ঈদে পূর্বধলার রাজধলা বিলে দর্শনার্থীদের ভিড়
নেত্রকোনার পূর্বধলায় নৈসর্গিক সৌন্দর্য্যের রাজধলা বিলে ঈদের দিন থেকে দর্শনার্থীদের ভিড় দেখা গেছে। পুর্বধলা সরকারি কলেজের অনতিদূরে পূর্বধলা রাজধলা বিল। কলেজের ভেতরে রয়েছে সবুজ গাছের সুশীতল ছায়া। আর একটু ভেতরে প্রবেশ করা মাত্রই চোখে পড়বে নান্দনিক ও ঐতিহ্যবাহী দর্শনীয় রাজধলা বিল।
চারদিকে ঘরবাড়ি বেস্টিত রাজধলা বিল অন্য যেকোনো বিলের চেয়ে ভিন্নতা রয়েছে। এক সময়ে এ বিলে বড় বড় মাছ পাওয়া যেত আর এখনো এর মাছ খুবই সুস্বাদু। এখানে পাওয়া যায় বড় বড় চাপিলা মাছ। অসাধারণ গন্ধ ও স্বাদে অতুলনীয়। শীতে অতিথি পাখির কলরবে সারা বিল মুখরিত থাকত। ঈদ ও পূজায় অবসর সময় কাটাতে স্থানীয় আদিবাসীসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে দর্শনার্থীরা আসে। স্বচ্ছপানি ও মনোরম পরিবেশের কারণে প্রতিদিন এখানে ছুটে আসে ভ্রমণপিপাসু মানুষ।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের আঁধার জেলার পূর্বধলায় উপজেলার ১৩০ একর আয়তনের ঐতিহ্যবাহী রাজধলা বিল। রাজধলা বিলের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে অনেক গল্প ও কাহিনী।
লোক মুখে শোনা যায়, প্রকৃতির মনোরম পরিবেশের কারণে জমিদারদের একাংশ স্থানান্তরিত হয়ে ধলা বিলের পূর্ব ও দক্ষিণ দিকে বসতি স্থাপন করে। জমিদারদের স্বেচ্ছাচারিতার কারণে বিলের পানি প্রজা সাধারণের ব্যবহার নিষিদ্ধ ছিল। জানা যায়, ধলা শব্দের সঙ্গে সুসং জমিদার পরিবারের বৈবাহিক সূত্রে প্রাপ্ত রাজা উপাধিটা সংযুক্ত হয়ে বিলের নামাকরণ হয় রাজধলা।
জেলা পরিষদের অর্থায়নে প্রায় আড়াই কোটি টাকা ব্যয়ে বিল রক্ষা ও উন্নয়নে কাজ হয়েছে। বিলের সৌন্দর্য্যবর্ধনে ও মানুষের চলাচল উপযোগী রাস্তা, ঘাট ও গণশৌচাগার নির্মাণ করা হয়েছে।
এলাকাবাসী নিরঞ্জন কুমার ভাদুড়ি বলেন, বিলের চারদিকে সড়ক পাকা করে এবং লিজ দেওয়া জমি নিয়ে সংস্কার করে আয়ের আওতায় আনা যেতে পারে।
ঐতিহাসিক রাজধলা বিলে দিন দিন দর্শনার্থীদের সংখ্যা বাড়ছে। পাশাপাশি পর্যটক ও দর্শনার্থীদের অভিযোগও রয়েছে। সংস্কারের অভাবে রাস্তার মাটি সরে রাস্তাগুলো ভেঙে গিয়ে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। পাশাপাশি পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা ও আবাসন ব্যবস্থা তেমন নেই। রাজধলা বিলের পাড় ঘেঁষে চারপাশ পাশে ব্লক বসিয়ে পাকা করতে হবে।
বিল দেখতে আসা নেত্রকোনা জেলা শহরের কাজল মিয়া বলেন, রাজধলা বিলের কথা লোকমুখে শুনেছি। আজ এ বিল দেখে অনুভব করলাম যে একটা বিল কত সুন্দর হতে পারে। এর স্বচ্ছ পানি, জলজ ফুল, খোলা বাতাস সবকিছু মিলে মনোমুগ্ধকর দৃশ্য এখানে। বসার ব্যবস্থা রয়েছে। তবে আরও সুন্দর ছাউনি করলে দর্শনার্থীদের বসার জন্য আরামদায়ক হবে। সৌন্দর্য্য আরও বাড়বে।
উপজেলা চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসলাম সুজন বলেন, পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার জন্য আমরা অর্থ সংগ্রহ সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় আলোচনা বিভিন্ন মহলে করে যাচ্ছি। ভবিষ্যতে আয়ের উৎস হিসেবে আনার পরিকল্পনাও রয়েছে। আমরা এজন্য কাজ করে আসছি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মে কুলসুমা বলেন, বরাদ্দ প্রাপ্তিসাপেক্ষে অবশিষ্ট রাস্তা নির্মাণ ও মেরামত করা হবে। রাজধলা বিলকে পর্যটনের আওতায় আনার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রস্তাবিত পরিকল্পনা পাঠানো হয়েছে।
এসএন