আমস্ট্রংয়ের চাঁদের ধুলো কীভাবে বিক্রি হলো ৫ লাখ ডলারে?
মহাকাশচারী নিল আমস্ট্রং ও তাদের চন্দ্রাভিযান ‘অ্যাপোলো ১১’র কথা কেউ কোনোদিন ভুলতে পারবেন?
অনুমাত্র চাঁদের ধুলো সংগ্রহ করেছিলেন আমস্ট্রং এই অ্যাপোলো ১১ মিশনে। তিনি ও চালক বাজ অলড্রেন মানুষের প্রথম চন্দ্রাভিযানে চাঁদের বুকে পা রেখেছিলেন ২০ জুলাই ১৯৬৯ সালে।
সেই ধুলো বিক্রি হয়েছে ১৩ এপ্রিল ৫ লাখ ৪ হাজার ৩শ ৭৫ মার্কিন ডলারের অবিশ্বাস্য দামে। নিউ ইয়র্কের বনহ্যামস নামের একটি নিলামকারীদের সংস্থার মাধ্যমে।
সংবাদ মাধ্যমের খবরে, আমস্ট্রং এই ধুলিকনা তিনি প্রথম কটি পা ফেলার পর ইতিহাসের সবচেয়ে বড় মহাকাশ ঘটনার স্বাক্ষী হিসেবে সংগ্রহ করেছেন।
এই ধুলোর দামে দারুণ খুশি বনহ্যামস।
তারা আগের অভিজ্ঞতায় ভেবেছিলেন ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ ২০ হাজার মার্কিন ডলারের মধ্যে বিক্রি হতে পারে চাঁদের ধুলো। এটি জানিয়েছে ফোবর্স। তবে অংকটি অবিশ্বাস ছড়িয়েছে তাদের মধ্যে। সর্বশেষ ডাক উঠেছিল ৪ লাখ মার্কিন ডলার। ফলে আসলে বিক্রি হয়েছে বা সত্যিকারের টাকা খরচ হয়েছে সংগ্রাহকের চাঁদের ধুলোর পেছনে এই টাকাই। বাকি ১ লাখ ৪ হাজার ৩শ ৭৫ টাকা ফি গুণতে হয়েছে ফি ও বিক্রেতা বনহ্যামসকে পুরস্কার হিসেবে।
এই বিক্রির মাধ্যমে মানুষের ৫৩ বছর ধরে চাঁদের এই ধুলো নিয়ে লেখা, গবেষণা ও কল্পনার একটি ইতিহাসের অবসান ঘটলো।
চাঁদের ধুলো যে সত্যি সেটি আরো নিশ্চিত করেছে দি ন্যাশনাল অ্যারোনোটিকস অ্যান্ড স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বা নাসা।
এই ধুলোকনা ২০১৭ সালে অ্যাপোলো ১১ নামের মহাকাশযানটি ১.৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে বিক্রি হবার পর প্যাকেটবন্দী করা হয়েছে।
ফোবস জানিয়েছে, এই নিলাম প্রতিষ্ঠানে চাঁদের ধুলিকনার পৌঁছানো প্রায় একটি মহাকাব্যিক যাত্রার ইতিহাস। যেভাবে এর সংগ্রাহক আমস্ট্রং অজানার পথে পা বাড়িয়েছিলেন দারুণ দুঃসাহসে।
নাসা এর মালিকানার জন্য মামলাও লড়েছে।
২০১৫ সালে এই ধুলো বিক্রি হয়েছিল ন্যান্সি লি কার্লসন নামের একজন আইনজীবির কাছে। তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগানে থাকেন।
তিনি মোটে ৯শ ৯৫ মাকিন ডলার খরচ করেছিলেন এই অমূল্য সম্পদের জন্য। এর কারণ হলো, প্যাকেটটির গায়ে লেবেল আঁটা ছিল, ‘চাঁদের বুকে ওড়া ধুলোর নমুনার ফেরৎ ব্যাগ প্যাকেটবন্দী আছে।’
তিনি কিনেছিলেন এই বিশেষ ব্যাগটি একজন মার্কিন মাশালের অফিসের নিলামে।
পরে ব্যাগ খুলে সামান্য ধুলো পেয়েছেন ন্যান্সি। তিনি বিশ্বাস করতে লাগলেন, এগুলো চাঁদের ধুলোকনাই হবে। এরপর আসলেই তাই কি-না জানার জন্য বা সনাক্ত করে দিতে তিনি নাসাতে ব্যাগটি পাঠালেন। তবে তারপর নাসা এই ব্যাগটিকে অ্যাপোলো ১১ মহাকাশ অভিযানের সঙ্গে সম্পক থাকায় ফেরৎ দিতে অস্বীকার করলো। তারা ২০১৬ সালে এই ব্যাগকে বাজেয়াপ্ত করে অধিগ্রহণ করলো।
তারপর নান্সির হয়ে এক মার্কিন অ্যার্টনি সঙ্গে, সঙ্গে নাসাকে মামলা করে দিলেন। তাদের অভিযোগ, তারা অন্যের সম্পদ হরণ করেছেন। মামলায় ন্যান্সি লি কার্লসন জিতে গেলেন। তবে কী কারণে অমূল্য এই সম্পদ নাসা নিজের কাছে এর আগে রাখতে পারেনি সেটি পরিস্কার নয়।
তবে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০০২ সালে এই ধুলো ম্যাক্স অ্যারে নামের একজন মানুষের প্রদর্শনী করার পর দখলে চলে যায়। তিনি ক্যান্সাসের একটি মহাকাশ জাদুঘরের সহ প্রতিষ্ঠাতা। তাকে চুরি হওয়া হাতে বানানো দ্রব্যাদি অপরাধী হিসেবে সাজা দেওয়া হয়েছে। এরপর একটি নিলামের মাধ্যমে এই ধুলোর ব্যাগ ন্যান্সির কাছে চলে গিয়েছে। তবে তিনি মিশ্রণ পেয়েছিলেন এর মধ্যে। তারপর নাসা সেগুলো আলাদা করেছে।
নভোচারী নিল আমষ্ট্রং মোট ৮ দিন ১৪ ঘন্টা ১২ মিনিট মহাকাশে ছিলেন।
(অনলাইন থেকে অনুবাদ)