নকশা না পেয়ে ঝুলে গেছে ডিএনসিসির সিভিক সেন্টারের কাজ
ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ভেঙে গুলশান-২ এ একটি আধুনিক সিভিক সেন্টার নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছিল ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। যেখানে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা হবে। উন্নত বিশ্বে যেভাবে একটি সিভিক সেন্টার থেকে অনেকগুলো সুবিধা পাওয়া যায় তার আদলেই নির্মাণ হওয়ার কথা ছিল এ বহুতল সিভিক সেন্টার। এটি নির্মাণে নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিও ছিল উত্তর সিটি করপোরেশনের বর্তমান মেয়র মো. আতিকুল ইসলামের। সে লক্ষ্যে বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউটের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই করেছিল ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন।
কিন্তু ডিএনসিসির সেই উদ্যোগ এখন ভেস্তে যেতে বসেছে। আড়াই বছরেও একটি পূর্ণাঙ্গ নকশা দিতে পারেনি স্থপতি ইনস্টিটিউট। উল্টো তারা দায়ী করছে সিটি করপোরেশনকে। বলছে, আমরা তো চিঠি দিয়েছি। আর মেয়র বলছেন, তারা চিঠি দিয়েছেন ঠিকই। কিন্তু অনেক দেরি করে ফেলছেন।
উত্তর সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, উন্নত বিশ্বের সঙ্গে মিল রেখে একটি অত্যাধুনিক সিভিক সেন্টার করার উদ্যোগ নিয়েছিল সিটি করপোরেশন। এজন্য সব ধাপ অতিক্রম করে একটি মানসম্মত নকশার মাধ্যমে এ সিভিক সেন্টার নির্মাণ করার লক্ষ্য ছিল ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের। সে লক্ষ্যে ও মেয়রের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন করতে বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউটের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই করে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন।
এ সমঝোতা স্মারকের মূল উদ্দেশ্য ছিল দেশের খ্যাতিমান ডিজাইনারদের দিয়ে একটি উন্নতমানের ডিজাইন বের করে আনা। তারপর সেই ডিজাইনকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে মূল কাজের চুক্তি করবে ডিএনসিসি। স্থপতি ইনস্টিটিউট এই কাজ করলেও এর সম্পূর্ণ ব্যয়ভার বহন করবে ডিএনসিসি।
বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউটের সঙ্গে ডিএনসিসির চুক্তি হয় ২০২০ সালের ২৯ ডিসেম্বর। চুক্তি অনুযায়ী ডিজাইন প্রতিযোগিতাও ২০২১ সালের ১৫ ডিসেম্বর। সেদিন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলামের উপস্থিতিতে প্রতিযোগীদের মধ্যে প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় ও বিশেষ পুরস্কার দেওয়ার ঘোষণা করা হয়। কথা ছিল চূড়ান্তভাবে বিজয়ীদের নাম ও তথ্য লিখিতভাবে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনকে দেবে বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউট।
কিন্তু অদৃশ্য কারণে সেই প্রতিযোগিতায় প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় স্থান অধিকারীদের নাম ও প্রয়োজনীয় তথ্য আর দেয়নি স্থপতি ইনস্টিটিউট। সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে একাধিকবার জরুরি চিঠি দিয়েও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি স্থপতি ইনস্টিটিউটের। ফলে নগরবাসীর কাছে মেয়রের প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন ও ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ভাঙার কাজ আর আগাতে পারেনি ডিএনসিসি। আটকে আছে ডিএনসিসির সিভিক সেন্টার নির্মাণ প্রকল্প।
সিটি করপোরেশনের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শুধু নগরবাসীর কাছে দেওয়া প্রতিশ্রুতি নয়, আর্থিকভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন। কেননা এ সিভিক সেন্টার নির্মাণ হলে সেখান থেকে কোটি কোটি টাকা রাজস্ব আসত ডিএনসিসির।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউটের সভাপতি স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন ঢাকাপ্রকাশ-এর কাছে ডিজাইন প্রযোগিতায় অংশগ্রহণকারীদের মেধাক্রমের চূড়ান্ত তালিকা ডিএনসিসিকে দিতে দেরি হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ‘আমি তো জুন মাসে চিঠি দিয়েছি। ব্যক্তিগতভাবে মেয়রে সাহেবের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। আমি চিঠি দিয়েছি বলেছি, দ্বিতীয় বা তৃতীয় যারা হয়েছেন তাদের মধ্যে কারো সঙ্গে চুক্তি করতে পারে সিটি করপোরেশন অথবা পুরাটা বাতিল করে নতুন করে কম্পিটিশনের আয়োজন করতে পারে। আবার আন্তর্জাতিক কোনো প্রতিষ্ঠান দিয়েও করতে পারে, সিদ্ধান্ত নিতে হবে সিটি করপোরেশনকে।’
তিনি বলেন, যিনি প্রথম হয়েছিল সে আইন অমান্য করে অনেকগুলো কাজ করেছে। যার জন্য তাকে প্রায় ৫ বছরের জন্য সাসপেন্ড করা হয়েছে। সে কোনো জায়গায় আর ডিজাইন করতে পারবে না।’
বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউটের সভাপতি বলেন, শুধু আমাদের দোষ দিলে তো হবে না। আমরা যদি দিতেও পারতাম সিটি করপোরেশন যদি সেখানে সিভিক সেন্টার করতে চায় তাহলে সেখানে যেসব দোকান আছে সেগুলোকে অপসারণ করতে হবে।এ বিষয়ে কি দোকান মালিকদের জানানো হয়েছে? চাইলেই কি একদিনে দোকান ভেঙে গুড়িয়ে দিতে পারবে? আমাদের দেরির কারণে সব কাজ আটকে থাকবে কথাটা ঠিক না।
এবিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, চিঠি তো দিয়েছে। কিন্তু অনেক দেরি হয়ে গেছে। এখন চিঠি দিয়েছে। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, আমরা যদি নতুন করে প্রতিযোগিতা আয়োজন করতে যাই তাহলে আরও কত সময় দরকার?
চুক্তি হয়েছিল যেভাবে
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের আওতাধীন গুলশান-২ মার্কেট উন্নয়ন কাজের ডিজাইন প্রতিযোগিতার আয়োজন করার নিমিত্তে ২০২০ সালের ২৯ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউট এবং ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মধ্যে এমওইউ স্বাক্ষরিত হয়। উক্ত এমওইউ সইয়ের ধারাবাহিকতায় ২০২১ সালের ২২ সেপ্টেম্বর রিকোয়েস্ট অব এক্সপ্রেশন অব ইন্টারেস্ট (আরইওআই) আহ্বান করা হয়। এরপর ২০২১ সালের ১৫ ডিসেম্বর মেয়র উপস্থিতিতে ডিজাইন প্রতিযোগিতার ফলাফল ঘোষণা করেন স্থপতি ইনস্টিটিউটের সভাপতি। পিপিআর ২০০৮ এর সংশ্লিষ্ট বিধি মোতাবেক পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণের লক্ষ্যে উক্ত ডিজাইন প্রতিযোগিতার বিস্তারিত তথ্য, লিস্ট অব পার্টিসিপেন্টস, প্রথম, দ্বিতীয় এবং তৃতীয় উইনার, স্পেশাল প্রাইজ উইনার ইত্যাদি সিটি করপোরেশনকে দেওয়ার কথা থাকলেও সেটি সময়মতো পায়নি সিটি করপোরেশন।
এজন্য সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে স্থপতি ইনস্টিটিউটকে চিঠি দিয়ে বলা হয়- ডিজাইন প্রতিযোগিতার ফলাফল প্রকাশের পর দীর্ঘদিন অতিবাহিত হয়েছে। বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউট কর্তৃক ডিজাইন প্রতিযোগিতা সংশ্লিষ্ট তথ্যাদি ডিএনসিসিতে অদ্যাবধি প্রেরণ না করার এ বিষয়ে পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণ করা সম্ভব হচ্ছে না। এতে জনগণের কাছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সুনাম ক্ষুণ্ন হচ্ছে একইসঙ্গে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এখানে উল্লেখ্য যে বিদ্যমান মার্কেট ভবনের কিছু স্থাপনা বর্তমানে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। যা ভবিষ্যতে জনসাধারণের ঝুঁকির কারণ হতে পারে।
এনএইচবি/এসএন