শনিবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৫ | ১৩ বৈশাখ ১৪৩২
Dhaka Prokash

পর্ব-১

শিক্ষকের মর্যাদায় বঙ্গবন্ধু

ঙ্গবন্ধুকে তিনবার কাছ থেকে দেখার সুযোগ পেয়েছিলাম। প্রথমবার দেখি ১৯৭১ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি। বাংলা একাডেমিতে বঙ্গবন্ধু এসেছিলেন একুশের অনুষ্ঠান উদ্বোধন করতে। সেদিন তাকে সামনাসামনি দেখি। এর আগে দেখার সুযোগ পাইনি। কারণ, আমার বাবার চাকরিসূত্রে আমার শিক্ষাজীবনের পুরো সময় কেটেছে রাজশাহী শহরে। ১৯৬৮ সালে এমএ পাশ করার পরে আমি ১৯৬৯ সালে ঢাকা শহরে আসি। তখন পর্যন্ত ঢাকা আমার কাছে একটি অচেনা শহর। পত্রিকার পাতায় চাকরির বিজ্ঞাপন দেখে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে দরখাস্ত জমা দেই। ইন্টারভিউর চিঠি পাই পাবলিক সার্ভিস কমিশন থেকে কলেজের চাকরির জন্য এবং বাংলা একাডেমি থেকে। দুটো চাকরিই আমার হয়। কলেজের চাকরিতে আমার পোস্টিং হয় সিলেটের এমসি কলেজে। আমি অতদূরে চাকরি করতে যাইনি। ১৯৭০ সালের জুলাই মাসে বাংলা একাডেমির চাকরিতে যোগদান করি। ঢাকা কলেজের ভোট কেন্দ্রে গিয়ে বঙ্গবন্ধুকে ভোট দিয়েছিলাম ১৯৭০ সালের নির্বাচনে।  বঙ্গবন্ধু তখন বাঙালির নির্বাচিত নেতা। ১৯৭০ সালের জাতীয় নির্বাচনে তিনি নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেন। স্বাভাবিক নিয়মেই তিনি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার কথা। কিন্তু বাধা সৃষ্টি করেছে ইয়াহিয়া খানসহ পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী। তাদের বিরোধিতার মুখে বঙ্গবন্ধুর দৃঢ় অবস্থান গভীর মর্যাদার সঙ্গে অনুধাবন করেছি।  

সেসময় বাংলা একাডেমির পরিচালক ছিলেন অধ্যাপক কবীর চৌধুরী। তিনি একুশের বইমেলা উদ্বোধন করার জন্য বঙ্গবন্ধুকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। তিনি এসেছিলেন। সত্তরের নির্বাচনে বিজয়ী বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হবেন এই প্রত্যাশায় উপস্থিত দর্শক উদগ্রীব হয়েছিল। 

সেদিন বাংলা একাডেমির অনুষ্ঠান হচ্ছিল বটমূলে। আমরা দুই-তিন শ লোক দর্শক সারিতে বসে আছি। বিদেশি যারা বাংলা ভাষা শিখেছেন, তাদের হাতে সনদপত্র তুলে দিলেন বঙ্গবন্ধু। অনুষ্ঠানের মাঝামাঝি পর্যায়ে দেখলাম, কেউ একজন বঙ্গবন্ধুর কাছে গিয়ে কানে কানে কিছু একটা বললেন। প্রতিক্রিয়ায় বঙ্গবন্ধু ক্ষুব্ধ হলেন। তাকে ক্রুদ্ধ দেখাল। বঙ্গবন্ধু ভাষণ দিতে উঠলেন না। দর্শক সারিতে বসেছিলেন সে সময়ের বিখ্যাত রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী হুসনা বানু খানম। বঙ্গবন্ধু তাকে মঞ্চে এসে একটি রবীন্দ্রসংগীত গাইতে অনুরোধ করলেন। শিল্পী জানতে চাইলেন কোন গান গাইব। বঙ্গবন্ধু বললেন, ‘ও আমার দেশের মাটি তোমার পরে ঠেকাই মাথা।’ গান শেষে তিনি ভাষণ দিলেন, কিন্তু ভাষণে তিনি ক্ষুব্ধ হওয়া সম্পর্কে কিছুই বললেন না। তিনি তার ভাষণের এক পর্যায়ে বলেন, ‘১৯৫২ সালের রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন শুধুমাত্র ভাষার আন্দোলন ছিল না; বাঙালির অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক তথা সার্বিক স্বাধিকার প্রতিষ্ঠার প্রশ্নের সঙ্গে জড়িত ছিল। ভাষা আন্দোলনের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে আমি ঘোষণা করছি, আমার দল ক্ষমতা গ্রহণের দিন থেকেই সকল সরকারি অফিস-আদালত ও জাতীয় জীবনের অন্যান্য ক্ষেত্রে বাংলা চালু করবে। এ ব্যাপারে আমরা পরিভাষা সৃষ্টির জন্যে অপেক্ষা করব না। কারণ, তাহলে সর্বক্ষেত্রে কোনোদিনই বাংলা চালু করা সম্ভবপর হবে না। এ অবস্থায় হয়ত কিছু কিছু ভুল হবে, কিন্তু তাতে কিছু যায় আসে না। এভাবেই অগ্রসর হতে হবে।’ দুই দিন পর জানা গেল, ইয়াহিয়া খান ও ভুট্টোর সঙ্গে একটি বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ভুট্টো আসবেন না বলে বৈঠকটি স্থগিত হয়ে গেছে-সে বার্তাটি সেদিন তখন তাকে জানানো হয়েছিল। 

একজন সাহিত্যকর্মী হিসেবে এটা আমার জন্য একটি অসাধারণ শিক্ষা। একজন রাজনৈতিক নেতা কীভাবে সংগীতের বাণী এসং সুরের মাধ্যমে নিজের উত্তেজনার জায়গা প্রশমিত করলেন এবং মানুষকে দেশপ্রেমের জায়গায় অনুপ্রাণিত করলেন। সেদিন তিনি উত্তেজিত হলে বাংলা একাডেমি থেকেই একটি বিক্ষোভ মিছিল বেরিয়ে যেত, কিন্তু তিনি সেটা করলেন না। একজন বলিষ্ঠ নেতা যেভাবে সংস্কৃতিকে তার রাজনৈতিক দর্শনের সঙ্গে মিলিয়ে মানুষের দেশপ্রেমকে অনুপ্রাণিত করলেন, তা থেকে এই শিক্ষা লাভ করলাম;  এবং প্রথম দর্শনেই তাকে একজন শিক্ষক হিসেবে গ্রহণ করলাম। তিনি যেভাবে বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করার স্বপ্ন দেখালেন তা ভেবে এখনো আমি তাকে জীবন-শিক্ষক হিসেবে মেনে নিই। আরেকবার বঙ্গবন্ধুকে কাছে থেকে দেখার সুযোগ পেয়েছিলাম ১৯৭২ সালে। সে সময় বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক ছিলেন অধ্যাপক ড. মাজহারুল ইসলাম। তিনি বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে একটি বই লিখেছেন। সেটি দিতে বঙ্গবন্ধুর ৩২ নম্বরের বাড়িতে যাবেন। সঙ্গে নিলেন আমাদের, যারা লেখালেখি করতাম। সেদিন খুব কাছে থেকে দেখার সৌভাগ্য হয়। বঙ্গবন্ধুর পাশে দাঁড়িয়ে ছবি তোলারও সুযোগ পাই। সেটি আমার জীবনের উজ্জ্বল স্মৃতি হয়ে রয়েছে। 

তৃতীয়বার বঙ্গবন্ধুকে কাছে থেকে দেখার সুযোগ পাই আবার বাংলা একাডেমিতে। ১৯৭৪ সালে আয়োজন করা হয়েছিল আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলন। সেটি উদ্বোধনের জন্য বঙ্গবন্ধুকে আমন্ত্রণ জানাতে গিয়েছিলেন একাডেমির মহাপরিচালক ও কয়েকজন সহকর্মী। তাদের কাছে শুনেছিলাম বঙ্গবন্ধু প্রথমে রাজি হননি। তিনি বলেন, ‘আামদের প্রথিতযশা সাহিত্যিকরা থাকতে একটি সাহিত্য সম্মেলন আমি কেন উদ্বোধন করব। আমিতো শুধু রবীন্দ্রনাথ পড়ি।’ মহাপরিচালক তাকে বললেন,  এটি যেহেতু আন্তর্জাতিক সম্মেলন, প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করলে মর্যাদা বাড়বে। আমরা আপনাকে চাই। আমরা জানি আপনি শিল্প-সংস্কৃতির মানুষ। তিনি রাজি হলেন। 

সেই সম্মেলনে ভাষণ শুনলাম বঙ্গবন্ধুর। তিনি লেখকদের উদ্দেশ্য করে বললেন, ‘আপনারা দুঃখী মানুষের আনন্দ-বেদনার সবটুকু আমাদের সাহিত্যে তুলে ধরেন। এটা আমাদের সাহিত্যের উপাদান হবে। এভাবে বাংলাদেশের সাহিত্যভাণ্ডার সমৃদ্ধ হবে। আমরা আমাদের সাহিত্যকে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে নিয়ে যাব।’আজকে যখন সেই সময়গুলো ফিরে দেখি তখন মনে হয়, বঙ্গবন্ধু যদি বেঁচে থাকতেন তাহলে হয়তো আমাদের শিল্প-সাহিত্যের অনেক বড় জায়গা তৈরি হতো। অনুবাদের মাধ্যমে আমাদের সাহিত্য আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ভিন্নমাত্রায় পৌঁছাতে পারত; যেভাবে বঙ্গবন্ধুর ৭মার্চের ভাষণ এবং একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে পৌঁছাতে পেরেছে। ইউনেস্কো কর্তৃক স্বীকৃত হয়েছে দিবস দুইটি। আমাদের বাংলা ভাষার জন্য জীবনদান করা ‘শহীদ দিবস’ ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে ইউনেস্কো। অজস্র আদিবাসী জনগোষ্ঠীর মাতৃভাষা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। সেই ভাষা সংরক্ষণ করার অনুপ্রেরণায় এই দিবস বিশে^র বিভিন্ন দেশে পালিত হবে। ইউনেস্কো বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণকে ঐতিহ্যিক প্রামাণিক দলিল হিসেবে সংরক্ষণ করেছে। ইতিমধ্যে অনেক ভাষায় অনূদিত হয়েছে এই ভাষণ। এই ভাষণের একটি বাক্যে আমি বঙ্গবন্ধুকে শিক্ষকের মর্যাদায় পাই। ‘আর দাবায়ে রাখতে পারবে না।’ এই বাক্যে মানবাধিকার লঙ্ঘিত না করার কঠিন উচ্চারণ। উন্নয়নশীল রাষ্ট্রসমূহ উপনিবেশের যাঁতাকলে পিষ্ট না হওয়ার জন্য বলবে ‘আর দাবায়ে রাখতে পারবে না।’ বিশ্বকে আমরা দুটি দিন উপহার দিতে পেরেছি। আরেকটি বিষয় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯১৩ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়ে বাংলা সাহিত্যকে আর বঙ্গবন্ধু ১৯৭৪ সালে জাতিসংঘে মাতৃভাষায় ভাষণ দিয়ে বাংলা ভাষাকে বিশ্বমর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। তার মাধ্যমে আমাদের গৌরবময় অর্জনগুলো দেখতে পাই। বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে আমাদের ভাষা, সাহিত্য, সংস্কৃতির আরও অনেক কিছু অর্জিত হতো। 

১৯৭৩ সালের একদিন বাংলা একাডেমি থেকে ফিরছিলাম। পাবলিক লাইব্রেরিতে একটা বইয়ের জন্য ঢুকেছিলাম। বই নিয়ে ফেরার সময় হাঁটতে হাঁটতে শাহবাগের মোড় পর্যন্ত এসে রিকশার জন্য দাঁড়াই। এমন সময় দেখি প্রধানমন্ত্রীর গাড়ি আসছে। আমি গাড়ির দিকে তাকিয়ে থাকি। খেয়াল করি বঙ্গবন্ধু আমাকে দেখছেন। আমি সঙ্গে সঙ্গে হাত তুলে সালাম জানাই। তিনিও তার হাত কপালে ঠেকান। মুহূর্তে চলে যায় গাড়ি। আমি বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকি। রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা একজনের সালামের উত্তর দিলেন। এটিও ছিল আমার কাছে শিক্ষার আর একটি দিক। বুঝতে পারি তিনিই সেই মানুষ যিনি সরকার প্রধান হয়েও পথচারীকে উপেক্ষা করেন না। এখন পর্যন্ত আমার কাছে এই স্মৃতি ভাস্বর হয়ে আছে।  
এই দেশের স্বাধীনতার জন্য তিনি তার রাজনৈতিক জীবনের পুরোটা সময় উৎসর্গ করেছিলেন। তিনি তার কৈশোর থেকে তার চারপাশের যে দুঃখী মানুষের চেহারা দেখেছিলেন, তাদের জীবনের মুক্তির লক্ষ্য নিয়েই তিনি তার নিজের স্বপ্ন-আকাঙ্ক্ষা তৈরি করেছিলেন। এ আকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়ন ঘটেছিল ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠায়। 

ভারত উপমহাদেশের তিনি একমাত্র রাজনৈতিক নেতা, যিনি একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে উপমহাদেশের রাজনীতিকে বদলে দিয়েছিলেন। মানচিত্রে স্থান পেয়েছে আর একটি স্বাধীন দেশ। তার সঙ্গে ছিল তার রাজনৈতিক সহযোদ্ধারা এবং দেশের কোটি কোটি সাধারণ মানুষ।  

১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি তিনি ফিরে আসেন পাকিস্তানের কারাগার থেকে। সে দিন ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে তিনি যে ভাষণটি দিয়েছিলেন সে ভাষণে বলেছিলেন, ‘১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাত্রে পশ্চিম পাকিস্তানী সৈন্যদের হাতে বন্দি হওয়ার পূর্বে আমার সহকর্মীরা আমাকে চলে যেতে অনুরোধ করেন। আমি তখন তাদের বলেছিলাম, বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষকে বিপদের মুখে রেখে আমি যাব না। মরতে হলে আমি এখানেই মরব। বাংলা আমার প্রাণের চেয়েও প্রিয়। তাজউদ্দিন এবং আমার অন্য সহকর্মীরা তখন কাঁদতে শুরু করেন।’ তার নিজের এই কথা থেকে বোঝা যায়, কীভাবে তিনি সামগ্রিক স্বার্থে এবং অগণিত মানুষের জীবনের জন্য নিজে মৃত্যুবরণ করতে প্রস্তুত হয়েছিলেন। এই ছিল তার রাজনৈতিক প্রজ্ঞার বড় দিক। এখানেও তিনি আমার সামনে রাজনীতির শিক্ষক। প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করার দীক্ষা। 

১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারি পাকিস্তানের জেলখানা থেকে মুক্তি পান বঙ্গবন্ধু। রেডক্রসের একটি বিশেষ বিমানে করে তাকে লন্ডনে পাঠানো হয়। তিনি ভোরবেলা লন্ডনে পৌঁছান। সেখানে এক সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘আমি আর এক মুহূর্ত এখানে থাকতে রাজি নই, আমি আমার জনগণের কাছে ফিরে যেতে চাই।’ সেই দিনেই সে সময়ের বৃটিশ প্রধানমন্ত্রীর এ্যাডওয়ার্ড হীথের আগ্রহে বৃটেনের রাজকীয় বিমান বাহিনীর একটি বিশেষ বিমানে করে তিনি দিল্লীতে আসেন।

বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানান ভারতের সে সময়ের রাষ্ট্রপতি ভি ভি গিরি এবং প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী। বিমান বন্দরে দেওয়া ভাষণে তিনি এক পর্যায়ে বলেছিলেন, ‘আমাদের বিজয়কে শান্তি, অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির পথে পরিচালিত করার যে বিরাট কাজ এখন আমাদের সামনে, তাতে যোগ দেওয়ার জন্য আমি ফিরে যাচ্ছি আমার মানুষের কাছে।’ এভাবেই তিনি সারাটা সময় দেশের গণমানুষের কথা ভেবেছেন। দেশ পরিচালনার কথা ভেবেছন। নিজের কথা, নিজের বাবা-মা, স্ত্রী, ছেলে-মেয়ের কথা নিজের বুকের ভেতর যে গভীরেই থাকুক না কেন, তিনি মুখে সব সময় উচ্চারণ করেছেন তার দেশের দুঃখী মানুষের কথা। তিনি কখনোই জনগণ থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করেননি। এখানেও তিনি আমার শিক্ষক।  

১৯৭২ সালে যখন বিমানটি বাংলাদেশের মাটি স্পর্শ করেছিল তখন কোটি কোটি মানুষ অপেক্ষায় প্রহর গুনছিলেন তার জন্য। মানুষ প্লাবিত করেছিল শহরের রাস্তা। জনসমুদ্রের মধ্য দিয়ে ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছিল গাড়িটি। বিমান বন্দর থেকে রেসকোর্স ময়দানে পৌঁছাতে তার সময়ে লেগেছিল কয়েক ঘন্টা।  রেসকোর্স ময়দানে দেওয়া ভাষণে তিনি আবার বলেছিলেন, ‘আজ সোনার বাংলার কোটি কোটি মানুষ গৃহহারা, আশ্রয়হারা। তারা নিঃসম্বল। আমি মানবতার খাতিরে বিশ্ববাসীর প্রতি আামার এই দুঃখী মানুষদের সাহায্য দানের জন্য এগিয়ে আসতে অনুরোধ করছি। নেতা হিসেবে নয়, ভাই হিসেবে আমি আমার দেশবাসীকে বলছি আমাদের সাধারণ মানুষ যদি আশ্রয় না পায়, খাবার না পায়, যুবকরা যদি চাকরি বা কাজ না পায়, তাহলে আমাদের এই স্বাধীনতা ব্যর্থ হয়ে যাবে, পূর্ণ হবে না। আমাদের এখন তাই অনেক কাজ করতে হবে।’ 

লেখক: সভাপতি বাংলা একাডেমি ও কথাসাহিত্যিক 

Header Ad
Header Ad

নাটকীয়তা শেষে রাতে ফাইনালে মুখোমুখি রিয়াল-বার্সা

ছবি: সংগৃহীত

রিয়াল মাদ্রিদ ও বার্সেলোনার মুখোমুখি লড়াই মানেই ফুটবল দুনিয়ায় বাড়তি উত্তেজনা। স্প্যানিশ ফুটবলের এই দুই মহারথীর লড়াই কেবল মাঠের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, এতে মিশে আছে স্পেন ও কাতালুনিয়ার জাতিসত্ত্বার লড়াই এবং রক্তাক্ত গৃহযুদ্ধের ইতিহাসও।

এবারের কোপা দেল রে ফাইনালে (শনিবার দিবাগত রাত ২টা, বাংলাদেশ সময়) আবার মুখোমুখি হচ্ছে রিয়াল ও বার্সা। তবে এবারের লড়াইয়ে যোগ হয়েছে ভিন্ন মাত্রা। রেফারিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে রিয়াল মাদ্রিদের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে অস্থিরতা। সেভিয়ায় ফাইনালের আগে নির্ধারিত অনুশীলন করেনি রিয়াল, সংবাদ সম্মেলনেও আসেননি কোচ ও খেলোয়াড়রা। এমনকি দুই ক্লাবের কর্মকর্তাদের আনুষ্ঠানিক নৈশভোজেও থাকছেন না রিয়াল প্রেসিডেন্ট ফ্লোরেন্তিনো পেরেজ। গুঞ্জন উঠেছিল, রিয়াল হয়তো ফাইনাল বয়কটও করতে পারে। তবে শেষ পর্যন্ত ক্লাব কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা খেলবে।

এদিকে, বার্সেলোনার সামনে রয়েছে ট্রেবল জয়ের স্বপ্ন টিকিয়ে রাখার চ্যালেঞ্জ। লা লিগায় শীর্ষে থাকা বার্সা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমিফাইনালেও জায়গা করে নিয়েছে। কোপা দেল রে শিরোপা তাদের ট্রেবল যাত্রার প্রথম ধাপ হতে পারে।

 

ছবি: সংগৃহীত

বার্সার জন্য দুঃসংবাদ, ইনজুরির কারণে দলের নির্ভরযোগ্য স্ট্রাইকার রবার্ট লেভানডফস্কি এই ফাইনালে খেলতে পারবেন না। তার জায়গায় শুরুতে দেখা যেতে পারে ফেরান তোরেসকে। তবে দলের বাকিরা সুস্থ ও প্রস্তুত রয়েছেন। লিগের শেষ ম্যাচে অধিকাংশ মূল খেলোয়াড় বিশ্রামে থাকায় বার্সেলোনা কিছুটা সতেজ ভাবেই নামবে মাঠে।

রিয়াল মাদ্রিদেও রয়েছে ইনজুরি সমস্যা। দলের ফরাসি তারকা কিলিয়ান এমবাপে চোটে পড়েছিলেন আর্সেনালের বিপক্ষে ম্যাচে। শেষ মুহূর্তে তার ফিটনেস দেখে মাঠে নামানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে ডিফেন্ডার ফার্লান্দ মেন্ডি ফাইনালে থাকছেন না, এটা নিশ্চিত।

এখন পর্যন্ত সামগ্রিক এল ক্লাসিকোতে রিয়াল মাদ্রিদ এগিয়ে—১০৫ জয়। বার্সেলোনা জয় পেয়েছে ১০২ ম্যাচে। তবে কোপা দেল রে’র ইতিহাসে এগিয়ে আছে বার্সা। ৩৭ দেখায় বার্সা জিতেছে ১৬ ম্যাচ, রিয়াল ১৩টি। ৮ ম্যাচ ছিল ড্র।

তবে কোপা দেল রে’র ফাইনালে ৭ বার এল ক্লাসিকো অনুষ্ঠিত হয়েছে, যেখানে রিয়াল জিতেছে ৪ বার এবং বার্সা ৩ বার।

চলতি মৌসুমে দুই দলের দুই দেখায় দুটিতেই বার্সেলোনা জয়ী হয়েছে—লা লিগায় ৪-০ এবং সুপারকোপা দে এস্পানার ফাইনালে ৫-২ ব্যবধানে।

 

স্টেডিয়াম: দে লা কার্তুহা, সেভিল
সময়: বাংলাদেশ সময় শনিবার দিবাগত রাত ২টা

 

Header Ad
Header Ad

মাদকাসক্ত ছেলেকে ত্যাজ্য ঘোষণা করলেন বাবা

ছবি: সংগৃহীত

কুমিল্লার মুরাদনগরে নাঈম সরকার (১৯) নামের এক যুবককে মাদকাসক্তির কারণে ত্যাজ্য ঘোষণা করেছেন তার বাবা মফিজুল ইসলাম। ছেলের মাদকাসক্তি ও অনৈতিক কর্মকাণ্ডের কারণে তিনি এ সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছেন।

মফিজুল ইসলাম উপজেলার কোম্পানীগঞ্জের নগরপাড় এলাকার বাসিন্দা। তিনি বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) কুমিল্লা নোটারী পাবলিক কার্যালয়ে এক হলফনামার মাধ্যমে ছেলে নাঈমের সঙ্গে পারিবারিক, সামাজিক ও আর্থিক সব ধরনের সম্পর্ক ছিন্ন করেন।

হলফনামায় মফিজুল উল্লেখ করেন, নাঈম একাদশ শ্রেণির ছাত্র হলেও দীর্ঘদিন ধরে মাদকাসক্ত। সে মদ, গাঁজা, ইয়াবাসহ বিভিন্ন নেশাজাত দ্রব্যে আসক্ত হয়ে পড়েছে। এতে পরিবারে প্রতিনিয়ত অশান্তি সৃষ্টি হচ্ছিল। গভীর রাতে বাড়ি ফেরা, মা-বাবার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা এবং নানা অনৈতিক কার্যকলাপে জড়িয়ে পড়েছিল নাঈম। পরিবারের মান-মর্যাদা রক্ষার স্বার্থে তার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে মফিজুল ইসলাম বলেন, "সন্তানের এমন বিপথগামী আচরণে আমি অত্যন্ত মর্মাহত। বহু চেষ্টা করেও তাকে সঠিক পথে ফেরাতে ব্যর্থ হয়েছি। অবশেষে পরিবার ও সমাজের সম্মান রক্ষার্থে তার সঙ্গে সব ধরনের সম্পর্ক ছিন্ন করতে বাধ্য হয়েছি।"

Header Ad
Header Ad

গরমে লোডশেডিং নিয়ে সুখবর দিলেন জ্বালানি উপদেষ্টা

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। ছবি: সংগৃহীত

দেশজুড়ে ক্রমাগত গরম বাড়ছে। সামনে তাপমাত্রা আরও বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ফলে লোডশেডিং ও ভোগান্তি বেড়ে যাওয়ার শঙ্কায় রয়েছে সাধারণ মানুষ। তবে এ নিয়ে আশার খবর দিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান।

তিনি বলেন, "এবারের গরমে লোডশেডিং সহনীয় পর্যায়ে থাকবে। আমরা সীমিত পর্যায়ে তা নিয়ন্ত্রণে রাখার পরিকল্পনা নিয়েছি। আমাদের প্রজেকশনে ১৮ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্য রয়েছে। আশা করছি, অনেকটাই ম্যানেজ করতে পারবো।"

শনিবার (২৬ এপ্রিল) দুপুরে রাজধানীর বিদ্যুৎ ভবনের বিজয় হলে ফোরাম ফর এনার্জি রিপোর্টারস বাংলাদেশ (এফইআরবি) আয়োজিত 'জ্বালানি সংকট উত্তরণের পথ' শীর্ষক সেমিনারে বক্তব্য রাখার সময় তিনি এসব কথা বলেন।

সেমিনারে উপদেষ্টা আরও জানান, লোডশেডিংয়ের ক্ষেত্রে শহর ও গ্রামের মধ্যে সমন্বয় রক্ষা করা হবে। জ্বালানি আমদানি করে বিদ্যুৎ সরবরাহ সচল রাখতে হবে। এলএনজি আমদানির ক্ষেত্রে পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপে (পিপিপি) যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

সরকারের মেয়াদ স্বল্প হওয়ায় কাজের সীমাবদ্ধতার কথা উল্লেখ করে মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, "জ্বালানির ক্ষেত্রে যেকোনো কাজ সম্পন্ন করতে সময় লাগে। আমরা এমন কিছু হাতে নিচ্ছি না, যা সম্পন্ন করা সম্ভব নয়। অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে বকেয়া পরিশোধে। বিল পরিশোধ না করলে কোনো দেশ ব্যবসা করবে না।"

তিনি আরও জানান, আগামী দুই মাসের মধ্যে সিস্টেম লস ৫০ শতাংশ কমানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। লাইন লিকেজ ও গ্যাস চুরির বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে বিভিন্ন প্রকল্পে অপ্রয়োজনীয় ব্যয়ও কমিয়ে আনা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, "আগামী বছর আর কোনো বকেয়া থাকবে না, শুধুমাত্র কারেন্ট পেমেন্ট দিতে হবে। ভর্তুকি বাড়বে না, বরং কমবে। আমরা যে সংকটের গহ্বরে পড়েছিলাম, সেখান থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছি।"

সাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের বিষয়ে উপদেষ্টা জানান, বিট নিলামে কাউকে পাওয়া যায়নি। তবে মন্ত্রণালয়ের চূড়ান্ত অনুমোদন শেষে পুনরায় রি-টেন্ডার করা হবে বলেও তিনি আশ্বাস দেন।

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

নাটকীয়তা শেষে রাতে ফাইনালে মুখোমুখি রিয়াল-বার্সা
মাদকাসক্ত ছেলেকে ত্যাজ্য ঘোষণা করলেন বাবা
গরমে লোডশেডিং নিয়ে সুখবর দিলেন জ্বালানি উপদেষ্টা
পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের ক্রিকেটীয় সম্পর্ক ছিন্ন করা উচিত: সৌরভ গাঙ্গুলি
র‍্যাফেল ড্রতে ৯ কোটি টাকা জিতলেন দুই প্রবাসী বাংলাদেশি
৬২ জন পুলিশ সদস্য পাচ্ছেন বিপিএম ও পিপিএম পদক
সিন্ধুতে হয় পানি, না হয় ভারতীয়দের রক্ত বইবে: বিলাওয়াল ভুট্টো
অন্য নারীতে মজেছেন সৃজিত! মিথিলা কোথায়?
৪ মাসে কুরআনের হাফেজ হলেন ১০ বছরের অটিস্টিক শিশু আহমাদ
রাষ্ট্র সংস্কারের যে সুযোগ তৈরি হয়েছে, তা যেন বেহাত না হয়: আলী রীয়াজ
১৪ ব্যাংকে ২৩৮ কোটি টাকা স্থানান্তর, যা বললেন বিসিবি সভাপতি
কাশ্মীর সীমান্তে ফের গোলাগুলি, মুখোমুখি ভারত-পাকিস্তান সেনা
বাইরে থেকে ফিরেই ঠান্ডা গোসল? সাবধান! এই অভ্যাস ডেকে আনতে পারে বিপদ
কাশ্মীর ইস্যুতে পাকিস্তান-ভারত পাল্টাপাল্টি উত্তেজনা নিয়ে যা বললেন ট্রাম্প
রাঙামাটিতে সিএনজি-পিকআপ সংঘর্ষে নিহত ৫
রেফারির বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফুঁসছে রিয়াল, ফাইনাল ম্যাচ বয়কটের হুমকি
আইন উপদেষ্টাকে জড়িয়ে ভারতের গণমাধ্যমে মিথ্যা প্রতিবেদন, মন্ত্রণালয়ের বিবৃতি
নিজ দেশেই বিমান হামলা চালালো ভারত, ‘অসাবধানতা’ বলছে বিমান বাহিনী
গাজায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত আরও ৮৪ ফিলিস্তিনি
আইনি নোটিশ প্রসঙ্গে যা বললেন ডা. তাসনিম জারা