রমজান সামনে রেখে ছোলার বাজারে উত্তাপ
রমজানকে সামনে রেখে উত্তাপ ছড়াচ্ছে ছোলার বাজার। রমজানের সবচেয়ে মুখরোচক এই খাবারের চাহিদা সারাবছর জুড়ে যতো না তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি থাকে রমজান মাসে। আর এই সুযোগেই অসাধু ব্যবসায়ীরা ইতোমধ্যে ছোলার দাম বাড়াতে শুরু করেছেন। ৮০ থেকে ৮৫ টাকা কেজির ছোলা এখনই বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ৯৫ টাকা। যদিও রমজানের চাহিদা মাথায় রেখে ইতোমধ্যে ছোলা আমদানিও শুরু হয়েছে। কিন্তু তাতে খুব একটা আশার আলো দেখা যাচ্ছে না।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দেশে বছরে ছোলার চাহিদা দেড় লাখ টন। রমজানে ইফতারির অন্যতম উপকরণ হিসেবে ছোলার চাহিদা বাড়ে। রমজান মাসের চাহিদা বিবেচনা করে গত চার মাসে অতিরিক্ত প্রায় দেড় লাখ টন ছোলা আমদানি করতে এলসি খোলা হয়েছে। ইতোমধ্যে অনেকগুলো দেশে চলেও এসেছে।
রবিবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর কারওয়ান বাজারসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে এবং টিসিবি, ট্যারিফ কমিশন, বাংলাদেশ ব্যাংক ও এফবিসিসিআই সূত্রে এ সব তথ্য জানা গেছে।
ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই ও বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন সূত্রে জানা গেছে, দেশে ছোলার চাহিদা বছরে দেড় লাখ টন। রমজান মাসে এর চাহিদা ব্যাপকভাবে বেড়ে যায়। তাই অতিরিক্ত দরকার হয় এক লাখ টন। অন্যান্য মাসে দশমিক ৫ টন প্রয়োজন হয়। আর দেশে উৎপাদন হয় দশমিক ৬ টন। তারপরও আমদানি হয়েছে ২ লাখ টনের মতো। আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি কেজি ছোলার দর হচ্ছে ৬৯ টাকা ৬৫ পয়সা। এক মাস আগে ছিল ৬৮ টাকা ৯২ পয়সা। আর এক বছর আগে ছিল ৭৪ টাকা ৭৫ পয়সা।
বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, অন্যান্য পণ্যের মতো রমজানকে সামনে রেখে ছোলার আমদানি গত চার মাসে অনেক বেড়েছে। তাদের তথ্যমতে, গত অক্টোবরে এলসি খোলা হয়েছে ৮ হাজার ৬১০ টন, নভেম্বরে প্রায় ১৭ হাজার টন, ডিসেম্বরে প্রায় ৫০ হাজার টন। আর গত জানুয়ারি মাসে এলসি খোলা হয়েছে প্রায় ৫৮ হাজার টন। এভাবে চার মাসে এলসি খোলা হয়েছে এক লাখ ৩৩ হাজার টন।
ইতোমধ্যে এলসি খোলা ছোলার একটা বড় অংশ দেশে চলে এসেছে। গত জুলাই থেকে ডিসেম্বরে এলসি নিষ্পত্তি (দেশে এসেছে) হয়েছে সাড়ে ৫৩ হাজার টন। জানুয়ারিতে এসেছে ২১ হাজার টন। সাত মাসে দেশে ছোলা এসেছে ৭৪ হাজার ৫০০ টন। আর চাহিদা ৩ টনেরও কম। পর্যাপ্ত ছোলা থাকার পরও হঠাৎ করেই রমজানের আগে আগে ছোলার দাম বাড়ছে কোনো কারণ ছাড়াই।
টিসিবির সূত্র বলছে, বর্তমানে প্রতি কেজি ছোলা বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ৯৫ টাকা। অথচ এক সপ্তাহ আগে প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে ৮৫ থেকে ৯০ টাকা। আর ঠিক একমাস আগে খুচরা বিক্রেতারা প্রতি কেজি ছোলা বিক্রি করেছেন ৮৫ থেকে ৯০ টাকা। এক বছর আগে ছিল ৭০ থেকে সর্বোচ্চ ৮০ টাকা।
এদিকে ভোক্তারা বলছেন, এত আমদানির পরও রমজান মাসকে সামনে রেখে ছোলার দাম কেন বাড়ছে এটা তাদের মাথায় যাচ্ছে না। মোহাম্মদপুর টাউন হল মার্কেটে কথা হয় ক্রেতা নুরুল হুদার সঙ্গে। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আসলে দেশে হচ্ছে কী? সরকার বলছে, চাহিদার চেয়ে বেশি আছে। দামও কম। কিন্তু বাজারে এসে দেখি কোনো মিল নেই। কয়েক মাসের ব্যবধানে কেজিতে ২০ টাকা বেড়েছে।
টাউনহলের মনির জেনারেল স্টোরের মনির ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, আমরা কী করব? ৮৪ টাকা কেজি কিনে ৯০ টাকায় বিক্রি করছি। যা কয়েক মাস আগেও ৭৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছি। আমরা পাইকারদের কাছ থেকে কিনে থাকি। গোড়াতেই দাম বাড়াচ্ছে। তাদের ধরলেই বাজার স্থির থাকবে। আমদানিকারকদের সিন্ডিকেটেই দাম বাড়াচ্ছে।
শুধু টাউনহলই নয়, বাড়তি দামে ছোলা বিক্রি হচ্ছে কারওয়ান বাজারসহ সব বাজার এবং পাড়া-মহল্লার দোকানেও।
কারওয়ান বাজারের আল্লাহর দান স্টোরের শাহ আলম বলেন, আমরা সামান্য লাভে বিক্রি করি। মূল্য তালিকা ঝুলানো আছে। এর বেশি দামে বিক্রি করি না। এ সময় আলী হোসেন নামে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত এক ক্রেতা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এখনো রমজান আসতে একমাস বাকি। তারপরও কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে গেছে। দেখার কি কেউ নেই?
মোহাম্মদপুরের ফিউচার মডেল টাইন হাউজিংয়ের আল আমিন এন্টারপ্রাইজের আনোয়ার হোসেনও বলেন, বেশি দামে কেনা। আমরা অল্প লাভে বিক্রি করি।
এফবিসিসিআইর সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন সম্প্রতি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রীর মজুদ, আমদানি, সরবরাহ ও মূল্য পরিস্থিতি বিষয়ক মতবিনিময় সভায় হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে বলেছেন, কৃত্রিম সংকট তৈরির মাধ্যমে কেউ যাতে বাজার অস্থিতিশীল না করে। সে বিষয়ে ব্যবসায়ীদের সচেতন থাকতে হবে।
সিনিয়র সহ-সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু বলেছেন, সারাবিশ্বে যেখানে উৎসব এলে ব্যবসায়ীরা পণ্যের দাম কমিয়ে দেন, সেখানে আমাদের দেশের ব্যবসায়ীরা পণ্যের দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছে। উৎসবে পণ্যের দাম বাড়ানোর সংস্কৃতি থেকে বেড়িয়ে আসতে হবে।
এনএইচবি/আরএ/