নারী দিবস কীভাবে এলো? কেন এলো?
সমাজতান্ত্রিক দলের কর্মীদের মাধ্যমে আমেরিকাতে প্রথম উদযাপন শুরু হলো নারী দিবস। এরপর জার্মানিতে তাদের নারী কর্মীদের আন্তর্জাতিক দ্বিতীয় সম্মেলন। সেই থেকে ১৯৬০’র দশকের শেষ পর্যন্ত বাম দেশগুলোই নারী দিবস আন্তর্জাতিকভাবে উদযাপন করছে। ১৯৭৭ সালে জাতিসংঘ শুরু করে। এখন নারীবাদী ও নারীদের প্রতি সহানূভূতিশীলরা; এনজিওগুলো ব্যাপকভাবে উদযাপন করে।
আন্তর্জাতিক নারী দিবস ‘৮ মার্চ’। বিশ্বজুড়ে, দেশে-দেশে দিবসটি ব্যাপক ও বর্ণাঢ্য আকারে পালনের ফলে এখন নারী দিবসের প্রয়োজনীয়তা, সার্বজনীনতা, নানা প্রেক্ষিত আমাদের সবার জানা। দিবসটি বিশ্বে ছুটির দিন হিসেবে পালনের কথা থাকলেও বাংলাদেশে পালিত হয় না। গেরস্থালি কাজে নারীর কোনো ছুটি নেই। এছাড়াও সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও আথসামাজিক অর্জনগুলো নারীর মাধ্যমে বিশ্ববাসীকে ব্যাপক ও ভালোভাবে জানানোর জন্য দিনটি ‘ছুটির দিন’ হিসেবে পালনের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। নারীর অধিকার আদায়ের অন্দোলনের মূল ও কেন্দ্রীয় বিষয় দিবসটি। তাদের প্রধান আরো অধিকার-যেমন ‘লিঙ্গসমতা’ ও নারীর বিরুদ্ধে সারা দুনিয়াতে ‘সহিংসতা’ ও নারী নির্যাতনগুলোকে রুখতে দিবসটির কোনো বিকল্প নেই।
বিশ্বে প্রথম নারী দিবস পালিত হয়েছে ১৯০৯ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের নিউ ইয়র্ক শহরে। আয়োজন করেছেন আমেরিকার সমাজতান্ত্রিক দলের (দি সোশ্যালিস্ট পার্টি অব আমেরিকা) কর্মীরা। প্রস্তাবটি করেছিলেন মার্কিন শ্রমিক অধিকার কমী, নারীদের ভোটাধিকারের আন্দোলনকারী ও শিক্ষাবিদ-তেরেজা মালকিয়েল। তিনিই প্রথম নারী হিসেবে কারখানার শ্রমিক থেকে এখানে সমাজতান্ত্রিক দলের প্রধানের দায়িত্বে আসেন। নিউ ইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের শ্রমিক আইনগুলোকে আবার তৈরি করতে তার লেখা ভূমিকা রেখেছে। তিনি দলের উইমেন্স ন্যাশনাল কমিটিরও প্রধান ছিলেন। বয়স্ক নারীদের লেখাপড়ার সুযোগ প্রদানের ব্যবস্থা করতে তিনি কাজ করেছেন।
নারী অধিকারকর্মীরা জানান, ৮ মার্চ ১৮৫৭ সালে নিউ ইয়র্কের গামেন্ট শ্রমিক নারীদের একটি ব্যাপক প্রতিরোধ আন্দোলন থেকে দিবসটি পালনের শুরু হয়। তেরেজা মালকিয়েলের মাধ্যমে উদ্দীপ্ত হয়ে ১৯১০ সালের আগষ্টে আন্তর্জাতিক সমাজতান্ত্রিক নারী কর্মীদের সম্মেলন হয়েছে ডেনমার্কের কোপেনহেগেনে। তারা একে ‘তাদের দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক সম্মেলন’ বলেন। আমেরিকান সমাজতান্ত্রিক দলের কর্মীদের মাধ্যমে অনুপ্রাণিত হয়ে দ্বিতীয় সম্মেলনে উপস্থিত হয়েছেন জার্মান কমিউনিস্ট পাটির অন্যতম নেত্রী ক্লারা জেটকিন, কেইট ডাংকার, পলা থিডার ও অন্যরা। তারাই একটি বার্ষিক নারী দিবসের প্রস্তাব করেন। তবে কোনো দিন নিদিষ্ট করে দিতে পারেননি।
এই সম্মেলনে মোট ১শ অতিথি ১৭ দেশ থেকে এসেছেন। তারা সবাই মিলে সমানাধিকার ও নারীদের কষ্টগুলো কমাতে একটি দিবস পালনের উদ্যোগ নেন। এর পরের বছর তাদের মাধ্যমে পুরো ইউরোপের দেশগুলোকে কম, বেশি দিবসটি পালিত হয়। ১৯১৭ সালে সোভিয়েত রাশিয়াতে নারীরা ‘ভোটাধিকার’ লাভ করার পর একটি জাতীয় দিবস হিসেবে ‘ছুটির দিন’ আকারে ৮ মার্চ নারী দিবস হিসেবে পালন শুরু হয়। ফলশ্রুতিতে বিশ্বের কমিউনিষ্ট দেশগুলো দিবসটি পালন করে। ১৯৬০’র দশকের শেষের দিকে বৈশ্বিক নারীবাদী আন্দোলনকর্মীরা দিবসটি পালন শুরু করার আগে বামপন্থী আন্দোলন হিসেবেই পালিত হয়েছে। ১৯৭৭ সাল থেকে জাতিসংঘ দিবসটি বিশ্বে পালন শুরু করে। এবারের প্রতিপাদ্য হলো-‘একটি লিঙ্গসমতার বিশ্ব কল্পনা করুন।
একটি বিশ্ব যেখানে নারী ও পুরুষে কোনো বাধা নেই, নেই কোনো বঞ্চনা। বিশ্বটি আমাদের সবার এমনই প্রাপ্য, ন্যায়বিচার ও ন্যায়সঙ্গত এবং অর্ন্তভুক্তির। এমন বিশ্ব যেখানে পার্থক্যকে মূল্য দেওয়া হয় ও উদযাপন করা হয় মানুষের সমতার। আমরা একত্রে নারীর সমতাকে তৈরি করতে পারি। সহযোগিতার মাধ্যমে আমরা সবাই সবগুলো, সব ধরণের বাধা দূর করতে পারি। বাধাগুলোর বিপক্ষে সচেতনতার আন্দোলন তৈরি করতে পারি। কাজে নামতে পারি। নারীদের অর্জনগুলোকে শ্রদ্ধা করতে পারি।’
ওএস/