হঠাৎ বেড়েছে চার্জার লাইট-ফ্যানের বেচাবিক্রি
হঠাৎ করেই বেড়ে গেছে লোডশেডিং। অসহনীয় গরমে দেশজুড়ে লোডশেডিংয়ের কারণে জনজীবন অতিষ্ঠ। ইতিমধ্যে সরকারের পক্ষ থেকেও জানিয়ে দেওয়া হয়েছে লোডশেডিং চলবে অন্তত সেপ্টম্বর মাস পর্যন্ত। বিদ্যুৎ সাশ্রয় করার জন্যও দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন সরকার প্রধান।
এই অবস্থায় লোডশেডিংয়ের হাত থেকে রক্ষা পেতে বাজারে বেড়েছে চার্জার ফ্যান, লাইট ও হারিকেন বিক্রি। এমনকি মোমবাতি বিক্রি বেড়েছে গত কয়েক দিনে। রাজধানীর বায়তুল মোকাররম মার্কটসহ বিভিন্ন মার্কট ঘুরে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্যই পাওয়া গেছে।
বায়তুল মোকাররম মার্কেটের তাহমিদ এন্টারপ্রাইজের তারিকুল ইসলাম তারেক ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, গত কয়েক দিনে চার্জার লাইটের বিক্রি বেড়েছে। কিন্তু এটা কি লোডশেডিংয়ের কারণে, নাকি ঈদের কারণে জানি না।
একই মার্কেটের মাহমুদা এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ আকাশ জানালেন, চার্জার লাইটের চেয়ে চার্জার ফ্যান বেশি চলছে। কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, চার্জার লাইট এমনিতেই অনেকের কাছে আছে। সে তুলনায় চার্জার ফ্যান তত বেশি মানুষের কাছে বা বাসা-বাড়িতে নেই। তাই চার্জার লাইটের তুলনায় চার্জার ফ্যানই বেশি চলছে।
মার্কেটে কথা হয় ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী আহাম্মদ খালিদের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘ঈদে বাড়ি যাব। মা বলেছেন, গ্রামের বাড়িতে লোডশেডিং আছে। বাড়ির চার্জার লাইটটা ব্যবহার না হতে হতে নষ্ট হয়ে আছে। তাই একটা চার্জ লাইট কিনে নিতে।’
এই তরুণ বলেন, তবে আমি চার্জার লাইট কিনব না। কারণ মা যেই ফোন সেটটি ব্যবহার করেন, বাড়িতে গিয়ে সেই সেটে থাকা টর্চ লাইট ব্যবহার করতে মাকে শিখিয়ে দেব। আমি বরং মায়ের জন্য ছোট্ট একটা চার্জার ফ্যান কিনে নেব। যেটা হাতে নিয়ে মা চলাফেরাও করতে পারবেন। বলতে পারেন মোবাইল ফ্যান। এটি কেনার জন্যই মার্কেটে এসেছি।
ব্যাংক কর্মকর্তা আযাদ জাহিদ মশা মারার একটি বৈদ্যুতিক ব্যাট কেনার জন্য এসেছেন। এ জন্যে তিনি লোডশেডিংকে কারণ হিসেবে দেখান। তিনি বলেন, বাসায় ফ্যান চললে তো মশার উপদ্রব কম হয়। কিন্তু যতক্ষণ লোডশেডিং থাকবে, ততক্ষণ তো আবার মশার উপদ্রব বেশি। মশা তাড়ানোর কয়েল জ্বালালেও একটি নির্দিষ্ট কক্ষে বা স্থানে তা হয়তো কাজ করে। কিন্তু রাতে ঘুমানোর সময় মানুষ এক জায়গায় স্থির থাকলেও দিনে তো সারা বাসাতেই চলাফেরা করে। তবে জায়গায় জায়গায় কয়েল দিয়ে রাখা তো স্বাস্থ্যসম্মতও নয়। তাই তিনি মশা মারার ইলেক্ট্রিক ব্যাট কিনেছেন।
তাকওয়া ইলেক্ট্রনিক্সের আব্দুল আজিজ বললেন, চার্জার ফ্যানের তুলনায় চার্জার লাইটই বেশি চলছে।
তিনি বলেন, গ্রামে ফাঁকা জায়গা, বাতাস আছে, তাই গরম তুলনামূলক কম। কিন্তু ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াশোনার জন্য লাইটের দরকার হয়।
মার্কেটে চার্জার ফ্যান কিনতে আসা জাহেদা পান্না বলেন, বাচ্চা ঘুমে থাকা অবস্থায় লোডশেডিং শুরু হলে অসময়ে ঘুম ভেঙে কান্নাকাটি শুরু করে, সহজে আর থামতে চায় না। তাই ছোট্ট একটা ফ্যান কিনতে আসলাম। যেন মশারির ভেতরেই চালিয়ে রাখতে পারি।
মার্কেট ঘুরে জানা গেছে, লোডশেডিংয়ে বৈদ্যুতিক সামগ্রীর কাটতি বাড়ায় সুযোগ নিচ্ছে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী। তারা উচ্চ মূল্যে নিম্ন মানের পণ্য গছিয়ে দিচ্ছেন সাধারণ ক্রেতাদের। তাই কোনো পণ্য কেনার ক্ষেত্রে তাড়াহুড়া না করে বাজারে দাম যাচাই করে কেনার পরামর্শ দেন সংশ্লিষ্টরা।
প্রসঙ্গত, চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে সীমিত পরিসরে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে সরকারকে লোডশেডিং দিতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেছেন, ‘আমরা প্রতিটি ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছি। কিন্তু এখন আমাদের লোডশেডিং দিতে হবে এবং বিদ্যুতের উৎপাদন সীমিত করতে হবে কারণ, আমাদের বিদ্যুতের ভর্তুকির পরিমান বহুগুণ বেড়ে গেছে।’
এমএ/এনএইচবি/এমএমএ/