আওয়ামী লীগের পরবর্তী সাধারণ সম্পাদক কে?
ঘনিয়ে আসছে আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় কাউন্সিল। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই অনুষ্ঠিত হবে দেশের সবচেয়ে পুরোনো রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় কাউন্সিল।
জাতীয় কাউন্সিলকে ঘিরে ইতিমধ্যে দেশব্যাপী আওয়ামী লীগের ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, উপজেলা জেলা, মহানগর কমিটির সম্মেলন ও কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হচ্ছে। গত কয়েক মাস ধরে দলের সাংগঠিনক শক্তি বৃদ্ধি এবং দলীয় কাউন্সিল করতে দেশের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে ছুটে যাচ্ছেন কেন্দ্রীয় নেতারা।
স্বাধীনতা যুদ্ধ থেকে শুরু করে দেশের প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলন সংগ্রামের সামনের সারি থেকে নেতৃত্ব দেওয়া আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় কাউন্সিলকে ঘিরে ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে নেতৃত্ব নির্বাচন নিয়ে নানান জল্পনা-কল্পনা। বিশেষ করে রাজনৈতিক অঙ্গনে এখন আওয়ামী লগের সাধারণ সম্পাদকের পদ নিয়েই আলোচনা হচ্ছে বেশি। ঐতিহ্যবাহী দলটি সাধারণ সম্পাদক হিসেবে কে আসছেন বা কার কাঁধে উঠছে কঠিন দায়িত্ব তা নিয়ে দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে যেমন আলোচনা হচ্ছে, তেমনি বিরোধী রাজনৈতিক শিবিরেও সরব আলোচনা চলছে।
আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে যেসব তথ্য পাওয়া যাচ্ছে তাতে কে আওয়ামী লীগের পরবর্তী সাধারণ সম্পাদক হচ্ছেন তা পরিষ্কার করে বলা বেশ কঠিন না। তবে এখন পর্যন্ত যতটুকু জানা গেছে তাতে এই ধারণা পাওয়া যাচ্ছে যে, বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এরে উপরই আস্থা রাখতে পারেন দলটির সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
যদিও ২০১৯ সালে ওবায়দুল কাদের শারিরীকভাবে অসুস্থ হওয়ার পর থেকে তিনি দলের কর্মকান্ড থেকে বেশ দূরে ছিলেন। তার উপর আবার তারই ছোট ভাই ও কোম্পানিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মির্জা কাদের তাকে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদককে নানান ভাবে বিতর্কিত করেছেন। শারিরীক অসুস্থতা আর নিজের ছোট ভাইয়ের কারণে অনেকটা চুপ ছিলেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এসব কারণে আগামীতে তার সাধারণ সম্পাদক পদে না থাকার গুঞ্জন উঠেছিল।
কিন্তু সাম্প্রতি দলের বিভিন্ন কর্মসূচিতে আগের মতই সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। বিভিন্ন সভা-সমিতি এবং দলের তৃণমূলের কাউন্সিলে সারসরি বা ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে বক্তব্য রাখছেন। তার বক্তব্যে দলের নেতাকর্মী ও তার অনুসারীরা আবারও সক্রিয় হয়ে উঠেছেন।
আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনা রয়েছে হয়তো সবুজ সংকেত পেয়েই আবার সক্রিয় হয়েছেন সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে দলীয় সভানেত্রীও তার উপর আস্থা রাখছেন।
তাই রাজনৈতিক মহলে এখন জোর আলোচনা হচ্ছে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে তৃতীয় বারের মতো ওবায়দুল কাদেরই থাকছেন। এই পদে তার থাকতে দলের গঠনতন্ত্রেও কোনোরকম বাধা নেই। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা যদি চান তাহলে ওবায়দুল কাদের পরবর্তী তিন বছরের জন্য সাধারণ সম্পাদক হিসেবে বহাল থাকবেন।
আওয়ামী লীগ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আগামী কাউন্সিল এমন একটা সময় হতে যাচ্ছে ঠিক তার এক বছর পর দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন। তাই নির্বাচনের সময় অন্যন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা ও দলগুলোকে নির্বাচনমুখী করতে দলের সাধারণ সম্পাদকের একটা বড় ভূমিকা রয়েছে। সেক্ষেত্রে একজন ঝানু ও দক্ষ রাজনীতিককেই প্রয়োজেন আওয়ামী লীগের। আর এই দিক দিয়েও এগিয়ে আছেন ওবায়দুল কাদের। যিনি দলের দলীয় সভাপতির কাজ কিছুটা কমিয়ে দিতে পারেন। তবে সব কিছুই নির্ভর করছে আওয়ামী লীগ সভাপতি বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তের উপর।
কেন না আওয়ামী লীগ সভাপতি বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে সভাপতি পদটি অপ্রতিদ্বন্দ্বী। আগামী কাউন্সিলেও সভাপতি পদটি নির্ধারিত। ওবায়দুল কাদেরের বাইরে আগামী কাউন্সিলকে সামনে রেখে দলটির সাধারণ সম্পাদক হওয়ার দৌড়ে আছেন আরও বেশ কয়েকজন নেতা। এর মধ্যে অগ্রভাগে আছেন সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য, ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও যুবলীগের সভাপতি হিসেবে দীর্ঘ সময় নেতৃত্ব দেওয়ার অভিজ্ঞতা সম্পন্ন জাহাঙ্গীর কবির নানক। তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে তার একটি বন্ডিং রয়েছে। দক্ষতার দিক থেকে বেশ এগিয়ে রয়েছেন তিনি।
আছেন আরেক নেতা দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক। গত কাউন্সিলেও তার নাম বেশ জোরালোভাবেই উচ্চারিত হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কাদেরেই আস্থা রাখেন দলীয় সভাপতি। আগামী কাউন্সিলকে সামনে রেখে গত কয়েক মাস ধরেই আলোচনা হচ্ছে ড. আব্দুর রাজ্জাককে ঘিরে। তৃণমূলের সঙ্গে তার খ্যাত খুব বেশি না হলেও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে আওয়ামী লীগের এই প্রেসিডিয়াম সদস্যের। আগামী নির্বাচনে বিদেশিদের মন গলাতে টনিক হিসেবে কাজ করতে পারেন ড. রাজ্জাক। তাই তাকেও বিবেচনায় নিতে পারেন দলের সভানেত্রী, এমন আলোচনা রয়েছে রাজনৈতিক অঙ্গনে।
এ ছাড়াও আলোচনায় আছেন দলটির সভাপতিমণ্ডলীর আরেক সদস্য,ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান। সাংগঠনিকভাবে নেতৃত্ব দেওয়ার দক্ষতা তারও রয়েছে। কাজেই সাধারণ সম্পাদক হিসেবে তিনি আসলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না এমনটি মনে করেন দলের নেতাকর্মীরা।
এর বাইরে আলোচনায় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। এর আগে তিনি দলের প্রচার সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। রাজনৈতিক দলগুলোকে রাজনৈতিক কথা দিয়ে ঘায়েল করতে পটু এই নেতার রয়েছে তৃণমূলের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক। তাই আলোচনাতে আছেন তিনিও।
এ ছাড়া আলোচানায় আরও যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তাদের মধ্যে রয়েছেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এবং আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমের নাম।
তবে কে হবে আওয়ামী লীগের পরবর্তী সাধারণ সম্পাদক সেটা এখন বলে দেওয়া যাবে না। সবই নির্ভর করবে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার উপর। তিনিই সিদ্ধান্ত নিবেন কার উপর আস্থা রাখবেন।
এনএইচবি/এমএমএ/