সিআইপির তালিকায় দুবাইয়ে অর্থ আত্মসাৎকারীর নাম!
দেশের বাইরে অর্থ আত্মসাৎতের গুরুতর অভিযোগ উঠা এক ব্যবসায়ীকে সিআইপি পদকের জন্য চূড়ান্ত করার খবর পাওয়া গেছে। মোহাম্মদ ইলিয়াছ নামের ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে বিদেশে অভিযোগের পাহাড়। তারপরও রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্তির জন্য আবেদন করেছেন তিনি। তার আবেদনের প্রেক্ষিতে প্রাথমিক তালিকা থেকে চূড়ান্ত তালিকায় নাম উঠে এসেছে। এখন শুধু ঘোষণার বাকি।
তার বিরুদ্ধে অভিযোগ সংক্রান্ত সমস্ত তথ্যপ্রমাণ ঢাকাপ্রকাশ-এর হাতে রয়েছে। সিআইপি হওয়ার চূড়ান্ত তালিকায় ৩৮ নম্বরে আছেন মোহাম্মদ ইয়িলাছ।
অনুসন্ধানে জানা যায়, মোহাম্মদ ইলিয়াছের সঙ্গে যারই পরিচয় হয়েছে তাকেই তিনি ঠকিয়েছেন। প্রথম পরিচয়ে ইলিয়াছ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে গভীর সখ্য জমিয়ে তুলেন। তারপর নানা কৌশলে অর্থ হাতিয়ে নিয়ে ব্যবসা শুরু করেন। একটা সময় সেই ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গুটিয়ে তিনি অর্থ আত্মসাৎ করে উধাও হয়ে যান বলে অভিযোগ রয়েছে। বাণিজ্যিক ব্যক্তি হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ হতে যাওয়া ইলিয়াছ দুবাইতে ব্যবসা করার সময় যাদের সঙ্গে ব্যবসা করেছেন তাদেরই অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন।
তার প্রতারণার হাত থেকে প্রতিকার পেতে বাংলাদেশ কনস্যুলেট অফিস দুবাইয়ে অভিযোগ দিয়েছেন দুইজন। এ ছাড়া প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সচিবের কাছেও অভিযোগ জমা পড়েছে তার বিরুদ্ধে।
মোহাম্মদ ইলিয়াছের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছেন তার এক সময়ের ব্যবসায়িক পার্টনার নাভিদ সাফির। অভিযোগে তিনি লিখেছেন, মোহাম্মদ ইলিয়াছ (পাসপোর্ট নং-BE 0434005) আমার অংশীদার ছিলেন এবং আমার সঙ্গে দুবাই-ইউএইতে ব্যবসা চালাচ্ছিলেন। আমি প্রায় ২ লাখ দিরহাম বা প্রায় ৬০ লাখ টাকা তার মাধ্যমে প্রতারিত হয়েছি। আমার মতো আরও অনেক মানুষ সংযুক্ত আরব আমিরাতে তার মাধ্যমে প্রতারিত হয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, মোহাম্মদ ইলিয়াছ আমার সঙ্গে অংশীদার হিসেবে ছিলেন, যা ২০২০ সালের ১৯ মার্চ বাতিল করা হয়েছে। কারণ তিনি আমাকে ২০২০ সালের শুরুতে একটি চেক দিয়েছিলেন, কিন্তু তার সেই অ্যাকাউন্ট ২০১৬ সাল থেকেই বন্ধ ছিল। একই কাজ তিনি সংযুক্ত আরব আমিরাতের অন্যদের সঙ্গে করেছেন। তার বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ রয়েছে।
মোহাম্মদ ইলিয়াছ সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে প্রতারিত অর্থ নিয়ে সিআইপির জন্য আবেদন করেছেন। যা আইন দ্বারা নিষিদ্ধ এবং সরকারের নিয়ম অনুসারে অবৈধ। আমি দৃঢ়ভাবে অনুরোধ করছি বিষয়টি খতিয়ে দেখার এবং তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার।
এ ছাড়া মোহাম্মদ ইলিয়াছের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছেন সিআইপি মোহাম্মদ জসিম উদ্দীন। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর চিঠি দিয়ে অর্থ আত্মাসাৎ ও প্রতারণকারীর মাধ্যমে প্রাণ নাশের হুমকি থেকে পরিত্রাণ চেয়েছেন।
চিঠিতে জসিম উদ্দীন উল্লেখ করেন, আমি দীর্ঘ সময় থেকে দুবাই ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে একজন প্রবাসী বাংলাদেশি ব্যবসায়ী। আমি বাংলাদেশের একজন সিআইপি সনদপ্রাপ্ত ব্যক্তি। দুবাইতে বিভিন্ন ব্যবসার পাশাপাশি ‘আল লিছাইলি’ এলাকায় আমার একটি নির্মাণ সামগ্রীর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আছে। প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্সটি দুবাইয়ের একজন নাগরিকের নামে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটির শতভাগ বিনিয়োগকারী আমি।
প্রতারক মোহাম্মদ ইলিয়াছের দুবাইতে একটি সিভিল কনস্ট্রাকশন কোম্পানি ছিল। আমি তার কোম্পানিতে বাকি ও নগদে নির্মাণ সামগ্রী সরবরাহ করি। এক সময় তার সঙ্গে যৌথ ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ি। কিন্তু তার চাতুরতার কাছে আমি পরাজিত হই। তিনি আমার পুঁজিসহ ৬ লাখ ৮৮ হাজার ৬৭৯ দিরহাম যা বাংলা টাকায় বর্তমান মূল্যে ২ কোটি ১৩ লাখ ৪৯ হাজার ৪৯ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।
এবিষয়ে মোহাম্মদ ইলিয়াছের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, এটা যদি প্রমাণসহ কেউ আপনাকে দিয়ে থাকে, তাহলে অসুবিধা কি? প্রমাণসহ দিয়ে না থাকলে ব্যবস্থা হবে। কাগজগুলো থাকলে সমস্যা নেই, আপনার যেটা করার করেন, অসুবিধা নেই।
নাভিদ সাফেরকে চেনেন কিনা জানতে চাইলে ইলিয়াছ বলেন, অবশ্যই চিনি।
বাংলাদেশের অনেকের কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন কি না-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘প্রমাণ থাকলে আপত্তি নেই। এগুলো সব মিথ্যা। যে বা যারা করছে সব আমি জানি। এগুলো সব জসিম উদ্দিনের কাজ। তিনি মিথ্যা অভিযোগ আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করেছেন।’
এনএইচবি/আরএ/