নির্বাচন সংবিধান থেকে যোজন যোজন দূরে
আমাদের সাবেক অর্থমন্ত্রীর ‘জেলায় জেলায় সরকার’ শিরোনামে একটি বই আছে। তিনি সেখানে বলেছেন যে, জেলা পরিষদ আইনটি হচ্ছে একটি অস্বচ্ছ আইন। এটির দ্বারা যে জেলা পরিষদ গঠিত হবে সেটি অকার্যকর।
স্থানীয় সরকার নির্বাচনের সঙ্গে এটির কোনো সংযোগ নেই। এটিই একমাত্র পরোক্ষ নির্বাচন এবং একটি অর্থহীন আনুষ্ঠানিকতায় পরিণত হবে। যেটির মাধ্যমে আমরা শুনতে পাচ্ছি যে, আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা যারা সুযোগ সুবিধা নেয়, এটি তাদের পুনর্বাসন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।
স্থানীয় উন্নয়নের লক্ষ্যে, স্থানীয় মানুষের স্বার্থে মনে হয়না এটি করা হচ্ছে। এটি মূলত একধরণের আনুষ্ঠানিকতা অর্থাৎ কিছু ব্যক্তিদের পুনর্বাসন করাই এর লক্ষ্য। এই পরিষদের আকর্ষনীয় দিক হল যে, এখানে অনেক সম্পদ আছে। যারা এখানে প্রভাব প্রতিপত্তি সৃস্টি করবে, একইসঙ্গে বৈধ-অবৈধভাবে সম্পদ কাজে লাগানোর সুযোগ পাবে। শুধু এবারের নির্বাচনে নয়, এর আগেরবার নির্বাচনে ভোট কেনা বেচা আমরা দেখেছি এবং এখন এটি প্রায় সর্বজনীন।
প্রত্যেককেই অর্থকড়ি দিয়ে বিভিন্নভাবে প্রভাবিত করে তাদের ভোট নেওয়ার চেষ্টা করা হয়। এর সঙ্গে সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বিভিন্ন ধরনের রাজনৈতিক প্রভাব। ফলে এসব নির্বাচন মূলত দূর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে। এটিকে প্রকৃতপক্ষে নির্বাচনও বলা যায় না।
আমাদের এই প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য হলো গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে কার্যকর করা। গণতন্ত্র মানে কী? গণতন্ত্র হল সর্বস্তরে জনপ্রতিনিধিদের সম্মিলিত শাসনব্যবস্থা।যেমন কেন্দ্রে নির্বাচিত গণপ্রতিনিধিদের শাসন তেমনিভাবে জেলা পরিষদ, ইউনিয়ন পরিষদ, সিটি করপোরেশন নির্বাচনগুলিরও সঠিক তত্ত্বাবধানে কাজ করা দরকার।
আমাদের কেন্দ্রীয় পর্যায় ছাড়া সব জায়গায় কর্মকর্তারা এখন এসব প্রতিষ্ঠানকে বিভিন্নভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে। আমাদের সংবিধানের ৫৯/২তে আছে সকল রকম অর্থনৈতিক পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন এবং সার্ভিস কমিশনের সকল সরকারি সেবা এই সকল প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পরিকল্পনা করা দরকার এবং বাস্তবায়ন করা দরকার।
আমরা আমাদের কর্মের ক্ষেত্রে সংবিধান থেকে যোজন যোজন দূরে এবং এটি একটি দুর্নীতিগ্রস্ত পুনর্বাসন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। কাজেই এখানে নির্বাচনটিও অর্থহীন। কারণ, এখানে বলাবাহুল্য সরকারি দল যাকে মনোনয়ন দেবে সেই জিতবে।
লেখক: সম্পাদক, সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)