উজ্জ্বল বর্ণের দেশি মান্দার
গ্রামে স্বাভাবিকভাবে বেঁচে থাকা মান্দার বা মাদার ক্রমেই বিলীন হতে চলেছে। ‘অকেজো’ গাছ হিসেবে এর বিস্তার রোধ করা হচ্ছে। বেড়ার কাজে মাদারের পরিবর্তে ব্যবহৃত হচ্ছে কারখানায় তৈরি বিভিন্ন ধরনের সামগ্রী। বিকল্প জ্বালানি হিসেবে এখন স্থান করে নিয়েছে এলপিজি গ্যাস। এসব কারণেও মাদারের উপযোগিতা কমেছে; কিন্তু আমাদের কাছে গাছটির পৌষ্পিক ঐশ্বর্যের আবেদন একটুও কমেনি। নগরপ্রকৃতিতে এ গাছ দুর্লভ। আছে আমদানি করা অন্য মাদারের ফুল।
বসন্তের শুরুতেই পাতাহীন ডালে থোকা থোকা উজ্জ্বল লাল রঙের ফুল ফোটানো দেশি বা পাইন্যা মাদারের বর্ণিল শোভা সত্যিই মনোমুগ্ধকর। ফুলের এমন নয়নাভিরাম শোভা থেকে সত্যিই চোখ ফেরানো যায় না। ফুল ঝরে যাওয়ার পর সীমের মতো লম্বা লম্বা ফলগুলো ঝুলতে থাকে।
মান্দার ফুলের ছবিটি লক্ষীপুরের রামগতির বড়খেরি গ্রাম থেকে তোলা ছবি: মোকারম হোসেন
ফুলের এমন সৌন্দর্য কবির মনকেও নাড়া দিয়েছে। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম পারিজাতকে নিয়ে গান বেঁধেছেন–
‘পরো কুন্তলে, ধরো অঞ্চলে
অমলিন প্রেম-পারিজাত।’
মান্দারের (Erythrina fusca) আরেক নাম পারিজাত। পারিজাত স্বর্গীয় ফুল। প্রাচীন কবিতায়ও এ ফুলের সন্ধান পাওয়া যায়। ঢাকার বিভিন্ন পার্ক ও পরিত্যক্ত স্থানে অল্প কয়েকটি গাছ দেখা যায়। আদি আবাস আমাদেরই এই উপমহাদেশ।
আমাদের দেশে কয়েক ধরনের মান্দার চোখে পড়ে। সবচেয়ে বেশি পার্থক্য চোখে পড়ে শহর আর গ্রামের গাছগুলোর মধ্যে। গ্রামের গাছগুলো অনেক আগে থেকেই আমাদের প্রকৃতিতে ছিল। আর শহরের গাছগুলো এসেছে পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চল থেকে। এ বছর ফেব্রুয়ারির শুরুতে নোয়াখালী ও লক্ষীপুরের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে মান্দারের ফুল ফুটতে দেখেছি।
মান্দার মূলত মাঝারি উচ্চতার গাছ। প্রজাতিভেদে এদের কাণ্ড ও ডালপালা ভিন্ন ভিন্ন ধরনের হতে পারে। শীতকালে সবপাতা ঝরে পড়ে। বসন্তের শুরুতেই পাতাহীন ডালে থোকা থোকা উজ্জ্বল লাল রঙের ফুল ফোটে। ফুলের এমন নয়নাভিরাম শোভা থেকে সত্যিই চোখ ফেরানো যায় না। ফুল ঝরে যাবার পর সীমের মতো লম্বা লম্বা ফলগুলো ঝুলতে থাকে।
তবে এমন সুন্দর এই ফুলটির কোনো গন্ধ নেই। মান্দারের ভেষজগুণ অনেক। শিশুদের নানান রোগসহ আমাশয় রোগের প্রতিশেধক হিসেবে মান্দার ব্যাপকভাবে ব্যবহার্য।
এসএ/