মনরোর চিত্রকর্মের লাভের ২৫ মিলিয়ন ডলার শিশুদের মানোন্নয়নে
মারিলিন মনরো মোটে ৩৬ বছর বয়সে চলে গেলেন। তার দুই বছর পর ১৯৬৪ সালে আঁকলেন অ্যান্ডি ওরহল এই ‘মারিলিন ডিপটিক’। মোট ১শ ৯৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে বিক্রি হয়েছে। এই শতকের সবচেয়ে দামী ছবি এটিই। লাভের ২৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার নিলাম সংস্থা ক্রিস্টি ও যুক্তরাষ্ট্র সরকার শিশুদের শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যসেবায় দান করে দিয়েছেন
জন্মেছিলেন ১৯২৮ সালের ৬ আগষ্ট, মারা গিয়েছেন ১৯৮৭ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি। মোটে ৫৮ বছর বেঁচেছিলেন ‘ভিজ্যুয়াল আর্ট মুভমেন্ট’র অন্যতম প্রধান ব্যক্তিত্ব অ্যান্ডি ওয়ারহল। পুরো নাম অ্যান্ডি ওয়ারহল জুনিয়র। আমেরিকান চিত্রকর, চলচ্চিত্র পরিচালক ও প্রযোজক। তাদের এই চিত্রকলার আন্দোলনটি ছবি, মুহূর্ত, চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব ও সিনেমার নানা বিষয়ের দার্শনিক চিত্রকলা নিয়ে। ওয়ারহল শৈল্পিক এক্সপ্রেশন, বিজ্ঞাপন ও তারকা সংস্কৃতির সম্পর্ক অনুসন্ধানকারী। ১৯৬০’র দশকে তাদের ধারাটি বিস্তার লাভ করে।
১৯৬২ সালের ৪ আগষ্ট মোটে ৩৬ বছরে মারা গিয়েছেন ‘হলিউডের আবেদনময়ী’ মারিলিন মনরো। তাকে নিয়ে এই ভুবনবিখ্যাত ‘মারিলিন ডিপটিক’ এঁকেছিলেন ওরহল ১৯৬৪ সালে। আমেরিকার ভুবনমোহিনী নায়িকার একটি বিখ্যাত ছবিকে অনুকরণ করে। সেটি তার ছবিটি আঁকার অনুপ্রেরণাও ছিল। তার ‘মারিলিন ডিপটিক’ নিলামে ১৯৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের অবিশ্বাস্য দামে বিক্রি হয়েছে। এই ২০ শতকের সবচেয়ে দামী চিত্রকমের স্বীকৃতি পেয়েছে। ছবিটি আমেরিকান কোনো ছবির সর্বকালের সবচেয়ে দাম দিয়ে কেনা ছবিরও রেকর্ড গড়েছে।
বিক্রি করেছে ‘দি ক্রিস্টি’ নামের আমেরিকান বিখ্যাত নিলাম প্রতিষ্ঠান। ছবিটি তাদের নিউ ইয়র্ক অফিসে বিক্রি করেছেন। তাতে মার্কিন বিলাসবহুল ছবির বাজারের দরের স্বাস্থ্যও প্রকাশিত হয়েছে। সেটি খুব ভালো অবস্থায় আছে। কভিড ১৯’র পর তার স্বাস্থ্য ও শক্তি পরীক্ষা করা হলো। অবিশ্বাস্য শক্তি। প্রমাণ দিয়েছেন মারিলিন মনরো ও অ্যান্ডি ওরহল মিলে।
‘দি ফাইন আট গ্রুপ’ নামের বিজ্ঞাপনী সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা প্রধান ফিলিপ হফনম্যান বলেছেন, ‘দমে যাওয়া চিত্রকলার ভুবনের জন্য এই দাম বিরাট শক্তি। বিপুল দাম পেয়েছে চিত্রকর্মের ভুবন।’ খবরটি প্রকাশ করেছে মার্কিন বিশ্বখ্যাত গণমাধ্যম নিউ ইয়র্ক টাইমস। এরপর তিনি বলেছেন, ‘আমরা সবাই আসল সময়ের জন্য অপেক্ষা করেছি। এই সময় চলে এসেছে।’
বিক্রির আগে ক্রিস্টি লিখেছে, “এই ‘বিশেষ ছবি’টি এমন ছবিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে দুর্লভগুলোর অন্যতম ও সবাইকে ছাড়িয়ে যাওয়া একটি।”
‘মারিলিন ডিপটিক’ ১শ ৭০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে নিলামে বিক্রি হয়েছে। বাকি ২৫ মিলিয়ন ক্রিস্টির ফি ও সরকারী কর দিতে হয়েছে।
মারিলিনের ছবিটি এই শতকের সবচেয়ে দামী ছবি হিসেবে পাবলো পিকাসোর ১৯৫৫ সালের ‘লি ফাম দাজি’কে বা ‘ভাসন ও’কে হারিয়ে দিয়েছে। ২০১৫ সালে ফি ও করসহ ১৭৯ মাকিন ডলারে ‘পিকাসোর ভার্সন ও’ বিক্রি হয়েছে।
আমেরিকান এর আগের সবচেয়ে দামী ছবিটি হলো মাথার খুলির একটি ছবি, নাম ‘স্কাল’। এঁকেছেন ওরহলেরই কিছুদিনের বন্ধু ও কোনো, কোনো সময়ের প্রতিযোগী কৃষ্ণাঙ্গ চিত্রশিল্পী জন-মিচেল বাসকিয়া। ১৯৮০’র দশকের ‘নিউ-এক্সপ্রেশনিজম’র সময়ে সাফল্য লাভ করেছেন। তিনিও খুব অল্প বয়সে মারা গিয়েছেন। মোটে ২৭ বছর বেঁচেছেন, ১৯৮৮ সালের ২ আগষ্ট অকাল প্রয়াণ ঘটেছে।
‘মারিলিন ডিপটিক’ নিয়ে সবসময়ই শিল্পবোদ্ধা, সমালোচক ও সংগ্রাহক এবং শিল্পীদের মধ্যে তুমুল কৌতুহল ছিল। এই আলোচনায় ‘দি বোর্ড অব টমাস অ্যান্ড ডোরিস আম্মান ফাউন্ডেশন’র চেয়ারম্যান জর্জ ফ্রেই এই মার্চে বলেছিলেন বিবৃতিতে, ‘মারিলিনের এই ছবিটি তার চাক্ষুস শক্তিতে নতুন শতাব্দীটিকে পূর্ণমাত্রায় দেখার স্বাক্ষ্য দেয়।’
আরো বলেছিলেন ফ্রেই, ‘মারিলিন নামের সেই মহিলাটি চলে গিয়েছেন। তার জীবনের ভয়ংকর ঘটনাবলী ও এরপর বিশ্বসেরা নায়িকার মৃত্যু-ভুলেও ভোলেননি কেউ। রেখে গিয়েছেন তিনি তার ছবি, কাজ ও জীবন। অবিশ্বাস্য, প্রহেলিকাময় হাসি, কাজগুলোতেও তিনি অত্যন্ত উল্লেখযোগ্য একজন নারী। তাকে ছবির ভুবনে মোনালিসার সঙ্গেই তুলনা করা চলে।’
ছবিটি কিনেছেন বা সবাইকে হারিয়ে জয় করেছেন ব্লমবার্গের খবরে, মার্কিন চেইন গ্যালারির মালিক ল্যারি গোগোজিয়ান।
মারিলিন ডিপটিক সোমবার যুক্তরাষ্ট্রে বিক্রি করেছেন তারা। এই ছবিটি আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে ক্রিস্টি ও সদেবি’র নিলামে তোলা ছবিগুলোর প্রথমটি।
ক্রিস্টি জানিয়েছে, “মারিলিন ডিপটিক’ বিক্রির লাভের সবকিছু চলে যাবে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক সেই দি বোর্ড অব টমাস অ্যান্ড ডোরিস আম্মান ফাউন্ডেশনে। তাদের প্রধান কার্যালয় রাজধানী জুরিখে। লাভের এই ২৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার দিয়েছেন মাকিন সরকার ও তারা সারা বিশ্বজুড়ে শিশুদের স্বাস্থ্যযত্ন ও শিক্ষাকাযক্রমের স্বেচ্ছাসেবা ও বেসরকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর অলাভজনক ধারার কাজগুলো করতে।
ছবি : অ্যান্ডি ওরহলের ‘মারিলিন ডিপটিক’ ও আসল মারিলিন মনরো-একে অন্যের পরিপূরক।
(বিবিসি অনলাইন থেকে)