বুধবার, ২ এপ্রিল ২০২৫ | ১৯ চৈত্র ১৪৩১
Dhaka Prokash

সাক্ষাৎকারে আনু মুহাম্মদ (শেষ পর্ব)

নীতিনির্ধারণ করছে বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, এডিবি বা বিভিন্ন থিংকট্যাঙ্ক

 

বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। সম্প্রতি ঢাকাপ্রকাশ’র সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি কথা বলেছেন দেশের শিক্ষানীতি, বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠক্রম এবং করোনাকালের সামগ্রিক শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন শাহেরীন আরাফাত। আজ প্রকাশিত হলো সাক্ষাৎকারটির চতুর্থ পর্ব

ঢাকাপ্রকাশ: আমরা দেখছি যে, প্রাথমিক, মাধ্যমিক বা উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে বাংলাদেশে এক ধরনের শিক্ষাপদ্ধতি আছে। আমরা এটাও জানি, শিক্ষার সঙ্গে অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এ বিষয়টা বাংলাদেশের ক্ষেত্রে আপনি কী রকম দেখছেন? এ বিষয়টা একটু বিশ্লেষণ করে বললে ভালো হয়।

আনু মুহাম্মদ: অর্থনীতি মানে কী? শিক্ষার সঙ্গে তো সবকিছুই সম্পর্কিত। অর্থনৈতিক ব্যবস্থা যদি এ রকম হয়–বিশাল সংখ্যক মানুষের কাজের, আশ্রয়ের কোনো নিশ্চয়তা নাই, তাহলে তাদের সন্তানরা শিক্ষার মধ্যে প্রবেশ করতে পারে না। যতটুকু প্রবেশ করার চেষ্টা করে, সেখানেও ঝরে পড়ার হার খুব বেশি থাকে। শ্রমজীবী মানুষের অনেক পরিবারে আমরা দেখি, তাদের খুব ইচ্ছা থাকে সন্তান লেখাপড়া করবে; কিন্তু একটা পর্যায়ের পর আর পারে না। প্রধান কারণ হচ্ছে–বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় শিক্ষা যে রাষ্ট্রের দায়িত্ব, রাষ্ট্র তা থেকে ক্রমাগত দূরে সরে যাচ্ছে। তার ফলে একটা বিরাট অংশ শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বঞ্চিত হওয়ার ফলাফল কী? ফলাফল হচ্ছে–তাদের মধ্যে যে সক্ষমতা ছিল, তাদের মধ্যে যে সম্ভাবনা ছিল, সেটা আর বাস্তবায়ন হয় না। তার ফলে আমরা যদি উৎপাদনশীল খাতের কথা চিন্তা করি, শিল্পের কথা চিন্তা করি, কিংবা অবকাঠামোর কথা চিন্তা করি–কৃষি, শিল্প, অবকাঠামো, নদী ব্যবস্থাপনা, বন ব্যবস্থাপনা–এসব ক্ষেত্রে বাংলাদেশের তরুণ নাগরিকরা যে ভূমিকা রাখতে পারত, তা তারা পালন করতে পারছে না। সরকারের মুখে শুনি–আমরা তো সমুদ্র থেকে গ্যাস উত্তোলন করতে পারব না, তাই বিদেশি কোম্পানি নিয়ে আসতে হবে। এই বিদেশি কোম্পানি আনার ফলে প্রকল্প অনেক বেশি ব্যয়বহুল হয়ে যায়, অনেক বেশি অনিশ্চিত হয়ে যায় এবং এখন আমরা ক্রাইসিসটা দেখতে পাচ্ছি। এটা কেন হলো–বাংলাদেশের তরুণদের কি জেনেটিক্যালি কোনো সমস্যা আছে যে, তারা লেখাপড়া শিখতে পারবে না। তাদের সেই সুযোগটাই দেওয়া হয় না। প্রাথমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত চিন্তা থাকত যে, এসব বিষয় যে যেদিকে দরকার সেদিকে শিক্ষাগ্রহণ করবে, তাহলে অবস্থা ভিন্ন হতে পারত।

আমরা শুনি যে, বিশ্ববিদ্যালয় র‌্যাঙ্কিয়ে বাংলাদেশ অনেক পেছনে, গবেষণার র‌্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশ অনেক পেছনে। এসব ঘটনার প্রধান কারণ হলো–ওই পরিবেশটাই নাই। অর্থনীতি যেভাবে চলছে, তাদের দিক থেকে ওই চাহিদাই নাই। অর্থনীতি যদি চলে চোরাই টাকার উপরে, অর্থনীতির মধ্যে যারা ক্ষমতাবান তারা যদি বন দখল, নদী দখল, ব্যাংক দখল তারপর বিভিন্ন প্রকল্পে দুর্নীতি, অনিয়ম সেগুলোর উপর ভর করেই চলতে থাকে এবং যদি দেখা যায় যারা ক্ষমতাবান তারা এ দেশের কোনোকিছু নিয়েই চিন্তা করে না, তারা মনে করে যে তারা বিদেশে থাকবে। এবং তাদের সন্তানেরা বিদেশে পড়াশোনা করবে। কী রকম একটা ভয়ংকর অসঙ্গতি যে, যারা দেশ পরিচালনা করছে, তারা দেশকে নিজের দেশ মনে করে না। নিজের বাসভূমি মনে করে না। আর যারা নিজেদের বাসভূমি মনে করে তাদের হাতে কোনো ক্ষমতা নাই। সরকারি প্রাথমিক স্কুল যেগুলো আছে, সেখানে যদি সরকারি কর্মকর্তা, মন্ত্রী, এমপির ছেলে-মেয়েরা পড়ত; তাহলে তো প্রাথমিক স্কুলের এ অবস্থা হতো না। যদি তাদের সন্তানরা মাধ্যমিক স্কুলে পড়ত, এখানকার সরকারি কলেজে পড়ত, বা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ত; তাহলে তো এগুলোর এমন অবস্থা থাকত না। কিন্তু তারাই নীতিনির্ধারণ করছে। যারা নীতিনির্ধারণ করে, তাদের যদি নিজেদের একটা ওনারশিপ বা নিজেদের স্বার্থের সঙ্গে সম্পর্কিত না হয়; তাহলে তো ফল আসবে না। অথচ তাদের স্বার্থটা থাকে, সে কীভাবে আরও দ্রুত টাকা বানাবে কিংবা ক্ষমতার মধ্যে টিকে থাকবে, ব্যাংক থেকে টাকা আনবে এবং তাড়াতাড়ি কীভাবে বিদেশে সবাইকে সেটেল করবে–এই চিন্তাই তাদের থাকে; কিন্তু তারা তো নীতিনির্ধারণ করছে সব। তার ফলে অর্থনীতির যে প্রবণতা বা উন্নয়নের যে ধরন, সেই ধরনটার কারণে শিক্ষার যে প্রয়োজনীয় বিকাশের সম্ভাবনা, সেটা আর হয় না। কারণ নীতিনির্ধারক এবং সর্বজন–এ দুইয়ের মধ্যে একটা বড় ধরনের পার্থক্য তৈরি হয়। স্বাস্থ্যখাতেও তা-ই দেখা যায়। আজ বাংলাদেশের সরকারি হাসপাতালে যদি মন্ত্রী, এমপি, তাদের সন্তানরা চিকিৎসা করত, তাহলে তো পাবলিক হাসপাতালের এ দশা হয় না। তার মানে হচ্ছে–রাষ্ট্রের দায়িত্বে যে প্রতিষ্ঠানগুলো আছে, সে প্রতিষ্ঠানগুলোর বৈরি হচ্ছে রাষ্ট্রের কর্ণধাররা।

অর্থনৈতিক নীতি নির্ধারণ করছে যেসব জায়গা, সেগুলোর সঙ্গে এসব প্রতিষ্ঠানের কোনো সম্পর্ক নাই। যেমন–আমি অর্থনীতিতে, অর্থশাস্ত্রে আছি। বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অর্থনীতি বিভাগগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক নীতিনির্ধারণের কোনো সম্পর্ক নাই। অর্থনীতির বিভিন্ন ধরনের নীতিনির্ধারক আছে, সেগুলোর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ থাকার কথা। তাদের ইনভলভ করার কথা, সেগুলোর কোনো সম্পর্ক নাই। সেখানে নীতিনির্ধারণ কে করছে–নীতিনির্ধারণ করছে বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, এডিবি বা বিভিন্ন থিংকট্যাঙ্ক। সরকারের সঙ্গে সম্পর্কিত যেসব থিংকট্যাঙ্ক, কিংবা বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে সম্পর্কিত থিংকট্যাঙ্ক–তারা নীতিনির্ধারণ করছে। তাহলে শিক্ষার সঙ্গে অর্থনীতির সম্পর্ক কীভাবে হয়!

করোনার সময় ভ্যাকসিন–এগুলো তো কোনো ব্যাপারই ছিল না। বাংলাদেশে এতগুলো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়–সেখানে ভ্যাকসিন নিয়ে গবেষণা হবে, করোনা নিয়ে গবেষণা হবে–এসব নিয়ে গবেষণা করাই তো কাজ। সেগুলো নিয়ে কোনো কাজ হয়নি। বন একের পর এক উজাড় করা হচ্ছে। বন কতটা দরকার–এগুলো তো বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিভিন্ন পাঠ্যসূচির মধ্যে থাকা দরকার।

আমি বলতে চাচ্ছি যে, বাংলাদেশের যে উন্নয়ন যাত্রা বা রাজনৈতিক ক্ষমতা–এ দুয়ের সম্মিলনে এমন একটা বিষবৃক্ষ তৈরি হয়েছে যে, সেখানে জ্ঞানের কোনো জায়গা নেই। জ্ঞানের কোনো প্রয়োজনই মনে করে না। তারা নিজেরা সিদ্ধান্ত নেয়, নিজেদের স্বার্থে কী দরকার। জনস্বার্থে কী দরকার, তার থেকে যোজন যোজন দূরে তো বটেই, তার বিপরীতে অবস্থান নিয়েই অর্থনীতি এবং উন্নয়ন নির্ধারিত হয়। তার কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, শিক্ষাব্যবস্থার প্রতি তাদের চরম উদাসীন না শুধু, বিরোধী একটা অবস্থান আমরা দেখতে পাচ্ছি।

ঢাকাপ্রকাশ: আমরা বিভিন্ন দেশের ক্ষেত্রে দেখেছি যে, সবাইকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে হবে এমন না, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার দরকারও নেই। একটা স্তর পার করার পর সে হয়তো নির্দিষ্ট একটা কাজে চলে যাচ্ছে, ওই কাজটা রাষ্ট্র বা সরকার তাকে দিচ্ছে। আমাদের দেশে ধারণাটা এ রকম হয়ে উঠেছে কি না যে, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তেই হবে; বিশ্ববিদ্যালয়ে না পড়লে চাকরি পাওয়া, বা এ রকম সুযোগ-সুবিধা সে পাবে না। আমরা দেখছি যে, পিয়নের চাকরির জন্য মাস্টার্স পাস ছেলে-মেয়েরা এপ্লাই করছে। শিক্ষার সঙ্গে কাজের যে সম্পর্ক, সে জায়গাগুলো আমাদের এখানে কীভাবে দেখা হচ্ছে?

আনু মুহাম্মদ: কর্মসংস্থানের বিষয়ে রাষ্ট্র এবং সরকারের অবস্থান হলো–কর্মসংস্থানের কোনো দায়িত্ব আমরা নিতে পারব না। এটা হলো সরকারের পজিশন–তোমরা নিজেরা কাজ খুঁজে নাও বা নিজেরা উদ্যোক্তা হও, ব্যবসায়ী হও। সুতরাং এটার সঙ্গে তো পড়াশোনার কোনো সম্পর্ক নাই। বরং দেখা যাচ্ছে–যাদের লেখাপড়ার ব্যাপারে কোনো আগ্রহ নাই, তারাই দেখা যাচ্ছে যে, সরকারের বেশি কাছের। আসলেই যদি অর্থনীতির বিকাশের কথা আমরা চিন্তা করি বা জনস্বার্থের কথা চিন্তা করি তাহলে একটা পরিকল্পনার দরকার হয়। যেমন–এই খাতে কত ধরনের লোক দরকার, সেগুলো কীভাবে তৈরি হবে, সেটার জন্য একটা টাকা খরচ করতে হবে, সেটার জন্য দরকার মতো প্রশিক্ষণ দিতে হবে, দরকার মতো বিদেশ থেকে লোক আনতে হবে, বিভিন্ন দেশে লোক পাঠাতে হবে। এটা নিয়ে সামগ্রিক পরিকল্পনা থাকা দরকার। সে রকম কোনো সামগ্রিক পরিকল্পনা নাই, যে আমরা কোন খাতে, কী দরকার, সে অনুযায়ী কী ধরনের প্রশিক্ষণ দরকার।

আমাদের দেশে কম্পিউটার, মোবাইল, গাড়ি যারা ঠিকঠাক করে; এরা সবাই দেখা যাবে যে, অনেক উদ্ভাবনী শক্তিসম্পন্ন–এদের কোনো ট্রেনিং নাই, নিজেরা নিজেরাই শিখে নিচ্ছে, বা আরেকজন ওস্তাদের কাছ থেকে শিখে নিচ্ছে। একটা যে প্রশিক্ষণের প্রক্রিয়া থাকবে, তা নেই। তার মানে বোঝা যায়–এরা যদি সুযোগ পেত, তাহলে অনেক ভালো টেকনিক্যাল কাজ করতে পারত। কিংবা তারা ইনোভেশন বা উদ্ভাবনের মধ্যে যেতে পারত। সেই সুযোগটা আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা এবং অর্থনীতির ব্যবস্থার মধ্যে নেই। যেমন–বাংলাদেশের সব গ্রামে প্রাথমিক স্কুল প্রতিষ্ঠা এবং কলেজ পর্যন্ত যদি রাষ্ট্রের দায়িত্বটা প্রধান থাকে, তাহলে সেখানে শিক্ষকের জন্যই তো অনেক কর্মসংস্থানের দরকার। এখন কোচিং সেন্টার যারা চালাচ্ছে, কিংবা টিউটোরিয়াল হোম চালাচ্ছে; তাদের তো কোচিং সেন্টার, টিউটোরিয়াল হোম চালানোর দরকার নাই। তারা আরও সম্মানজনকভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যেই শিক্ষকতা করতে পারত। প্রাইভেট, টিউশনি করে তার জীবিকা অর্জন করতে হতো না। এরাই তো এখন উদ্বৃত্ত জনসংখ্যা। এখন মাস্টার্স ডিগ্রি পাস করেও ঘুরে বেড়াচ্ছে, কিংবা প্রাইভেট-টিউশনি করছে; নানারকম ধান্দা করতে হচ্ছে। কোথায় মামা, খালু আছে। কোথায় দশ লাখ টাকা দিতে হবে–এ সবের মধ্যে ডুবে যাচ্ছে। মেধার চেয়ে তো এখন নিয়োগ বাণিজ্যটা প্রধান তৎপরতা। অর্থাৎ নিয়োগও এখন একটা অর্থনৈতিক তৎপরতা। কে কত টাকা দিতে পারে! মানে পুরো ব্যবস্থাটাই এমন এখানে সবকিছুই একটা কেনা-বেচার সম্পর্ক। যে কোনো জায়গায় টাকা-পয়সা দিলে আমি কাজ পাব–এই যে মানুষের একটা ধারণা, এর মাঝখানেই আবার বেশকিছু মধ্যস্তত্বভোগী তৈরি হয়েছে। তারপর টেকনিক্যাল দিকে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ক্ষেত্রে, আমাদের আর্কিটেক্ট, আমাদের সোশ্যাল সাইয়েন্টিস্ট, সাইয়েন্টিস্ট, কম্পিউটার সাইয়েন্টিস্ট, আমাদের আইটি স্পেশ্যালিস্ট কী মাত্রায় দরকার, কী সংখ্যায় দরকার–সামনের ১০ বছরে, ৫০ বছরে, ১০০ বছরে সে অনুযায়ীই তো আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো দাঁড় করাতে হবে। সেগুলোর কোনো পরিকল্পনা না থাকার ফলে প্রত্যেকটা একক ব্যক্তি, তার নিজের দায় থেকে কাজের খোঁজ করে। তার যদি কানেকশন থাকে, টাকা থাকে, সে যদি কোনো ধান্দা করে কোনো একটা ব্যবস্থা করতে পারে–এরকম করে সবাইকে একটা অসহায় অবস্থার মধ্যে ফেলা হয়েছে। সেটার পরিকল্পনার মধ্যে গেলে তো রাষ্ট্রের একটা দায়িত্ব নিতে হবে, রাষ্ট্র সে দায়িত্ব নিতে তো রাজি নয়।

এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রধান মনোযোগ হলো সরকারি কর্মকর্তা হওয়া, বিসিএস ক্যাডার হওয়া। তারা দেখতে পাচ্ছে বিসিএস হচ্ছে একমাত্র জায়গা–যেখানে স্থায়ী একটা কর্মসংস্থান, পাশাপাশি একটা ক্ষমতার ব্যাপার। আর এটা হচ্ছে একটা নিশ্চিত জায়গা। অন্য কোথাও নিশ্চয়তা নাই। সেজন্য তাদের মধ্যে একটা উন্মাদনা–সেই উন্মাদনার কারণে তাদের পক্ষে যে বিষয়ে মেধা আছে তাদের, যে যে বিষয়ে তারা ভূমিকা পালন করতে পারে; সেটাও করতে পারছে না। তাদের থার্ড ইয়ার থেকেই বিসিএসের বইপত্র মুখস্ত করতে হয়। বিসিএসে এমন ধরনের প্রশ্ন হয়–মুখস্ত করে সেখানে মেধা যাচাই করা হয়। তার ফলে শিক্ষার যে বিষ সেটা কর্মসংস্থানকেও প্রভাবিত করে। আর অর্থনীতিতে উৎপাদনশীলের চেয়ে একটা লুণ্ঠনমূলক যে পরিস্থিতি এবং দেশের সামগ্রিক যে অর্থনৈতিক নীতিমালা, সেটা প্রণয়নে, বাস্তবায়নে দেশের যে বিদ্যায়তন, সেটার কোনো ভূমিকা না থাকার ফলে এ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।

এসএ/

সাক্ষাৎকারে আনু মুহাম্মদ (পর্ব ১)

সাক্ষাৎকারে আনু মুহাম্মদ (পর্ব ২)

সাক্ষাৎকারে আনু মুহাম্মদ (পর্ব ৩)

 

 

 

Header Ad
Header Ad

ময়মনসিংহে সিনেমা হলে যান্ত্রিক ত্রুটির জেরে দর্শকদের ভাঙচুর

ছবি: সংগৃহীত

ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে একটি সিনেমা হলে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে প্রচার বন্ধ হয়ে গেলে ক্ষুব্ধ দর্শকেরা ব্যাপক ভাঙচুর চালান। গতকাল মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে ঈশ্বরগঞ্জ পৌর বাজারের মাছ মহালে অবস্থিত সোনালি টকিজ সিনেমা হলে এই ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে জানা যায়, ঈদ উপলক্ষে চলমান ‘বরবাদ’ সিনেমার সন্ধ্যার শো দেখতে বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রচুর দর্শক সমাগম ঘটে। ডিসি, বেলকনি এবং প্রথম শ্রেণির টিকিট বিক্রি হয়ে যায়। কিন্তু সিনেমার মাঝপথে সাউন্ড সিস্টেমে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেয়, ফলে সিনেমা প্রদর্শন বন্ধ হয়ে যায়। কর্তৃপক্ষ অনেক চেষ্টা করেও সমস্যার সমাধান করতে পারেনি। দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার পর কোনো আশার আলো দেখতে না পেয়ে ক্ষুব্ধ দর্শকেরা হলে ভাঙচুর শুরু করেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা আরও জানান, রাত সাড়ে ৮টা থেকে প্রায় আধা ঘণ্টা ধরে চলা এই তাণ্ডবে সিনেমা হলের বসার বেঞ্চ, চেয়ার ও টিকিট কাউন্টার ভাঙচুর করা হয়। পাশাপাশি হলের দেয়ালে লাগানো পোস্টার ছিঁড়ে ফেলে নিচতলায় আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। স্থানীয় একদল যুবক বিক্ষুব্ধ দর্শকদের ধাওয়া করলে তারা এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যান।

কিছু দর্শক অভিযোগ করেন, যান্ত্রিক ত্রুটির সময় হল কর্তৃপক্ষ কোনো আশ্বস্ত না করে কলাপসিবল গেটে তালা মেরে চলে যান। এতে দর্শকেরা আরও বেশি ক্ষুব্ধ হয়ে পড়েন এবং হলের বিভিন্ন অংশ ভাঙচুর করেন।

ঘটনার সময় হলে উপস্থিত থাকা একজন কর্মী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, উত্তেজিত দর্শকেরা তাকে মারধর করতে উদ্যত হন। তবে তিনি দ্রুত নিয়ন্ত্রণ কক্ষের লাইট বন্ধ করে দরজায় তালা লাগিয়ে ভেতরে বসে থাকায় অল্পের জন্য রক্ষা পান।

ঈশ্বরগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) প্রজিত কুমার দাস জানান, সিনেমা চলার সময় সাউন্ড সিস্টেমে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেয়। সেটি ঠিক করতে না পেরে কর্তৃপক্ষ বাইরে থেকে সাউন্ড সিস্টেম ভাড়া আনতে যান। কিন্তু দর্শকেরা কলাপসিবল গেটে তালা লাগানো দেখে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন এবং পরবর্তীতে ভাঙচুর চালান।

এদিকে, ঘটনার পর সিনেমা হলের দায়িত্বে থাকা হারুনুর রশিদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে জানা যায়, তিনি অসুস্থ হয়ে বিশ্রামে আছেন। হলের অন্যান্য কর্মীরাও ভয়ে কথা বলতে অনীহা প্রকাশ করেন। পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই ঘটনায় তদন্ত চলছে এবং দোষীদের চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Header Ad
Header Ad

সেভেন সিস্টার্স নিয়ে ড. ইউনূসের মন্তব্যে ভারতীয় রাজনীতিবিদদের তীব্র প্রতিক্রিয়া

সেভেন সিস্টার্স নিয়ে ড. ইউনূসের মন্তব্যে ভারতীয় রাজনীতিবিদদের তীব্র প্রতিক্রিয়া। ছবি: সংগৃহীত

সম্প্রতি চীন সফরে গিয়ে এক বক্তৃতায় ড. মুহাম্মদ ইউনূস ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সাতটি রাজ্যকে (সেভেন সিস্টার্স) স্থলবেষ্টিত বলে উল্লেখ করেন এবং বাংলাদেশকে এ অঞ্চলের জন্য সমুদ্রের অভিভাবক হিসেবে বর্ণনা করেন।

ড. ইউনূস তার বক্তব্যে বলেন, ভারতের পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত সেভেন সিস্টার্স নামে পরিচিত সাতটি রাজ্য সম্পূর্ণরূপে স্থলবেষ্টিত। সমুদ্রের সঙ্গে তাদের কোনো সরাসরি সংযোগ নেই। ফলে বাংলাদেশ এই অঞ্চলের জন্য সমুদ্রের একমাত্র প্রবেশদ্বার এবং অভিভাবক হিসেবে ভূমিকা রাখতে পারে।

তার এই মন্তব্য ভারতের রাজনৈতিক নেতা ও কূটনীতিকদের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি এক প্রতিবেদনে জানায়, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যকে অনেক ভারতীয় রাজনীতিবিদ হতাশাজনক এবং নিরাপত্তার জন্য চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন।

ভারতের আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা মন্তব্য করেছেন, ড. ইউনূসের বক্তব্য ভারতের ‘চিকেনস নেক’ করিডোরের দুর্বলতা নিয়ে পাকিস্তান ও চীনের দীর্ঘদিনের প্রচারণাকে উসকে দিতে পারে। তিনি আরও বলেন, উত্তর-পূর্ব ভারতের সঙ্গে মূল ভূখণ্ডের সংযোগ আরও জোরদার করতে শক্তিশালী রেল ও সড়ক অবকাঠামো নির্মাণ অত্যন্ত জরুরি।

ত্রিপুরার আদিবাসী দল টিপ্রা মোথার নেতা প্রদ্যোত মানিক্য বলেন, ‘১৯৪৭ সালে চট্টগ্রাম ভারতের অংশ হলে আজ এ সমস্যা হতো না। আমাদের বাংলাদেশের পরিবর্তে নিজস্ব সমুদ্রবন্দর প্রয়োজন।’

বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের সাবেক হাইকমিশনার বীণা সিক্রি বলেন, ‘উত্তর-পূর্ব ভারতের সমুদ্র প্রবেশাধিকার নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে ইতোমধ্যেই চুক্তি রয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের মন্তব্য অত্যন্ত হতাশাজনক এবং তিনি এ ধরনের মন্তব্য করার অধিকার রাখেন না।’

ড. ইউনূসের বক্তব্য নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন একাধিক কংগ্রেস নেতা। কংগ্রেসের শীর্ষ নেতা পবন খেরা মন্তব্য করেছেন, ‘বাংলাদেশের এ ধরনের অবস্থান উত্তর-পূর্ব ভারতের নিরাপত্তার জন্য হুমকি সৃষ্টি করতে পারে।’

Header Ad
Header Ad

মিয়ানমারের ভূমিকম্পে এক ইমামের ১৭০ স্বজনের মৃত্যু

সাবেক ইমাম সোয়ে নেই ওও। ছবি: সংগৃহীত

পবিত্র ঈদুল ফিতর আসন্ন। বিদায় নিচ্ছে রহমত, বরকত ও মাগফিরাতের মাস রমজান। শেষ জুমার নামাজ আদায় করতে মুসলমানদের মধ্যে আগ্রহ ছিল চরমে। কিন্তু কে জানত, এই জুমাই শত শত মুসল্লির জীবনের শেষ জুমা হয়ে উঠবে!

গত ২৮ মার্চ, শুক্রবার স্থানীয় সময় দুপুর ১২টা ৫১ মিনিটে মিয়ানমারের মধ্যাঞ্চলে ভয়াবহ ভূমিকম্প আঘাত হানে। সাগাইং অঞ্চলের পাঁচটি মসজিদে তখন নামাজ আদায় করছিলেন অসংখ্য মুসল্লি। শক্তিশালী ভূমিকম্পে তিনটি মসজিদ ধসে পড়ে, যার মধ্যে অন্যতম ছিল মায়োমা মসজিদ। এই মসজিদে নামাজরত প্রায় সবাই প্রাণ হারান।

মায়োমা মসজিদের সাবেক ইমাম সোয়ে নাই ওও তখন মিয়ানমার-থাইল্যান্ড সীমান্তবর্তী শহর মায়ে সোতে অবস্থান করছিলেন। সেখানেও তিনি ভূমিকম্প অনুভব করেন, তবে বুঝতে পারেননি কী পরিমাণ বিপর্যয় তার অপেক্ষায় রয়েছে।

সোয়ে নাই ওও একসময় মিয়ানমারের ইমাম ছিলেন, তবে ২০২১ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের পর দেশ ছেড়ে থাইল্যান্ডে পালিয়ে যান এবং বর্তমানে একটি মানবাধিকার সংস্থায় কাজ করছেন। ভূমিকম্পের পরের দিনগুলোতে একের পর এক শোকসংবাদ পেতে থাকেন তিনি। এখন পর্যন্ত তিনি জানতে পেরেছেন, তার প্রায় ১৭০ জন আত্মীয়, বন্ধু ও প্রাক্তন মুসল্লি মারা গেছেন। তাদের বেশিরভাগই মসজিদে অবস্থান করছিলেন, অনেকেই মুসলিম সম্প্রদায়ের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিত্ব ছিলেন।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে সোয়ে নাই ওও বিবিসিকে বলেন, ‘আমি প্রাণ হারানো সব মানুষের কথা ভাবছি। তাদের শিশুদের কথা ভাবছি... এই শোক সহ্য করা অসম্ভব।’

সাগাইং অঞ্চল মূলত বৌদ্ধ মন্দিরের জন্য পরিচিত হলেও এখানে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মুসলমান দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করে আসছেন। নানা নিপীড়ন ও নির্যাতন সত্ত্বেও তারা এ অঞ্চলে নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছেন।

মিয়ানমারের জান্তা সরকারের দেওয়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ভূমিকম্পের সময় মসজিদে নামাজরত অবস্থায় প্রায় ৫০০ মুসলমান মারা গেছেন। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মসজিদ সংলগ্ন মায়োমা স্ট্রিট ও শহরতলি। ভূমিকম্পে বহু ভবন ধসে পড়েছে, রাস্তাঘাট বিধ্বস্ত হয়েছে।

এই ভূমিকম্পে মিয়ানমারের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর সাগাইং ও মান্দালয়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। উদ্ধারকর্মীরা এখনো ধ্বংসস্তূপ থেকে মৃতদেহ উদ্ধার করছেন। নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

দেশটির জান্তা সরকার জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত ২ হাজার ৭১৯ জনের মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়েছে। নিখোঁজ রয়েছেন ৪৪১ জন এবং আহত হয়েছেন ৪ হাজার ৫২১ জন। জান্তা প্রধান মিন অং হ্লাইং এক টেলিভিশন ভাষণে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, নিহতের সংখ্যা ৩ হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে।

মিয়ানমারের ভূমিকম্পটি ছিল ৭ দশমিক ৭ মাত্রার। এর কেন্দ্রস্থল ছিল মান্দালয় শহর থেকে ১৭.২ কিলোমিটার দূরে এবং ভূ-পৃষ্ঠ থেকে মাত্র ১০ কিলোমিটার গভীরে। প্রথম কম্পনের ১২ মিনিট পর ৬ দশমিক ৪ মাত্রার আফটারশক হয়, যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তোলে।

এই বিধ্বংসী ভূমিকম্পে দেশজুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। উদ্ধারকর্মীরা নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন, তবে ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনও অনেকের আটকে থাকার আশঙ্কা রয়েছে।

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

ময়মনসিংহে সিনেমা হলে যান্ত্রিক ত্রুটির জেরে দর্শকদের ভাঙচুর
সেভেন সিস্টার্স নিয়ে ড. ইউনূসের মন্তব্যে ভারতীয় রাজনীতিবিদদের তীব্র প্রতিক্রিয়া
মিয়ানমারের ভূমিকম্পে এক ইমামের ১৭০ স্বজনের মৃত্যু
ঈদের আনন্দে যমুনার দুর্গম চরে গ্রাম-বাংলার ঘুড়ি উৎসব, আনন্দে মেতে উঠে বিনোদনপ্রেমীরা!
ইমামকে ঘোড়ার গাড়িতে রাজকীয় বিদায়, দেওয়া হলো ৯ লাখ টাকার সংবর্ধনা
লন্ডনে একসঙ্গে দেখা গেলো সাবেক চার আওয়ামী মন্ত্রীকে
ঢাকায় ফিরছে ঈদযাত্রীরা, অনেকে ছুটছেন শহরের বাইরে
চট্টগ্রামের লোহাগাড়ায় আবারও সড়ক দুর্ঘটনা, নিহত ৭
বিটিভিতে আজ প্রচারিত হবে ঈদের বিশেষ ‘ইত্যাদি’
ঈদের ছুটিতে ফাঁকা ঢাকা, নেই যানজটের চিরচেনা দৃশ্য
মাদারীপুরে তিন মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে নিহত ৪, আহত ২
থানায় জিডি করলেন ভোক্তা অধিকারের জব্বার মন্ডল
রাশিয়া আমাদের চিরকালের বন্ধু, কখনো শত্রু নয়: চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী
গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান খালেদা জিয়ার
দ্বিতীয় দফায় মিয়ানমারে ত্রাণ সহায়তা পাঠালো বাংলাদেশ
ভারতে প্রশিক্ষণ প্লেন বিধ্বস্ত, পাইলট আহত
এপ্রিলে ঢাকায় আসছে আইএমএফ প্রতিনিধি দল
জাপানে মেগা ভূমিকম্পের শঙ্কা, প্রাণহানি হতে পারে ৩ লাখ
জুলাই কন্যাদের সম্মানজনক পুরস্কার নিয়ে যা জানাল যুক্তরাষ্ট্র
দুপুরের মধ্যে ৬০ কিমি বেগে ঝড়ের সম্ভাবনা