মায়ের জন্য দোয়া
মা দিবসের শুরু
১৯০৮ সালের ১২ মে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়া অঙ্গরাজ্যের পশ্চিমে। আনা জার্ভিস নামের একজন নারী। তার মায়ের নাম ছিল আন মারিয়া জার্ভিস। তিনি তার মায়ের ১১ ছেলেমেয়ের মধ্যে নবম ছিলেন। সাতটি ভাইবোনই মারা গিয়েছেন। ফলে নিজের মায়ের বেদনাও তিনি খুব কাছ থেকে দেখেছেন। তার মা এই ছোট্ট শিশুটির সামনে হাতজোড় করে বলেছেন, ‘আমি প্রার্থনা করি একদিন কেউ না কেউ কোনো না কোনোভাবে মায়েদের জন্য একটি দিন উৎসর্গ করুন। তারাই প্রতিদিন মনুষ্যত্বের জন্য জীবন উৎসর্গ করে যাচ্ছেন। এই দিনটি তাদের অধিকার।’ তিনি তার মায়ের কাজ ও যে ভুবন গড়ে তোলার জন্য আজীবন কাজ করে গিয়েছেন, সেভাবে অন্যসব মায়েদের সম্মান জানাতে চাইলেন। মায়ের ইচ্ছে পূরণ করতে নামলেন। ফলে গ্রাফটন নামের শহরে প্রথম দিবসটি পালন শুরু করলেন। তার মা মারা গিয়েছেন ১৯০৫ সালে। মা দিবসের প্রতিষ্ঠাতা আনা জার্ভিস ছিলেন একজন সমাজকর্মী। তিনি ‘মাদারর্স ডে ওয়ার্ক ক্লাব’গুলোরও প্রতিষ্ঠাতা। তার মায়েদের ক্লাবগুলোর মাধ্যমে পিছিয়ে পড়া নারীদের এগিয়ে নিতে কাজ করতেন। তাদের স্বাবলম্বী হতে সাহায্য করতেন। তিনি কাজ করতেন ফুল শিল্প কারখানাগুলোর এলাকায়। একটি স্বাস্থ্যনিবাসে মারা যাবার পর তার চিকিৎসার বিল পরিশোধ করেছেন সাধারণ মানুষরা। তাকে ফুলে সাজিয়ে, কাড দিয়ে শুভেচ্ছা ও শেষ বিদায় দিয়েছেন শিল্পকারখানার লোকেরা। তিনি ছিলেন একজন সক্রিয় গীর্জার কমী। অত্যন্ত ধর্মপ্রাণ। তাকে তার মায়ের কবরের পাশে সমাহিত করা হয়েছে। ১৯১৪ সালে প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন তার দেশ যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি বছরের মে মাসের দ্বিতীয় রোববার সরকারীভাবে ‘মা দিবস’ ঘোষণা করেছেন।
বিখ্যাতদের কাছে মা
যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম রাষ্ট্রপতি জর্জ ওয়াশিংটন বলেছেন, ‘আমার দেখা সবচেয়ে সুন্দরী মহিলা আমার মা। আমি আমার মায়ের কাছে চিরঋণী। এই জীবনের সব অর্জন তার কাছে শেখা শিক্ষা নৈতিকতা, বুদ্ধিমত্তা লাভের ফল।’ যুক্তরাষ্ট্রের সাদা-কালোর বর্ণবৈষম্য দূর করা প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন বলেছিলেন, ‘যার মা আছেন, তিনি কখনোই গরীব নন।’ ইংরেজ লেখিকা জোয়ান হ্যারিস বলেছেন, ‘সন্তান হলো মায়ের কাছে প্রায়ই ধারালো চাকুর মতো। তারা না চাইলেও মায়েদের কষ্ট দেয়। আর মা শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে সন্তানের সঙ্গে ভালোবাসা নিয়ে জড়িয়ে থাকেন। এই মা আমার কাছে সবচেয়ে বড় আকর্ষণ। বসার ঘরের দেওয়ালে আমার মায়ের ছবি টাঙানো আছে।’ আরেকজন লেখক অ্যালেন ডি জেনেরিস বলেছেন, ‘যেকোনো বিষয় নিয়ে প্রতিটি মাকে দুইবার ভাবতে হয়। একজন তার সন্তানের জন্য ভাবেন তিনি, আরেকবার নিজের দিকটি ভাবেন।’ হলিউডের অভিনেত্রী সোফিয়া লরেন বলেছেন, ‘মায়ের এত ভালোবাসা, এত কষ্ট ধুলিসাৎ হয়ে যায়, যখন তাকে বৃদ্ধাশ্রমে বা অন্যের আশ্রিত হয়ে বাঁচতে হয়। সেখানে বসেও দুই ফোঁটা জল নিরবে ছেলের জন্য ফেলেন প্রতিটি মা।’
এবারের মা দিবস
ভারতের বিশ্বখ্যাত ক্রিকেটার শচীন টেন্ডুলকার এই ৮ মার্চ মা দিবসে তার টুইটার অ্যাকাউন্টে নিজের মায়ের ছবি পোস্ট করে লিখেছেন-‘এই বিশ্বে অনেককিছু নিয়েই আমাদের ভাবনা, উদ্বেগ থাকতে পারে, আছে। তবে আমার মা এখনো সময়মতো খাচ্ছি কিনা এই নিয়ে উদ্বেগে ভোগেন। একজন মায়ের ভালোবাসা এমন। ছবিতে আমার মা ও আমাদের পালিত বিড়াল। তাদের একটি বিশেষ সম্পর্ক আছে। আমার মাকে আমি আয়ি ডাকি। যখন তিনি কাছে থাকেন, বিড়ালটি তখনই কেবল খায়। তাকে খাওয়াতে হয়।’ বিরাট কোহলি লিখেছেন-‘সব মায়ের জন্য অনেক ভালোবাসা ও সুখের অনুভূতি। আপনাদের সামর্থ্য কোনোকিছুর সঙ্গে মেলে না। আপনাদের সবাইকে সুখী মা দিবসের শুভেচ্ছা।’ পাকিস্তানের নারী অলরাউন্ডার বিসমাহ মারুফ তার মায়ের সঙ্গে ছবি দিয়েছেন লিখেছেন-‘যখন আমি মা হয়েছি, মায়ের গুরুত্ব আরো অনেক বুঝতে পেরেছি। আমার সবচেয়ে বড় শুভকামনাকারী, পরামর্শক, বন্ধু, সঙ্গী, শিক্ষক ও আরো অনেক কিছু হওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ আম্মি। আপনাকে সব শর্তহীন ও অপরিমেয় ভালোবাসা ও দোয়ার জন্য ধন্যবাদ। আল্লাহ আপনাকে দীঘদিন বাঁচিয়ে রাখুন।’
লেখা : লেখা : ওমর শাহেদ ও জুবায়েদ মোস্তফা।
ছবি : শচীনের মা, সুরেশ রায়নার মা ও পরিবার, পাকিস্তানের অলরাউন্ডার বিসমাহ মারুফ তার মা এবং সন্তানের সঙ্গে।