বাংলাদেশে যেমন প্রভাব ফেলতে পারে ইউক্রেন যুদ্ধ
চলমান ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব নিয়ে হিসাব-নিকাশ করছে পুরো বিশ্ব। করোনা অতিমারির এই সময়ে এই যুদ্ধ মানুষের জীবন আরও কতটা কঠিন করবে সেই হিসাব শুরু হয়েছে। বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব বাংলাদেশে কেমন হবে তা নিয়ে চলছে বিশ্লেষণ।
বিশ্লেষকরা বলছেন, দুই ধরনের প্রভাব বাংলাদেশে ব্যাপক আকারে পড়বে। একটি হলো নতুন মেরুকরণে বাংলাদেশ কীভাবে ব্যালান্স করবে সেটা একটা ব্যাপার। আরেকটি হলো জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধিজনিত প্রভাব।
তারা বলছেন, ইতিমধ্যে রাশিয়ার ধনকুবেরদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ (ইইউ) অন্য মিত্ররা। এর বাইরে ইইউ এবং যুক্তরাষ্ট্র তাদের দেশে থাকা রাশিয়ার সম্পদ জব্দ করেছে। নিষেধাজ্ঞা আরও কঠিন হবে বলে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে দেশগুলোর পক্ষ থেকে।
বাংলাদেশকে এই নতুন মেরুকরণে খুবই সতর্ক পদক্ষেপ নিতে হবে বলে মনে করছেন কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, রাশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের অনেকগুলো মেগা প্রকল্প আছে। স্বাভাবিকভাবে নিষেধাজ্ঞার এই সময়ে রাশিয়া চাইবে বাংলাদেশ তার সঙ্গেই থাক। আবার নিষেধাজ্ঞা দেওয়া দেশগুলো নাখোশ হতে পারে যে নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও বাংলাদেশ কেন রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক রাখবে।
জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বাংলাদেশকে এখন পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে এমন অভিমত জানিয়ে ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, এই যুদ্ধের কতটা ব্যাপ্তি হবে সেটা একটা বিষয়। এই যুদ্ধ কয়েকটি এলাকায় সীমাবদ্ধ থাকতে পারে। বেশি নাও ছড়াতে পারে। এজন্যই পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে কৌশল নিতে হবে বাংলাদেশকে।
ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলছেন, নিষেধাজ্ঞা থাকলে তেল-গ্যাসের দাম বেড়ে যাবে। কিন্তু রাশিয়াকে তেমন কাবু করা যাবে না। কারণ হামলা করলে এমন সঙ্কটে দেশটি পড়বে এটি সে জানত। বরং ইইউ এই ধাক্কা সামলাতে পারবে না।
ইউক্রেনে হামলার পরপরই সাত বছরের মধ্যে তেলে দাম ব্যারেলপ্রতি ১০০ ডলার ছাড়িয়ে যায়। আজ শুক্রবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) তেলের দাম আরও বেড়েছে। তেলের দাম এখন ব্যারেলপ্রতি ১০৫ ডলারেরও বেশি হয়েছে। রাশিয়া ঘোষণা দিয়েছে তেলের দাম তারা আরও বাড়াবে। রাশিয়া বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম তেল রপ্তানিকারক দেশ। সৌদি আরবের পরই তাদের অবস্থান।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার কারণে তেলের চাহিদা পূরণ করা কঠিন হয়ে যাবে। মধ্যপ্রাচ্যের ওপর চাপ বাড়বে। এতে তেলের দাম বেড়ে যাবে আরও। তেলের দাম বাড়লে জীবন-যাপনের সব ক্ষেত্রেই দাম বাড়ে। কৃষি, পরিবহণ থেকে জীবনযাপনের এমন কোনো ক্ষেত্রে নাই যে তেলের দাম বাড়া-কমানো সেটাকে স্পর্শ করে না।
যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী হলে বাংলাদেশেও এই দাম বৃদ্ধির প্রভাব হবে সুদূরপ্রসারী। তেলের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাজারে বাড়ছে গ্যাস ও স্বার্ণের দাম।
জানতে চাইলে কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক শামসুল আলম ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, তেলের দাম লিটারে ১৫ টাকা বাড়াতে হয়েছে সেই জের এখনো চলছে। বিশ্ববাজারে তেলের দাম বাড়লে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবে।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার প্রথমদিন বৃহস্পতিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) সাংবাদিকদের বলেন, ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কেমন প্রভাব পড়বে বা আদৌ পড়বে কিনা সেটা এখনই বোঝা যাবে না। অপেক্ষা করতে হবে। তবে এটা সত্যি যে জ্বালানিসহ অন্যান্য পণ্যের দাম বাড়বে। এর প্রভাব বাংলাদেশের পাশাপাশি অন্যান্য দেশেও পড়বে।
আরইউ/