করোনায় প্রাণ হারালেন প্রবাসে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক নূরুল ইসলাম
করোনায় আক্রান্ত হয়ে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, লেখক ও সাংবাদিক নুরুল ইসলামের মৃত্যু হয়েছে।
মঙ্গলবার (১১ জানুয়ারি) স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় যুক্তরাজ্যের লন্ডনের একটি হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
তার বয়স হয়েছিলে ৮৯ বছর। করোনায় আক্রান্ত হয়ে গত ২৭ ডিসেম্বর থেকে তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন।
১৯৩২ সালের ১ জুন সিলেট সদর থানার সদরখলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন নূরুল ইসলাম। সিলেট এমসি কলেজে ১৯৫২-৫৩ সালে কলেজ ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক নির্বচিত হন। ১৯৫৩-৫৪ সালে তিনি সিলেট মহকুমা (বর্তমান সিলেট জেলা) ছাত্র ইউনিয়নের (ইপসু) প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। তখন ভাষা আন্দোলনের পাশাপাশি যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে কাজ করেন।
১৯৬৫ সালে বার অ্যাট ল পড়তে বিলেতে যান তিনি। লন্ডনে ১৯৫৮ সালের আইয়ুববিরোধী আন্দোলনের অন্যতম নেতা, ১৯৬৩ সালে ‘ন্যাশনাল ফেডারেশন অব পাকিস্তান অ্যাসোসিয়েশন ইন গ্রেট ব্রিটেন’ গঠনের অন্যতম প্রধান এবং ১৯৬৪ সালে ‘ইস্ট পাকিস্তান হাউস’-এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন সদ্য প্রয়াত নূরুল ইসলাম।
১৯৬৬ সালে বাংলাদেশে ভ্রমণ করার সময় ‘স্বাধীনতার নামে বিচ্ছিন্নতাবাদী’ আন্দোলনে জড়িত থাকার অভিযোগে তাকে গ্রেপ্তার করে তার পাসপোর্ট বাজেয়াপ্ত করা হয়।
এ ছাড়া ৬ দফা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান ও মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্নেহধন্য ছিলেন নূরুল ইসলাম। স্বাধীনতা লাভের পর বৃহত্তর সিলেট জেলাকে পূণর্গঠনের জন্য দেওয়ান ফরিদ গাজীর নেতৃত্বে সিলেটের সকল পার্লামেন্ট সদস্যকে নিয়ে গঠিত ‘সিলেট জেলা প্রশাসন পরিষদ’-এর সচিব ছিলেন। একই সঙ্গে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর দোসর ঘাতক-দালাল ও রাজাকারদের বিচারের জন্য গঠিত ‘সিলেট জেলা ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটি’র সঙ্গেও দীর্ঘদিন কাজ করেন।
১৯৭২ সালে ‘প্রবাসী বাঙালি কল্যাণ বোর্ড’ গঠিত হলে, এটির সচিব হিসেবে কাজ করেন। ১৯৭৮ সালে সিলেটে ‘বাংলাদেশ ওভারসিজ সেন্টার’ প্রতিষ্ঠা করা হলে নুরুল ইসলাম এটির ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য নির্বাচিত হন। যুক্তরাজ্যে বাঙালিদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দাবি-দাওয়া আদায়ের আন্দোলনের পাশাপাশি সাংবাদিকতার সঙ্গেও জড়িত ছিলেন তিনি। লন্ডন থেকে প্রকাশিত দেশের ডাক, পাকিস্তান টু-ডে ও পাকিস্তান থেকে প্রকাশিত ডন পত্রিকার লন্ডন প্রতিনিধি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৬৮ সাল থেকে বাংলাদেশ টাইমস এবং সিলেট থেকে প্রকাশিত সিলেট বার্তা পত্রিকার লন্ডন প্রতিনিধি হিসেবেও কাজ করেন।
মৃত্যুর আগ পর্যন্ত লেখালেখি করেই অবসর জীবন কাটাচ্ছিলেন তিনি। তার প্রকাশিত গ্রন্থগুলোর মধ্যে ‘প্রবাসীর কথা’ (ইতিহাস: প্রবাসী পাবালকেশন্স, সিলেট: ১৯৮৯)। ইংরেজি: ‘Sojourners to Settelers: The Tales of Immigrants’ (Bangla Academy, Dhaka (2013) উল্লেখযোগ্য।
নূরুল ইসলাম ২০১২ সালে বাংলা একাডেমির ফেলোশিপ লাভ করেন। প্রবীণ এ কমিউনিটি নেতার মৃত্যুতে বিলেতের বাংলাদেশি কমিউনিটিতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
এসএন