গুঠিয়া মসজিদ নান্দনিক স্থাপত্যের নিদর্শন
দক্ষিণ অঞ্চলের সর্ববৃহৎ নান্দনিক স্থাপত্যের নিদর্শন মসজিদ বলে বিবেচিত বায়তুল আমান জামে মসজিদ (গুঠিয়া মসজিদ)। গ্রামীণ পরিবেশে দিগন্ত বিস্তৃত নীল আকাশের পটভূমিতে মধ্যপ্রাচ্যের বিখ্যাত মসজিদগুলোর অনুকরণে তৈরি ই বাইতুল আমান জামে মসজিদ (গুঠিয়া মসজিদ) দেখতে ও নামজ পড়তে মানুষের ভিড় লেগেই থাকে স্থানটিতে। এই দৃষ্টিনন্দন মসজিদটি সকল ধর্ম ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের কাছে একটি দর্শনীয় স্থান হিসেবেও বেশ পরিচিতি পেয়েছে। তাই সকল ধর্মের মানুষ এখানে ছুটে আসনে মসজিদটি একজনর দেখার জন্য। মসজিদ প্রাঙ্গণে বিশেষ করে বিকেলের পর থেকে গোধূলি অবধি মসজিদটি দেখতে শত শত পর্যটক এখানে দূর-দূরান্ত থেকে আসেন। এর প্রধান মিনারের উচ্চতা ১৯৩ ফুট। মসজিদের সামনেই রয়েছে একটি স্তম্ভ, যা নির্মাণে বিশ্বের কিছু পবিত্র স্থানের মাটি ও জমজম কূপের পানি ব্যবহার করা হয়েছে। মাটি সংগ্রহ করা হয়েছে মসজিদে নববীসহ মুসলিম উম্মাহর ভক্তিবাদ ও ইতিহাসের সঙ্গে জড়িত বেশ কিছু স্থান থেকে।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, ১৪ একর জমির উপর স্থাপিত এই মসজিদটিতে ব্যবহার করা হয়েছে উন্নমানের কাঁচ, ফ্রেম, বোস স্পিকার। এছাড়া মসজিদটির সীমানার মধ্যে ঈদগাহ্ ময়দান, টলটলে পানির পুকুরে শানবাঁধানো ঘাট, পানির ফোয়ারা, এতিমখানা, ডাকবাংলো, গাড়ি পার্কিং ব্যবস্থা, কবরের জন্য নির্ধারিত স্থান, লেক, বিভিন্ন প্রজাতির ফুলের বাগান দিয়ে সুন্দর করে সাজানো হয়েছে মসজিদের প্রাঙ্গণ। এখানে একটি হ্যালিপেডও রয়েছে। গেট থেকে ঢুকলেই হাতের ডান পাশে চোখে পড়ে টলটলে পানির পুকুর, আর শানবাঁধানো মনকাড়া পুকুরঘাট। পুকুরের পশ্চিম দিকেই মসজিদটি অবস্থিত। মসজিদের পাশেই রয়েছে একটি মাদ্রাসা ও এতিমখানা ভবন।
নির্মাণ ইতিহাস থেকে জানাযায়, বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ, শিক্ষানুরাগী ও ব্যবসায়ী এস সরফুদ্দিন আহমেদ সান্টু এই মসজিদের প্রতিষ্ঠাতা। মসজিদ নির্মাণের সব ব্যয় বহন করেছেন তিনি। এস সরফুদ্দিন আহমেদ সান্টু নিজ বাসভবনের সন্নিকটে নিজ জমিতেই গড়ে তুলেছেন এ মসজিদ। ২০০৩ সালের ১৬ ডিসেম্বর মসজিদটির নির্মাণকাজ শুরু হয়, শেষ হয় ২০০৬ সালে এবং এরপর থেকে গুঠিয়ার নামেই ৮ গম্বুজ বিশিষ্ট এই মসজিদটি পরিচিতি লাভ করে। ২০ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে বরিশালের গুঠিয়ার মাটিতে এ মসজিদ নির্মাণ করতে, যা আজ বরিশালবাসীর কাছে একটি অন্যতম পছন্দের দর্শনীয় স্থান হিসেবে সমাদৃত।
বরিশাল থেকে বানারীপাড়া বা নেছারাবাদ যেতে সড়কের পাশেই চোখে পড়বে এই মসজিদটি। বরিশাল জেলার উজিরপুর উপজেলার গুঠিয়া ইউনিয়নের চাংগুরিয়া গ্রামে মসজিদটির অবস্থান। বরিশালের নথুল্লাবাদ থেকে মাত্র ১২ কিলোমিটার দূরত্বে এর।
ভোলা থেকে আসা দর্শনার্থী সাইফুল ইসলাম ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, ‘এই ঐতিহ্যবাহী মসজিদটির নাম শুনেছি অনেক। কখনো সময় করে দেখতে আসা হয়নি। আজ এখানে এসে আমি মনোমুগ্ধকর। চার পাশে অনেক সুন্দর পরিবেশ। সর্বপরি আমার অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব না।’
দর্শনার্থী ইকবাল হোসেন ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, ‘গুঠিয়ার এই মসজিদটি বরিশালের একটি ঐতিহ্য। এখানে আসলে আমার খুবই ভালো লাগে, দুঃখ-কষ্ট সবই ভুলে যাওয়া যায়।’
নামাজ পড়তে আসা মো. শহিদুল ইসলাম ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, ‘মাঝে মধ্যে আমি আমার পরিবার নিয়ে মসজিদটি পরিদর্শন করতে আসি। পবিত্র স্থানে আসলে মনটাও পবিত্র হয়ে যায়। আজ মাগরিবের নামাজ পড়তে এসেছি। এখানে নামাজ পড়তে পারলে নিজের মধ্যে প্রশান্তির চলে আসে।’
মসজিদের ইমাম জানান, এখানে পুরুষের পাশাপাশি নারীর জন্যও নামাজের আলাদা জায়গা রয়েছে। একই সঙ্গে এই মসজিদে হাজার লোক নামাজ আদায় করতে পারেন। আট গম্বুজবিশিষ্ট মসজিদটি নির্মাণে ব্যবহার করা হয়েছে উন্নমানের কাচ, ফ্রেম, বোস স্পিকার ও মার্বেল পাথর। ২০ হাজারের অধিক ধারণক্ষমতাসম্পন্ন ঈদগাহ ময়দান রয়েছে এখানে।
তবে গোধূলিলগ্নে মসজিদটি দেখতে এতটাই মনোমুগ্ধকর, যা বলে ভাষায় বোঝানো যাবে না। পরিকল্পিত ও রুচিশীল লাইটিং-ব্যবস্থা গোধূলিলগ্নে মসজিদটিকে সাজিয়ে তোলে শতগুণ।