থাইল্যান্ডে উন্নত চিকিৎসা প্রযুক্তিতে এগিয়ে ব্যাংকক হাসপাতাল
১৯৭২ সালে যাত্রা শুরু হয়েছিল ব্যাংকক হাসপাতাল হেডকোয়ার্টার্স (বিএইচকিউ) এর, যা গুরুতর এবং জটিল অসুস্থতার জন্য বিশ্বমানের চিকিৎসাসেবা দেয়। বিএইচকিউ এর নেতৃত্বে থাইল্যান্ড এবং প্রতিবেশী দেশগুলোতে সম্মিলিতভাবে ৪৯টি নেটওয়ার্ক হাসপাতাল পরিচালিত হয়।
আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত জয়েন্ট কমিশন ইন্টারন্যাশনাল (জেসিআই) এবং নিউজউইক পরিচালিত বিশ্বের সেরা হাসপাতাল-২০২০ এর জরিপে ব্যাংকক হাসপাতাল থাইল্যান্ডের শ্রেষ্ঠ হাসপাতাল হিসেবে নির্বাচিত হয়েছে।
শনিবার (২৬ নভেম্বর) ঢাকায় বাংলাদেশের ব্যাংকক হাসপাতাল অফিস 'ব্যাংকক হসপিটাল থাইল্যান্ডে উন্নত চিকিৎসা প্রযুক্তিতে সবচেয়ে অগ্রগামী' বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।
সম্মেলনের প্রধান অতিথি থাই রাষ্ট্রদূত মাখওয়াদি সুমিতমোর তার বক্তৃতায় থাইল্যান্ডে মেডিকেল ট্যুরিজমের সুযোগ সুবিধাগুলো তুলে ধরেন। মেডিকেল ট্যুরিজমে ২২ বছরের বেশি অভিজ্ঞতা সম্পন্ন বিএইচকিউয়ের একমাত্র প্রতিনিধি ধানমন্ডি, বনানী এবং চট্টগ্রামে ব্যাংকক হাসপাতালের ৩টি অফিসের মাধ্যমে গ্রাহকদের সৌজন্যমূলক ওয়ান-স্টপ পরিষেবা দিয়ে যাচ্ছে।
ব্যাংকক হাসপাতালের ইন্টারনাল মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ও উপদেষ্টা ডা. শক্তি রঞ্জন পাল ও ব্যাংকক হার্ট হাসপাতালের পরিচালক ডা. ক্রিয়েংক্রাই হেংরুসামি ব্যাংকক হাসপাতালের বিভিন্ন পরিষেবাসহ প্রযুক্তিগত অগ্রগতির ক্ষেত্রে ব্যাংকক হাসপাতালের অবদান সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উপস্থাপন করেন। বিএইচকিউ অত্যাধুনিক কার্যকরী ওষুধ, উন্নত প্রযুক্তি, দক্ষ ও প্রখ্যাত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এবং থাই আতিথেয়তার সমন্বয়ে স্মার্ট স্বাস্থ্যসেবার ধারায় একটি বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে।
বিএইচকিউ ক্যাম্পাসের মধ্যে রয়েছে ব্যাংকক হার্ট হাসপাতাল, ওয়াটানোসোথ ক্যান্সার হাসপাতাল, ব্যাংকক ইন্টারন্যাশনাল হাসপাতাল (নিউরোলজি এবং অর্থোপেডিকস)। স্বাস্থ্যসেবার প্রধান ক্ষেত্রের বিপুল সংখ্যক বিশেষজ্ঞ এখানে কর্মরত রয়েছেন। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বৃহত্তম নেটওয়ার্ক হাসপাতালের প্রধান কার্যালয় হওয়ায় বিএইচকিউ প্রযুক্তিগতভাবে সবচেয়ে উন্নত হাসপাতাল এবং এতে এমন কিছু অনন্য চিকিৎসা প্রযুক্তি রয়েছে যা থাইল্যান্ডের অন্য বেসরকারি হাসপাতালে পাওয়া যায় না। বছরের পর বছর ধরে থাই এবং বিদেশি রোগীরা তাদের চিকিৎসার জন্য ধারাবাহিকভাবে ব্যাংকক হাসপাতালকে বেছে নিচ্ছে। কারণ এখানে একই ছাদের নিচে সব নির্ভরযোগ্য অত্যাধুনিক প্রযুক্তি পাওয়া যায়।
ব্যাংকক হার্ট হাসপাতালে উল্লেখযোগ্য প্রযুক্তির মধ্যে রয়েছে সিটি অ্যাঞ্জিওগ্রাম - ২৫৬ স্লাইস, এমআরআই ৩.০ টেসলা, কার্ডিয়াক এমআরআই ৩.০ টেসলা, ওপেন এমআরআই ১.০ টেসলা, জটিল অ্যারিথমিয়ার জন্য কার্টোসাউন্ড ইত্যাদি। এখানে স্মার্ট সার্জারির জন্য একটি হাইব্রিড ওটি-ও রয়েছে। (বিএইচকিউ অল-আর্টারি বা ডাবল লাইফ সিএবিজি, দ্বিতীয় সিএবিজি অথবা রিডু সিএবিজি'র মতো সার্জারির ক্ষেত্রে নেতৃস্থানীয়।)
ব্যাংকক ক্যান্সার হাসপাতালে সঠিকভাবে ক্যান্সার নির্ণয়ের জন্য রয়েছে চতুর্থ প্রজন্মের এমসিটি ফ্লো পেট-সিটি, রেডিওথেরাপি এবং রেডিওসার্জারির নতুন যুগান্তকারী চিকিৎসায় ভ্যারিয়ান এজ, যা ১ থেকে ৩ দিনের মধ্যেই সার্জারি ছাড়াই মস্তিষ্কের টিউমারের চিকিৎসা সম্ভব করে তোলে। একই সঙ্গে বিএইচকিউ ইমিউনোথেরাপি, কেমোথেরাপি, হরমোন থেরাপি ও টার্গেট থেরাপির মতো অত্যাধুনিক ক্যান্সার চিকিৎসার নেতৃস্থানীয় হাসপাতাল। বিএইচকিউ-এ টিউমার বোর্ডও (মাল্টিডিসিপ্লিনারি বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে গঠিত একটি দল) রয়েছে, যা প্রতিটি ক্যান্সার রোগীর সর্বোত্তম ব্যবস্থাপনা, চিকিৎসা পর্যালোচনা এবং পথ প্রদর্শন করে।
ব্যাংকক ইন্টারন্যাশনাল হাসপাতাল (নিউরোলজি এবং অর্থোপেডিকস) মেরদণ্ডের অস্ত্রোপচারে নির্ভুলতার জন্য ও-আর্ম প্রযুক্তি ব্যবহার করে। গুরুতর আহত রোগীদের সর্বোত্তম পরিষেবার জন্য এখানে রয়েছে বিভিন্ন বিভাগীয় বিশেষজ্ঞদের একটি নিবেদিত 'ট্রমা কেয়ার টিম'।
এ ছাড়া এখানে রয়েছে জটিল ও মুমূর্ষু রোগীদের স্থানান্তরের জন্য অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক এয়ার অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস, যা সর্বোচ্চ সুরক্ষা রেকর্ডধারী স্কাই আইসিইউ, দক্ষ এভিয়েশন ডাক্তার এবং নার্স দিয়ে সুসজ্জিত।
ব্যাংকক একাডেমি অব স্পোর্টস অ্যান্ড এক্সারসাইজ মেডিসিন (বিএএসইএম) হচ্ছে আন্তর্জাতিক মানের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার একমাত্র ফিফা স্বীকৃত সেন্টার এবং ক্রীড়াজনিত ইনজুরির আদর্শ চিকিৎসাকেন্দ্র। অত্যাধুনিক প্রযুক্তি এবং উন্নত কৌশলের মাধ্যমে স্বল্প সময়ে রিকভারি এবং আরও ভাল অস্ত্রোপচারের ফলাফল অর্জনের জন্য রয়েছে মিনিমাল ইনভেসিভ সার্জারি (এমআইএস), যা ক্রীড়াবিদদের উন্নত পারফরম্যান্সের সঙ্গে পেশাদারি ক্রীড়াঙ্গনে দ্রুত ফিরে আসার সুযোগ করে দেয়।
বিএইচকিউ-তে সম্প্রতি যুক্ত করা হয়েছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন স্বাস্থ্য পরিষেবা, যা মেডিকেল ইমেজ স্ক্রিনিংয়ে সূক্ষ্মতা বজায় রাখতে চমৎকারভাবে কাজ করে। প্রযুক্তিগত উৎকর্ষের পাশাপাশি, বিএইচকিউ সব ডিপার্টমেন্টের রোগীদের টেলিমেডিসিন পরিষেবাও দেয়, যার মাধ্যমে কোভিড-১৯ মহামারি চলাকালীন সময়ে বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশি রোগী সুলভে বিশ্বমানের চিকিৎসা সেবা পেয়েছেন এবং এখনও পাচ্ছেন।
সংবাদ সম্মেলনে যোগ দেন ব্যাংকক হাসপাতাল হেডকোয়ার্টার্স-এর বিজনেস ডেভেলপমেন্ট ডিরেক্টর রাল্ফ ক্রেওয়ার, মার্কেটিং কমিউনিকেশন স্পেশালিস্ট প্যাচারিন তালানন এবং আন্তর্জাতিক বিপণন কর্মকর্তা শিরং গুয়ান। এ ছাড়া অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ব্যাংকক হাসপাতালের বাংলাদেশ অফিসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. নীলাঞ্জন সেন, নির্বাহী পরিচালক কাজী শারহান সাইফ এবং অপারেশন্স পরিচালক মোহাম্মদ শহিদ।
এসজি