এখনো নামাজ আদায় হয় ২১৯ বছর পুরনো মসজিদে
রংপুর থেকে মিঠাপুকুর সদরে যাবার আগে পশ্চিমে একটি রাস্তা চলে গেছে দিনাজপুর ফুলবাড়ির দিকে। সুন্দর পিচ আর পাথর গলানো সবুজে ছাওয়া সে রাস্তার কিছুটা পেরুলে হাতের বামে অর্থাৎ দক্ষিণে একটু দূরে সুন্দর ফ্যাকাশে ইট রঙের একটা পুরনো মসজিদ চোখে পড়বে।
এ মসজিদ বর্তমানে রংপুর জেলার ‘মিঠাপুকুর বড় মসজিদ’ নামে পরিচিত। আবার অনেকেই একে মিঠাপুকুর বড় মসজিদ আবার অনেকেই ‘মিঠাপুকুর তিন কাতার মসজিদ’ বলেন।
ইতিহাস সূত্রে জানা গেছে, ১২২৬ হিজরি বা ১৮০২ খ্রিস্টাব্দে জনৈক শেখ মোহাম্মদ সাবেরের পুত্র শেখ মোহাম্মদ আছের এই মসজিদটি নির্মাণ করেছিলেন। মসজিদের সামনে লাগানো তথ্য কনিকায় সুস্পষ্ট করে লেখা আছে ১৮০২ খ্রিস্টাব্দের কথা কিন্তু উইকিপিডিয়াসহ বেশ কিছু স্থানে এর নির্মাণ সময় ১৮১০ খ্রিস্টাব্দ বলা হয়েছে।
মসজিদের আয়তকার তিন গম্বুজ বিশিষ্ট এই মসজিদটি। মসজিদের চার কোণে চারটি স্তম্ভ যা ছাদের কর্নার থেকে বেশ উপরে উঠে তদানিন্তন মুসলিম সভ্যতার নির্মাণ শৈলী পরিস্ফুটন হিসেবে নির্মাণ করা হয়েছে এ মস্জিদ। এটি ছোট গম্বুজের মতো কিউপোলা আকারে শেষ হয়েছে। আয়তাকার মসজিদটি দুটি ল্যাটারাল খিলানের সাহায্যে তিনভাগে ভাগ করে ওপরে নির্মাণ করা হয়েছে তিনটি গোলাকার গম্বুজ। মসজিদের পূর্বদিক দিয়ে তিনটি এবং উত্তর ও দক্ষিণে একটি করে মোট পাঁচটি প্রবেশ পথ থাকলেও এখন পূর্ব দিকের মাঝের পথটি ব্যবহার করা হয়।
তিন গম্বুজ বিশিষ্ট আয়তাকার এই মসজিদটি আকার ১০ দশমিক ৬৬ মিটার ৪ দশমিক ১১ মিটার। মসজিদের তিন মিহরাব, সামনের দেয়াল, প্যারাপেট দেয়াল ও গম্বুজের গোলাকার অংশে দৃষ্টিনন্দন নকশা দিয়ে আবৃত করা হয়েছে। কিছু প্যানেল করা আছে। নকশায় লতাপাতা, ফুল ও জ্যামিতিক আবহ ফুটে উঠেছে। খুব আকর্ষণীয় এর মূল প্রবেশ দরজা।
বাংলাদেশের নিজস্ব স্থাপত্য বৈশিষ্ট্যকে ধারণ করে দোচালা আকৃতির এই দরজা মসজিদে পূর্ব দিকের দেয়ালের মাঝে নির্মিত। বর্তমানে নিরাপত্তার কারণে দৃষ্টি নন্দন লোহার গ্রিলের দরজা সেখানে লাগানো আছে। মূল দরজা দিয়ে ঢুকে সুন্দর একটি উঠোন বা বারান্দা। ফ্যাকাশে লালচে ইট রঙের মসজিদটি চারদিকে সবুজ ক্ষেত-ফসলের মাঝে অপূর্ব মনোরম লাগে। মন ফিরে যায় ২১৮ বছর আগের রঙ্গপুরে এবং চকিত একটা আনন্দ অনুভূতি ছুঁয়ে যায়, রংপুর কত গর্বিত, বর্ণাঢ্য ইতিহাস ও ঐতিহ্যে ভরা দেখে। এই মসজিদে এখনো নিয়মিত শত শত মুসল্লি জামায়াতে নামাজ আদায় করেন। এখানে আসতে হলে প্রথমে বাস বা অটোরিকশা করে মিঠাপুকুর গড়েরমাথা নামক জায়গায় আসতে হবে। এরপর সেখান থেকে পশ্চিম দিকে চলে গেছে এশিয়ান হাইওয়ে। বিরামপুর ও দিনাজপুর মহাসড়ক ধরে হেঁটে গেলে ৫ মিনিট আর রিকশায় গেলে ২ মিনিটেই যেতে পারবেন মিঠাপুকুর বড় মসজিদে। রাস্তা থেকেই বাম দিকে বা দক্ষিণ দিকে তাকালেই চোখে পড়বে মেঠোপথ বেয়ে সবুজের বুকে ভাসমান এই মসজিদটি।
প্রাচীন মসজিদটিতে এরইমধ্যে সংস্কারের কাজ হয়েছে বলে জানিয়েছেন মসজিদ কমিটির সভাপতি এমদাদুল হক।
তিনি বলেন, ‘সরকারি অর্থায়নে মসজিদটির মূল নকশা, আকার ও বৈশিষ্ট্য ঠিক রেখে কিছু সংস্কার করা হয়েছে। এ মসজিদটি কারও মতে ১৮০২ খ্রিষ্টাব্দে আবার কেউ কেউ বলেছে এরও আগে এটি নির্মিত হয়েছে।’
প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের তালিকাভুক্ত এ দৃষ্টিনন্দন মসজিদটি প্রাচীনকাল থেকে মিঠাপুকুরকে ইসলামী জনপদ হিসেবে পরিচিত করে তুলেছে। আর এই ঐতিহাসিক মসজিদকে ঘিরে প্রতিদিনই কোনো না কোনো স্থান থেকে দর্শনার্থী ও পর্যটকের আগমন ঘটছে।
এমএমএ/