পর্ব-১
শিক্ষকের মর্যাদায় বঙ্গবন্ধু
বঙ্গবন্ধুকে তিনবার কাছ থেকে দেখার সুযোগ পেয়েছিলাম। প্রথমবার দেখি ১৯৭১ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি। বাংলা একাডেমিতে বঙ্গবন্ধু এসেছিলেন একুশের অনুষ্ঠান উদ্বোধন করতে। সেদিন তাকে সামনাসামনি দেখি। এর আগে দেখার সুযোগ পাইনি। কারণ, আমার বাবার চাকরিসূত্রে আমার শিক্ষাজীবনের পুরো সময় কেটেছে রাজশাহী শহরে। ১৯৬৮ সালে এমএ পাশ করার পরে আমি ১৯৬৯ সালে ঢাকা শহরে আসি। তখন পর্যন্ত ঢাকা আমার কাছে একটি অচেনা শহর। পত্রিকার পাতায় চাকরির বিজ্ঞাপন দেখে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে দরখাস্ত জমা দেই। ইন্টারভিউর চিঠি পাই পাবলিক সার্ভিস কমিশন থেকে কলেজের চাকরির জন্য এবং বাংলা একাডেমি থেকে। দুটো চাকরিই আমার হয়। কলেজের চাকরিতে আমার পোস্টিং হয় সিলেটের এমসি কলেজে। আমি অতদূরে চাকরি করতে যাইনি। ১৯৭০ সালের জুলাই মাসে বাংলা একাডেমির চাকরিতে যোগদান করি। ঢাকা কলেজের ভোট কেন্দ্রে গিয়ে বঙ্গবন্ধুকে ভোট দিয়েছিলাম ১৯৭০ সালের নির্বাচনে। বঙ্গবন্ধু তখন বাঙালির নির্বাচিত নেতা। ১৯৭০ সালের জাতীয় নির্বাচনে তিনি নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেন। স্বাভাবিক নিয়মেই তিনি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার কথা। কিন্তু বাধা সৃষ্টি করেছে ইয়াহিয়া খানসহ পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী। তাদের বিরোধিতার মুখে বঙ্গবন্ধুর দৃঢ় অবস্থান গভীর মর্যাদার সঙ্গে অনুধাবন করেছি।
সেসময় বাংলা একাডেমির পরিচালক ছিলেন অধ্যাপক কবীর চৌধুরী। তিনি একুশের বইমেলা উদ্বোধন করার জন্য বঙ্গবন্ধুকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। তিনি এসেছিলেন। সত্তরের নির্বাচনে বিজয়ী বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হবেন এই প্রত্যাশায় উপস্থিত দর্শক উদগ্রীব হয়েছিল।
সেদিন বাংলা একাডেমির অনুষ্ঠান হচ্ছিল বটমূলে। আমরা দুই-তিন শ লোক দর্শক সারিতে বসে আছি। বিদেশি যারা বাংলা ভাষা শিখেছেন, তাদের হাতে সনদপত্র তুলে দিলেন বঙ্গবন্ধু। অনুষ্ঠানের মাঝামাঝি পর্যায়ে দেখলাম, কেউ একজন বঙ্গবন্ধুর কাছে গিয়ে কানে কানে কিছু একটা বললেন। প্রতিক্রিয়ায় বঙ্গবন্ধু ক্ষুব্ধ হলেন। তাকে ক্রুদ্ধ দেখাল। বঙ্গবন্ধু ভাষণ দিতে উঠলেন না। দর্শক সারিতে বসেছিলেন সে সময়ের বিখ্যাত রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী হুসনা বানু খানম। বঙ্গবন্ধু তাকে মঞ্চে এসে একটি রবীন্দ্রসংগীত গাইতে অনুরোধ করলেন। শিল্পী জানতে চাইলেন কোন গান গাইব। বঙ্গবন্ধু বললেন, ‘ও আমার দেশের মাটি তোমার পরে ঠেকাই মাথা।’ গান শেষে তিনি ভাষণ দিলেন, কিন্তু ভাষণে তিনি ক্ষুব্ধ হওয়া সম্পর্কে কিছুই বললেন না। তিনি তার ভাষণের এক পর্যায়ে বলেন, ‘১৯৫২ সালের রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন শুধুমাত্র ভাষার আন্দোলন ছিল না; বাঙালির অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক তথা সার্বিক স্বাধিকার প্রতিষ্ঠার প্রশ্নের সঙ্গে জড়িত ছিল। ভাষা আন্দোলনের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে আমি ঘোষণা করছি, আমার দল ক্ষমতা গ্রহণের দিন থেকেই সকল সরকারি অফিস-আদালত ও জাতীয় জীবনের অন্যান্য ক্ষেত্রে বাংলা চালু করবে। এ ব্যাপারে আমরা পরিভাষা সৃষ্টির জন্যে অপেক্ষা করব না। কারণ, তাহলে সর্বক্ষেত্রে কোনোদিনই বাংলা চালু করা সম্ভবপর হবে না। এ অবস্থায় হয়ত কিছু কিছু ভুল হবে, কিন্তু তাতে কিছু যায় আসে না। এভাবেই অগ্রসর হতে হবে।’ দুই দিন পর জানা গেল, ইয়াহিয়া খান ও ভুট্টোর সঙ্গে একটি বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ভুট্টো আসবেন না বলে বৈঠকটি স্থগিত হয়ে গেছে-সে বার্তাটি সেদিন তখন তাকে জানানো হয়েছিল।
একজন সাহিত্যকর্মী হিসেবে এটা আমার জন্য একটি অসাধারণ শিক্ষা। একজন রাজনৈতিক নেতা কীভাবে সংগীতের বাণী এসং সুরের মাধ্যমে নিজের উত্তেজনার জায়গা প্রশমিত করলেন এবং মানুষকে দেশপ্রেমের জায়গায় অনুপ্রাণিত করলেন। সেদিন তিনি উত্তেজিত হলে বাংলা একাডেমি থেকেই একটি বিক্ষোভ মিছিল বেরিয়ে যেত, কিন্তু তিনি সেটা করলেন না। একজন বলিষ্ঠ নেতা যেভাবে সংস্কৃতিকে তার রাজনৈতিক দর্শনের সঙ্গে মিলিয়ে মানুষের দেশপ্রেমকে অনুপ্রাণিত করলেন, তা থেকে এই শিক্ষা লাভ করলাম; এবং প্রথম দর্শনেই তাকে একজন শিক্ষক হিসেবে গ্রহণ করলাম। তিনি যেভাবে বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করার স্বপ্ন দেখালেন তা ভেবে এখনো আমি তাকে জীবন-শিক্ষক হিসেবে মেনে নিই। আরেকবার বঙ্গবন্ধুকে কাছে থেকে দেখার সুযোগ পেয়েছিলাম ১৯৭২ সালে। সে সময় বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক ছিলেন অধ্যাপক ড. মাজহারুল ইসলাম। তিনি বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে একটি বই লিখেছেন। সেটি দিতে বঙ্গবন্ধুর ৩২ নম্বরের বাড়িতে যাবেন। সঙ্গে নিলেন আমাদের, যারা লেখালেখি করতাম। সেদিন খুব কাছে থেকে দেখার সৌভাগ্য হয়। বঙ্গবন্ধুর পাশে দাঁড়িয়ে ছবি তোলারও সুযোগ পাই। সেটি আমার জীবনের উজ্জ্বল স্মৃতি হয়ে রয়েছে।
তৃতীয়বার বঙ্গবন্ধুকে কাছে থেকে দেখার সুযোগ পাই আবার বাংলা একাডেমিতে। ১৯৭৪ সালে আয়োজন করা হয়েছিল আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলন। সেটি উদ্বোধনের জন্য বঙ্গবন্ধুকে আমন্ত্রণ জানাতে গিয়েছিলেন একাডেমির মহাপরিচালক ও কয়েকজন সহকর্মী। তাদের কাছে শুনেছিলাম বঙ্গবন্ধু প্রথমে রাজি হননি। তিনি বলেন, ‘আামদের প্রথিতযশা সাহিত্যিকরা থাকতে একটি সাহিত্য সম্মেলন আমি কেন উদ্বোধন করব। আমিতো শুধু রবীন্দ্রনাথ পড়ি।’ মহাপরিচালক তাকে বললেন, এটি যেহেতু আন্তর্জাতিক সম্মেলন, প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করলে মর্যাদা বাড়বে। আমরা আপনাকে চাই। আমরা জানি আপনি শিল্প-সংস্কৃতির মানুষ। তিনি রাজি হলেন।
সেই সম্মেলনে ভাষণ শুনলাম বঙ্গবন্ধুর। তিনি লেখকদের উদ্দেশ্য করে বললেন, ‘আপনারা দুঃখী মানুষের আনন্দ-বেদনার সবটুকু আমাদের সাহিত্যে তুলে ধরেন। এটা আমাদের সাহিত্যের উপাদান হবে। এভাবে বাংলাদেশের সাহিত্যভাণ্ডার সমৃদ্ধ হবে। আমরা আমাদের সাহিত্যকে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে নিয়ে যাব।’আজকে যখন সেই সময়গুলো ফিরে দেখি তখন মনে হয়, বঙ্গবন্ধু যদি বেঁচে থাকতেন তাহলে হয়তো আমাদের শিল্প-সাহিত্যের অনেক বড় জায়গা তৈরি হতো। অনুবাদের মাধ্যমে আমাদের সাহিত্য আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ভিন্নমাত্রায় পৌঁছাতে পারত; যেভাবে বঙ্গবন্ধুর ৭মার্চের ভাষণ এবং একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে পৌঁছাতে পেরেছে। ইউনেস্কো কর্তৃক স্বীকৃত হয়েছে দিবস দুইটি। আমাদের বাংলা ভাষার জন্য জীবনদান করা ‘শহীদ দিবস’ ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে ইউনেস্কো। অজস্র আদিবাসী জনগোষ্ঠীর মাতৃভাষা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। সেই ভাষা সংরক্ষণ করার অনুপ্রেরণায় এই দিবস বিশে^র বিভিন্ন দেশে পালিত হবে। ইউনেস্কো বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণকে ঐতিহ্যিক প্রামাণিক দলিল হিসেবে সংরক্ষণ করেছে। ইতিমধ্যে অনেক ভাষায় অনূদিত হয়েছে এই ভাষণ। এই ভাষণের একটি বাক্যে আমি বঙ্গবন্ধুকে শিক্ষকের মর্যাদায় পাই। ‘আর দাবায়ে রাখতে পারবে না।’ এই বাক্যে মানবাধিকার লঙ্ঘিত না করার কঠিন উচ্চারণ। উন্নয়নশীল রাষ্ট্রসমূহ উপনিবেশের যাঁতাকলে পিষ্ট না হওয়ার জন্য বলবে ‘আর দাবায়ে রাখতে পারবে না।’ বিশ্বকে আমরা দুটি দিন উপহার দিতে পেরেছি। আরেকটি বিষয় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯১৩ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়ে বাংলা সাহিত্যকে আর বঙ্গবন্ধু ১৯৭৪ সালে জাতিসংঘে মাতৃভাষায় ভাষণ দিয়ে বাংলা ভাষাকে বিশ্বমর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। তার মাধ্যমে আমাদের গৌরবময় অর্জনগুলো দেখতে পাই। বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে আমাদের ভাষা, সাহিত্য, সংস্কৃতির আরও অনেক কিছু অর্জিত হতো।
১৯৭৩ সালের একদিন বাংলা একাডেমি থেকে ফিরছিলাম। পাবলিক লাইব্রেরিতে একটা বইয়ের জন্য ঢুকেছিলাম। বই নিয়ে ফেরার সময় হাঁটতে হাঁটতে শাহবাগের মোড় পর্যন্ত এসে রিকশার জন্য দাঁড়াই। এমন সময় দেখি প্রধানমন্ত্রীর গাড়ি আসছে। আমি গাড়ির দিকে তাকিয়ে থাকি। খেয়াল করি বঙ্গবন্ধু আমাকে দেখছেন। আমি সঙ্গে সঙ্গে হাত তুলে সালাম জানাই। তিনিও তার হাত কপালে ঠেকান। মুহূর্তে চলে যায় গাড়ি। আমি বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকি। রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা একজনের সালামের উত্তর দিলেন। এটিও ছিল আমার কাছে শিক্ষার আর একটি দিক। বুঝতে পারি তিনিই সেই মানুষ যিনি সরকার প্রধান হয়েও পথচারীকে উপেক্ষা করেন না। এখন পর্যন্ত আমার কাছে এই স্মৃতি ভাস্বর হয়ে আছে।
এই দেশের স্বাধীনতার জন্য তিনি তার রাজনৈতিক জীবনের পুরোটা সময় উৎসর্গ করেছিলেন। তিনি তার কৈশোর থেকে তার চারপাশের যে দুঃখী মানুষের চেহারা দেখেছিলেন, তাদের জীবনের মুক্তির লক্ষ্য নিয়েই তিনি তার নিজের স্বপ্ন-আকাঙ্ক্ষা তৈরি করেছিলেন। এ আকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়ন ঘটেছিল ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠায়।
ভারত উপমহাদেশের তিনি একমাত্র রাজনৈতিক নেতা, যিনি একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে উপমহাদেশের রাজনীতিকে বদলে দিয়েছিলেন। মানচিত্রে স্থান পেয়েছে আর একটি স্বাধীন দেশ। তার সঙ্গে ছিল তার রাজনৈতিক সহযোদ্ধারা এবং দেশের কোটি কোটি সাধারণ মানুষ।
১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি তিনি ফিরে আসেন পাকিস্তানের কারাগার থেকে। সে দিন ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে তিনি যে ভাষণটি দিয়েছিলেন সে ভাষণে বলেছিলেন, ‘১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাত্রে পশ্চিম পাকিস্তানী সৈন্যদের হাতে বন্দি হওয়ার পূর্বে আমার সহকর্মীরা আমাকে চলে যেতে অনুরোধ করেন। আমি তখন তাদের বলেছিলাম, বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষকে বিপদের মুখে রেখে আমি যাব না। মরতে হলে আমি এখানেই মরব। বাংলা আমার প্রাণের চেয়েও প্রিয়। তাজউদ্দিন এবং আমার অন্য সহকর্মীরা তখন কাঁদতে শুরু করেন।’ তার নিজের এই কথা থেকে বোঝা যায়, কীভাবে তিনি সামগ্রিক স্বার্থে এবং অগণিত মানুষের জীবনের জন্য নিজে মৃত্যুবরণ করতে প্রস্তুত হয়েছিলেন। এই ছিল তার রাজনৈতিক প্রজ্ঞার বড় দিক। এখানেও তিনি আমার সামনে রাজনীতির শিক্ষক। প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করার দীক্ষা।
১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারি পাকিস্তানের জেলখানা থেকে মুক্তি পান বঙ্গবন্ধু। রেডক্রসের একটি বিশেষ বিমানে করে তাকে লন্ডনে পাঠানো হয়। তিনি ভোরবেলা লন্ডনে পৌঁছান। সেখানে এক সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘আমি আর এক মুহূর্ত এখানে থাকতে রাজি নই, আমি আমার জনগণের কাছে ফিরে যেতে চাই।’ সেই দিনেই সে সময়ের বৃটিশ প্রধানমন্ত্রীর এ্যাডওয়ার্ড হীথের আগ্রহে বৃটেনের রাজকীয় বিমান বাহিনীর একটি বিশেষ বিমানে করে তিনি দিল্লীতে আসেন।
বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানান ভারতের সে সময়ের রাষ্ট্রপতি ভি ভি গিরি এবং প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী। বিমান বন্দরে দেওয়া ভাষণে তিনি এক পর্যায়ে বলেছিলেন, ‘আমাদের বিজয়কে শান্তি, অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির পথে পরিচালিত করার যে বিরাট কাজ এখন আমাদের সামনে, তাতে যোগ দেওয়ার জন্য আমি ফিরে যাচ্ছি আমার মানুষের কাছে।’ এভাবেই তিনি সারাটা সময় দেশের গণমানুষের কথা ভেবেছেন। দেশ পরিচালনার কথা ভেবেছন। নিজের কথা, নিজের বাবা-মা, স্ত্রী, ছেলে-মেয়ের কথা নিজের বুকের ভেতর যে গভীরেই থাকুক না কেন, তিনি মুখে সব সময় উচ্চারণ করেছেন তার দেশের দুঃখী মানুষের কথা। তিনি কখনোই জনগণ থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করেননি। এখানেও তিনি আমার শিক্ষক।
১৯৭২ সালে যখন বিমানটি বাংলাদেশের মাটি স্পর্শ করেছিল তখন কোটি কোটি মানুষ অপেক্ষায় প্রহর গুনছিলেন তার জন্য। মানুষ প্লাবিত করেছিল শহরের রাস্তা। জনসমুদ্রের মধ্য দিয়ে ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছিল গাড়িটি। বিমান বন্দর থেকে রেসকোর্স ময়দানে পৌঁছাতে তার সময়ে লেগেছিল কয়েক ঘন্টা। রেসকোর্স ময়দানে দেওয়া ভাষণে তিনি আবার বলেছিলেন, ‘আজ সোনার বাংলার কোটি কোটি মানুষ গৃহহারা, আশ্রয়হারা। তারা নিঃসম্বল। আমি মানবতার খাতিরে বিশ্ববাসীর প্রতি আামার এই দুঃখী মানুষদের সাহায্য দানের জন্য এগিয়ে আসতে অনুরোধ করছি। নেতা হিসেবে নয়, ভাই হিসেবে আমি আমার দেশবাসীকে বলছি আমাদের সাধারণ মানুষ যদি আশ্রয় না পায়, খাবার না পায়, যুবকরা যদি চাকরি বা কাজ না পায়, তাহলে আমাদের এই স্বাধীনতা ব্যর্থ হয়ে যাবে, পূর্ণ হবে না। আমাদের এখন তাই অনেক কাজ করতে হবে।’
লেখক: সভাপতি বাংলা একাডেমি ও কথাসাহিত্যিক