রংপুরে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের আলোর দিশারী
রংপুর বিভাগের ঝরে পড়া বিভিন্ন বয়সের শিক্ষার্থীদের আলোর দিশারী হিসেবে কাজ করছে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পরিচালিত ‘মসজিদ ভিত্তিক গণশিক্ষা কেন্দ্র গুলো’। ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অন্যতম প্রতিষ্ঠান ইসলামিক ফাউন্ডেশনের প্রত্যক্ষ তত্বাবধানে ‘মসজিদ ভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা’ কার্যক্রম প্রকল্পের মাধ্যমে আর্থ সামাজিক উন্নয়ন মুলক কর্মকাণ্ড ও শিক্ষা বিস্তারের কাজে সংশ্লিষ্ট মসজিদের ইমাম সাহেবদের সম্পৃক্ত করে সরকার ১৯৯৩ সাল থেকে এই প্রকল্পটি চালু করেছে। এই প্রকল্পের আওতায় প্রাক-প্রাথমিক এবং ঝরে পড়া (ড্রপ-আউট) কিশোর-কিশোরী ও অক্ষর জ্ঞানহীন বয়স্ক নারী ও পুরুষ শির্ক্ষাথীদের মাঝে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের অন্যতম বৃহত প্রকল্প হিসেবে ‘মসজিদ ভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা’ কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। প্রকল্পের আওতায় ইতোমধ্যে ৬টি পর্যায়ে অক্ষর জ্ঞানহীন শির্ক্ষাথীদের সফল শিক্ষাদান কার্যক্রম সম্পন্ন করে বর্তমানে ৭ম পর্যায়ে শিক্ষাদান কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের রংপুর বিভাগীয় কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, রংপুর বিভাগের ৮ জেলায় ইতোমধ্যে ৮ হাজার ৬৭৫ টি কেন্দ্রের মাধ্যমে প্রায় পৌণে ৩ লাখ শিক্ষার্থীর মাঝে এই শিক্ষাদান কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে। এর মধ্যে রংপুর জেলায় ১ হাজার ৪৬৮ টি কেন্দ্রের মাধ্যমে ৩৩ হাজার ৮৭৫ জন শিক্ষার্থী, গাইবান্ধা জেলায় ১ হাজার ১২৯ টি কেন্দ্রের মাধ্যমে ৩২ হাজার ৯৫৩ জন, কুড়িগ্রাম জেলায় ১ হাজার ১৫৪ টি কেন্দ্রের মাধ্যমে ৩৭ হাজার ৯৭০ জন, লালমনিরহাট জেলায় ৯১৫ টি কেন্দ্রের মাধ্যমে ২৮ হাজার ৮০০ জন, নীলফামারী জেলায় ১ হাজার ৯৫টি কেন্দ্রের মাধ্যমে ৩৬ হাজার ১০৫ জন, ঠাকুরগাঁও জেলায় ৮১৭ টি কেন্দ্রের মাধ্যমে ২৬ হাজার ৯৭৫ জন, পঞ্চগড় জেলায় ৭৪৫ টি কেন্দ্রের মাধ্যমে ২৪ হাজার ৪২০ জন এবং দিনাজপুর জেলায় ১ হাজার ৩৫২ টি কেন্দ্রের মাধ্যমে ৪৯ হাজার ৫৭৭ জন শিক্ষার্থ ী পাঠদান সম্পন্ন হয়েছে। মসজিদ ভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম প্রকল্পের সাফল্যের ধারাবাহিকতায় সরকার ২০২০ সালের ১০ই মে প্রকল্পটিকে সারাদেশে ৭ম ধাপে সম্প্রসারিত করে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ৫ বছর মেয়াদের জন্য তা বর্ধিত করেছে। এ জন্য সারা দেশের ‘মসজিদ ভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা’ কার্যক্রম চালু রাখার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে প্রকল্পের সফল বাস্তবায়নের লক্ষ্যে মোট ৩ হাজার ১২৮ কোটি ৪৬ লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। এর ফলে শিক্ষার্থীরা নতুন করে ব্যাপক ভাবে অক্ষর জ্ঞান লাভ করতে পারবে। ৭ম পর্যায়ে প্রকল্পের সাফল্যের মাধ্যমে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা লাভকারী ৮০ শতাংশ শিক্ষার্থীকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এছাড়া এই প্রকল্পের সাহায্যে শিশু ও বয়স্করা ছাড়াও কারাগারের নারী-পুরুষ কয়েদীদেরও স্বাক্ষর জ্ঞান বৃদ্ধি ও প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা লাভের পাশাপাশি ধর্মীয় মূল্যবোধ শিক্ষার মাধ্যমে বিভিন্ন বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং শুদ্ধভাবে সহজ কোরআন শিক্ষার আওতায় নেয়া হয়েছে। এছাড়া প্রকল্পের নতুন ও স্বল্প শিক্ষাপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের জন্য জীবনব্যাপী (অব্যাহত) শিক্ষা চর্চা ও আর্থ সামাজিক সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে সারাদেশে মডেল ও সাধারণ রির্সোস সেন্টার পরিচালনা করা হচ্ছে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ‘মসজিদ ভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা’ কেন্দ্রের একটি অন্যতম প্রতিষ্ঠান হচ্ছে রংপুর নগরীর ষ্টেশন রোডে অবস্থিত আফতাবীয়া খানকা শরীফ জামে মসজিদ কেন্দ্র। এই কেন্দ্র পরিচালনার দায়িত্বে নিয়োজিত মোহাম্মদ আরিফুজ্জামান রেজওয়ান জানান, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ‘মসজিদ ভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা’ কার্যক্রম খুবই ভাল উদ্যোগ। এসব কেন্দ্রের মাধ্যমে ছেলে ও মেয়ে শিশুরা শুদ্ধভাবে কোরআন শিক্ষার পাশাপাশি বাংলা অক্ষর জ্ঞান লাভ করছে। এছাড়া তারা শরীয়তের বিভিন্ন শিক্ষা যেমন, অযু, গোসল, নামাজ পড়াসহ বিভিন্ন নিয়ম শিখতে পাড়ছে। এসব শিক্ষার্থীদের পুরস্কারের ব্যবস্থা থাকলে এবং সপ্তাহে মাঝে মাঝে টিফিন দেয়া হলে তারা আরও উৎসাহিত হত। তবে কেন্দ্রর শিক্ষকদের যে ভাতা দেয়া হয় তা বর্তমান বাজারে খুবই নগন্য।
রংপুর ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বিভাগীয় পরিচালক মোহাম্মদ আবুল কালাম জানান, ‘মসজিদ ভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা’ প্রকল্পের আওতায় মসজিদের ইমামগণের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মাঝে বাংলা, ইংরেজি, অংক, আরবি, নৈতিকতাসহ ইসলামী আকিদার বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষাদান করা হচ্ছে। রংপুর বিভাগের প্রত্যন্ত অঞ্চলের সুবিধা বঞ্চিত শিশু-কিশোররা এর মাধ্যমে অক্ষর জ্ঞান শিক্ষা লাভ করে নিজেদের জীবনের গতি ধারা পাল্টিয়ে ফেলছে। এই কোর্স সম্পন্নকারী শির্ক্ষাথীরা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে শিক্ষালোভের সুযোগ পাওয়ায় ঝড়ে পড়ার প্রবণতাও ক্রমান্বয়ে কমে আসছে।
জানা গেছে এই প্রকল্পের সুবিধাভোগী শিক্ষার্থীদের অধিকাংশই সমাজের অবহেলিত দরীদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত পরিবারের সদস্য। এই শিক্ষা কার্যক্রমের আওতায় প্রতিটি প্রাক প্রাথমিক শিক্ষা কেন্দ্রে ৩০ জন, সহজ কোরআন শিক্ষা কেন্দ্রে ৩৫ জন এবং বংস্ক শিক্ষা কেন্দ্রে ২৫ জন করে শিক্ষার্থী রয়েছে। এই প্রকল্প থেকে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা লাভের জন্য বিনামূল্যে প্রয়োজনীয় সকল শিক্ষা উপকরন সরবরাহ করা হয়। এছাড়া শিক্ষকের মাসিক সম্মানী ভাতা ও বছরে দু’টি করে ইনসেনটিভও দেয়া হয়।