ইউক্রেন সংকট আমাদের জন্যও চ্যালেঞ্জ
রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ যদি দীর্ঘস্থায়ী হয়, তাহলে এর ক্ষতিকর প্রভাব শুধু যুদ্ধরত দুই দেশেই পড়বে, এমন নয়। বিশ্বজুড়েই এর প্রভাব পড়বে। ইতিমধ্যেই আমরা দেখতে পাচ্ছি, এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। ব্যবসা বাণিজ্য বন্ধ হয়ে যাওয়াসহ মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। বেশ কয়েকটি দেশ রাশিয়ায় তাদের ফ্লাইট বাতিল করেছে।
বলাই বাহুল্য, চাপের মুখে রুশ ইউক্রেন বৈঠক শুরু হলেও সেটি নিস্ফল হয়েছে। আমরা জানি, অনেকটা জোরপূর্বকই রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করেছিল নিজেদের কর্তৃত্ব দেখাতে গিয়ে। যে কারণে ভীষণভাবে রাশিয়া আজ সমালোচনার সম্মুখীন। ইতিমধ্যে বেশিরভাগ দেশ ও সংস্থাই যেমন ইউক্রেনকে সমর্থন জানিয়েছে, তেমনি রাশিয়াকে একঘরে করে দিয়েছে এবং দিচ্ছে। ন্যাটোও রাশিয়ার ডাকে সাড়া দেয়নি। বরং রাশিয়ার বিপক্ষে ভূমিকা নিয়েছে ন্যাটো।
রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণ ইউরোপের সংকট বলে মনে হলেও পুরো বিশ্বেই এর ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে এবং বিশ্ব রাজনীতিতে পটভূমি পরিবর্তন হবে। এ থেকে বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়াও বাদ যাবে না। কাজেই রাশিয়া ইউক্রেন সংকট আমাদের জন্যও একটি চ্যালেঞ্জ আমি মনে করি। বাংলাদেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ বেশ কয়েকটি প্রকল্পে কাজ করছে রাশিয়া। বাংলাদেশ নিজেদের সামরিক সরঞ্জাম, খাদ্যপণ্য ইত্যাদি আমদানি করে রাশিয়া থেকে। তা ছাড়া এখন তৈরি পোশাক শিল্পের নতুন বাজার হিসাবেও বিবেচনা করা হচ্ছে রাশিয়াকে। কাজেই এই সংকট বাংলাদেশকেও মোকাবিলা করতে হচ্ছে এবং হবে ভালোভাবেই–সেটিও আমাদের মনে রাখতে হবে।
এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ মাঝামাঝি অবস্থানে থাকবে বলেই মনে করা হচ্ছে। শান্তিপূর্ণ দেশ হিসেবে আমরা চাই, অবিলম্বে রাশিয়া এই সংঘর্ষ বন্ধ করুক। আমি মনে করি, এই ধরনের যুদ্ধ যেমন অপ্রয়োজনীয়, তেমনি অহেতুক একটি চ্যালেঞ্জ। এই যুদ্ধটি যেমন অপ্রয়োজনীয়, মানুষের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে একইভাবে অন্যায়ভাবে ইউক্রেনের উপর এই অযাচিত আক্রমণ অন্যান্য দেশের জন্য কূটনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রেও বেশ জটিলতা সৃষ্টি করেছে।
ইউক্রেনকে ঘিরে ইউরোপে উত্তেজনা এখন চরমে। একদিকে আছে রাশিয়ানরা যারা ইউক্রেনের সীমান্তে কয়েক লাখ সৈন্য সমাবেশ ঘটিয়েছে। অন্যদিকে ন্যাটো জোটও তাদের সামরিক তৎপরতা বাড়িয়েছে রাশিয়ার বিরুদ্ধে।
ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরুর পর রাশিয়ার বিরুদ্ধে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্র দেশগুলো।
ইউক্রেন ন্যাটোর সদস্য হবে, সেটা রাশিয়া কোনোভাবেই মানবে না। রাশিয়া যখনই দেখল যে, ইউক্রেন তাদের প্রভাবের বাইরে চলে যাচ্ছে, তখন প্রেসিডেন্ট পুতিন সেখানে হস্তক্ষেপ করার সিদ্ধান্ত নেন। পরস্পরবিরোধী বিষয়গুলো যে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ নিজেদেরসহ সব ক্ষেত্রেই ক্ষতি বয়ে আনছে, সেটি তারা ভাবছে না।
একটি শান্তিপূর্ণ দেশ হিসেবে আমাদের প্রত্যাশা থাকবে যে, অবিলম্বে রাশিয়া তাদের অভিযান বন্ধ করুক। তাদের যদি কনসার্ন থাকে, সেটি মিটিয়ে নিক। ন্যাটো ইউক্রেনে যাবে কি না, সেটি আলাপ-আলোচনার মধ্য দিয়েই সমাধান করা দরকার। আমাদের মনে রাখতে হবে যে, সামরিক আক্রমণ কোনো সমস্যার সমাধান করে না; বরং সমস্যা সৃষ্টি করে। গত বিশ বছরে তার অনেক দৃষ্টান্ত আমরা পেয়েছি। এই ঘটনাগুলো আমাদের যথেষ্ট পরিমাণ নেতিবাচক অভিজ্ঞতা আমাকে শিখিয়েছে। আলাপ-আলোচনার মধ্য দিয়েই সব সমস্যার সমাধান। যুদ্ধ বন্ধের সিদ্ধান্ত যেমন যুক্তিযুক্ত তেমনি, রাশিয়ার জন্যও অবশ্য করণীয়।
লেখক: সাবেক রাষ্ট্রদূত
এসএ/