বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৫ | ১১ বৈশাখ ১৪৩২
Dhaka Prokash

সিনেমার প্রেমে মাতোয়ারা সেজুঁতি

তিন বোনই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী। বড় দুই বোন ব্যাংকিং অ্যান্ড ইনস্যুরেন্স ও ইংরেজি আর তানজিনা সুলতানা সেঁজুতি উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চলচ্চিত্র সংসদ (ডিইউএফএস)’র অন্যতম এই কর্মী এখন অমিতাভ রেজার সহকারী। তিনি নারীর প্রতি অসদাচরণ রুখতে ‘জেন্ডার কমিটি’ চালু করেছেন ডিইউএফএসে। ‘উইমেন্স লেন্স’ তার মাধ্যমেই উৎসব হিসেবে শুরু করতে যাচ্ছেন তারা। এবারের নারী দিবসে সেঁজুতিকে নিয়ে বিশেষ ফিচার 

তারা তিন বোন। তিনজনই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী। বড় দু বোনের মধ্যে বয়সের পার্থক্য দুই আর সবার ছোটজনের সঙ্গে মেজ বোনের তিন। বড় বোন নাঈমা সুলতানা মিলিতা ব্যাংকিং অ্যান্ড ইনস্যুরেন্স বিভাগের ছাত্রী ছিলেন। মেজবোন রুবাইয়াত সুলতানা নিকিতা ইংরেজি বিভাগে পড়তেন। বড় দুজন পাশ করে গিয়েছেন। তানজিনা সুলতানা সেজুঁতি এখনো ছাত্রী আছেন। তবে শেষের দিকে। নিকিতা লেখালেখি করেন। ইংরেজি দৈনিক ঢাকা ট্রিবিউনে চাকরি করতেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চলচ্চিত্র সংসদ (ডিইউএফএস-ঢাকা ইউনিভার্সিটি ফিল্ম সোসাইটি)’র আন্তর্জাতিক সচিব বা ইন্টারন্যাশনাল সেক্রেটারি ছিলেন। ২০১৮ সালে লেখাপড়া শেষ হয়ে গিয়েছে।

নিকিতা যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তেন, তাদের মা কাজী নাদিয়া সুলতানা গাড়ি চালিয়ে নিয়ে আসতেন পরিবারের সবাইকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চলচ্চিত্র সংসদের বিভিন্ন উৎসবের ছবিগুলো সবাই মিলে দেখতেন। বাবা মোহাম্মদ জাফরুল ইসলাম ভূঁইয়া বড় চাকরিজীবি ছিলেন। সেন্ট্রাল ইনস্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের ডিএমডি বা ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর। তাদের বাবা ফিট বা স্বাস্থ্যবান মানুষ ছিলেন। তবে ডায়াবেটিস ছিল বেশি। নিজে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এসেছিলেন। গাড়ি ফেলে প্রচুর হাঁটাহাঁটি করতেন, খাবার নিয়ন্ত্রণ করে খেতেন। তবে জীবনের শেষের দিকে তার শরীর একেবারেই ভালো ছিল না। ফলে ২০১৬ সালে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা গেলেন।

এতিম এই পরিবারের একেবারে ছোট মেয়েটির জীবনের গল্প অন্যরকম। মা সিনেমা দেখতেন। তবে ছোট থেকে তাদের তিনটি মেয়েকে পড়ালেখায় উচ্চশিক্ষিত করতে চেয়েছেন বলে বড় হলে আর ছবি দেখায় মেয়েদের উৎসাহ দেননি। তবে মেজ বোনের ছোট থেকে ছবি দেখায় আগ্রহ আছে। রাতে সবাই ঘুমিয়ে গেলে লাইট অফ করে ইংরেজি, হিন্দি ছবি দেখতেন। তার সঙ্গী হতেন ছোট বোন তানজিনা সুলতানা সেজুঁতি। এভাবেই ধীরে, ধীরে সিনেমার প্রতি ভালোবাসা শুরু হলো ছোট্ট মেয়েটির।

বাংলাদেশের বিখ্যাত ও নামকরা ভিকারুননিসা নুন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ছাত্রী তিনি। তখন বড় ও মেজ বোনের সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘুরতে আসতেন। নিকিতা যখন পড়তেন, ইন্টারমিডিয়েট প্রথম বষের ছাত্রী সেজুঁতি গিটার শিখতেন রিফাত মল্লিকের কাছে। তিনি একজন গিটার বাদক। গিটারের বেসিকগুলোর ক্লাস করতেন। তবে বাড়ির কাজ দিতেন। পড়ালেখার চাপে সেগুলো করতে পারতেন না বলে গিটার শেখার ইতি। এইচএসসি পাশ করার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগে ভর্তি হলেন ২০১৬ সালের এপ্রিলে সেজুঁতি।

তখন তিন বোনই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের ছাত্রী। এখানে, সেখানে বেড়াতেন। একসঙ্গে তিন বোন মিলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে আয়োজন করা চলচ্চিত্র সংসদের ছবিগুলোও দেখতেন। সেজুঁতি বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে ঘুরে বেড়ানো শুরু করলেন। পাঁচটার বাসে ঢাকার মধ্য বাড্ডার লিংক রোডের বাসায় ফিরে যান। বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম প্রধান এই সংগঠনটি স্বেচ্ছাসেবায় চলে। প্রথম বর্ষের ছাত্র, ছাত্রীদেরই কেবল সদস্য করে। এরপর আর তাদের সঙ্গী হওয়ার সুযোগ নেই। তিনিও মেজ বোনের উৎসাহে সদস্য হলেন।

তখন নিকিতা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চলচ্চিত্র সংসদের আন্তর্জাতিক সচিব। অন্যতম সদস্য হিসেবে চলচ্চিত্র সংসদের উৎসবগুলোর আয়োজন করেন বলে ছোট বোনটি তার আশেপাশে থাকেন। বিভাগের ক্লাস বিরতি ও ক্লাস শেষে চলচ্চিত্র সংসদের টিএসসির দোতলার অফিসে এসে বসে থাকেন। গল্প করেন সিনেমা নিয়ে অন্যদের সঙ্গে। অন্যতম প্রভাবশালী সিনিয়র কর্মীর বোন বলে তাকে সবাই আদর করেন। তবে প্রথম বর্ষের শেষের দিক থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিপুল, অবারিত পরিবেশ তাকে ভালোবাসার জালে আটকে ফেললো। চলচ্চিত্র সংসদের কাজগুলোকেও ভালো লাগতে শুরু করলো। ফলে ধীরে, ধীরে বাসায় বিকেল পাঁচটার মধ্যে পৌঁছানোর নিয়ম ভেঙে ফেললেন সেজুঁতি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চলচ্চিত্র সংসদের কর্মীদের প্রথম বর্ষের কাজগুলো সাংগঠনিক। সেঁজুতি এই কাজগুলো খুব মনোযোগ দিয়ে করেছেন। টিএসসির গেটে কোনো উৎসবের আয়োজন করা হলে টিকিট বিক্রি করেছেন। অতিথিরা এলে তাদের রিসিভ করেছেন, নিয়ে এসে বসিয়েছেন টিএসসির ভেতরের গেস্টদের চেয়ারে। তাদের আমন্ত্রণ জানানোর কাজ করেছেন। টিএসসির সিট ম্যানেজমেন্ট করতে হয়েছে। তাতে ধীরে, ধীরে তার যোগাযোগ তৈরি হয়েছে। অফিসের নানা জিনিশ গুছিয়ে রাখা, কাগজপত্রগুলোকে জায়গামত রাখা, ঘর ঝাড়–দেওয়া-পরিস্কার করার কাজগুলো নিয়মিত করতে হয়েছে। সব কাজকেই নিজের মনে করে করেছেন তিনি। প্রথম বর্ষে কোনো ছাত্র, ছাত্রীকে ছবি দেখার আয়োজন করতে দেওয়া হয় না। ফলে ছবি দেখেছেন উৎসবগুলোর। খুব ভালো লেগেছে তাদের একজন হতে পেরে। সেজুঁতিকে কখনো, কোনোদিন প্রথম বর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চলচ্চিত্র সংসদের কর্মীরা চলে গেলে রুম বন্ধ করতে হয়নি। তিনি আগে বাসায় পৌঁছেছেন অন্যদের সহযোগিতায়।

কাজের প্রতি নিষ্ঠা ও ছোটখাট কাজও ভালোবেসে করার সুবাদে দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী হিসেবে সেজুঁতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চলচ্চিত্র সংসদ বা ডিইউএফএস’র নির্বাহি বা একজিকিউটিভ কমিটির সদস্য নির্বাচিত হলেন। তারা ভোটের মাধ্যমে সব কমিটির সদস্য নির্বাচন করেন। সেজুঁতি গর্বভরে বললেন, ‘আমাদের ডিইউএফএসে ইসি কমিটির মেম্বার সাধারণত দ্বিতীয় বর্ষে কেউ হতে পারেন না। তবে আমি পেরেছি।’ ফলে তার কথাগুলো সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্ব দেওয়া শুরু হলো। যেকোনো প্রস্তাব এলে তারা ভোটাভুটির মাধ্যমে সেটিকে পাশ বা বাদ করেন। সেজুঁতি নির্বাহি কমিটির সদস্য হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চলচ্চিত্র সংসদে প্রথম প্রস্তাব আনলেন ‘জেন্ডার কমিটি’ তৈরি করা হোক। এভাবেই লিঙ্গ সমতার দিকে চলে গেল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিখ্যাত ও নামকরা চলচ্চিত্র কর্মীদের সংগঠনটি। এই কমিটির প্রথমটিতে তিনি পাঁচ সদস্যের একজন ছিলেন। জেন্ডার কমিটির মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চলচ্চিত্র সংসদের নারী সদস্যরা কোনো অভিযোগ করলে সেটির সমাধান করা হয়। ফলে সেজুঁতি ও তার বন্ধুরা কাজ শুরু করলেন চলচ্চিত্রের ভুবনে নারীকে মানুষ ও নারী হিসেবে গুরুত্ব প্রদানে, তাদের সঙ্গে লিঙ্গ ও পরিবেশগত কোনো বৈষম্য না করায়।

তিনি জানালেন, এখন প্রায় ১২৫ জন সদস্য আছেন তাদের সংসদে। তার মধ্যে মেয়ে প্রায় ৫০ জন। তারা খুব ভালো করছেন। ভবিষ্যতের বাংলাদেশের নারী চলচ্চিত্র পরিচালক, অভিনেত্রী, কস্টিউম ডিজাইনার, সিনেমাটোগ্রাফার উঠে আসবেন তাদের ভেতর থেকে বরাবরের মতো।

প্রথম বর্ষ থেকে চতুথ বর্ষ পর্যন্ত নিয়মিত সদস্য হিসেবে খুব সুনাম আছে সেজুঁতি। খুব ভালোবাসেন ডিইউএফএসকে। শুরুর দিকে শুক্র, শনিবার ছুটির দিনেও সংসদে চলে আসতেন। দুপুর থেকে রাত ৯ টা, ১০ টা পর্যন্ত থাকতেন, বিভিন্ন কাজ করতেন। তখন গড়ে দিনে ৭ থেকে ৮ ঘন্টা সময় দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চলচ্চিত্র সংসদকে। তাতে তাদের অনেক উন্নতি হয়েছে। এমন কর্মী পাওয়া যেকোনো সংগঠনের জন্য ভাগ্যের। এখনো তিনি রাত পর্যন্ত থাকেন। সংসদের অন্যতম সদস্যটি খুব আন্তরিক। কর্মীরাও তাকে খুব গুরুত্ব দেন।

দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী হিসেবে ইসি কমিটিতে থেকে তিনি প্রথম বর্ষের ছাত্র, ছাত্রী চলচ্চিত্র সংসদের কর্মীদের নানা কিছু শিখিয়েছেন ও দেখিয়ে দিয়েছেন। প্রথম বর্ষে তার কাজগুলো তাদের ওপর দিয়ে দিয়েছেন সিনিয়র হিসেবে। সেই কাজগুলো তাদের ধরে, ধরেও শিখিয়েছেন। আরো নানা কাজ সম্পর্কে জানিয়েছেন। সংসদের টিএসসির দোতলার রুমে সপ্তাহে একবার সিনেমা দেখানোর কাজ নিয়মিত করেন তারা।

সেজুঁতি দ্বিতীয় বর্ষে পড়ার সময় প্রথম বর্ষে তারা পেলেন ২৫ থেকে ৩০ জনের একটি নতুন দল। সেই দলের নিয়মিত কর্মী আছেন এখন ১০ জন। কারণ বললেন-‌‘আমাদের পরের ব্যাচ থেকে বেশিরভাগ ছাত্র, ছাত্রী এসেছে বিজ্ঞান অনুষদের বিভিন্ন বিভাগের। পড়ালেখার চাপে অনেকে ছুটে গিয়েছে শখের চলচ্চিত্র আন্দোলন ও ছবির ভুবন থেকে। ছোটখাট চাকরিতে ঢুকেছে, ক্যারিয়ার গড়ার দিকে ঝুঁকে গিয়েছে অনেকে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চলচ্চিত্র সংসদের ভেতরে ব্যাচ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র-জুনিয়র ছাত্র, ছাত্রীদের একত্রে বসবাসের বহু পুরোনো নিয়মে গুরুত্ব বহন করে। সেজুঁতি জানালেন, “আমাদের ব্যাচ ২০১৬-’১৭ সংসদে টিকে থাকার কারণ হলো, ডিইউএফএসের রুমে আমরা অনেক সময় দিয়েছি। সব কাজ নিজেরা এগিয়ে গিয়ে করেছি, মিলেমিশে কাজে নেমেছি। এখানে একজন আরেকজনের কাছ থেকে মানে আরেক সিনিয়রের কাছ থেকে জুনিয়রকে কাজ শিখতে হয়। সিনেমার মানুষ বলে আমাদের গ্রাফিক্স, এডিটিং, আমার ভাষার চলচ্চিত্র, আইআইইউএসএফএফের বিজ্ঞাপন নির্মাণ-সব কাজে অংশগ্রহণ করতে হয়। সেগুলোর সবই চলচ্চিত্রে কাজে লাগে।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চলচ্চিত্র সংসদের অন্যতম নিষ্ঠাবান কর্মী হিসেবে তিনি নিয়মানুসারে ২০২০ সালের সংসদের নিয়মিত ফেব্রুয়ারি মাসের উৎসব বিখ্যাত-‘আমার ভাষার চলচ্চিত্র উৎসব’র প্রমোশনাল ভিডিও তৈরির প্রডাকশন টিমে কাজ করেছেন। তাদের বিখ্যাত ছবিগুলো প্রদর্শনের উৎসবটির বিজ্ঞাপন বানিয়েছেন তারা। প্রচারিত হয়েছে ওয়েবসাইট, ফেইসবুক পেইজেও। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তখন বিরাট আয়োজন থাকে। সেবারও সেটি তৈরি করা হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, ছাত্রীদের নিয়ে। থিয়েটার অ্যান্ড পারফরমেন্স স্টাডিজের ছাত্রী নিলীমা ও তাদের কর্মীদের মাধ্যমে। সেখানে তিনি কস্টিউম বা পোশাক ডিজাইনার ছিলেন। এর বাদেও দুই কী তিন বছর আগে তাদের নিয়মিত উৎসব ‘ইন্টারন্যাশনাল ইন্টার ইউনিভার্সিটি শট ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল (আইআইইউএসএফএফ)’র প্রডাকশসন টিমের অন্যতম কর্মী হিসেবে কাজ করেছেন। বিভিন্ন কাজে সাহায্য করেছেন, সাউন্ড বিভাগেও কাজ করেছেন।

তৃতীয় বর্ষ সেজুঁতির জীবনে একটি স্বরণীয় বছর। তিনি হলেন ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চলচ্চিত্র সংসদের পাঠচক্র সম্পাদক’। ২০১৮ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত পদে ছিলেন। সাধারণত এভাবে এক বছরের জন্য সংসদ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে, গুরুত্বপূর্ণ সদস্যদের সম্পাদক হিসেবে নিয়োগ করে। যোগ্য কর্মী না পাওয়া গেলে জুনিয়র বা সিনিয়র কোনো সদস্যকে এমন কোনো পদের কাজগুলো করতে দায়িত্বভার দেওয়া হয়। তার অনলাইন আলাপে ভারতের বিখ্যাত বাংলা গায়ক ও চলচ্চিত্র নির্মাতা অঞ্জন দত্তকে আমন্ত্রণ জানিয়ে এনেছেন। পাঠচক্র সম্পাদক হিসেবে চলচ্চিত্র সংসদের আগের ও এখনকার সব কর্মীকে নিয়ে এই আলোচনাটিও তাকে উপস্থাপনা করতে হয়েছে। আগে আমার ভাষার চলচ্চিত্র উৎসবে তার ‘ফাইনালি ভালোবাসা’ ছবিটি দেখানোর সুবাদে একটি সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল। তার সঙ্গে আলোচনায় সেঁজুতি জেনেছেন-অঞ্জন দত্ত নিজেকে একজন গায়কের চেয়ে নির্মাতা হিসেবে পরিচয় দিতে ভালোবাসেন। তিনি অত্যন্ত বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ সম্পন্ন। আলোচনায় যে অভাবগুলো হয়েছে, সেগুলো আগ্রহের সঙ্গে পূরণ করে দিয়েছেন। টানা তিনটি ঘন্টা কথা বলেছেন বাংলা ভাষার বিখ্যাত গায়ক-নির্মাতা। সিনেমার প্রতি তার প্যাশন আছে। এখন তাই গায়ক পরিচয়টি দিতে পছন্দ করেন না। তিনি যে ছবিগুলো তৈরি করেছেন, সেগুলোর সবই প্যাশনেটলি করেছেন। এছাড়াও বাংলাদেশের অন্যতম চিত্র সমালোচক মঈনুদ্দীন খালেদ তার পাঠচক্রে আলোচক হিসেবে এসেছেন। তবে ওয়ার্কশপ বা কমশালার আয়োজনটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় তিনি করতে পারেননি। অতিথি আলোচক হিসেবে এনেছেন নাদির জুনায়েদকে। এসেছেন গুপী-বাঘা প্রডাকশনের প্রধান নির্বাহি ও অন্যতম তরুণ চলচ্চিত্র নির্মাতা আরিফুর রহমান। তিনি বাংলাদেশের সিনেমা ডিসট্রিবিউশন নিয়ে কথা বলেছেন। নারী চলচ্চিত্র নির্মাতা রুবাইয়াত হোসেন আলাপ করেছেন বিদেশ থেকে। তিনি তখন ওখানে। এসেছেন তার ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ চলচ্চিত্রের অভিনেত্রী ও ‘হাফ স্টপ ডাউন’র লাইন প্রডিউসার নভেরা রহমান। ফলে সেজুঁতি ও ডিইউএফএসের কর্মীরা বাংলাদেশের বিখ্যাত নারী চলচ্চিত্র নির্মাতা ও অভিনেত্রীর কাছ থেকে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র, তাদের কাজের অভিজ্ঞতা, মেয়েদের বিষয়ে অভিজ্ঞতা, মতামত ইত্যাদি জানার এবং জানানোর সুযোগগুলো লাভ করেছেন। নভেরা জানিয়েছেন, রুবাইয়াতের কাজের ভুবনটি তার জন্য বন্ধুত্বের ছিল। তবে তিনি ও রুবাইয়াত বলেছেন, নারী হিসেবে অভিনেত্রী ও পরিচালকের কথা চলচ্চিত্রে যথেষ্ট গুরুত্ব দেওয়া হয় না। তাদের কথা মানতে প্রডাকশন টিম তৈরি থাকে না। কাজের পরিবেশও তাদের জন্য সবসময় ভালো হয় না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চলচ্চিত্র সংসদের গল্প করতে, করতে সেজুঁতি জানালেন, ‘আমাদের সব কাজ আমাদেরই করতে হয়। আমার ভাষার চলচ্চিত্রসহ আমাদের উৎসবগুলোর চলচ্চিত্রগুলো যেগুলো সাধারণত স্বল্পদৈর্ঘের, আমরাই নির্মাণ করি। উৎসেবের বা কাজের জন্য সোসাইটির সাবেক কোনো কর্মী বড় ভাইয়ের কাছ থেকে সাধারণত ক্যামেরা ধার করে আনতে হয়। এরপর সেটি দিয়ে শুটিং, কস্টিউম ডিজাইন, এডিটিং সব কাজ করতে হয়; ধরে, ধরে কাজ সিনিয়রদের শিখতে হয়। আমরা প্রচুর সিনেমা দেখি বলে, তরুণ ও উদ্ভাবনী ক্ষমতা সম্পন্ন বলে অনেক কিছু পারি। যখন কোনো অ্যানিমেশন করি, তখন আমাদের কর্মী চারুকলা অনুষদের ছাত্র, ছাত্রীরা তৈরি করেন সিনেমাটি। এই কাজগুলো সবই যার যেখানে আগ্রহ আছে, তাকে সেই কাজে অভিজ্ঞ কোনো বড় ভাই বা আপুর পাশে সংসদের কম্পিউটার বা অন্য কোনো উপকরণে বসিয়ে দেওয়া হয় নিয়মানুসারে। আমি নিজে এসব ছাড়াও হিসাবপত্র রাখা, জমা দেওয়া, উপস্থাপনা, যোগাযোগ করা সবই সংসদের কাছ থেকে শিখেছি। আগে মানুষের সঙ্গে কথা বলতে ভয় পেতাম। পাঠচক্র সম্পাদক হিসেবে সেই কাজ করতে গিয়ে আমার ভয় কেটে গিয়েছে।’ এই পদে তিনি ডিইউএফএসের সদস্যদের অবদান নিয়ে একটি পরিচয়পত্র তৈরি করেছেন।

চতুথ বর্ষে পড়ার সময় ইসি মেম্বার ছিলেন। তাদের সংসদের সিলেবাস আরো উন্নত করা, সেটি হস্তান্তরের কাজ করেছেন সেজঁতি। বরাবরই ডিইউএফএসে নিয়মিত কাজ করেছেন, থেকেছেন খুব ভালোবাসায়।

ফিল্ম সোসাইটির এই জীবনে সেজুঁতির সিনেমা দেখা, দেখানো, সিনেমার মানুষ তৈরি করা, সিনেমাকে তরুণ-তরুণীদের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার অনেক কাজ করতে হয়েছে। এখনো অবিরল কাজ করে চলেছেন। তার ভালো লেগেছে সত্যজিৎ রায়ের ‘পথের পাঁচালি’, ‘চারুলতা’। আবদুল্লাহ মোহাম্মদ সাদের ‘লাইফ ফ্রম ঢাকা’কে বলেছেন, সুন্দরভাবে তৈরি ছবি। সিনেমাটোগ্রাফি ভালো হয়েছে। পথের পাঁচালির ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক খুব টেনেছে। সত্যজিতের আরেকটি ক্লাসিক চারুলতা একটি মেয়েকে কেন্দ্র করে বানানো বিখ্যাত ছবি। ছবির মাধবীর ইমোশন, এক্সপ্রেশনগুলো অসাধারণ। সেই আমলে একটি মেয়েকে কেন্দ্র করে তৈরি এমন সিনেমা বিরল। এই ছবিতে সত্যজিৎ রায়ের পরিবর্তনগুলো খুব ম্পষ্ট। ছোটবেলায় যার ভালো লেগেছে ‘পালাবি কোথায়?’, তার বড় হয়ে মন টেনেছে সাদের বিখ্যাত ‘রেহানা মরিয়ম নূর’।

একটি সময় পর্যন্ত যার সব আগ্রহ ছিল, উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগে লেখাপড়া করে ভালো চাকরি করবেন। দেশের ও মেয়েদের উন্নয়ন করবেন; সেই তানজিনা সুলতানা সেজুঁতির জীবনের এখন স্বপ্ন, ভালো চলচ্চিত্র নির্মাতা হবেন। তিনি তো সিনেমার ভুবনে নিয়মিত হয়ে গিয়েছেন। বিজয়া রত্নাবলীর ‘বলি’ সিরিজের কস্টিউম ডিজাইনার ছিলেন। ২০২১ সালের অক্টোবর থেকে এই দেশের বরেণ্য নির্মাতা অমিতাভ রেজার সেকেন্ড অ্যাসিসটেন্ট হিসেবে চাকরি শুরু করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘অমিতাভ ভাই নিয়মিত টাকা দেন। তারসহ সবার ব্যবহার ভালো, মানুষকে ও মেয়েদের তারা সম্মান করেন।’ ছয় মাস কাজ করতে, করতে সেজুঁতির জানা হয়েছে, অমিতাভ রেজা সিনেমা নির্মাণ নয়, অ্যাকাডেমিক বিষয়গুলোকেও গুরুত্ব দেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চলচ্চিত্র সংসদের কর্মী হিসেবে চলচ্চিত্র নিয়ে কাজ করেছেন বলে তাকে নিয়েছেন। এছাড়াও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান এই অডিও-ভিজ্যুয়াল ব্যক্তিত্বের আগ্রহ ও শ্রদ্ধা রয়েছে। তিনি তাদের সংসদের চলচ্চিত্র প্রতিযোগিতার জুরি বোর্ডে অন্যতম সদস্য হিসেবে কাজ করেছেন। আগে তার দলে ইউল্যাব (ইউনিভাসিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ)’র ছাত্র, ছাত্রীরা বেশি ছিলেন। তবে এখন চলচ্চিত্রের মানুষরা বেশি আছেন। সেজুঁতি গব করে আরো জানালেন, ইন্টারভিউ দিয়ে যোগ্য হিসেবে তিনি অমিতাভ রেজার দলে সুযোগ পেয়েছেন ও কাজ দিয়ে আছেন।

অমিতাভ রেজার অন্যতম সদস্য হিসেবে বিজ্ঞাপন চিত্রে কাজ করেছেন তানজিনা সুলতানা সেজুঁতি। সেগুলো হলো-ডানো, সুপার হোয়াইট ডিটারজেন্ট, গ্রামীণ ফোন ইত্যাদি। গ্রামীণ ফোনের ‘তুই তো আমাদের স্মাট বানাইয়া দিলি দাদু’ নামের বিখ্যাত দাদু-নাতনির বিজ্ঞাপন নির্মাণে কাজ করেছেন। যেকোনো বিজ্ঞাপনের শুটিংয়ের নিয়মে সকাল সাতটার কলে তিনি কাজে চলে গিয়েছেন। অনেক খেটেছেন সারাদিন। তার বিজ্ঞাপনগুলোর কস্টিউম ডিজাইনার হিসেবেও কাজ করেছেন সেজুঁতি।

এখন থেকে তানজিনা সুলতানা সেজুঁতি চলচ্চিত্র ও ক্যামেরার ভুবনে থাকতে চান। তবে কী হিসেবে থাকবেন সেই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত না করলেও নিজেকে একজন পরিচালক হিসেবে গড়ে তুলতে চান। তিনি ভালো অভিনয়ও পারেন। সেজুঁতি মাস্টার্সে পড়েন। কদিন পরে পাশ করে যাবেন। কাজ করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চলচ্চিত্র সংসদের নির্বাহি বা একজিকিউটিভ কমিটির সদস্য হিসেবে। নিজেরা বলেন ‘ইসি কমিটির মেম্বার’। তার পরিকল্পনা ও প্রস্তাবে ডিইউএফএস ‘উইমেন্স লেন্স’ নামের নারীদের বানানো এবং নারীদের নিয়ে ছবির উৎসবটি শুরু করতে যাচ্ছে।

(৬ মার্চ, টিএসসি, ডিইউএফএস অফিস, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়)

Header Ad
Header Ad

পাকিস্তানিদের বিশেষ ভিসা সুবিধা বাতিল, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ভারত ছাড়ার নির্দেশ

ছবি: সংগৃহীত

ভারত-নিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মীরের পেহেলগামে প্রাণঘাতী সন্ত্রাসী হামলার পর পাকিস্তানিদের জন্য ‘সার্ক ভিসা ছাড়’ সুবিধা বাতিল করেছে ভারত। সেই সঙ্গে ভারতে অবস্থানরত পাকিস্তানি নাগরিকদের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে দেশ ছাড়ার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। বুধবার (২৩ এপ্রিল) ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত দেশটির মন্ত্রিসভার নিরাপত্তা বিষয়ক কমিটির জরুরি বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে ভারত:

সিদ্ধান্তগুলো হলো:

১. সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি স্থগিত ঘোষণা। ভারত বলছে, পাকিস্তান যতদিন সীমান্তে সন্ত্রাস বন্ধ না করবে এবং সন্ত্রাসবাদকে সমর্থন ত্যাগ না করবে ততদিন এটি স্থগিত থাকবে। ১৯৬০ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর করাচিতে তৎকালীন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু ও পাকিস্তানি প্রেসিডেন্ট ফিল্ড মার্শাল আইয়ূব খান সিন্ধু পানি বণ্টন চুক্তি স্বাক্ষর করেছিলেন। বিশ্বব্যাংকের মধ্যস্থতায় বহুল আলোচিত এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল।

২. অবিলম্বে আটারি-ওয়াঘা সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়া হবে। যাদের বৈধ নথি রয়েছে তারা ১ মে এর আগে সীমান্ত অতিক্রম করতে পারবেন।

৩. সার্ক ভিসা এক্সেম্পশন স্কিম (এসভিইএস) এর আওতায় পাকিস্তানি নাগরিকদের ভারতে ভ্রমণের অনুমতি দেওয়া হবে না। পাকিস্তানি নাগরিকদের অতীতে জারি করা যেকোনো এসভিইএস ভিসা বাতিল বলে গণ্য হবে। এসভিইএস ভিসায় বর্তমানে ভারতে থাকা পাকিস্তানি নাগরিকদেরও ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ভারত ছাড়তে বলা হয়েছে।

৪. নয়াদিল্লিতে পাকিস্তানি হাইকমিশনের সামরিক, নৌ ও বিমান উপদেষ্টাদের ‘পার্সোনা নন গ্রাটা’ ঘোষণা করা হয়েছে। ভারত ছাড়ার জন্য এক সপ্তাহ সময় পাবেন তারা। ইসলামাবাদের ভারতীয় হাইকমিশন থেকে প্রতিরক্ষা, নৌ ও বিমান উপদেষ্টাদের প্রত্যাহার করে নিচ্ছে ভারত। সংশ্লিষ্ট হাইকমিশনের এই পদগুলো বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে। উভয় হাইকমিশন থেকে সার্ভিস অ্যাডভাইজারের পাঁচজন সাপোর্ট স্টাফকেও প্রত্যাহার করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

৫. হাইকমিশনের সামগ্রিক জনশক্তি ৫৫ থেকে কমিয়ে ৩০ জনে নামিয়ে আনার সিদ্ধান্ত হয়েছে। যা ১ মে এর মধ্যে কার্যকর হবে।

মঙ্গলবার বিকালে কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলা হয়। অস্ত্রধারীরা জঙ্গল থেকে বের হয়ে পর্যটকদের ওপর গুলি চালাতে থাকেন। হামলায় ঠিক কতজন নিহত হয়েছেন, তা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হয়নি। তবে নিরাপত্তা বাহিনীর সূত্র বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেছে, নিহত ব্যক্তির সংখ্যা অন্তত ২৬।

পাকিস্তানভিত্তিক নিষিদ্ধ সংগঠন লস্কর–ই–তৈয়েবার সহযোগী সংগঠন দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট (টিআরএফ) মঙ্গলবার বিকালের হামলার দায় স্বীকার করেছে।

এদিকে এ ঘটনায় পাকিস্তানের পক্ষ থেকেও নিন্দা প্রকাশ করা হয়েছে। দেশটির গণমাধ্যম জিও নিউজের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘অবৈধভাবে দখলকৃত জম্মু-কাশ্মীর’র পেহেলগামে হামলার ঘটনায় পাকিস্তান উদ্বিগ্ন। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জানিয়েছেন, পেহেলগামে হামলায় ২৬ জন নিহতের ঘটনায় পাকিস্তান নিন্দা প্রকাশ করছে। নিহতের পরিবারের প্রতিও সমবেদনা প্রকাশ করছে পাকিস্তান।

এ হামলাকে ‘সন্ত্রাসী হামলা’ আখ্যা দিয়ে এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উদ্দেশে বার্তা দিয়েছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বার্তায় তিনি বলেন, কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলায় প্রাণহানির ঘটনায় আমার গভীর সমবেদনা গ্রহণ করুন। আমরা এ জঘন্য হামলার তীব্র নিন্দা জানাই। আমরা আবারও নিশ্চিত করছি যে, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের অবস্থান সবসময় দৃঢ়।

Header Ad
Header Ad

বিএনপি সরকার গঠন করলে শিক্ষিত বেকারদের জন্য চালু হবে ভাতা: তারেক রহমান

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ছবি: সংগৃহীত

দেশে সরকার পরিবর্তন হলে শিক্ষিত বেকারদের জন্য বিশেষ ভাতা চালু করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি জানিয়েছেন, সরকার গঠনের পর যারা চাকরি খুঁজেও পাচ্ছেন না, তাদের জন্য এক বছরের ‘শিক্ষিত বেকার ভাতা’ চালু করার বিষয়টি বিবেচনায় রয়েছে। এ সময়ের মধ্যেই তাদের কর্মসংস্থানে সহায়তা করবে সরকার।

বুধবার (২৩ এপ্রিল) বিকেলে রংপুর, নীলফামারী ও সৈয়দপুর জেলা বিএনপির নেতাদের অংশগ্রহণে আয়োজিত এক প্রশিক্ষণ কর্মশালায় ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে এসব কথা বলেন তিনি। বিএনপির ৩১ দফা রাষ্ট্রকাঠামো মেরামত পরিকল্পনা নিয়ে কর্মশালাটি অনুষ্ঠিত হয়।

তারেক রহমান বলেন, “আমরা একটি পরিকল্পনা করছি—যাতে যারা এখনো চাকরি পাননি, তারা যেন সরকারের সহযোগিতায় একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য সহায়তা পান। এই সময়টিতে সরকার ও ব্যক্তিগত পর্যায়ে উভয়ের উদ্যোগেই কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করা হবে।”

তিনি আরও অভিযোগ করেন, বিগত সময়ে সরকারি ও আধা-সরকারি চাকরিতে ব্যাপক দলীয়করণ হয়েছে। বিএনপিসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলের অনেক তরুণ নেতাকর্মী, যাঁরা আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন, তারা বয়স পার করে ফেললেও কোনো চাকরি পাননি। “শুধু ছাত্রদল নয়, আরও অনেক সাধারণ মানুষ আছেন যারা সরকারের অনুগত না হওয়ায় চাকরির সুযোগ হারিয়েছেন। এ বাস্তবতা বিবেচনায় নিতে হবে,” বলেন তারেক।

বাংলাদেশে সর্বজনীন স্বাস্থ্যবিমা চালু করার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তারেক রহমান বলেন, “২০ কোটির বেশি মানুষের জন্য স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা বিশাল বাজেট ও কাঠামোগত পরিকল্পনা দাবি করে। এটা অব্যবস্থাপনার জায়গা নয়, এটা করতে হলে বাস্তবতা মাথায় রেখে ধাপে ধাপে এগোতে হবে।”

তিস্তা নদী ঘিরে রংপুর অঞ্চলের মানুষদের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা পূরণে বিএনপির পরিকল্পনার কথা জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, “তিস্তা শুধু নদী নয়, রংপুর বিভাগের অর্থনীতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। অতীতে তিস্তাকে কেন্দ্র করে রাজনীতি হয়েছে, কিন্তু মানুষের জীবনে কোনো পরিবর্তন আসেনি। বিএনপি সরকারে গেলে তিস্তা সমস্যা সমাধানে বাস্তব ভিত্তিক ও জনগণকেন্দ্রিক প্রকল্প গ্রহণ করবে।”

বিএনপির কেন্দ্রীয় প্রশিক্ষণবিষয়ক কমিটির উদ্যোগে আয়োজিত এ প্রশিক্ষণ কর্মশালায় উপস্থিত ছিলেন রংপুর জেলা ও মহানগর বিএনপির নেতারা। কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক শামসুজ্জামান সামু এবং উদ্বোধনী বক্তব্য দেন বিএনপির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু। সঞ্চালনায় ছিলেন নির্বাহী কমিটির সদস্য আবদুস সাত্তার পাটোয়ারী।

Header Ad
Header Ad

এস আলমের ৪০৭ কোটি টাকার ১৫৯ একর জমি ক্রোকের নির্দেশ

ছবি: সংগৃহীত

এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলমের স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে থাকা ১৫৯ একর জমি ক্রোকের নির্দেশ দিয়েছে আদালত। জমিগুলোর আনুমানিক বাজারমূল্য ৪০৭ কোটি টাকা বলে জানিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এসব জমি ঢাকা ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থানে অবস্থিত।

বুধবার (২৩ এপ্রিল) ঢাকার মহানগর দায়রা জজ ও সিনিয়র বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মো. জাকির হোসেন এই আদেশ দেন। আদালতে দুদকের পক্ষে আবেদন করেন উপপরিচালক তাহাসিন মুনাবীল হক। শুনানি শেষে আদালত আবেদন মঞ্জুর করেন। বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা আকতারুল ইসলাম।

দুদকের আবেদনে বলা হয়, এস আলম ও তার ঘনিষ্ঠদের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে চলমান তদন্তে দেখা যায়, তার স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে বিপুল পরিমাণ জমি ও স্থাবর সম্পদ রয়েছে। এসব সম্পদ তারা অন্যত্র বিক্রি বা হস্তান্তরের চেষ্টা করছে বলে গোপন সূত্রে জানা যায়। ফলে তদন্ত সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার স্বার্থে এবং রাষ্ট্রীয় সম্পদ সুরক্ষায় এসব জমি ক্রোকের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়।

জমিগুলো যেসব প্রতিষ্ঠানের নামে রয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে ক্রিস্টাল ক্লিয়ার ট্রেড লিংক, ইভেন্ট টাইটান ইন্টারন্যাশনাল, পাইথন ট্রেডিং কর্নার, ইসলাম ট্রেডার্স, ডায়মন্ড বিজনেস হাউস, এএইচ সেন্টারসহ আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। দুদকের ভাষ্য অনুযায়ী, এসব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে মোহাম্মদ সাইফুল আলমের সরাসরি আর্থিক ও ব্যবসায়িক সম্পর্ক রয়েছে।

এর আগেও এস আলম ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে একাধিক দফায় আদালত সম্পদ ও শেয়ার অবরুদ্ধ এবং দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। গত বছরের অক্টোবর থেকে শুরু করে চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত সময়ে তার ও তার ঘনিষ্ঠজনদের নামে থাকা শেয়ার, জমি ও ব্যাংক হিসাব পর্যায়ক্রমে অবরুদ্ধ ও ক্রোক করে আদালত।

এস আলমের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তে এখন পর্যন্ত ১৩০০-এর বেশি ব্যাংক হিসাব, হাজার একরের বেশি জমি এবং কয়েক হাজার কোটি টাকার শেয়ার নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। দুদক জানিয়েছে, তদন্তে আরও নতুন সম্পদের তথ্য পাওয়া যেতে পারে।

দুদক বলছে, মানি লন্ডারিং ও জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে এই তদন্ত চলমান রয়েছে এবং প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

পাকিস্তানিদের বিশেষ ভিসা সুবিধা বাতিল, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ভারত ছাড়ার নির্দেশ
বিএনপি সরকার গঠন করলে শিক্ষিত বেকারদের জন্য চালু হবে ভাতা: তারেক রহমান
এস আলমের ৪০৭ কোটি টাকার ১৫৯ একর জমি ক্রোকের নির্দেশ
সীমান্তের সব ভিডিও সত্য নয়, আবার সবটা যে মিথ্যা তাও নয়: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
আন্দোলনের নামে রাস্তা অবরোধ না করার অনুরোধ ডিএমপির
টাঙ্গাইলে বেড়েছে গরমের তীব্রতা, বিপাকে নিম্ন আয়ের মানুষ
সরকার সরিয়ে না দিলে পদত্যাগ করব না: কুয়েট ভিসি
বিরামপুরে ছিনতাইকালে পুলিশের হাতে 'ভুয়া সেনাসদস্য' আটক
হাসিনাকে যারা খুনি হতে সাহায্য করেছে, তাদেরও বিচার করতে হবে: সারজিস আলম
কুয়েটের ৩৭ শিক্ষার্থীর বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার, খুললো আবাসিক হল
কাশ্মীরে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’, মসজিদে ঘোষণার পর বিক্ষোভ শুরু
ইতিহাস গড়ল জিম্বাবুয়ে, ঘরের মাঠে লজ্জার হার বাংলাদেশের
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের 'এ' ইউনিটে প্রথম আব্দুল্লাহ
বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র পারভেজ হত্যা: প্রধান আসামি মেহরাজ গ্রেপ্তার
তুরস্কের ইস্তানবুলে একের পর এক ভূমিকম্প
এবার সেই গৃহকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করলেন পরীমণি
দ্রুত রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন না হলে পুরো অঞ্চল অস্থিতিশীল হয়ে উঠবে: প্রধান উপদেষ্টা
আমরা সংস্কারও চাই, নির্বাচনও চাই: মির্জা আব্বাস
কাশ্মীরের হামলা ‘সাজানো’ দাবি পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যমের
ভাইরাল ভিডিও সমন্বয়ক রুবাইয়ার নয়, দাবি এনসিপি নেতার