একনেকে অনুমোদনের অপেক্ষায়
বেতন কমিয়ে বাড়ানো হলো ভ্রমণ ভাতা
বিআইডব্লিউটিএ’র একটি প্রকল্পে কর্মচারীদের বেতন কমেছে ১৪৯ কোটি টাকা। অথচ ভ্রমণ ভাতাসহ বিভিন্ন খাতে এক লাফে ব্যয় বাড়ছে ৩৩৪ কোটি টাকা।
এ প্রকল্পে কর্মচারীদের বেতন ছিল ১৮৬ কোটি টাকা। তা থেকে কমিয়ে ধরা হয়েছে ৩৭ কোটি টাকা। কমেছে ১৩০ কোটি টাকা। আর কর্মকর্তাদের বেতন ৭০ কোটি টাকা থেকে কমিয়ে ধরা হয়েছে ৬৫ কোটি টাকা। এই দুই খাতে বেতন কমলেও নতুন করে ভ্রমণ ব্যয় থোক বরাদ্দ ধরা হয়েছে ২০ কোটি টাকা। সম্মানী ব্যয় বাড়িয়ে ৩০ কোটি টাকা ধরা হয়েছে। এই হলো রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভারি মালামাল কম সময়ে ও নিরাপদে বহন করার জন্য ‘মোংলা বন্দর হতে চাঁদপুর-মাওয়া-গোয়ালন্দ হয়ে পাকশী পর্যন্ত নৌ-রুটের নাব্যতা উন্নয়ন’ প্রকল্পের বাস্তব চিত্র।
এ প্রকল্পের ব্যয় অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে। সব প্রক্রিয়া শেষ। মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি একনেক সভায় এটিসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের ১০টি প্রকল্পের অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে। পরিকল্পনা কমিশনের সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সার্বিক ব্যাপারে জানতে প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী সুলতান আহমেদের সঙ্গে রবিবার (৫ ডিসেম্বর) বারবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোনের সংযোগ কেটে দেওয়ায় মন্তব্য জানা সম্ভব হয়নি। পরে বিআইডব্লিউটিএ’র চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল মোহাম্মদ মুসার সঙ্গেও যোগাযোগ করা হয়। তবে তিনিও ফোনের সংযোগ কেটে দেওয়ায় মতামত জানা সম্ভব হয়নি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এ প্রকল্পের ব্যয় বাড়ছে ৩৩৪ কোটি টাকা। কারণ প্রথমে ৯৫৬ কোটি টাকা ধরা হলেও সংশোধন করে এক হাজার ২৯০ কোটি টাকায় আনা হয়েছে। এর অনুমোদনের জন্য প্রকল্পটির প্রথম সংশোধনী প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের বিআইডব্লিউটিএ। প্রকল্প এলাকা হচ্ছে ঢাকা, মুন্সিগঞ্জ, মাদারীপুর, মানিকগঞ্জ, ফরিদপুর ও রাজবাড়ী জেলার ১৩টি উপজেলা।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) থেকে প্রথমে এর অনেক বেশি ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছিল। বিভিন্নখাতে অপ্রাসঙ্গিক ব্যয় নির্ধারণ করায় তা থেকে বাদ দিয়ে শেষ পর্যন্ত একনেক সভায় ২০১৭ সালে প্রকল্পটির অনুমোদন দেওয়া হয়। এতে ব্যয় ধরা হয়েছিল ৯৫৬ কোটি টাকা।
রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পটির জন্য এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় এটির কাজও শুরু হয়েছে। প্রকল্পটিতে ২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ৫২০ কোটি টাকা। একই সময়ে বাস্তব অগ্রগতি হয়েছে ৬১ শতাংশ। পুরো কাজ শেষ করতে ব্যয় বাড়িয়ে প্রস্তাব করা হয়েছিল এক হাজার ৬১৯ কোটি টাকা করার। তা যাচাই-বাছাই করতে গত ১০ জানুয়ারি প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বিভিন্ন খাতে ব্যয় কমানো হয়েছে। তারপরও এই ব্যয় বেড়ে দাঁড়াচ্ছে এক হাজার ২৯০ কোটি টাকা। এর মধ্যে কর্মচারীদের বেতন ১৮৬ কোটি টাকা থেকে ১৪৯ কোটি টাকা কমানো হয়েছে। কমে দাঁড়াচ্ছে ৩৭ কোটি টাকা।
তবে নতুন করে ভ্রমণ ভাতা ধরা হয়েছে ২০ কোটি টাকা। আর সম্মানী ১০ কোটির সঙ্গে ২০ কোটি টাকা বাড়িয়ে ধরা হয়েছে ৩০ কোটি টাকা। যাতায়াত ব্যয় প্রায় পাঁচ কোটি টাকা বাড়ছে। এভাবে আসবাবপত্রসহ বিভিন্নখাতেও ব্যয় বাড়ানো হয়েছে। তাতে ৩৩৪ কোটি টাকা বাড়ছে। তবে বাস্তবায়নকাল ২০২৫ সাল পর্যন্তই থাকছে, বাড়ছে না।
সূত্র আরও জানায়, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভারি মালামাল পরিবহন নিরাপদ ও সহজ করার জন্য ২০১৭ সালের ১ আগষ্ট প্রকল্পটির অনুমোদন দেয় সরকার। যাতে মোংলা বন্দর থেকে নৌপথে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্প পর্যন্ত সারাবছর ৪ দশমিক ৫০ মিটার নদীর নাব্য উন্নয়ন ও সংরক্ষণ করে কম সময়ে এবং স্বল্প ব্যয়ে নিরাপদে মালামাল ও যাত্রী পরিবহন করা যায়, যা ২০১৫ সালের জুন থেকে ২০২৫ সালের জুনে বাস্তবায়ন করার কথা।
প্রকল্পটির প্রধান প্রধান কাজ হলো–ক্যাপিটাল ড্রেজিং ৬৪ দশমিক ৬ লাখ ঘনমিটার, মেইনটেন্যান্স ড্রেজিং ৪৫৭ দশমিক ২৭ লাখ ঘনমিটার, মাটির ডাইক নির্মাণ ১৪ লাখ ঘনমিটার, বাঁশের পাইলিং ও তর্জার বেড়া নির্মাণ ৩ দশমিক ২০ লাখ বর্গমিটার। এ ছাড়া একটি কেবিন ক্রুজার ক্রয়সহ অন্যান্য কাজও রয়েছে।
প্রকল্পটি সংশোধনের কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, নতুন কিছু অঙ্গ সংযোজন হচ্ছে। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ প্রশিক্ষণ, ইকো সাউন্ডার ও জিপিএস, অফিস ফার্নিচার, জলযান মেরামত, কম্পিউটার ও অফিসের অন্যান্য আসবাবপত্র মেরামত, ভ্রমণ ভাতা, ইন্টারনেট, বিদ্যুৎ, পানি, ডাক, কুরিয়ার, মুদ্রণ ও বাঁধাই, স্ট্যাম্প ও সিল, অন্যান্য মনিহারি, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অংশগুলো নতুনভাবে সংযোজন করতে হবে। আর স্পিড বোটের পরিবর্তে সংশোধিত ডিপিপিতে কেবিন ক্রুজার অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
এ বিষয়ে প্রকল্পটি প্রক্রিয়াকরণের দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠমো বিভাগের সদস্য (সচিব) মামুন-আল-রশীদ বলেন, ‘পিইসিতে কতিপয় শর্তে অনুমোদনের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে। এটি বাস্তবায়িত হলে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ভারী মালামাল পরিবহন নিরাপদ ও সহজতর করা সম্ভব হবে। এ ছাড়া মোংলা বন্দর হতে চাঁদপুর-মাওয়া-গোয়ালন্দ হয়ে পাকশী পর্যন্ত নৌ-রুটের নাব্যতা উন্নয়ন ঘটবে।’
উল্লেখ্য, ফাস্ট ট্র্যাক প্রকল্পের আওতায় ২০১৬ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী একনেক সভায় চট্টগ্রাম ও মোংলা সমুদ্রবন্দর হতে রূপপুর পর্যন্ত নৌপথের প্রয়োজনীয় ড্রেজিং করতে হবে বলে নির্দেশনা দেন। এর পরিপ্রেক্ষিতেই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
জেএ/এসএ/