করোনাকালে জনশক্তি রপ্তানি কমলেও বেড়েছে রেমিটেন্স প্রবাহ
করোনাকালে বৈধ পথে বাংলাদেশ থেকে বিদেশে কর্মসংস্থান কমেছে। যদিও করোনাকালের ২০২০ ও ২০২১ সালে রেমিটেন্স বা প্রবাসী আয় বেড়েছে।
জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালে ২ লাখ ১৭ হাজার কর্মী বিদেশে গেছেন। তার পরের বছর ২০২১ সালে গেছেন ৬ লাখ ১৭ হাজার ২০৯ জন কর্মী।
তবে করোনার আগের দুই বছরে এই সংখ্যা ছিল আরও বেশি। ২০১৯ সালে বিদেশে গেছেন ৭ লাখ ১৫৯ জন কর্মী। তার আগের বছর ২০১৮ সালে গেছেন ৭ লাখ ৩৪ হাজার ১৮১ জন।
রেমিটেন্সের হিসাবে অবশ্য উল্টো চিত্র দেখা যাচ্ছে। করোনার আগের দুই বছর ২০১৯ ও ২০১৮ সালের তুলনায় করোনার দুই বছর ২০২০ ও ২০২১ সালে রেমিটেন্সের প্রবাহ বেশি।
২০১৮ সালে দেশে রেমিটেন্স এসেছে ১ লাখ ৩০ হাজার ২৯৩ কোটি ৬১ লাখ টাকা। তার পরের বছর ২০১৯ সালে রেমিটেন্স এসেছে ১ লাখ ৫৫ হাজার ২১ কোটি টাকা। কিন্তু করোনার প্রথম বছর ২০২০ সালে রেমিটেন্স এসেছে ১ লাখ ৮৭ হাজার ৭২০ কোটি টাকা। করোনার দ্বিতীয় বছর ২০২১ সালে দেশে রেমিটেন্স এসেছে ১ লাখ ৮৪ হাজার ৬৯৯ কোটি ৬৩ লাখ টাকা।
যদিও করোনার সময় এই রেমিটেন্স বাড়ার বিষয়টি নিয়ে অনেক অর্থনীতিবিদ সংশয় প্রকাশ করেছেন বিভিন্ন সময়। সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলছেন, হুন্ডি ব্যবসার প্রকোপ কমা, হজের জন্য জমানো টাকা দেশে পাঠানোসহ অন্যান্য বিষয় এ প্রবাসী আয় বা রেমিটেন্স বৃদ্ধির কারণ হতে পারে।
সংশয়ের অন্যতম একটি কারণ হলো প্রতিবেশী দেশগুলোতে রেমিটেন্সের প্রবাহ কমে যাওয়া। এসডিজি প্লাটফর্মের তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালে পাশের দেশ ভারতের রেমিট্যান্স প্রবাহ কমেছে ৩২ দশমিক ৩ শতাংশ। ফিলিপাইনের প্রবাহ কমেছে শূন্য দশমিক ৯ শতাংশ। কিন্তু এর বিপরীতে বাংলাদেশের রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে ১৮ দশমিক ৪ শতাংশ।
দেশভিত্তিক কর্মসংস্থানের চিত্র
দেশভিত্তিক কর্মসংস্থানের চিত্রও একই রকম। করোনার দুই বছরে দেশভিত্তিক কর্মসংস্থান কমেছে। সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও জর্ডানে করোনার দ্বিতীয় বছর ২০২১ সালে অবশ্য উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কর্মী বাংলাদেশ থেকে গেছেন। এই দেশ তিনটিতে জনশক্তি রপ্তানিতে করুণ অবস্থা ছিল ২০২০ সালে।
২০২০ সালে বাংলাদেশের বৃহত্তম শ্রমবাজার সৌদি আরবে কর্মী গেছেন ১ লাখ ৬১ হাজার ৭২৬ জন। যদিও পরের বছর ২০২১ সালে দেশটিতে কর্মী গেছেন অনেক বেশি, ৪ লাখ ৫৭ হাজার ২২৭ জন।
অন্যদিকে, করেনার আগের বছর ২০১৯ সালে সৌদি আরবে গেছেন ৩ লাখ ৯৯ হাজার কর্মী। তার আগের বছর ২০১৮ সালে দেশটিতে বাংলাদেশি কর্মীর কর্মসংস্থান হয়েছে ২ লাখ ৫৭ হাজার ৩১৭ জনের।
বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শ্রমবাজার সংযুক্ত আরব আমিরাতে ২০২০ সালে গেছেন ১ হাজার ৮২ জন কর্মী। ২০২১ সালে দেশটিতে গেছেন ২৯ হাজার ২০২ জন কর্মী।
২০১৯ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাতে গেছেন ৩ হাজার ৩৫৮ জন কর্মী। ২০১৮ সালে গেছেন ৩ হাজার ২৩৫ জন কর্মী।
জর্ডানে ২০২১ সালে বাংলাদেশ থেকে গেছেন ১৩ হাজার ৮১৬ জন কর্মী। ২০২০ সালে গেছেন ৩ হাজার ৭৬৯ জন কর্মী। কিন্তু ২০১৯ ও ২০১৮ সালে গেছেন যথাক্রমে ২০ হাজার ৩৪৭ জন ও ৯ হাজার ৭২৪ জন কর্মী।
২০২১ সালে বাংলাদেশ থেকে কুয়েতে কর্মসংস্থান হয়েছে ১ হাজার ৮৪৮ জন বাংলদেশি কর্মীর। ২০২০ সালে কর্মসংস্থান হয়েছে ১ হাজার ৭৪৪ জনের।
অন্যদিকে, ২০১৯ সালে বাংলাদেশ থেকে কুয়েতে গেছেন ১২ হাজার ২৯৯ জন। তার আগের বছর ২০১৮ সালে গেছেন ২৭ হাজার ৬৩৭ জন কর্মী।
মধ্যপ্রাচ্যের আরেক দেশ ওমানে ২০২১ সালে বাংলাদেশে থেকে গেছেন ৫৫ হাজার ৯ জন কর্মী। ২০২০ সালে গেছেন ২১ হাজার ৭১ জন কর্মী।
২০১৯ সালে কুয়েতে গেছেন ৭২ হাজার ৬৫৪ জন কর্মী। আগের বছর ২০১৮ সালে গেছেন ৭২ হাজার ৫০৪ জন।
মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম বড় আরেকটি শ্রমবাজার হলো কাতার। দেশটিতে বাংলাদেশ থেকে ২০২১ সালে কর্মসংস্থান হয়েছে ১১ হাজার ১৫৮ জন কর্মী। ২০২০ সালে গেছেন সেই তুলনায় অনেক কম, ৩ হাজার ৬০৮ জন কর্মী।
২০১৯ সালে কাতারে গেছেন ৫০ হাজার ২৯২ জন কর্মী। আগের বছর ২০১৮ সালে গেছেন ৭৬ হাজার ৫৬০ জন কর্মী।
লেবাননে ২০২১ সালে বাংলাদেশ থেকে কর্মী গেছেন মাত্র ২৩৫ জন। ২০২০ সালে গেছেন ৪৮৮ জন। কিন্তু ২০১৯ সালে যখন করোনা ছিল না সেই বছরে গেছেন ৪ হাজার ৮৬৩ জন কর্মী। তার আগের বছর ২০১৮ সালে গেছেন ৫ হাজার ৯৯১ জন কর্মী।
মালয়েশিয়ায় যদিও তিন বছর জনশক্তি রপ্তানি বন্ধ ছিল। একারণে ২০২১ ও ২০২০ সালে দেশটিতে কর্মী গেছেন যথাক্রমে ২৮ জন ও ১২৫ জন। ২০১৯ সালে দেশটিতে গেছেন ৫৪৫ জন কর্মী। কিন্তু যখন নিষেধজ্ঞা ছিল সেই সময় অর্থাৎ ২০১৮ সালে দেশটিতে বাংলাদেশ থেকে গিয়েছিল ১ লাখ ৭৫ হাজার ৯২৭ জন কর্মী।
দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার নগররাষ্ট্র সিঙ্গাপুরেও করোনার দুই বছর জনশক্তি রপ্তানি অনেক কমেছে। ২০২১ সালে দেশটিতে বাংলাদেশ থেকে কর্মসংস্থান হয়েছে ২৭ হাজার ৮৭৫ জনের। ২০২০ সালে কর্মসংস্থান হয়েছে ১০ হাজার ৮৫ জনের। কিন্তু ২০১৯ সালে সিঙ্গাপুরে বাংলাদেশ থেকে কর্মী গেছেন ৪৯ হাজার ৮২৯ জন। ২০১৮ সালে কর্মসংস্থান হয়েছে ৪১ হাজার ৩৯৩ জনের।
এছাড়া অন্য দেশগুলোতেও করোনার দুই বছরে জনশক্তি রপ্তানি উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ২০২১ সালে বাংলাদেশ থেকে কর্মসংস্থান হয়েছে মাত্র ৭ হাজার ৭১১ জনের। ২০২০ সালে কর্মসংস্থান হয়েছে ৪ হাজার ৪৫৭ জনের। কিন্তু ২০১৯ সালে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশ থেকে কর্মসংস্থান হয়েছে ১ লাখ ৬১৯ জনের। তার আগের বছর ২০১৮ সালে গেছেন ১৫ হাজার ৭৯০ জন কর্মী।
আরইউ/আরএ