অ্যাপলের ইলেকট্রিক গাড়ির প্রকল্প 'টাইটান' বন্ধ
ছবি: সংগৃহীত
প্রযুক্তি জায়ান্ট অ্যাপলের স্বচালিত বৈদ্যুতিক গাড়ির আর দেখা মিলছে না। কোম্পানিটি তাদের ইলেকট্রিক গাড়ি তৈরির প্রকল্প বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রায় ১০ বছর ধরে প্রকল্পটি নিয়ে কাজ করেছিল মার্কিন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানটি।
তবে অ্যাপল কখনোই প্রকল্পটির বিষয়ে প্রকাশ্যে কোনো মন্তব্য করেনি। আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণা কোম্পানি না দিলেও এক দশক ধরে এ প্রকল্প নিয়ে প্রযুক্তি বিশ্লেষকদের মধ্যে গুঞ্জন চলছিল। বিবিসি।
প্রধান নির্বাহী টিম কুকের বিশেষ প্রকল্প ‘টাইটানের’ অধীনে অ্যাপলের প্রায় ২ হাজার কর্মী ইভি নির্মাণের কাজে যুক্ত ছিলেন। এ কর্মীদের আইফোনের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তির বিশেষ বিভাগে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। ব্লুবার্গ।
গবেষণা ও উন্নয়নে কোটি কোটি ডলার ব্যয় করছিল কোম্পানিটি। প্রথমে স্টিয়ারিং হুইল ও প্যাডেল ছাড়া সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয় বিদ্যুৎচালিত গাড়ির বানাতে চেয়েছিল অ্যাপল। তবে গবেষণা ও উন্নয়নে ব্যাপক অর্থ ব্যয় করায় সত্ত্বেও প্রকল্পটি সফলতার মুখ দেখেনি। অ্যাপল বর্তমানে তাদের আইফোন ও ম্যাক ডিভাইস ছাড়াও অন্যান্য প্রযুক্তি তৈরির দিকে মনোনিবেশ করছে। এরই অংশ হিসাবে সম্প্রতি অ্যাপলের নতুন ভিশন প্রো মিক্সড ভার্চুয়াল রিয়ালিটি হেডসেট বাজারে এনেছে।
সাম্প্রতিক সময়ে ঋণের ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় বিদ্যুৎচালিত গাড়ির চাহিদা কমে এসেছে। এতে ইভি বাজারে প্রতিযোগিতা বেড়েছে। প্রধান বিদ্যুৎচালিত গাড়ি নির্মাতারা দাম কমিয়ে এখন গ্রাহক আকৃষ্ট করার চেষ্টা চালাচ্ছে। এদিকে ফোর্ড ও জিএমের মতো গাড়ি নির্মাতারা বিদ্যুৎচালিত গাড়ির উৎপাদন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত স্থগিত করেছে।
উপদেষ্টা প্রতিষ্ঠান ক্রিয়েটিভ স্ট্র্যাটেজিসের প্রধান নির্বাহী বেন বাজারিন বলেছেন, 'এই খবর যদি সত্য হয়ে থাকে, তাহলে ধরে নেওয়া যায় অ্যাপল জেনারেটিভ এআইয়ে আরও বেশি মনোযোগ দেবে। এই উদ্যোগে এআই প্ল্যাটফর্ম পর্যায়ে শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে অ্যাপলের এগিয়ে আসার বিষয়ে আরও ইতিবাচক হবেন বিনিয়োগকারীরা।'
এদিকে এক দশক আগে অ্যাপল যখন 'প্রজেক্ট টাইটান' চালু করে, তখন সিলিকন ভ্যালিতে চালকবিহীন স্বয়ংক্রিয় গাড়ির প্রতি আগ্রহের জোয়ার বয়ে যাচ্ছিল। প্রথমে পুরোপুরি চালকবিহীন গাড়ি তৈরির লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও অ্যাপল পরবর্তীতে সীমিত বৈশিষ্ট্যযুক্ত ইলেকট্রিক গাড়ি নিয়ে কাজ করেছে। মূল পরিকল্পনায় স্টিয়ারিং হুইল ছাড়া সম্পূর্ণ স্বচালিত গাড়ি তৈরির লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও পরবর্তীতে প্রতিষ্ঠানটি এমন এক ধরনের গাড়ি নির্মাণ করতে চেয়েছে, যেখানে চালককে সজাগ থাকতে হবে এবং প্রয়োজনমতো গাড়ির নিয়ন্ত্রণ নিতে হবে।
২০২০ সালে রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল যে অ্যাপল ২০২৪ বা ২০২৫ সালের মধ্যেই একটি গাড়ি প্রকাশের বিষয়টি বিবেচনা করছে। তবে করোনা মহামারী বিশ্বব্যাপী অটোমোবাইল খাতকে বিঘ্নিত করার আগে থেকেই অ্যাপলের এই প্রকল্পের অগ্রগতি আশানুরূপ ছিল না।
এ বছর বৈদ্যুতিক গাড়ির বিক্রি ২০২৩ সালের চেয়ে কম হবে বলে গত মাসেই সতর্ক করেছে টেসলা। ইউরোপ, চীনসহ বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ বাজারে বৈদ্যুতিক গাড়ির দাম কমিয়ে দিয়েছিলেন এ কোম্পানির প্রধান বিলিয়নিয়ার ইলন মাস্ক। কারণ এসব অঞ্চলে চীনের বৈদ্যুতিক গাড়ি প্রস্তুতকারক বিওয়াইডির সঙ্গে টেসলাকে প্রতিযোগিতা করতে হচ্ছিল।