এবার তৃণমূলে নজর আওয়ামী লীগের
আগামী সংসদ নির্বাচন ও দলের কাউন্সিলকে সামনে রেখে তৃণমূলের দিকে নজর আওয়ামী লীগের। সংসদ নির্বাচনে দলের যোগ্য প্রার্থী বাছাই তৃণমূলে যোগ্যদের নেতৃত্বে আনাই এবার কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের মূল লক্ষ্যে। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা মেনে কেন্দ্রীয় নেতারা প্রতিটি সাংগঠনিক জেলায় সফর করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন। যেসকল সাংগঠনিক জেলায় এখনও কমিটি হয়নি সেগুলোতে নতুন করে কমিটি গঠন এবং উপজেলা, থানা, ওয়ার্ড পর্যায়ে কিভাবে যোগ্যদের নেতৃত্বে আনা যায় তা মাথায় রেখে কাজ করছেন নেতারা।
আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনা দু:সময়ে যারা দলকে আকড়ে ধরে রেখেছে তাদের মূল্যায়ন করতে হবে। দলে কোন ভাবেই বিতর্কিতদের জায়গা দেওয়া যাবে না। এছাড়া আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে যারা সম্ভাব্য প্রার্থী তাদের একটা খসড়া তালিকা করে রাখার চিন্তা দলের। এবার অনেক সংসদ সদস্যই বাদের তালিকায় যেতে পারেন। বিশেষ করে বয়সজনিত কারণে যারা অসুস্থ বা যেসকল সংসদ সদস্য নিজ কর্মে এলাকায় বিতর্কিত তাদেরকে ছেঁটে ফেলার সিদ্ধান্ত দলের। আর বিতর্কিত কাজ করে যারা দলকে বিব্রত করেছে তাদের কোনো ভাবেই আগামী নির্বাচনে বিবেচনা করা হবে না বলে জানা গেছে।
আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী প্রতি তিন বছর অন্তর:জেলা আওয়ামী লীগ ও বিভিন্ন মহানগর আওয়ামী লীগ দ্বারা নির্বাচিত সংখ্যক কাউন্সিলার সমবায়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কাউন্সিল গঠিত হবে। জেলা আওয়ামী লীগসমূহ-ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, বরিশাল, রংপুর, সিলেট, নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা, গাজীপুর ও ময়মনসিংহ মহানগর। ২০১৯ সালের ২১ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের সব শেষ কাউন্সিল হয়। সেই কাউন্সিলে সভাপতি পদে নবমবারের মতো শেখ হাসিনা সঙ্গে দ্বিতীয় বারের মতো সাধারণ সম্পাদক পদে ওবায়দুল কাদের নির্বাচিত হন।
আগামী বছর ডিসেম্বর বা পরের বছর জানুয়ারি মাসে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হতে পারে। সেই নির্বাচনের আগেই এবছর ডিসেম্বরের আগেই বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিল। আগামী নেতৃত্বে কারা আসতে পারেন কারা সংসদে প্রতিনিধিত্ব করবেন সব বিষয় মাথায় রেখে কমিটি গঠনের পক্ষে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ।
এদিকে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ৮ ফেব্রুয়ারি দলের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরাম সভাপতিমন্ডলীর সভায় দল গোছানোর জন্য নির্দেশ দেন কেন্দ্রীয় নেতাদের। সেই সভায় দলের শীর্ষ নেতাদের কাজে মনোযোগী হওয়ারও নির্দেশনা দেন। যেহেতু করোনা মহামারি নিয়ন্ত্রণে আরোপিত বিধিনিষেধ উঠে গেছে তাই পুরোদমে মাঠে নেমে কাজ করার নির্দেশনা দিয়েছেন।
দলীয় প্রধানের নির্দেশনায় পাবনা ও নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের ত্রি বার্ষিকী সম্মেলন শুরু হয়েছে। এরপর অন্যান্য জেলা আওয়ামী লীগেও সম্মেলন হবে। শুধু জেলা নয় থানা ওয়ার্ডেও কমিটি গঠনের কাজ শুরু হয়েছে। নেতৃত্ব বাছাইয়ের ক্ষেত্রে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে ত্যাগী, নিবেদিত, নীতি আদর্শ ধারণ করে এমন লোক। তবে কোনো ভাবেই দলের নীতি আদর্শের বাইরে কাউকে ঠাই দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। স্বার্থন্বেষী সুবিধাভোগী মহল যেন দলের কোন পর্যায়ে ঠাই না পায় সেজন্য কেন্দ্র থেকে কড়া নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
শুধু তাই না যেসকল সংসদ সদস্য নিজ এলাকায় মাই ম্যান কমিটি করবে তাদের বিষয়ে কঠোর হচ্ছে আওয়ামী লীগ। স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতে যেসকল সংসদীয় আসনে বিদ্রোহী প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছেন তাতে স্থানীয় সংসদ সদস্যদের ইন্ধন রয়েছে কি-না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। যদি কোনো সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে প্রমাণিত হয় যে তিনি দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে বিদ্রোহী প্রার্থী বা অন্য কারো সমর্থন করেছেন তাহলে আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে তার কপাল পুড়বে। সে যত বড় মাপের নেতাই হোক বিশ্বাস ঘাতকদের দলের গুরুত্বপূর্ণ পদ দেবে না বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় নেতারা।
আওয়ামী লীগের কাউন্সিলল ও তৃণমূল গোছানোর বিষয়ে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, করোনা মহামারি কেটে গেছে আশাকরি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড গুলো শুরু করতে পারব। একেবারে তৃণমূল পর্যায়ে দলকে গোছানোর কাজ শুরু হবে যে জেলাগুলো বাকি আছে সেগুলো সম্পন্ন করার কাজ শুরু করছি। তৃণমূলকে গুছিয়েই আমরা সম্মেলন গুলো করব। আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন নির্ধারিত সময়ে হওয়ার কথা। তার আগে তৃণমূল গোছানো হবে।
দলে কারা ঠাই পাবে এবিষয়ে তিনি বলেন, আগামী নেতৃত্বে তরুন প্রজন্মকে সংযুক্ত করা। নবীন প্রবীণের সমন্বয় করে কমিটি করা। যারা দু:সময়ে দলের নীতি আদর্শকে আকড়ে ধরে কাজ করেছে তাদের বিষয় বিবেচনা করা হবে। যারা দুর্দিনের সহযোদ্ধা, যারা দুর্দিনে জাতির পিতার আদর্শকে টিকিয়ে রাখতে লড়াই করেছে তাদের মূল্যায়ন করা হবে। তাদের মূল্যায়ন করে যথাযথ জায়গায় স্থান করে দেওয়াই আওয়ামী লীগের কাজ। নীতিহীন আদর্শহীন সুবিধাবাদি স্বার্থন্বেষী মহল প্রবেশ করতে না পারে তার জন্য আওয়ামী লীগ সব সময় সজাগ। দেশ বিরোধী সাম্প্রদায়িক শক্তি তথাকথিত স্বার্থন্বেষী মহল যাতে দলের ভাবমূর্তি ক্ষ্নু করতে না পারে সে ব্যাপারে আওয়ামী লীগ সব সময় সতর্ক। আওয়ামী লীগ সভাপতি আমাদের নেত্রী কঠোর নির্দেশনা দিয়েছেন নীতি আদর্শহীন সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠি বা খুনের রাজনীতি যারা করেছে তারা যেন দলের কোনো পর্যায়ে ঠাই না পায়।
দল গোছানোর বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম এমপি ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, জাতীয় সম্মেলনের তারিখ নেত্রী দেবেন। তবে আমরা সাংগঠনিক কাজগুলো করোনার মধ্যেই চালিয়েছি। হয়তো পুরোদমে সম্ভব হয়নি। এখন করোনা নিয়ন্ত্রণে দেওয়া বিধিনিষেধ উঠে গেলে যেসকল জেলা উপজেলায় কমিটি হয়নি সেগুলো করা হবে। আশাকরছি আগামী মে মাসের মধ্যে সমস্ত কমিটি গঠন সম্পন্ন হবে। এবারের কমিটিতে একটা বিষয় পরিস্কার যারা দলের সিদ্ধান্তের বাইরে স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতে প্রার্থী হয়েছেন তারা কোনো পর্যায়ে দলের কমিতে আসতে পারবেন না। এটা তৃণমূলে যেমন তেমনি জাতীয় পর্যায়ের কমিটিতেও। আর যেসকল সংসদ সদস্যরা দলের সিদ্ধান্তের বাইরে অন্য কোনো প্রার্থীর সমর্থন করেছেন তাদেরও কপাল পুড়বে।
এসএম/