উল্টো স্থপতির উপরই দোষ চাপাচ্ছেন গাউসিয়া টুইন পিকের ম্যানেজার
ছবি: সংগৃহীত
রাজধানীর ধানমন্ডি ১৫ নম্বরের গাউসিয়া টুইন পিক ভবনটিতে রাজউক আইন অনুযায়ী রেস্তোরাঁ বসানোর সুযোগ নেই। ভবনটি ১৫০ ফুট উচ্চতায় নির্মাণের অনুমোদন দেওয়া হলেও অবৈধভাবে ৪০ ফুট বাড়ানো হয়েছে বলে জানিয়েছে রাজউক।
রাজউকের তথ্য অনুসারে, এক তলা বেইজমেন্টসহ ১৪ তলা বাণিজ্যিক ভবনটির অকুপেন্সি টাইপ এফ-১। অর্থাৎ ভবনটি অফিস হিসেবে ব্যবহার করা যাবে, রেস্তোরাঁ নয়। কিন্তু ভবনটির দ্বিতীয় এবং ১৩ তম তলায় দুটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের অফিস। বাকি ফ্লোরগুলোয় দোকান এবং ১৫টি রেস্তোরাঁর জন্য ভাড়া দেওয়া হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার ঢাকার বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজে অগ্নিকাণ্ডে ৪৬ জন নিহত হওয়ার পর স্থপতি মুস্তাফা খালিদ পলাশ ফেইসবুকে পোস্ট দিয়ে গাউসিয়া টুইন পিক ভবনের অনিয়মের কথা জানিয়ে যেখানে যেতে ভোক্তাদের নিষেধ করেন।
এই স্থপতি জানান, তিনি গাউসিয়া টুইন পিকের নকশা করলেও ভবনটি সেভাবে ব্যবহার হচ্ছে না। এর দুই দিন পরেই তার অভিযোগ যাচাইয়ে ভবনটিতে গেল রাজউকের দল।
রাজউকের অভিযানের পর টুইন পিক টাওয়ারে অনুমোদনহীন ও নকশা বহির্ভূতভাবে নির্মাণ করা ১২টি রেস্তোরাঁ সিলগালা করা হয়েছে। একইসঙ্গে জরিমানা করা হয়েছে একটি রেস্তোরাঁকে। এবং ভবনটির ছাদে নকশা বহির্ভূতভাবে গড়ে তোলা রেট্রো লাইভ কিচেন নামের রুফটপ রেস্টুরেন্টটি ভেঙ্গে দেওয়া হয়।
রাজউক কর্মকর্তারা বলছেন, বেইলি রোডের অগ্নিকান্ডের সেই ভবনের সাথে গাউসিয়া টুইন পিকেও একই ঘটনা ঘটে। সেখানে রাজউক আইন অনুযায়ী রেস্তোরাঁ বসানোর সুযোগ না থাকলেও সিটি করপোরেশন সবগুলোকে ট্রেড লাইসেন্স দিয়েছে, ছাড়পত্র মিলেছে কলকারখানা অধিদপ্তরের এবং ফায়ার সার্ভিস থেকেও।
বাংলাদেশ ন্যাশন্যাল বিল্ডিং কোড ও ঢাকা মহানগর ইমারত নির্মাণ বিধিমালা ২০০৮ অনুযায়ী, স্থপতির করা নকশা অনুযায়ী ভবন না করলে বা নকশা বহির্ভূত ব্যবহার হলে স্থপতি রাজউককে অবহিত করবেন। তবে স্থপতি মুস্তাফা খালিদ পলাশ রাজউককে বিষয়টি জানাননি।
রাজউকের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ আশরাফুল ইসলাম রোববার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ডিজাইন অনুযায়ী যদি ভবন না করে তাহলে নির্ধারিত ফরম অনুযায়ী রাজউককে অবহিত করতে হবে।
“তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় দিয়েছেন, এ জন্য তাকে ধন্যবাদ জানাই। ঢাকা শহরে এমন অসংখ্য ভবন আছে যেগুলো স্থপতির করা নকশা অনুযায়ী করা হয়নি। যেসব স্থপতি ওইসব ভবন করেছেন তাদের নৈতিক দায়িত্ব নির্ধারিত ফরমে। নইলে ওই দায় তাদের ওপর বর্তায়।”
এদিকে গাউসিয়া টুইন পিকের ম্যানেজার উল্টো ভবনটির স্থপতি মুস্তাফা খালিদ পলাশের উপর দোষ চাপাচ্ছেন। তার দাবি, টুইন পিকের ডিজাইনার তিনি। তার নির্দেশিত ডিজাইনের ভিত্তিতেই এই ভবন নির্মিত হয়েছে।
টুইন পিকের ম্যানেজার বলেন, ‘এই ভবনটিতে রেস্টুরেন্ট করার জন্য স্থপতি মুস্তাফা খালিদ পলাশকে ডিজাইন করতে বলা হয়েছিলো এবং সেই অনুযায়ী তাকে কাগজপত্র দেওয়া হয়েছিলো। কিন্তু তিনি সেভাবে করেন নি। তো এক্ষেত্রে এর দায় তো আমাদের না এর দায় ওনার ।’
এদিকে গত শুক্রবার স্থপতি মুস্তাফা খালিদ পলাশ তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেন, ‘প্রতিনিয়ত এই ভবনটি (গাউসিয়া টুইন পিক) নিয়ে উৎকণ্ঠায় থাকি। নকশা এবং অনুমোদন বাণিজ্যিক ভবন হিসেবে হলেও এর ব্যবহারে বড় রকমের ব্যত্যয় ঘটিয়ে সার্বিকভাবে একে ঝুঁকিপূর্ণ রেস্তোরাঁ ভবনে রূপান্তর করা হয়েছে। স্থপতি হিসেবে শেষ যে ক্ষমতাটুকু রাজউক দিয়েছে অকুপেন্সি সার্টিফিকেটের জন্য রিপোর্ট স্বাক্ষর করার, তার তোয়াক্কাও এখানে করা হয়নি।
“অকুপেন্সি সার্টিফিকেট না নিয়েই চলছে ব্যবসা। যেহেতু ভবনটি নির্দিষ্ট ব্যবহারের ব্যত্যয় করে ব্যবহার শুরু করে দেয়া হয়েছে তাই স্থপতি হিসেবে রিপোর্ট ও এজবিল্ট ড্রয়িং প্রদান থেকে বিরত থেকে জমির মালিক, ডেভেলপারকে বারবার লিখিত বার্তায় এ বিষয়ে সতর্ক করা হলেও কোনো ফলপ্রসূ অগ্রগতি হয়নি। অর্থের কাছে আমার আহাজারি বারবারই নিষ্ফল হচ্ছে।”
ডেভেলপার এই স্থপতিকে জানিয়েছেন, তার ফায়ার লাইসেন্স আছে। সেটা কী করে সম্ভব- সে প্রশ্ন তুলে মুস্তাফা লেখেন, “কপি চাইলে নিরুত্তর। জমির মালিককে বললে উত্তর, ভাড়া হয় না তাই আর কী করা! তাদেরকে এও জানানো হয় যে সঠিক ব্যবস্থা না গ্রহণ করলে ভবনের স্থপতি হিসেবে এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বরাবর অভিযোগ করা হবে।”