নানা সমস্যায় জর্জর ‘বশেমুরবিপ্রবি’
গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে নেই টিএসসি। আরো কত নেই! গল্প বলছেন ও ছবি তুলেছেন অন্যতম সাংবাদিক এবং ছাত্র সফিকুল আহসান ইমন
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা হবে বিশ্বমানের। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে ছাত্র-ছাত্রীরা ক্ষমতা অর্জন করবেন আন্তর্জাতিক মানের সাথে তাল মেলানো। শিখবেন নৈতিকতা, মহানুভবতা, মননশীলতাও। পূর্ণ পরিসরে নিয়মানুযায়ী হবার কথা থাকলেও সেই সুযোগগুলো লাভ করতে পারেন না বাংলাদেশের অন্যতম বিশ্ববিদ্যালয় ও স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি, মুক্তিযুদ্ধের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে পিতৃভূমি গোপালগঞ্জে তার মেয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গড়া ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বশেমুরবিপ্রবি)’ ছাত্র, ছাত্রী, অধ্যাপক, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও গবেষকরা।
তারা জানিয়েছেন, বিশ্ববিদ্যালয় একজন ছাত্র এবং ছাত্রীকে শুদ্ধ মানুষ হিসাবে গড়ে তোলার সবচেয়ে বড় জায়গা। বিশ্বমানের পড়ালেখা হয় সেখানে। শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লাভ করেন বৈশ্বিক জ্ঞান। মেধা এবং মননশীলতায়ও একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হয়ে ওঠেন বিশ্বমানের। দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিশ্বকে দেখতে পান তার আগেই পারিপার্শ্বে। উচ্চশিক্ষিত শিক্ষক-শিক্ষিকা, ন্যায়-নীতিবান প্রশাসক, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও বিভিন্ন অঞ্চলগুলোর শিক্ষার্থীদের কাছ থেকেও বিবিধ জ্ঞান লাভ করেন।
তবে এইসব সুবিধায় ভাটা পড়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বশেমুরবিপ্রবি)-এ। এখনো নেই টিএসসি বা ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র। এ বড় আশ্চর্য। তারা জানেনও না টিএসসির কাজ কী? ফলে জানালেন, যেখানে অবাধ চলাচলের মাধ্যমে শিক্ষকদের কাছ থেকে জ্ঞান আহরণের সুযোগ থাকবে ছাত্র-ছাত্রীদের।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো হলেই সব হলের নিয়মে নেই পূর্ণ ও যথাযথ ব্যবস্থা। অত্যন্ত দুঃখের, নেই উচ্চগতির ইন্টারনেট সংযোগ, নেই পত্রিকা পাঠের রূম, নেই ইনডোর খেলার রূম, বিনোদনের জন্যও নেই কোনো আলাদা টিভি রূমের ব্যবস্থা। এই ব্যাথা আর কোথাও নেই।
হলগুলোতে ডাইনিংয়ের ব্যবস্থা নেই বলে যেখানে খেতে যান ছাত্র, ছাত্রীরা; শিক্ষার্থীদের সেখানেই দাঁড়িয়ে পত্রিকা পড়তে হয়। আবার সেখানেই উচ্চশব্দে চলে টেলিভিশন। ফলে বড় গন্ডগোল হয় মেধা বিকাশে। টেলিভিশনের উচ্চ শব্দের সাথে আছে খেলায় চার, ছয়ের আনন্দে চিৎকার ও হাততালি। কেউ আবার এক কর্ণারে ক্যারাম খেলছেন আর সাফল্যে চিৎকার করছেন। এসব নিয়েই হাসি, আনন্দে পড়তে হয় পত্রিকা। ওদিকে ভাতের থালা হাতে নিয়ে জায়গার অভাবে দাঁড়িয়ে খান সবাই। এই হলো বশেমুরবিপ্রবি'র হলগুলোর নিত্যদিনের চিত্র। সেখানেই তাদের বসার সিট আছে।
হলের অসুবিধার কথা উল্লেখ করে শেখ রাসেল হলের আবাসিক ছাত্র শামসুর রাহমান পাভেল বলেছেন, ‘আমাদের হলগুলোর পরিবেশ মানানসই হলেও সুযোগ-সুবিধা কম সমসাময়িক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর চেয়ে। শুধু হল সুবিধায় নয়, অবকাঠামোগত সুবিধায়ও আমরা পিছিয়ে অনেক ক্যাম্পাসের তুলনায়। যেহেতু পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি সেহেতু অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো সুযোগ-সুবিধা পাবো এইটুকু দাবী প্রশাসনের কাছে করতেই পারি আমরা।’
বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব হলের আবাসিক শিক্ষার্থী সাদিয়া জাহান বলেছেন, `আমাদের হলের অবস্থা তো এই সম্প্রতি কিছুটা উন্নতি হয়েছে। কিছুদিন আগেও আমরা অনেকে একটি বেড শেয়ার করে থাকতাম। হলে বড় রিডিং রূম দরকার। যাতে বেশি শিক্ষার্থীর পড়া যায়। সে সঙ্গে টিভিরুম আর পত্রিকা রুম দুটো অবশ্যই আলাদা হাওয়া জরুরী।'
এ বিষয়ে অভিমত জানতে চাইলে শেখ রাসেল হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক এমদাদ হোসেন বলেছেন, "অবশ্যই শিক্ষার্থীরা এই সুবিধাগুলোর দাবীদার। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেশি, ক্যাম্পাসের জায়গার পরিমাণ কম আবার হলগুলোর নির্মাণগত দিক থেকেও অনেক কমতি আছে। তাই সুবিধাগুলো থেকে বর্তমানের শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত। তবে তারা অবশ্যই পাবে। অতি শীঘ্রই হাওয়া জরুরী। আমিও প্রশাসনকে জানাব।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমার ছেলেদের শেখ রসেল হলে এসব সুবিধা খুব শীঘ্রই আসছে। আমাদের ক্যাম্পাসে কনস্ট্রাকশনের কাজ শেষ হচ্ছে দ্রুত। সেই হলে আমরা একটি গেষ্ট রুম, আলাদা বড় ইনডোর গেমস রুম এবং আলাদা টিভি রূমের ব্যবস্থা করতে পারব। বড় একটি রিডিং রুম, বর্তমানের থেকে বড় নামাজ কক্ষের ব্যবস্থা করব।’
শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনের তুলনায় নগন্য সুবিধা দেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. শরাফত আলী বলেছেন, "নিয়মানুসারে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসাবে আবাসিক হলে হলের সকল সুবিধা পাওয়া প্রতিটি ছাত্র, ছাত্রীর অধিকার। তবে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় নতুন, পরিসর কম, অবকাঠামো কম, তাই কিছু সুবিধা থেকে আমাদের শিক্ষার্থীরাও বঞ্চিত। প্রশাসনের প্রচেষ্টা সব সময় থাকে। আশা করি, যথাশীঘ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল সুবিধা আমাদের শিক্ষার্থীরা ভোগ করতে পারবে।’
যেখানে প্রয়োজনীয় হলের সুবিধাই পান না বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা, সেখানে বিশ্বমানের জ্ঞান আহরণ করা দায়। ক্যাম্পাসে নেই যথোপযুক্ত অবকাঠামোগত ব্যবস্থা, নেই প্রশাসনের সঠিক পরিচালনা পদ্ধতি।
ওএফএস।