হাওয়া’র ঝড়ে উড়ে যাচ্ছে সমালোচনা
চারদিকে টিকিটের হাহাকার। কোথাও কোথাও কালোবাজারিরাও জেগে উঠেছে। অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু যেন সিনেমার সোনালী অতীতকে ফিরিয়ে আনার জোর ইঙ্গিত দিচ্ছে। স্যোশাল মিডিয়াতে সিনেমা মুক্তির আগেই তুমুল ভাইরাল হয়েছে এর গান। অভিনেত্রী ও অভিনেতাদের নিয়ে চলছে আলোচনা। বাংলা সিনেমা নিয়ে এমন উন্মাদনা, উচ্ছ্বাস ও উদ্দীপনা কত বছর আগে দেখা গেছে তা কড় গুণে সঠিক হিসাব বলতে পারবে না কেউ।
রাজধানীসহ দেশের ২৪ সিনেমা হলে ২৯ জুলাই মুক্তি পাওয়া ‘হাওয়া’ সিনেমা নিয়ে চলছে রীতিমত বন্দনা। মুক্তির কয়েকদির পরও মিলছে না এর টিকিট। অনেক মাল্টিপ্লেক্সে ৪ আগস্ট পর্যন্ত অগ্রিম টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে। স্টার সিনেপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ দর্শকদের চাপে বাধ্য হয়ে ৫টি হলে প্রতিদিন ২৬ শো’য়ের ব্যবস্থা করেছে। তারপরও টিকিট দিতে হিমশিম খাচ্ছে তারা। কেরানীগঞ্জের লায়ন সিনেমা হল কর্তৃপক্ষ হলিউডের ‘থর: লাভ অ্যান্ড থান্ডার’ সিনেমাটি নামিয়ে ‘হাওয়া’র শো বাড়িয়েছে।
এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, জনসমাগম বেশি হওয়ার কারণে আমরা হাওয়া সিনেমার ৩টা স্পেশাল শো বাড়িয়ে দিয়েছি আমাদের থ্রিডি হলে। তাই ‘থর: লাভ অ্যান্ড থান্ডার’ সিনেমাটা আপাতত চালানো হবে না। পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত থর সিনেমাটা বন্ধ থাকবে।
পরিচালক মেজবাউর রহমান সুমন তার প্রথম সিনেমার মাধ্যমেই পাল্টে দিয়েছে সিনেমার গতিপথ। সিনেমাপ্রেমিরা বলছে, সিনেমার সুদিন ফিরছে হাওয়া’র হাত ধরে। সিনেমা দেখে আবেগে আনন্দে দিশেহারা হচ্ছে দর্শক। ‘হাওয়া’ সিনেমার যে ঝড় বইছে তা থামাতে হাতেগোনা কয়েকজন মানুষ সিনেমাটি নিয়ে প্রপাগান্ডা ছড়াচ্ছে স্যোশাল মিডিয়ার বিভিন্ন গ্রুপে। তাদের ভাষ্য, ‘হাওয়া’ নকল গল্পের সিনেমা। এটি নাকি ১৯৮৫ সালে মুক্তিপাওয়া রাজ্জাক, জসিম, অঞ্জনা, রোজিনা অভিনীত ‘অভিযান’ সিনেমার গল্পের নকল। অথচ গল্পের ধরন গতি-প্রকৃতি প্রেক্ষাপট পুরোটাই ভিন্ন। তারপরও নির্দিষ্ট কিছু মানুষ সময়ের সবচেয়ে আলোচিত সিনেমাটি নিয়ে টেনে হেঁচড়ে নামানোর চেষ্টা করছে। তবে ‘হাওয়া’র প্রতি দর্শকদের আগ্রহ ও ভালোবাসার কারণে ‘হাওয়া’র ঝড়ে উড়ে যাচ্ছে সব সমালোচনা।
সাধারণ দর্শকরাই প্রতিবাদী সুরে বলছে ‘হাওয়া’ মৌলিক গল্পের সিনেমা। ‘হাওয়া’ ভঙ্গুর ঢাকাই সিনেমাকে নতুন করে প্রাণ ফিরিয়ে দেওয়া সিনেমা। বাংলাদেশের সিনেমাকে এগিয়ে নিতে ‘হাওয়া’র মতো সিনেমা আরও বেশি বেশি নির্মাণ জরুরি।
জনপ্রিয় চিত্রনায়ক রিয়াজ ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, ‘হাওয়া সিনেমা নিয়ে যে আলোচনা ও উন্মাদনা তৈরি হয়েছে তা বাংলা সিনেমার জন্য অতি আনন্দের। কেউ কেউ আবার এই সিনেমাটি নিয়ে সমালোচনা করছে এটা খুব দুঃখজনক। তাদের সংখ্যা হাতেগোনা। সমালোচনাকারীরা কারও কারও ভক্তও আবার। হিংসা থেকেই এমন সমালোচনার বিষ ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে তারা। তবে হাওয়া সিনেমার নির্মাণ, গল্প, অভিনয় ও দর্শকরাই সেসব সমালোচনাকারীদের সঠিক জবাব দিচ্ছে এবং দেবে। বাংলা সিনেমার জয় হোক’।
এই সিনেমায় প্রধান চরিত্রে অভিনয় করা অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী বলেন, ‘সমালোচনা করার জন্য সব সময় কিছু মানুষ তৈরি থাকে। তাদের কাজই সমালোচনা করা। হাওয়া নিয়ে দর্শকদের যে ভালোবাসা পাচ্ছি তা কল্পনাকেও হার মানাচ্ছে। মুক্তির আগেই হাওয়া নিয়ে যে আলোচনা শুরু হয়েছিল মুক্তির পর তাই কিছুটা চাপ অনুভব করছিলাম। এখন আর সেই চাপ নেই। কারণ দর্শকরা যেভাবে হাওয়াকে গ্রহণ করেছে তাতে তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতার শেষ নেই।’
এতে অভিনয় করেছেন চঞ্চল চৌধুরী, নাজিফা তুষি, শরিফুল রাজ, সুমন আনোয়ার, সোহেল মন্ডল, নাসির উদ্দিন খান, মাহমুদ আলম, বাবলু বোস প্রমুখ।
এএম/এমএমএ/