো ও রোদে শুকাতে দেওয়ার কাজ আমি করি। সপ্তাহে ৭০-৮০টি বাঁশি তৈরি করা সম্ভব হয়। পরে তা বিভিন্ন জেলার বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ঘুরে বিক্রি করেন আমার স্বামী। কোনো দিন ১০-১২টি, আবার কোনো দিন ১৫-২০টি বাঁশি বিক্রি হয়।
ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তার কথা জানিয়ে এই নারী বলেন, ‘আমার স্বামীর বয়স বাড়ছে। একটা সময় হয়তো আর এভাবে ঘুরে ঘুরে বাঁশি বিক্রি করতে পারবেন না। তখন কীভাবে চলব?’
মধ্যনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাহিদ হাসান খানও। তিনি বলেন, বাঁশি বাংলা সংস্কৃতির প্রাচীন নিদর্শন। প্রাচীনকাল থেকে শুরু করে আধুনিক সংগীতেও বাঁশির ব্যবহার হচ্ছে। লোকমুখে শুনেছি, এখানে প্রতি সপ্তাহের শনিবার আমির হোসেন নামে একজন বংশীবাদক বাঁশি বিক্রি করেন।তাকে আমাদের প্রশাসনের পক্ষ থেকে সম্ভব সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।
এসএন