বুধবার, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ | ২২ মাঘ ১৪৩১
Dhaka Prokash

আপনি কি জানেন, আত্মহত্যার চেষ্টা শাস্তিযোগ্য অপরাধ?

আত্মহত্যায় সহায়তা বা প্ররোচনাকারীকে দণ্ডবিধির ৩০৬ ধারা অনুযায়ী ১০ বছরের কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে। এ ছাড়া আত্মহত্যার চেষ্টাকারীর শাস্তি, দণ্ডবিধির ৩০৯ ধারায় এক বছরের কারাদণ্ড। এরপরও মানুষ নিজেকে নিজে হত্যার মতো সিদ্ধান্ত নেয় কেন? এমন নানান প্রশ্ন অনেকের মনেই দেখা দেয়।

গত মাসের ২ ফেব্রুয়ারি রাত ৯টার দিকে ধানমন্ডির ৭ নম্বর রোডের একটি বাড়ির লেভেল-৫ এর একটি ফ্ল্যাটে নিজে বন্দুক মাথায় ঠেকিয়ে গুলি চালিয়ে আত্মহত্যা করেন ব্যবসায়ী আবু মহসিন খান। আত্মহত্যার আগে তিনি চিরকুটে সবকিছু লিখে গেছেন। ব্যক্তিগত নানা হতাশার কারণে তিনি এ পথ বেছে নিয়েছেন। এরপর সারাদেশে এ বিষয়টি নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনা হয়। চোখের সামনে এমন একটি প্রাণ ঝরে পড়া কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছিলেন না অনেকেই।

চলতি বছরের ২৭ জানুয়ারি দুপুরে প্রেস ক্লাবের সামনে নিজের গায়ে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরানোর চেষ্টা করেন এক যুবক। ওই যুবকের নাম মামুন মিয়া (২৭)। আগুন দেওয়ার সময় সে বলে, ‘সবাই সরে যান। আমি গায়ে আগুন দেব।’ তখন উপস্থিত লোকজন ও পুলিশ সদস্যরা কিছু সময় চেষ্টা করে যুবকটিকে উদ্ধার করে শাহবাগ থানায় নিয়ে যান। এ ঘটনায় মামুনের বিরুদ্ধে ৩০৯ ধারায় একটি মামলা দায়ের করা হয়।

এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই শ্রী চম্পক চক্রবর্তী বলেন, সাধারণ আত্মহত্যায় চেষ্টা বা প্ররোচনা করলে ৩০৯ ও ৩০৬ ধারায় মামলা হয়। মামুনের বিরুদ্ধে সেটি হয়েছে।

এদিকে পুলিশ বলছে, আত্মহত্যায় প্ররোচনাকারীদের বিরুদ্ধে তেমন কোনো আইনত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় না। তবে মরার পরে অপমৃত্যু মামলা হয়। আইনে আত্মহননের চেষ্টা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। কাউকে আত্মহত্যার দিকে ঠেলে দেওয়া আরও বড় অপরাধ।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশ হেডকোয়ারটার্সের এক কর্মকর্তা বলেন, আত্মহত্যার চেষ্টা করে ব্যর্থ হওয়া এমন সব ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে তেমন কোনো আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হয় না। অনেক ঘটনা পুলিশের নজরে আসে আবার অনেক ঘটনা আসে না। এ বিষয়টি নিয়ে পুলিশ যথেষ্ট সচেতন রয়েছে।

আত্মহত্যার ওপর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গবেষণা

আত্মহত্যার ওপর পরিচালিত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক গবেষণায় দেখা গেছে, গত ৫০ বছরে বিশ্বে মূলত উন্নয়নশীল দেশগুলোতে আত্মহত্যার হার শতকরা ৬০ শতাংশ বেড়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশেই ২ দশমিক ০৬ শতাংশ। প্রতিবছর বাংলাদেশে প্রতি লাখে ২৮ দশমিক ০৮ জন মানুষ আত্মহত্যা করছে। প্রতিবছরই এ সংখ্যা বাড়ছে। বাংলাদেশের প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৩০ জন মানুষ আত্মহত্যা করছে।

এদিকে, ছাত্রভিত্তিক সামাজিক সংগঠন আঁচল ফাউন্ডেশন দাবি করছে, আগের তুলনায় বাংলাদেশে আত্মহত্যা ৪৪ দশমিক ৩৬ শতাংশ বেড়েছে। এদের মধ্যে নারীর ক্ষেত্রে ৫৭ শতাংশ ও পুরুষের ক্ষেত্রে ৪৩ শতাংশ।

আত্মহত্যার বিষয়ে নেই কাউন্সেলিংয়ের পর্যাপ্ত সুযোগ

এদিকে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আমাদের দেশে পর্যাপ্ত মানসিক কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা থাকলে হতাশাগ্রস্তদের কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে এ ধরনের ঘটনা অনেকাংশে কমানো সম্ভব হতো। আমাদের দেশে কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা যা আছে সেটা সীমিত। এসব সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে সরকারের ও আমাদের সকলের সহায়তা থাকলে আত্মহত্যার প্রবণতা কিছুটা ঠেকানো সম্ভব হবে। তা ছাড়া পরিবারের সদস্যদের এসব বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে।

আত্মহত্যা থেকে ফিরে আসছেন অনেকে, নিচ্ছেন মানসিক চিকিৎসা

মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে এমন বেশ কয়েকজনের সঙ্গে কথা হয় ঢাকাপ্রকাশের এ প্রতিবেদকের। বর্তমান আত্মহত্যার চেষ্টাকারীরা রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। অনেকে আবার সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরেছেন।

জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে বর্তমানে চিকিৎসা নিচ্ছেন ১৬ বছর বয়সী একটি মেয়ে। সে তিনবার আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে। মা ছোটবেলায় ছেড়ে চলে যাওয়ায় তিনি আর বেঁচে থাকার কারণ খুঁজে পাচ্ছে না। সৎমায়ের কাছে নানা যন্ত্রণায় বেড়ে ওঠা তার। তাই ঘুমের ওষুধ, ব্লেড, দড়ি এমনকি লবণ মিশিয়ে গুঁড়া সাবান খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে মেয়েটি।

কথা হয় আত্মহত্যা থেকে ফিরে আসা ঢাকা কমিউনিটি মেডিকেলের এক রোগীর সঙ্গে। ওই রোগির নাম আশিক বিল্লাহ (১৬)। তার গ্রামের বাড়ি মুন্সিগঞ্জ। তিনি দুবার গামছা দিয়ে আত্মহত্যা করার চেষ্টা করেছে। বর্তমানে চিকিৎসা নিচ্ছে।

আশিক বিল্লাহর বিষয়ে জানতে চাইলে তার বড় ভাই আশিকুর বলেন, প্রথমে একবার সে এই ঘটনা ঘটিয়েছে পরে আমাদের মনে হলো ওর চিকিৎসা প্রয়োজন এজন্য চার মাস ধরে চিকিৎসা করছি।

যা জানালেন চিকিৎসক

আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়ছে কেন? কীভাবে এসব রোগীদের চিকিৎসা করেন?- এমন প্রশ্নের জবাবে ঢাকা কমিউনিটি মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হসপিটালের সাইকিয়াট্রি বিভাগের অধ্যাপক ডা. সাহিদা চৌধুরী ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, এসমস্ত রোগীরা একাকিত্ব ও বিভিন্ন আতঙ্ক বোধ করেন। আমরা তাদের কৌশলে চিকিৎসা দিয়ে থাকি। যাতে পরবর্তীকালে এমন কোনো ঘটনা তারা না ঘটান। তবে এর প্রবণতা বাড়ার কারণ হচ্ছে বর্তমানে মানুষ পরিবারকে মোটেও সময় দিতে চাই না। অনেকে কাজে ব্যস্ত থাকে। আমার পরামর্শ হলো কর্মের পাশাপাশি প্রতিটা মানুষের পরিবারকে সময় দেওয়া উচিত। মানুষ এ বিষয়ে সতর্ক থাকলে এই ঘটনাগুলো অনেকটাই কমে আসবে বলে মনে করেন তিনি।

করোনাকালে সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যার ঘটনা

পুলিশ সদরদপ্তরের দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, করোনাকাল-২০২১ ও চলতি বছরে মানুষ বেশি আত্মহত্যা করেছে। গত বছরে পুরুষের থেকে নারীর আত্মহত্যার সংখ্যা ছিল বেশি। সঠিক কোনো তথ্য নেই তারপরও ধারণা করা হচ্ছে, চলতি বছরের শুরু থেকে এ পর্যন্ত নারীদের তুলনায় পুরুষেরা বেশি আত্মহত্যা করছে।

মহামারিকালে এক বছরে ১০১ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা

করোনাভাইরাস মহামারিকালে ২০২১ সালে সারাদেশে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালেয়ে ১০১ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন। আত্মহত্যাকারী শিক্ষার্থীদের ৬৫ জন পুরুষ, ৩৬ জন নারী। গবেষকরা মনে করছেন, মহামারির মধ্যে সামাজিক, আর্থিক ও পারিবারিক চাপে হতাশা বেড়ে যাওয়া এই আত্মহত্যার কারণ হতে পারে।

একটি পরিসংখ্যানের তথ্য মতে, মহামারিকালে চাকরির চিন্তা, দুশ্চিন্তা, বয়স ও বিভিন্ন বিষয় নিয়ে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে আত্মহত্যা করার চেষ্টা করছে অনেক শিক্ষার্থী।

পরিসংখ্যান ব্যুরো জানায়, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যা করেছে ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। যাদের সংখ্যা ৩ জন। আত্মহননকারীদের বয়সভিত্তিক তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২২-২৫ বছর বয়সীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা তুলনামূলকভাবে বেশি।

এ ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের পারিবারিক সমস্যার কারণে আত্মহত্যা করেছেন ৩৫ শতাংশ নারী-পুরুষ। এর বাইরে ২৪ শতাংশ সম্পর্কে টানাপোড়েনের কারণে এবং অজানা কারণে ৩২ শতাংশ মানুষ আত্মহত্যা করেছেন। আর্থিক ও লেখাপড়ার কারণে আত্মহত্যা করেছেন ৪ ও ১ শতাংশ।

আত্মহত্যার কারণ

মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, মানুষ নিজের আবেগ ধরে রাখতে পারে না। হতাশ হলে সামান্য কারণে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। দুশ্চিন্তা, উদ্বেগ থেকে মানুষ নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। মন খারাপ থেকেই মূলত মানুষ আত্মহত্যা করে।

সামাজিক, আর্থিক ও পারিবারিক চাপ বেড়ে যাওয়ায়, হতাশায় ভোগা আত্মহত্যার কারণ বলে মনে করছেন গবেষকরা। গবেষকদের দাবি, যৌতুক, নির্যাতন, বখাটের নিপীড়ন, আর্থিক টানাপোড়েন বা পারিবারিক কলহ মানুষকে আত্মহত্যার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। আইনে আত্মহননের চেষ্টা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। কাউকে আত্মহত্যার দিকে ঠেলে দেওয়া আরও বড় অপরাধ।

আত্মহত্যা রোধে করণীয়

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল‍্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অপরাধ বিশেষজ্ঞ তৌহিদুল হক বলেন, আত্মহত্যার প্রবণতা ঠেকাতে সম্পর্কের বন্ধন দৃঢ় করতে হবে। আত্মহত্যার ক্ষেত্রে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করা, এটা হচ্ছে বাংলাদেশের নতুন ট্রেন্ড। এই ট্রেন্ডটা মানুষ বেছে নিচ্ছে কেন? এটা একটা বিষয়। এই বিষয়ের ক্ষেত্রে আমার বিশ্লেষণটা হলো, মানুষ বেঁচে থাকার জন্য নানা ধরনের সম্পর্কে জড়িত হয় বা জড়িয়ে পড়ে। নানা ধরনের সংকট জীবনে তৈরি হয়। সংকটগুলোকে মোকাবিলা করে আমাদের এগিয়ে যেতে হয়।

এই অপরাধ বিশেষজ্ঞদের মতে, হঠাৎ সারাদেশে আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়ে যাওয়ার কারণ হলো, সামাজিক দায়বদ্ধতা এড়িয়ে চলা। সবাইকে সচেতন হতে হবে এবং পরিবারের সদস্যদের খোঁজখবর নিতে হবে। তাহলেই এমন অপরাধ অনেকটা কমে আসবে।

তিনি বলেন, ব্যক্তির প্রয়োজনে ব্যক্তিকে এগিয়ে আসা উচিত। কিন্তু বিষয়টা হলো আমাদের দেশের আত্মহত্যার বিষয়গুলো সামাজিক কলঙ্কজনক অধ্যায় হিসেবে আমরা দেখি। এসব বিষয়ে সরকারেরও একটা ভূমিকা প্রয়োজন। ‘আত্মহত্যাকে না বলুন’ এই স্লোগান সামনে রেখে এগোতে হবে। তাহলে কিছুটা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হবে।

কোনো বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আত্মহত্যায় প্ররোচনাকারীদের ক্ষেত্রে তাদের অবশ্যই শাস্তির আওতায় আনতে হবে। তাদের শাস্তি হলে এ ধরনের অপরাধ কমে আসবে।

কেএম/টিটি

Header Ad
Header Ad

আমরা কী করলাম, সেটি ভবিষ্যৎ প্রজন্ম বিচার করবে : প্রধান উপদেষ্টা

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি: সংগৃহীত

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, আমরা কী করলাম বা করলাম না- ভবিষ্যৎ প্রজন্ম সেটি দিয়ে আমাদের বিচার করবে।

বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে নিজ কার্যালয়ে জনপ্রশাসন ও বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন গ্রহণ অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন।

ড. ইউনূস বলেন, দেশের রাজনৈতিক দল ও অংশীজনদের ঐকমত্যে পৌঁছানোর জন্য এসব প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে এবং এর ভিত্তিতেই সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়িত হবে। তিনি আরও বলেন, "এটি জাতির জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ। আমি জাতির পক্ষ থেকে কমিশনের দুই চেয়ারম্যানসহ সকল সদস্যকে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।"

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, "এই দুটি প্রতিবেদন দেশের প্রতিটি মানুষের জীবনে প্রভাব ফেলবে। আপনি দরিদ্র, মধ্যবিত্ত বা ধনী যেই হোন না কেন, এই সংস্কারের প্রভাব থেকে কেউই বাদ যাবেন না।"

তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, "কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়িত হলে নাগরিকরা তাদের প্রকৃত অধিকার ফিরে পাবেন। আমরা যেন সত্যিকারের নাগরিক হিসেবে মর্যাদা পাই, সেটিই আমাদের প্রত্যাশা।"

সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন জনগণ, রাজনৈতিক দল ও সিভিল সোসাইটি অর্গানাইজেশনের হাতে তুলে দেওয়া হবে বলে জানান ড. ইউনূস। তিনি বলেন, "যাতে সবাই মনে করতে পারে, এখানে প্রকৃত সত্য বলা হয়েছে, ভুক্তভোগীদের বাস্তব চিত্র উঠে এসেছে। আমাদের তো পণ্ডিত হতে হবে না এটি বোঝার জন্য, কারণ প্রতিদিনই আমরা নানা অবিচারের শিকার হই।"

প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, "সংস্কার কমিশনের কাজ শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়, এটি বিশ্বব্যাপী গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। বিশ্বের দরবারে এটি তুলে ধরতে হলে এর ইংরেজি অনুবাদ করা প্রয়োজন।"

কমিশনের সদস্যদের প্রশংসা করে তিনি বলেন, "আপনাদের প্রজ্ঞা, অভিজ্ঞতা ও গবেষণার সংমিশ্রণে এই প্রতিবেদন তৈরি হয়েছে, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে এক স্মরণীয় দলিল হয়ে থাকবে।"

তিনি আরও বলেন, "আমরা কী করলাম বা করলাম না, ভবিষ্যৎ প্রজন্ম আমাদের সেই কাজের জন্যই বিচার করবে। তারা প্রশ্ন করতে পারে, আপনারা তো পেয়েছিলেন, তাহলে বাস্তবায়ন করেননি কেন? কারণ, সবকিছু তো বইয়ের পাতায় লেখা আছে। এই কাজ জাতির জন্য এক মূল্যবান স্মারক হয়ে থাকবে।"

Header Ad
Header Ad

হাসিনার বিচারের স্বার্থে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে: তারেক রহমান

সমাবেশে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপির) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, স্বৈরাচার শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার আগে দেশের সবকিছু ধ্বংস করে দিয়ে গেছে। বিএনপি নেতাকর্মীসহ অসংখ্য মানুষকে গুম ও খুন করে স্বৈরাচার ভারতে পালিয়ে গেছে। যে কোন মূল্যে পালিয়ে যাওয়া স্বৈরাচারের বিচার করতে হবে। এই প্রশ্ন গণতান্ত্রিক সব রাজনৈতিক দলকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।

বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে 'আমরা বিএনপি পরিবারের উদ্যোগে ফেনী, নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুর জেলায় জুলাই আগস্ট বিপ্লবে নিহত ৪৫ শহীদ পরিবারকে আর্থিক অনুদান এবং ‌র‌্যাবের গুলিতে নিহত যুবদল নেতা মোহাম্মদ মাসুদের পরিবারকে ঘর উপহার উপলক্ষ্যে সোনাগাজী সরকারি ছাবের পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে আয়োজিত সমাবেশে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

তারেক রহমান আরও বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সংস্কারের কথা বলে যে সময়ক্ষেপণ করছে এবং সংস্কার কাজ দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর করছে, তা কোনো ষড়যন্ত্রের অংশ কি-না সে ব্যাপরে সবাই সজাগ থাকতে হবে।

এ সময় তিনি বলেন, পতিত স্বৈরাচার বিগত ১৭ বছর মানুষের অধিকার কেড়ে নিয়েছিল । সে অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য বিএনপির নেতাকর্মীরা রাজপথে লড়াই করে বুকের তাজা রক্ত বিলিয়ে দিয়েছেন। মহান মুক্তিযুদ্ধ, বিগত ১৭ বছরের লড়াই এবং ২৪এর জুলাই আগস্টের বিপ্লবের চেতনায় আগামীর বাংলাদেশ বিনির্মানে সবাইকে সংগ্রাম অব্যাহত রাখতে হবে। এখন দেশে যে সংস্কারের আলোচনা চলছে সেই সংস্কার প্রস্তাব বিগত আড়াই বছর পূ্র্বে আমরাই দিয়েছিলাম। স্বৈরাচার আমাদের সংস্কার প্রস্তাব আমলে নেয়নি। আর সেই বিশ্বাস থেকেই আমরা জাতির সামনে ৩১ দফা উপস্থাপন করেছি। কারণ বিএনপি দেশ ও জনগণ নিয়ে ভাবে। দেশের কল্যাণে কাজ করতে চায়।

দ্রুত জাতীয় নির্বাচনের তাগিদ দিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকার দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পেলে দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা হবে এবং শহীদদের স্বপ্নের দেশ বিনির্মাণ হবে।

বিএনপি দেশ ও জনগণের কল্যাণে কাজ করতে প্রস্তুত উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, বিএনপি সব সময়ই দেশ ও জনগণের কল্যাণ নিয়ে ভাবে। এর বড় কারণ হলো- দেশের জনগণ বিএনপির উপর আস্থা রাখতে চায়। কীভাবে রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি আরও জনপ্রিয় হয়ে উঠবে এবং দেশ ও জনগণের কল্যাণে কাজে আসবে নেতাকর্মীদের সে বিষয়ে সজাগ থাকতে হবে।

আমরা বিএনপি পরিবার কেন্দ্রীয় কমিটির আহবায়ক আতিকুর রহমান রুমনের সভাপতিত্বে ও ফেনী পৌর বিএনপি'র সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট মেজবাহ উদ্দিন ভূঁইয়া ও আমরা বিএনপি পরিবার কেন্দ্রীয় কমটির সদস্য সচিব মোকছেদুল মোমিন মিথুনের যৌথ পরিচালনায় বক্তব্য রাখেন বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, আব্দুল আউয়াল মিন্টু, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভেকেট রুহুল কবির রেজভী, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা জয়নাল আবেদীন ফারুক,জয়নাল আবেদীন ভিপি জয়নাল, যুগ্ম-মহাসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, কোষাধ্যক্ষ এম রশিদুজ্জামান মিল্লাত, চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক হারুনুর রশিদ হারুন, সহ প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক রেহানা আক্তার রানু, নির্বাহী কমিটির সদস্য বেলাল আহমেদ, অ্যাডভোকেট শাহানা আক্তার শানু, আবদুল লতিফ জনি, জালাল আহমদ মজুমদার, মামুনুর রশিদ মামুন, মশিউর রহমান বিপ্লব, ফেনী জজ কোর্টের পিপি অ্যাডভোকেট মেজবাহ উদ্দিন খান, জেলা বিএনপির আহবায়ক শেখ ফরিদ বাহার, যুগ্ম আহবায়ক গাজী হাবিব উল্লাহ মানিক, সদস্য সচিব আলাল উদ্দিন আলাল, সোনাগাজী উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক জামাল উদ্দিন সেন্টু, সদস্য সচিব সৈয়দ আলম ভূঞা, শহীদ ছাত্রদল নেতা কাওছার উদ্দিনের পিতা ফিরোজ আলম, শহীদ মেহাম্মদ মাসুদের কন্যা মুনতাহা বিনতে মাসুদ ও শহীদ জাফর আহমদের কন্যা জাহানারা বেগম প্রমুখ।

এসময় ২০১৬ সালের ২৫ জুন র‌্যাবের গুলিতে নিহত মোহাম্মদ মাসুদের পরিবারকে ঘর এবং ফেনী, নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুরে চব্বিশের ছাত্র-জনতার গণআন্দোলন চলাকালে নিহত ৪৫ শহীদ পরিবারসহ আহতদের প্রায় ২৫ লাখ টাকার মাঝে আর্থিক অনুদান প্রদান করা হয়।

Header Ad
Header Ad

মুক্তিপনের প্রতিবাদ করায় ছাত্রদল নেতাকে কুড়াল দিয়ে কোপালেন আ'লীগের কর্মিরা

ছবি : ঢাকাপ্রকাশ

নওগাঁর বদলগাছীতে মুক্তিপনের প্রতিবাদ করায় এক ছাত্রদল নেতাকে কুড়াল দিয়ে কুপিয়েছে স্থানীয় আ'লীগের কর্মিরা। মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি) সন্ধায় উপজেলার বিলাশবাড়ী ইউনিয়নের কটকবাড়ি এলাকায় তাকে কুপিয়ে আহত করা হয়। আহত অবস্থায় তাঁকে নওগাঁ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

আহত সিহাব নওগাঁ নামাজগড় গাউসুল আজম কামিল মাদ্রাসার শিক্ষার্থী ও উপজেলার বিলাশবাড়ী ইউনিয়ন ছাত্রদলের সদস্য ও একই এলাকার বাসিন্দা।

পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, বদলগাছী সদর এলাকার রাসেল ও সাথী নামে দুই যুবক-যুবতী গতকাল বিকালে নওগাঁ থেকে মার্কেট করে ফেরার পথে কটকবাড়ী এলাকায় মোটরসাইকেল থামিয়ে নদীর ধারে ঘোরাঘুরি করছিল। সন্দেহ হলে ঐ এলাকার আওয়ামী লীগের কর্মি প্লাবন,অনিক,আশিক, রাকিব,ইয়াজুলসহ ১০-১৫ জন কর্মি তাদের আটক করে মারধর করে। পরে তাদের নদীর ধারে নির্জন এলাকায় নিয়ে গিয়ে দশ হাজার টাকা মুক্তিপন দাবি করে। বিষয়টি জানাজানি হলে ছাত্রদল কর্মী সিহাব সহ গ্রামবাসি ঐ ছেলে মেয়েকে উদ্ধার করে থানায় খবর দেয়। তাতেই ক্ষিপ্ত হয়ে আওয়ামী লীগের কর্মি কয়েকজন অতর্কিতভাবে তাঁর ওপর হামলা চালায়। একপর্যায়ে ধারালো কুড়াল দিয়ে কুপিয়ে সিহাব কে রক্তাক্ত অবস্থায় ফেলে পালিয়ে যায়। খবর পেয়ে স্বজনেরা সেখানে গিয়ে সিহাব কে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে নওগাঁ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে তিনি চিকিৎসাধীন।

বদলগাছি উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য নাহিদ রানা ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, ‘হামলাকারীরা আওয়ামী লীগ সমর্থিত নেতা কর্মি। মুক্তিপনের প্রতিবাদ করায় তার ওপরে হামলা করেছে।’

বদলগাছী উপজেলা ছাত্রদলের সদস্য সচিব সুমন হোসেন ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, ‘দলের দুঃসময়ের কর্মী সিহাব। ন্যাক্কারজনক এ হামলার ঘটনায় দোষীদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন তিনি।’

তবে অভিযোগ ওঠা যুবকদের সাথে যোগাযোগ করা না গেলেও তাদের মধ্যে রিয়াজুল নামের এক অভিভাবক দায়সারা জবাব দেন। তিনি বলেন, ওই দুই যুবক-যুবতী অনৈতিক কার্যকলাপ করার জন্য এসেছিল। তাদের সন্দেহ হলে এলাকার ছেলেরা ধরে বিচার করতে চেয়েছিল। সিহাব এখানে এসে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলে একটু হাতাহাতি হয়েছে বলে শুনেছি।

এ প্রসঙ্গে বুধবার (৫ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় বদলগাছী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শাহজাহান আলী ঢাকাপ্রকাশকে বলেন , ‘ছাত্রদল কর্মী চিকিৎসাধীন অবস্থায় আছে নওগাঁ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। এখনো অভিযোগ হাতে আসেনি। তবে হামলাকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।’

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

আমরা কী করলাম, সেটি ভবিষ্যৎ প্রজন্ম বিচার করবে : প্রধান উপদেষ্টা
হাসিনার বিচারের স্বার্থে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে: তারেক রহমান
মুক্তিপনের প্রতিবাদ করায় ছাত্রদল নেতাকে কুড়াল দিয়ে কোপালেন আ'লীগের কর্মিরা
খুব দ্রুতই জবি ছাত্রদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠিত হবে: ছাত্রদল সভাপতি
বগুড়ায় ৫০ টাকা অফারে টি-শার্ট কিনতে গিয়ে হুলস্থুল কান্ড, নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনী
নওগাঁ সীমান্তে বাংলাদেশি যুবককে ধরে নিয়ে গেছে বিএসএফ
মোহাম্মদপুরে বিড়াল হত্যার অভিযোগে আদালতে মামলা, তদন্তের নির্দেশ
চুয়াডাঙ্গায় সার কাণ্ডে বিএনপি ও যুবদলের ৫ নেতা বহিষ্কার
আজ বন্ধুর সাথে গোসল করার দিন
২ আলাদা বিভাগসহ দেশকে ৪ প্রদেশে ভাগ করার সুপারিশ
শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টা মামলায় হাইকোর্টের রায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ৯ আসামিসহ সবাই খালাস
হাসিনার লাইভ প্রচারের আগেই নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের ফেসবুক পেজ উধাও
হাইকোর্ট প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের ওপর বিএনপি নেতাকর্মীদের হামলা
বিচারবিভাগ ও জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন হস্তান্তর
গাজীপুরে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সবজিবাহী পিকআপ খাদে, চালকসহ নিহত ৩
নতুন রাজনৈতিক দল গঠনে জনগনের মতামত চাইলো হাসনাত  
এই ফটো তোলোস কেন? আদালত চত্বরে শাহজাহান ওমর  
মনে হচ্ছে বিবিসি বাংলা গণহত্যাকারী শেখ হাসিনার ভক্ত : প্রেস সচিব  
পটুয়াখালীতে বাংলাভিশনের সাংবাদিককে কুপিয়ে জখম  
উত্তরবঙ্গে অনির্দিষ্টকালের জন্য তেল বিক্রি বন্ধ