দালালের দৌরাত্ম্য রাজশাহীর পাসপোর্ট অফিস
রাজশাহী বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিসের বারান্দায় বছর ধরে ধরনা দিচ্ছেন অনেকেই। প্রতিদিন শতশত সেবাপ্রার্থী ভিড় জমাচ্ছেন। আর কিছু অসাধু কর্মচারী-কর্মকর্তা এসব সেবপ্রার্থীকে নানা ছুতোই দুর্ভোগে ফেলে দালালের সহযোগিতা নিয়ে কাজ করতে বাধ্য করেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
সেবাপ্রার্থীদের অভিযোগ, সরকারি নিয়মানুযায়ী যারা পাসপোর্ট করাতে চান এখানে তাদের দুর্ভোগের শেষ থাকে না। দিনের পর দিন, মাসের পর মাসই শুধু নয়; বছরের পর বছর ঘুরানোর রেকর্ডও রয়েছে। কিন্তু এসব দেখার যেন কেউ নেই। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সেবাপ্রার্থী জানান, এ অফিসের আনসার সদস্যসহ অন্যরাও এই সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত। দালালের পাশাপাশি প্রকাশ্যেই আনসার সদস্যরাও টাকা নিয়ে কাজ করে দেন। আবেদনের জন্য আজ সার্ভারের সমস্যা, কাল নেটওয়ার্কের সমস্যা এমন নানা অজুহাত দেখিয়ে ঘুরাতে থাকে। এদিকে দালালকে ১৫০০ টাকা দিলে সহজেই কাজ হয়ে যায়।
অভিযোগ রয়েছে, ভুল সংশোধন নামে ফাঁদে একবার কেউ পড়লে মোটা অঙ্কের কমিশন ছাড়া পাসপোর্ট হাতে পাওয়া যেন অসম্ভব বিষয়।
সংশ্লিষ্টদের তথ্য মতে, রাজশাহীতে পাসপোর্টের জন্য যে আবেদন পড়ে এর প্রায় ৫০ শতাংশই পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে চিকিৎসা করতে যেতে। সেবাপ্রার্থীরা জরুরি ভিত্তিতে পাসপোর্ট করাতে তাই দালালের সহযোগিতা নিচ্ছেন বেশি। কারণ আপনজনের সুস্থতার কথা চিন্তা করে বাধ্য হচ্ছেন দালালের সহযোগিতা নিতে। এতে সুসংগঠিত দালাল চক্র আরও শক্তিশালী হচ্ছে। বাড়ছে দালালের দৌরাত্ম্যও।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সরকারি একটি দপ্তরের সাবেক কর্মকর্তা রাজশাহী নগরীর উপশহর এলাকার এক বাসিন্দা জানান, তার চিকিৎসার প্রয়োজনে থাইল্যান্ডের ভিসা করতে বছর খানেক সময় লেগেছে। তার পাসপোর্টের নামের আগে ইংরেজিতে ‘মোহা’ লেখা ছিল। সরকারিভাবে নির্দেশনাই ‘এমডি’ লিখতে হবে। তাই রেনুয়্যাল (হালনাগাদ) করা হয়েছে।
তিনি জানান, চলতি বছরের জানুয়ারিতে আবেদন করে সম্ভাব্য ফেব্রুয়ারিতে পাসপোর্ট পাওয়ার কথা থাকলেও তা পাননি। নানা টালবাহানা শুরু করে তারা। পরে মাসের পর মাস ঘুরে একজনের পরিচয় দেওয়ার পর পাসপোর্ট হাতে পান।
আরেকজন ভুক্তভোগী জানান, তিনি ২০২১ সালে পাসপোর্টের জন্য আবেদন করেন। পাসপোর্ট হাতে পাওয়ার পরে দেখেন নামের বানান ও জন্ম সালে ভুল ধরা পড়েছে। সঙ্গে সঙ্গে সংশোধনের জন্যও আবেদন করা হয়। কিন্তু এক বছরের বেশি সময় পার হলেও তা আর ঠিক হয়নি।
এ বিষয়ে রাজশাহী বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা অফিসের উপপরিচালক মোহাম্মদ কামাল হোসেন খন্দকার জানান, এ অফিসে তিনি একমাত্র কর্মকর্তা। সবাইকে ওইভাবে মনিটরিং করা সম্ভব না। তবে যেহেতু অভিযোগ এসেছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখব। আর কোনো নির্দিষ্ট আনসার সদস্য বা অন্য কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ করলেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি আরও জানান, গত মাসে তাদের অফিসে প্রায় ৩ হাজার ৬০০’র মতো আবেদন হয়েছে। গড়ে আবেদনের সংখ্যা এমনই থাকে। প্রতিদিন গড়ে প্রায় শতাধিক আবেদন থাকছেই। একারণে দীর্ঘ লাইন তৈরি হয়। আর এই অফিসে নেটওয়ার্কের কিছু সমস্যা আছে। এতে কিছুটা দুর্ভোগ তৈরি হতে পারে। তবে এটা সত্য ভুল সংশোধনের জন্য একটু সময় বেশি লাগে। তাবে তারা যতটা দ্রুত সম্ভব পাসপোর্ট দেওয়ার চেষ্টা করেন।
এসএন