সিভিল এভিয়েশনের গলার কাঁটা হোটেল শেরাটন, বিমান চলাচলে ঝুঁকি!
হোটেল শেরাটন। ছবি: সংগৃহীত
রাজধানীর বনানীতে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে পাঁচ তারকা একটি হোটেল। হোটেলের নাম শেরাটন। তবে বহুল ভবনের এই অভিজাত হোটেলটি গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে দেশের বিমান চলাচলে। আশেপাশের সব ভবন সিভিল এভিয়েশনের নিয়ম অনুযায়ী উচ্চতায় ২০০ ফুটের মধ্যে হলেও ২৮ তলার শেরাটন হোটেলটি উচ্চতায় প্রায় সাড়ে ৩০০ ফুটেরও বেশি।
আর এই উচ্চতার কারণে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিমাম উঠানামার জন্য বড় একটি ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ বিষয়ে সিভিল এভিয়েশনের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্সাল এম ফরিদুর রহমান গণমাধ্যমকে জানান, শাহজালাল বিমানবন্দরের রেফারেন্স ধরে যদি বলতে হয় তবে, হোটেল শেরাটন ভবনের উচ্চতা বেশি রয়েছে। এর ফলে একটা ঝুঁকি থেকে যাচ্ছে বিমান চলাচলে। বিষয়টি সম্পর্কে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে (রাজউক) একাধিকবার জানানো হয়েছে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।
এ বিষয়ে কি উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে তা জানতে চাইলে রাজউকের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ মো. আশরাফুল ইসলাম গণমাধ্যমকে জানান, কত তলার জন্য অনুমোদন নেওয়া হয়েছে এবং কীভাবে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে এ ধরনের কোনো তথ্য-প্রমাণ রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের কাছে সংরক্ষিত নেই। সিটি করপোরেশেনের জমিতে দাঁড়িয়ে থাকা এই ভবনটি রাজউকের অনুমোদনপ্রাপ্ত নয় বলেও জানান তিনি।
এ প্রসঙ্গে হোটেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলতে গেলে নিরাপত্তা বিভাগ থেকে গণমাধ্যমকে কোনো তথ্য দিতে রাজি হয়নি কেউ।
জানা গেছে, ২১ তলার অনুমতি নিয়ে বনানীতে সিটি করপোরেশনের জমির ওপরে বোরাক রিয়েল এস্টেট লিমিটেড গড়ে তোলে বহুতল এই অভিজাত ২৮ তলার ভবনটি। এরপর থেকেই বিভিন্ন মহলে গুঞ্জন শুরু হয়। আলোচনার উঠে আসে কীভাবে ২১ তলার অনুমতি নিয়ে ২৮ তলার ভবন নির্মাণ করা হয়। এ নিয়ে গত বছরের ১ জুন ‘সরকারি জমিতে পাঁচতারকা হোটেল’ শিরোনামে একটি জাতীয় দৈনিকে খবর প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদন যুক্ত করে গত ১১ জুন রিট করেন সায়েদুল হক সুমন।
পরে ২০২৩ সালের অক্টোবরে রাজধানীর বনানীতে সিটি করপোরেশনের জমির ওপর বোরাক রিয়েল এস্টেট লিমিটেডের নির্মিত বহুতল ভবন শেরাটন হোটেলের ২১ থেকে ২৮ তলার ওপর স্থিতাবস্থা (স্টাটাসকো) দেন হাইকোর্ট। এক রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারপতি নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াত সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ ওই আদেশ দেন।
আদেশের সময় আদালত প্রশ্ন রেখে বলেন, ২১ তলার অনুমতি নিয়ে ২৮ তলা কীভাবে করা হলো? সিটি করপোরেশনের দায়িত্ব কেউ নেবে না বলেও মন্তব্য করেন আদালত। এ-সংক্রান্ত রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত স্থিতাবস্থা বজায় থাকবে।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। সিটি করপোরেশনের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার ইমতিয়াজ মইনুল নীলিম। বোরাক টাওয়ারের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার এ বি এম আলতাফ হোসেন ও অ্যাডভোকেট আবু তালেব। রাজউকের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার ইমাম হাসান।