ধূমপানমুক্ত একটি স্বপ্নজগৎ-শাবিপ্রবি
বাংলাদেশের প্রথম মাদক ও ধূমপানমুক্ত ক্যাম্পাস শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্বিবিদ্যালয় (শাবিপ্রবি)। তবে সেখানেও উৎসবে, খেয়ালে ও আনন্দে ছাত্র, ছাত্রী এমনকি কোনো কোনো অধ্যাপক ধূমপান করেন। আরো লিখেছেন প্রতিনিধি নূরুল ইসলাম রুদ্র
প্রধান ফটকেই লেখাটি আছে। ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইনে ২০১৫ সালে প্রনীত বিধিমালা অনুসারে ২০১৮ সালের ৪ জানুয়ারি শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়কে ধূমপান মুক্ত এলাকা হিসেবে ঘোষণা করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাফেটেরিয়া, ক্যান্টিন, টং দোকান, ফুডকোর্টসহ অন্যান্য জায়গায় তামাকজাতীয় দ্র্যব্যাদি বিক্রয় নিষিদ্ধ করেছেন তারা।
সে আইন ও বিধিমালা লংঘন করা হচ্ছে প্রতিনিয়ত। সাস্ট ক্যাম্পাসের টং দোকান ও আবাসিক হলগুলোতে বিক্রয় হচ্ছে তামাক জাতীয় দ্রব্যাদি। সহজলভ্যের কারণে অনেকে শিক্ষার্থী মাদকের দিকেও ঝুঁকছেন। একপর্যায়ে অন্যান্য নেশাজাতীয় দ্রব্য সেবনের দিকেও তাদের ঝুঁকে পড়ার শঙ্কা তৈরি হচ্ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। মূলত বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নজরদারির অভাব ও শাস্তির বিধান কার্যকর না হওয়ায় ধূমপায়ীরা দিন, দিন বেপরোয়া হয়ে উঠছেন বলে মনে করছেন অধূমপায়ীরাও।
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাদক নিয়ন্ত্রণ বিধিমালায় বলা হয়েছে, ‘এই বিশ্ববিদ্যালয়ের কোথাও তামাকজাতীয় দ্রব্যাদি বিক্রয় পরিলক্ষিত হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও দোকানদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
কিন্তু সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, ক্যাম্পাসের বিভিন্ন টং দোকান, ফুডকোর্ট ও আবাসিক হলগুলোতে প্রকাশ্যে সিগারেট বিক্রয় করছেন দোকানিরা। এসব চায়ের দোকানে ছাত্রদের পাশাপাশি বহিরাগতরাও আসছেন। তারাও ধূমপান করছেন। সিগারেটের ধোঁয়ার কারণে দোকানগুলোতে অধূমপায়ীদের বসা মুশকিল হয়ে পড়ছে। এমনকি অ্যাকাডেমিক ভবনগুলোতে শিক্ষকরাও ধূমপান করছেন। সবুজে ঘেরা ক্যাম্পাস, মুক্তমঞ্চের পেছন দিক ও গোল চত্বরের বায়ু প্রতিনিয়ত দূষিত হচ্ছে।
অভিযোগ রয়েছে, বিভিন্ন উপলক্ষ্যকেও কেন্দ্র করে ক্যাম্পাসে নিয়মিত মাদকের আসর বসাচ্ছে মাদকসেবীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মিলনায়তনে অনুষ্ঠান চলাকালীন সময়ে শিক্ষার্থীরা প্রকাশ্যে ধূমপান করছেন।
মূলত অনুষ্ঠান চলাকালীন সময়ে অডিটোরিয়ামের ভেতরে বৈদ্যুতিক লাইট বন্ধ থাকার সুযোগে ‘অন্ধাকার’কে কাজে লাগিয়ে মাদকটি সেবন করছেন তারা।
এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ ফেইসবুক গ্রুপেও সমালোচনার ঝড় বইছে।
গ্রুপটিতে শান্ত দাস নামের এক শিক্ষার্থী লিখেছেন, ‘অডিটোরিয়ামের দ্বিতীয় তলায় বসে প্রোগ্রাম দেখছিলাম। কিন্তু অতিরিক্ত ধোঁয়ার মধ্যে পড়ে অনেকেই মারাত্মক সাফকেটিং ফিল করায় বাধ্য হয়ে বের হয়ে আসতে হন।’
রেহনুমা মূর্ছনা নামের আরেকজন লিখেছেন, ‘টংয়ের মধ্যে বসে এরা ধূমপান করে। তাদের কারণে অ-ধূমপায়ীরা বসে খেতেও পারে না।’
আব্দুল বাছিত লিখেছেন, ‘হলের টিভি রুমে খেলা চলাকালীন সময়ে ছাত্র নেতাদের অনেকে প্রকাশ্যে ধূমপান করে।’
২০১৩ সালে বাংলাদেশ সরকারের ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন (সংশোধনী) অনুযায়ী, জনসমাগমস্থলে ধূমপানের শাস্তিতে অর্থদন্ড ৩ শত টাকা করা হয়েছে। কিন্তু আইনটি না মেনে ছাত্র ও শিক্ষকদের অনেকে প্রকাশ্যে ধূমপান করছেন এমন মন্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক সিনিয়র অধ্যাপক বলেছেন, ‘আমাদের সাস্টে ডোপ টেস্টের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদেরকে ভর্তি করানো হয়। ফলে প্রায় পুরোপুরি ধূমপান ও মাদকমুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলা সম্ভব হয়েছে। তবে কেউ, কেউ শুরুতে সিগারেট বা মাদকের প্রতি আসক্তি না থাকলেও পরবর্তীতে সিগারেটাসক্তদের সঙ্গে মিশে মাদকটির প্রতি ঝুঁকছে। ছাত্রদেরকে ফিরিয়ে আনতে বিভাগীয় ছাত্র উপদেষ্টাকে আরো অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। মাদকবিরোধী কার্যক্রমসহ নানামুখী উদ্যোগও নিতে হবে।’
ধূমপান করেন না, বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন কয়েকজন শিক্ষক ও শিক্ষার্থী জানান, ‘মাদকাসক্ত শিক্ষার্থীদের বেশিরভাগই ধূমপান দিয়ে পরে নেশায় জড়িয়ে পড়েছে। একজন ধূমপায়ীর সাধারণত একাধিক ধূমপায়ী বন্ধু থাকে। এভাবেই তার প্রভাবে অন্য বন্ধুরা নিয়মানুসারে মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে। একবার যখন কেউ কোনো মাদক গ্রহণ করে, তখন সে একটিতে অন্য কোনো মাদকও নানা কারণে গ্রহণ করে।’
ধূমপানের ‘ভাবসাব’ থাকে বলে জানিয়েছেন ধূমপায়ীরা।
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর অধ্যাপক আবু হেনা পহিল এই ছাত্র প্রতিবেদককে বলেছেন, ‘কাউকে প্রকাশ্যে ধূমপান করতে দেখলে সেক্ষেত্রে চুপ না থেকে তার প্রতিবাদ জানানো বা প্রক্টরিয়াল বডিকে জানাতে হবে। অভিযোগের ভিত্তিতে কর্তৃপক্ষ মাদকসেবীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।’
কোনো দোকানদার সিগারেট বিক্রি করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
এই বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, যেকোনো ধরণের মাদকের বিরুদ্ধে সাস্ট কর্তৃপক্ষ জিরো টলারেন্সে রয়েছেন। কারো বিরুদ্ধে কোনো ধরণের প্রমাণ মিললেই আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
ওএফএস।