ঢাকা-গুয়াহাটি বাস সার্ভিস চালু শিগগিরই
অপূর্ব সৌন্দর্য সমৃদ্ধ ভারতের আসাম-গুয়াহাটি। পর্যটকদের হাতছানি দিয়ে ডাকছে। বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় জেলা সিলেটের সঙ্গে সীমান্ত। সিলেট থেকে স্বল্প দূরত্বে আসামে সড়ক পথে যেতে হয় সিলেটের তামাবিল সীমান্ত দিয়ে ডাউকি হয়ে।
সুযোগ পেলেই পর্যটকদের অনেকেই ছুটে যান আসাম-মেঘালয়ে। আসামের পাশেই মেঘালয় হচ্ছে সৌন্দর্যের আরেক লীলাভূমি।
কিন্তু আসাম কিংবা মেঘালয়ে যাতায়াতের ক্ষেত্রে বড় বাধা হচ্ছে যোগাযোগ। সিলেট থেকে সড়ক পথে ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই বললেই চলে। ঢাকা কিংবা সিলেট থেকে আসামে আকাশপথে সরাসরি কোনো ফ্লাইট নেই। ট্রেন পথ চালুরও কোনো সুযোগ নেই। সঙ্গত কারণেই সড়ক পথকে প্রাধান্য দিয়ে থাকেন পর্যটকরা। অথচ এই সড়ক পথেও যোগাযোগের সুযোগ বেশ সংকুচিত হয়ে গেছে।
ভ্রমণপিপাসু পর্যটক এবং দুই দেশের মানুষের সুবিধার্থে ঢাকা থেকে সরাসরি গুয়াহাটি বাস সার্ভিস চালু হয়েছিল ২০১৪ সালে। করোনা অতিমারি শুরু হওয়ার পর ২০২০ সাল থেকে সেই সার্ভিস বন্ধ। বাংলাদেশ-ভারতের অন্যান্য রাজ্যের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু হলেও এখনও খোলেনি ঢাকা-গুয়াহাটি রুটের বাস সার্ভিস।
সম্প্রতি আসাম সরকারের আমন্ত্রণে ঢাকার ভারতীয় হাই কমিশনের সহায়তায় বাংলাদেশ থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি প্রতিনিধি দল আসামের মুখ্যমন্ত্রী ডক্টর হিমন্ত বিশ্ব শর্মার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এসময় মুখ্যমন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছেন খুব শিগগিরই ঢাকা-গুয়াহাটি বাস সার্ভিস চালু হচ্ছে।
ড. হিমন্ত বিশ্ব শর্মা বলেন, করোনাকালের আগে বাস সার্ভিস চালু ছিল। এবার চালু হলে ঢাকা থেকে সিলেট ভায়া ডাউকি হয়ে শিলং বাস যাবে। সেখান থেকে গুয়াহাটি। ঢাকা ও গুয়াহাটির মধ্যে রেল যোগাযোগের বিষয়েও তিনি কথা বলেন। জানান, করিমগঞ্জের উপর দিয়ে সিলেট হয়ে রেল ঢাকা যাবে। এখন সেই রেলপথ নির্মাণের কাজ চলছে।
তিনি আরও জানিয়েছেন, ঢাকা থেকে গুয়াহাটি সরাসরি বিমান যোগাযোগ আগামী তিন মাসের মধ্যে শুরু হবে।
তার এই ঘোষণার পর পর্যটকদের মধ্যে আশার আলো জ্বলতে শুরু করেছে। একইসঙ্গে তাদের প্রশ্ন কবে থেকে আবার সিলেটের তামাবিল দিয়ে সড়ক পথে আসামের মেঘালয়, গুয়াহাটি ঘুরতে পারবেন দর্শনার্থীরা।
আসামের মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের সূত্র ধরে বাংলাদেশ থেকে যারা আসামে বাস সার্ভিস চালু করেছিল ঢাকাপ্রকাশ এর পক্ষ থেকে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়।
শ্যামলী পরিবহনের ম্যানিজিং ডিরেক্টর রাকেশ ঘোষ ঢাকাপ্রকাশ’কে বলেন, ‘করোনার প্রকোপ দেখা দেওয়ার আগে আমরা ঢাকা থেকে সরাসরি বাস নিয়ে মেঘলায় ও গুয়াহাটিতে সার্ভিস দিয়েছি। প্রথমে কথা ছিল গুয়াহাটি থেকে একটা গাড়ি আসবে বাংলাদেশে, একইভাবে আমাদের এখান থেকে একটা গাড়ি চলবে। আমাদের গাড়ি যেহেতু মেঘালয়ের উপর দিযে আসবে তাই পরবর্তীতে শিলং অর্ন্তভুক্ত করা হয়। কথা ছিল গুয়াহাটি এবং শিলং থেকে দুটি বাস অপারেট করবে তারা। আমাদের এখান থেকে দুটি বাস অপারেট করা হবে, চুক্তিতে তাই ছিল।’
কিন্তু শুধু উদ্বোধনের দিন গুয়াহাটি থেকে একটি ছোট বাস ঢাকা আসে। এরপর তারা আর কোনো বাস সার্ভিস দেয়নি, একথা জানিয়ে রাকেশ ঘোষ বলেন, যখন উদ্বোধন হয় আমরা এখান থেকে বাস পাঠাই, ওরাও ওখান থেকে ছোট গাড়ি পাঠায়। যেহেতু দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন অনুষ্ঠানে ছিলেন তাদের সন্মানার্থে আমরা নিয়মিতভাবে গাড়ি পাঠিয়েছি। যাত্রী দিয়েও গাড়ি পাঠিয়েছি, যাত্রী ছাড়াও গাড়ি পাঠিয়েছি। কিন্তু পরবর্তীতে তাদের ওখান থেকে আর গাড়ি ছাড়েনি। আমরা বার বার বলেছি। কিন্তু তারা আজ দিচ্ছি কাল দিচ্ছি বলে বলে ২০১৪ সাল থেকে ২০২২ সাল প্রায় ৮ বছর পার করেছে। এই সময়ে তাদের কোনো গাড়ী ঢাকাতে পাঠায়নি। বরং প্রতি সপ্তাহে আমাদের একটা করে গাড়ি ট্যুারিস্ট নিয়ে যায়। ওই গাড়িই ট্যুারিস্ট নিয়ে আবার ফিরে আসে। করোনা প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর সরকার যখন বন্ধ ঘোষণা করে তখন থেকে এটি বন্ধ রয়েছে। সম্প্রতি ঢাকা-কোলকাতা, ঢাকা-আগরতলাসহ অন্য চার রুটে বাস সার্ভিস চালু হলেও, শুধু গুয়াহাটির বাস সার্ভিসটি বন্ধ রয়েছে।
বন্ধ থাকার কারণ তুলে ধরে তিনি বলেন, আসামে ইমিগ্রেশনে একটা উন্নয়ন কাজ চলছে। তারা এটাকে আইসিপির অধীনে নিতে চায়। কাজেই ইমিগ্রেশনের কাজ শেষ হলে যেকোনো দিন পুনরায় চালু হতে পারে। সেটা ১০ দিনও লাগতে পারে ১৫ দিনও লাগতে পারে।
এনএইচবি/আরএ/