যমুনা বালুময় চরাঞ্চলে ভুট্টা চাষ
যমুনার নদীর বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে বালুচর। দু’চোখ যে দিকে যায় চারদিকে শুধু সবুজ আর সবুজ। বালুময় চরাঞ্চলে প্রাকৃতির এমন দৃশ্যে মন জুড়িয়ে আসে। যমুনা নদীর বুকে জেগে ওঠা প্রতিটি চরে ভুট্টা চাষ। সব মিলিয়ে যমুনায় এ বছর ভুট্টার বাম্পার ফলন হয়েছে।
কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, যমুনা নদীর টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর অংশে চরাঞ্চলে গত বছরের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে চলতি ২০২১-২২ অর্থ বছরে ২ হাজার ৫২ হেক্টর জমিতে ভুট্ট চাষ করা হয়েছে। এছাড়া উপজেলার চরাঞ্চলের গাবসারা ও অর্জুনা ইউনিয়ন বাদেও ৪ টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় বিভিন্ন এলাকায় ভুট্টার চাষ করা হয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, যমুনা নদীর অংশে উপজেলার চরাঞ্চলে জেগে ওঠা চরের প্রায় প্রতিটি জমিতে ভুট্টা চাষ করা হয়েছে। বাতাসে দোল খাচ্ছে ভুট্টার পাতাগুলো। মৌ-মাছিরা ভুট্টা ফুলের রেণু থেকে করছে মধু সংগ্রহ, যা চোখে পড়ার মত।
ভুট্টা চাষি আলীম বলেন, গত বছর ভুট্টা চাষে অনেকেই লাভবান হয়েছে। তাই তাদের দেখে আমি প্রথমবারের মত এক বিঘা জমিতে ভুট্টা চাষ করেছি। খরচের বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, অন্যান্য ফসলের তুলনায় ভুট্টা চাষে খুবই খরচ কম হয়েছে। সার, জমি চাষ, পানি সেচ, শ্রমিক খরচ ও ভুট্টার বীজ কেনাতে খরচ কম। যা ধানের তুলনায় প্রায় অর্ধেক খরচ। এক বিঘা জমিতে ৩২-৩৬ মণ ভুট্টা হবে বলে আশাবাদি।
জানা যায়, উপজেলার চরাঞ্চলের শুকনো মৌসুমে জেগে ওঠা বালুচরে বর্ষাকালে পলিমাটি পড়ে। যা বিভিন্ন ফসল চাষাবাদ করার জন্য উপযোগী। কম খরচে ও কম কীটনাশক ব্যবহার করে অধিক ফলন হয়। ভুট্টা, চিনা বাদাম, তিল, তিষি, খেসারি কালাই, মসুরি কালাই, কালোজিরা, মিষ্টি কুমড়া, বোরো ধান চাষ, মিষ্টি আলু ও আখসহ ইত্যাদি বিভিন্ন ধরণের সবজি চাষ করে অধিক লাভবান হচ্ছে কৃষকরা।
রুলীপাড়া গ্রামের চাষি আবু বকর বলেন, উপজেলা কৃষি অফিসের সহযোগিতায় ভুট্টা চাষ করেছি। এবার বাম্পার ফলন হয়েছে। জমি থেকে ইতিমধ্যে ভুট্টার মোচা তোলা শুরু হয়েছে। সেগুলো মেশিনের মাধ্যমে মাড়াই করা হবে। এছাড়া ভুট্টার আখ গো-খাদ্য আর ডাটা জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা যায়।
উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ ড. হুমায়ূন কবির ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, ‘উপজেলার যমুনা চরাঞ্চলে ভুট্টা এখন প্রধান অর্থকড়ি ফসল। ভুট্টা চাষ একটি অধিক লাভজনক ফসল। প্রান্তিক কৃষকদের মাঝে কৃষি অফিস থেকে প্রয়াজনীয় সব ধরণের সার্বিক সহযোগিতা দেয়া হয়েছে’।
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তারা কৃষকেদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে বিভিন্ন পরামর্শ দিয়েছে। এদিকে, ভুট্টা মাড়াই করার জন্য চাষিরা আধুনিক যন্ত্রও ব্যবহার করছে। ফলে সময় কম লাগছে তাদের। আগামী বছর আরও দ্বিগুণ হারে ভুট্টা চাষ হবে বলে আশা করছি’।