কাউন্সিলে সংগ্রামী নেতা নির্বাচন বড় চ্যালেঞ্জ
২২তম জাতীয় কাউন্সিলকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগের সামনে এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ দলে তরুণ ও পরিচ্ছন্ন ভামূর্তির সংগ্রামী নেতৃত্ব নিয়ে আসা। একই সঙ্গে আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়া। যাদের হাত ধরে আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ আবারও মানুষের রায় নিয়ে সরকার পরিচালনা করতে পারে।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা বলছেন, আগামী নির্বাচনের আগে শক্তিশালী সাংগঠনিক কাঠামো ঠিক করতে নতুন-পুরাতনের সমন্বয়ে একটি গতিশীল কমিটি উপহার দিতে চায় আওয়ামী লীগ। এজন্য কেন্দ্র থেকে তৃণমূলের নেতাদের সঙ্গে কথা বলা হচ্ছে নিয়মিত। সংগ্রামী ও নিবেদিত মুখ খোঁজা হচ্ছে।
আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের বড় পদে পরিবর্তনের কোনো সম্ভাবনা না থাকলেও অন্যান্য পদে কিছু নতুন মুখ দেখা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবেন পরীক্ষিত নেতারা। তা ছাড়া যারা বড় পদে থেকেও নিষ্ক্রিয় ছিলেন তাদের বিষয়ে নতুন করে সিদ্ধান্ত নেবে কেন্দ্রীয় হাই কমান্ড।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, আওয়ামী লীগের আগামী কাউন্সিলে ছাত্রলীগ, যুবলীগের সাবেক নেতাদের অনেকেই আসতে পারেন বিভিন্ন পদে। এজন্য এখন থেকেই দলের ভেতরে এক ধরনের তদবির শুরু হয়েছে। অনেক নেতা কেন্দ্রীয় নেতাদের বাসায় আসা যাওয়া এবং তাদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়িয়েছেন।
এদিকে কাউন্সিলের আগেই বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকদের কাজ সমাপ্ত করার নির্দেশ দেওয়া আছে। সেই লক্ষ্যে এরইমধ্যে সব সাংগঠনিক জেলায় কমিটি গঠনের কাজ গুছিয়ে এনেছেন নেতারা।
সব মিলিয়ে আগামী কাউন্সিলে আওয়ামী লীগের সামনে কঠিন চ্যালেঞ্জ হচ্ছে নবীন-প্রবীণের সমন্বয়ে দলের একটা ভারসাম্যপূর্ণ নেতৃত্ব নির্বাচন করা। আগামী দিনে যারা দলকে সামনের দিকে এগিয়ে নেবেন। দলের দুঃসময়ে রাজপথের আন্দোলন-সংগ্রামে যাদের সামনের সারিতে পাওয়া- এমন নেতাদেরই নেতৃত্বে আনতে চায় দলটি। সেজন্য অনেক চ্যালেঞ্জও আছে। যেহেতু দেশের সবচেয়ে পুরোনো ও ঐতিহ্যবাহী দলে নেতার অভাব নেই।
কাউন্সিলের পাশাপাশি আগামী নির্বাচন নিয়েও আলোচনা হচ্ছে। নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত রোডম্যাপ অনুযায়ী ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে ২০২৪ সালের জানুয়ারির মধ্যে সাংবিধানিকভাবে নির্বাচনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
নির্বাচনী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে আওয়ামী লীগ চায় পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তি ও সর্ব-মহলে গ্রহণযোগ্য নেতাদের প্রার্থী করতে। যারা তৃণমূলেও নেতা-কর্মীদের মাঝে সমান গ্রহণযোগ্য। কোনো রকম বিতর্ক নেই।
আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, সংগঠনকে মানুষের কাছে আরও বেশি আস্থাশীল করতে দলীয় নেতাদের পাশাপাশি সংসদ সদস্যদেরও অনেক গুরুত্ত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। এমন নেতাদের খুঁজে বের করতে নির্দেশ দিয়েছে হাই কমান্ড। তা ছাড়া নির্বাচনে যদি ফল আওয়ামী লীগের পক্ষে না যায়, সেক্ষেত্রে পরবর্তী সময়ে কীভাবে দলকে চাঙ্গা রাখা যায় বা সেই সময়ের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার মতো একটি শক্তিশালী ও গতিশীল নেতৃত্ব ও সংসদ সদস্য মনোনয়নে নজর কেন্দ্রীয় নেতাদের।
বিশেষ করে আগামী নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়া এবং বৈশ্বিক সংকট মোকাবিলা করে কীভাবে মানুষকে আস্থায় আনা যায় সেটিই এখন আওয়ামী লীগের মূল লক্ষ্য।
আওয়ামী লীগের আগামী কাউন্সিলে খাদ্য সংকট ও আগামী নির্বাচন পরবর্তি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশে যদি দুর্ভিক্ষের মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় তাতে আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক দল হিসেবে সেটি কীভাবে মোকাবিলা করবে, আগামী নির্বাচনে ভোটারদের কাছে কী বার্তা নিয়ে যাবে, সেসব বিষয় ঠিক করতে রীতিমত হিমশিম খাচ্ছে ক্ষমতাসীন দল।
তা ছাড়া নির্বাচনের ফলাফল যদি বিপক্ষে যায় তাহলে বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামী লীগ কীভাবে নির্বাচন পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করবে তা নিয়ে থাকছে কর্মপরিকল্পনা।
আজ শুক্রবার (২৮ অক্টোবর) বিকেল ৪টায় গণভবনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভা অনুষ্ঠিত হবে। সভায় আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী সভাপতিত্ব করবেন। সর্বোচ্চা নীতি নির্ধারণী ফোরামের ওই বৈঠকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলনসহ একাধিক সহযোগী সংগঠনের সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা হতে পারে বলে জানা গেছে।
আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিল ও আগামী সংসদ নির্বাচন প্রসঙ্গে দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রহমান ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, আওয়ামী লীগ সব সময় গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে। সেটি দলের অভ্যন্তরে হোক আর রাষ্ট্র পরিচালনায় হোক। তাই যথা সময়ে কাউন্সিল হবে। আমাদের সার্বিক প্রস্তুতি আছে। নেত্রী নির্দেশ ও তারিখ দিলেই সম্মেলন করা হবে।
আওয়ামী লীগের ঢাকা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, আওয়ামী লীগে কাউন্সিলের মাধ্যমে নেতা নির্বাচিত হয়। যেহেতু আগামী বছর নির্বাচনী বছর তাই এবারের কাউন্সিলে বড় চ্যালেঞ্জ সংগ্রামী নেতৃত্ব খুঁজে বের করা। যারা আগামী নির্বাচনে দলকে নেতৃত্ব দিতে পারবেন বিরোধী রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় দক্ষতা দেখাতে পারবেন তারাই নেতৃত্বে আসবেন।
এনএইচবি/এসএন